যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভার্চুয়েল কনফারেন্সে ইসলামী ফাউন্ডেশনের মতো পৃথক পৃথক ফাউন্ডেশন গঠন দাবী
- প্রকাশের সময় : ০৩:৪৫:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০২০
- / ৫৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রর পররাষ্ট মন্ত্রনালয়ের অধীন ইনটারন্যাশন্যাল রিলিজিয়াস ফ্রীডম বিভাগ(আইআরএফ)- এর অনুমোদন ক্রমে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে ক্রমবর্দ্ধমান সংখ্যালঘু নির্যাতন : সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, দেশ, ও সভ্য দুনিয়ার জন্য এর পরিণাম’ শিরোনামে একটি ভার্চুয়েল কনফারেন্স গত ২০ নভেম্বর শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের অন্যতম সভাপতি নবেন্দু দত্তের সভাপতিত্বে এবং ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্যের পরিচালনায় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২:৩০ মিনিট পর্যন্ত আড়াই ঘন্টা ব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সভার উদ্বোধন করেন যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের অধীন নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বিভস, ভুটান ও বাংলাদেশ ইউনিটের প্রধান মি: অমিত মথুর।
মি: মথুরের পরপরই সভায় বক্তব্য রাখেন ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশন্যাল রিলিজিয়াস ফ্রীডম-এর সিনিওর পলিসি এ্যনালিস্ট মিস নায়ালা মুহাম্মদ। মিস নায়ালা মুহাম্মদের বক্তব্য প্রদানের পর পরই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও। এই সভায় যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মোট তিন জন অফিসার এবং ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশন্যাল রিলিজিয়াস ফ্রীডম-এর এক জন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, ইল্যান্ড, হলান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, সুইডেন, ইটালি, জার্মানী-সহ বিভিন্ন দেশের ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ ও সদস্য, বিভিন্ন দেশের কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা ও এনজিও মিলে মোট ১৪৫ জন দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে প্যানেলিস্ট বা নিবন্ধ উপস্থাপক ছিলেন ৯ জন। উপস্থাপকগণ হলেন: কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার ক্রাইম ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটার এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, সুপ্রীম কোর্ট এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ডক্টর রিচার্ড বেনিকন, সাংবাদিক সেলিম সামাদ, ড. কোনরাড এলস্ট, এ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ, ড. মোহিত রায়, যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের সিনিওর পলিসি ডিরেক্টর ও লেখক মি: শিতাংশু গুহ, এবং সাংবাদিক পুলক ঘটক।
সভায়, প্যানেলিস্টদের এক একজন সংখ্যালঘু নির্যাতনের এক একটি বিশেষ দিকের বর্ণনা ও বিশ্লেষনের ওপর জোর দিয়ে তাঁদের নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। তবে, সকলেই সংখ্যালঘু নির্যাতক ইসলামী জাতীয়তাবাদী, ইসলামী মৌলবাদী ও উগ্রপন্থী সন্ত্রাসীদের হিশেবে চিহ্নিত করেন, এবং বলেন যে, নির্যাতনের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ও আদিবাসী শূন্য করে ফের পাকিস্তানের মত একটি ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করা, যা নির্যাতকরা নির্যাতন করার সময় সরাসরিই বলে থাকে।
উপস্থাপকগণ বলেন যে, যদিও প্রধানত: সংখ্যালঘু নির্যাতকরা প্রধানটি: ইসলামী জাতীয়তাবাদী, ইসলামী মৌলবাদী ও উগ্রপন্থী, মাঝে মাঝে তথাকথিত প্রগতিশীল দলের নেতা ও কর্মীরাও সম্পৃক্ত থাকেন; আর, সরকারও প্রত্যক্ষ ভা পরোক্ষভাবে তাতে জড়িত। তাঁরা বলেন যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পরই শত্রæসম্পত্তির বাতিল না করে, ১৯৭৪ সালে হাইকোর্ট সেটাকে বাতিল করার পরও সেটাকে ব্যবহার করে, সংখ্যালঘু, বিশেষত: হিন্দুদের কাছ থেকে আড়াই মিলিওন একরেরও বেশি জমি অধিগ্রহন করা; সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার করে শাস্তি দিতে সরকারে ব্যর্থতা বা আপত্তি, এমন কি জজ সাহাবুদ্দীন কমিশন প্রদত্ত চিহ্নিত অপরাধীদেরও বিচারের আওতায় না আনা; পার্বত্য চট্টগ্রামে আবাদী পাঠিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় আদিবাসীদের ঘর বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে, গনধর্ষণ ও গণহত্যা ঘটিয়ে ঘটিয়ে উচ্ছেদ করে- যেমন, লোগাং, নানিয়ার চর, ও লংদুতে- দেশেত্যাগে বাধ্য করা, এ’সব সংখ্যালঘু নির্যাতন ও উৎখাতে সরকারই সম্পৃক্ততার উদাহরণ বলে তারা মত প্রকাশ করেন। কয়েকজন বক্তা বলেন যে, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ২৫,০০০ মুসলমান কর্তৃক রামুর বৌদ্ধদের গণ নির্যাতন দিয়ে শুরু করে এ’পর্যন্ত বহুবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ফেইসবুক হ্যাক করে কিংবা তাদের নামে ফেইসবুক খুলে তাতে ইসলাম ও নবীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য স্টেটাস দিয়ে, সেটাকে অজুহাত হিশেবে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু গ্রামে শত সহ¯্র ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী, মৌলবাদী ও উগ্রপন্থীদের বিভৎস আক্রমণ সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত অস্ত্র সম্ভারে একটি নতুন মারনাস্ত্রের সংযোজন, কারণ একদিকে সন্ত্রাসীরা এর ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর পুড়ে দিয়ে, তাঁদের নারীর সম্ভ্রম সহ সব কিছু লুটে পুটে নিয়ে ওদের ঘর ছাড়া, দেশ ছাড়া করছে, আর অন্য দিকে আমাদের তথাকথিত প্রগতিশীল সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টকে বø্যাসফেমি আইনের পরিবর্তে ব্যবহার পূর্বক অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের অওতায় এনে শাস্তি না দিয়ে বরং নিরপরাধ অত্যাচারিতদের গ্রেফতার করে জেলে পুরছে, এবং ইদানিং দু’জনকে সাত বছর করে কারাদন্ডও দিয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে, সংখ্যালঘু নির্যাতন চলছে ইসলামী জাতীয়তাবাদী, ইসলামী মৌলবাদী ও উগ্রপন্থী ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে।
সভায়, যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে থেকে সংখ্যালঘু উৎখাত প্রক্রিয়ার বেশ কিছু সচিত্র দলিলপত্র প্রদর্শন করা হয়, যার মধ্যে ছিল সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুশল চক্রবর্তিকে কানাডা থেকে জনৈক রায়হান প্রেরিত ভিডিওতে দেশের সব হিন্দুকে ২০২৫ সালের মধ্যে নিশ্চিহ্ন করার জন্য দশ হাজার ছেলে তাদের “আমিরের নির্দেশের অপেক্ষায়” আছে বলে হুমকি, আগামী ২৫ বছরের মধ্যে দেশ হিন্দু শূন্য হবে বলে প্রফেসার বারাকাতের ভবিষ্যদ্বাণী সম্বলিত মিডিয়া রিপোর্ট, লোগাং ম্যাসাকারের প্রতিক্রিয়ায় স্পিকার ন্যানিস পেলোসি সহ সতেরো জন ইউএস কগ্রেসম্যান কর্তৃক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে লেখা চিঠি, একই রাতে একই স্থলে ২০০ হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করার মিডিয়া রিপোর্ট, প্রভৃতি।
সভায় একটি প্রশ্নোত্তর পর্বও ছিল, যাতে চ্যাটরুমে দর্শক-শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দেন বিভিন্ন প্যানেলিস্ট। এই ভার্চুয়্যাল সভায় প্যানেলিস্টরা বাংলাদেশে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে দুটি প্রধান কারণ নির্দেশ করেন তা’ হল ১৯৭২ সালের সংবিধানকে পরিবর্তন করে তাতে রাষ্ট্রধর্ম সংযুক্ত করা, আর সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার ও শাস্তি না দিয়ে সরকার কর্তৃক পরোক্ষভাবে তাদের সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশ থেকে সংখ্যালঘু বিতাড়নের লাইসেন্স প্রদান করা। তাঁরা এই সমস্যার সমাধানকল্পে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহনের জন্য সুপারিশ করেন:
১. ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপব্যবহার করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে সকল নিরপরাধ সদস্যদের জেলে পোরা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়া এবং যাদের ইতিমধ্যেই কারাদন্ড দেয়া হয়েছে, তাদের কেইসগুলো পুন; তদন্তপূর্বক পুনর্বিবেচনা করা; আর, এই আইনটিকে বেøসফেমি আইনের মত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার সংস্কৃতি বন্ধ করা;
২. ১৯৭২ সালের সংবিধান অবিলম্বে পুন: প্রতিষ্ঠা করে দেশে প্রকৃত অর্থে ধর্ম-নিরপেক্ষ গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন;
৩. ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাস থেকে এ পর্যন্ত যত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর আসামীদের বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচার পূর্বক শাস্তির বিধান করে, নির্যাতিতদের যথেষ্ট পরিমানে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা; এবং, এই প্রক্রিয়াটি জজ সাহাবুদ্দীন কমিশন প্রদত্ত আসামী তালিকা প্রকাশ করে সেটা দিয়ে শুরু করা।
৩. যেভাবে ইসলামী ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছিল ঠিক সেইভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ, ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক পৃথক ফাউন্ডেশন গঠন করা;
৪. সংখ্যালঘু মন্ত্রনালয়, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন, এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রনয়ণ করা;
৫. ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা এবং
৬. অত্যাচারিত হয়ে/অত্যাচারের ভয়ে পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি ফেলে, প্রাণের ভয়ে দেশত্যগী সংখ্যালঘু যাদের ‘শত্রæ’ ঘোষণা করে সম্পত্তি জবরদখল করে নেয়া হয়েছিল তাদের উত্তরাধিকারীগণ বর্তমানে যে দেশেই বসবাস করুন না কেন, তাদেরকে তাদের সম্পত্তি বা এর ন্যায্য মূল্য ফেরৎ পাবার বিধান করে- যেমন করেছে তুরষ্ক বা জার্মানী- শত্রæ সম্পত্তি বতিল আইন সংশোধন পূর্বক, অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।