লন্ডনে স্বাধীনতা বিরোধীদের কর্মকান্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগ নেতাদের প্রশ্ন

- প্রকাশের সময় : ১২:৩২:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
- / ৮৬৮ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাজ্য ব্রিস্টল বাথ এন্ড ওয়েস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্র সফর উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এক মতবিনিময় ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। সিটির জ্যাকসন হাইটসের পালকী পার্টি সেন্টারে গত ৩০ আগষ্ট বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংসদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল বাতেন।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ সভাপতি সৈয়দ বসারত আলী, প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া (হাজী এনাম), বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানা ফেরদৌস চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা শরাফ সরকার, মনির হোসেন ও মিজানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শেখ আতিকুল ইসলাম, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, ঘাতক-দালাল নিমূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের আহ্বায়ক ফাহিম রেজা নূর, জকিগঞ্জ সোসাইটি ইউএসএ ইনক’র অন্যতম উপদেষ্টা গিয়াস আহমেদ মজুমদার, এডভোকেট এমাদ উদ্দিন ও ডা. আব্দুল জলিল, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান সরদার। খবর ইউএনএ’র।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন। সভায় ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সহ ১৫ ও ২১ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এছাড়া সভার অতিথি সিলেটের জকিগঞ্জের সন্তান রেজাউল করীমকে প্রবাসী ফেঞ্চুগঞ্জবাসীদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত ‘প্রবাসের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা’ সম্বলিত বিশেষ স্মরণিকা তুলে দেন ডা. আব্দুল বাতেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক ও জকিগঞ্জ সোসাইটি ইউএসএ’র সাধারণ সম্পাদক ইফজাল আহমেদ চৌধুরী। এছাড়া অতিথিবৃন্দ সহ অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ জামাল হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি দরুদ মিযা রনেল। সভা পরিচালনা করেন স্বীকৃতি বড়–য়া।
সভায় মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন, শেখ আতিকুল ইসলাম ও দরুদ মিয়া রনেল লন্ডন তথা যুক্তরাজ্যে স্বাধীনতা বিরোধীরা কিভাবে আশ্রয় পায় এবং বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু সহ প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অসম্মান করে, কটাক্ষ করে কথা বলে, সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখার সাহস পান সেব্যাপারে প্রশ্ন তুলে বলেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের এসব প্রতিহত করার কি কোন ক্ষমতা নেই? অথচ যুক্তনরাষ্ট্র াাওয়ামী লীগের প্রতিবাদ আর দাবীর মুখে নিউইয়র্কে বসবাসকারী স্বাধীনতা বিরোধীরা নিউইয়র্ক ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বক্তারা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের আরো সক্রিয় ও শক্তিশালী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া আর তারেক রহমান লন্ডনে বসে স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে বৈঠক করে বাংলাদেশ আর শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতাদের চুপ করে বসে থাকলে চলবে না।
দুলাল মিয়া (হাজী এনাম) বলেন, একাত্তুরে মহান মুক্তিদ্ধের সময় লন্ডনবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ দেশ, দেশের জনগণ আর আওয়ামী লীগের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে চলেছে। কিন্তু বর্তমানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে দলের মধ্যে কোথায় যেনো সক্রিয়তার অভাব রয়েছে।
রানা ফেরদৌস চৌধুরী দেশ ও প্রবাসে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরীর আহ্বান জানান এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের আলোচনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে’ এমন শব্দ ব্যবহার বা প্রয়োগের তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদ আর ‘দুই লাখ নারীর চরম ত্যাগের বিনিময়ে’ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি’ এমন শব্দ বলা উচিৎ।
সৈয়দ বসারত আলী বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা যা পারি, দলের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান যা পারেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ বা দলের নেতারা তা পারেন না কেন? আমরা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে জানতে চাই- খালেদা-তারেক লন্ডনে বসে কি করে?
সভায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাদের নানা প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধা ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল চৌধুরী বলেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আগের মতোই শক্তিশালী ও সক্রিয়। তবে দলের সভাপতি সুলতান শরীফ বয়সের কারণে আগের মতো সময় দিতে পারেন না সত্য। কিন্তু আমরা যা আওয়ামী লীগ করি তারা খালেদা-তারেকের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করছি, যা মিডিয়াতে আসছে বলে উল্লেখ করে বলেন, খালেদা-তারেক কিছু বললেই বাংলাদেশের ইতিহাস বদলে যাবে না। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠার কথা আমি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের অবহিত করবো।
রেজাউল চৌধুরী মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেই সময় ছাত্রাবস্থায় চট্টগ্রাম ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় চট্টগ্রামে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছি, দেশের বাড়ী সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ যেতে পারিনি এবং এক সময় ভারত যেতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, ১৯৭১-এর ৩ মার্চ চট্টগ্রাম থেকেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং সেই যুদ্ধে আমিও অংশ নেই। এটাই ইতিহাস। আরো ইতিহাস হচ্ছে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে জিয়াউর রহমানের কোন নাম শুনিনি, তবে ক্যান্টনমেন্টে ক্যাপ্টেন রফিকের অবদান ছিলো। তবে ৭১-এর ২৬ মার্চ জিয়া চট্টগ্রাম জেটিতে যান এবং পরবর্তীতে কালুর ঘাট থেকে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে আমরা ৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা সশ¯্র যুদ্ধ করেছি। তিনি বলেন, যুদ্ধেও সময় ভারতে এক লাখের মতো বাংলাদেশী অংশ নিয়েছিলো। আর এখন দেখছি দেশের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ২ লাখ ৪০ হাজার লিপিবদ্ধ। এটা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হতে পারে না, এক লাখের বেশী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ডা. আব্দুল বাতেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শ মেনেই তার নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন, দেখা হলে কাঁধে হাত রেখে খোঁজ-খবর নিতেন। তার সাথে গণভবনে যেতে আমাদের প্রটোকল মানতে হতো না। তিনি বলেন, ১৯৮০ সালে লন্ডনে শেখ হাসিনা প্রথম প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবী করেন।
সভায় যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রিন্টু লাল দাস, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুবল দেবনাথ, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জয় প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।