যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগের বিবৃতি
- প্রকাশের সময় : ১১:১৬:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬
- / ৫২৭ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আকতার হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সাথে কিছুদিন যাবত লক্ষ্য করছে যে, নিউইয়র্কে বসবাসরত তথাকথিত প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার ধারক-বাহক, সাংবাদিক-কলাম লেখক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা শিতাংশু গুহ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘ সদর দপ্তর, হোয়াইট হাউস, ট্রাম্প টাওয়ার-এর সম্মুখে ও কংগ্রেসম্যানসহ আরও অনেক আইন প্রণেতা, ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট, মানবাধিকার সংস্থায় ধরণা দিচ্ছেন ও পূনঃ পূনঃ অভিযোগ দায়ের করছেন। এছাড়াও ভারত সরকার, ইউরোপিও ইউনিয়ন, ইসরাইল ইত্যাদি দেশের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে নিরলসভাবে অভিযোগ দায়ের করে যাচ্ছেন যা পত্রপত্রিকা ও সোশাল মিডিয়ার সুবাদে প্রতিনিয়ত আমরা জানতে পারছি। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ও তিল তিল করে সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের সমন্বয়ে তৈরী অসাম্প্রদায়ীক চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ এ দলে কাউকেই কোন সাম্প্রদায়িক কাজে প্রশ্রয় দেয়া হয় না বরং কঠোর হস্থে তা দমন করা হয় এবং দলে তাদের স্থান দেয়া হয় না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত তার ভূঁড়ি ভূঁড়ি নজির রয়েছে।
দলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক প্রকৌঃ মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী কর্তৃক গত ১৪ ডিসেম্বর প্রেরিত বিবৃতিতে বলা হয়: মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশত্যাগী কোটির উপর শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে এনে পূনর্বাসন (যার অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের) ও পাকিস্তান আমলে ভারতে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার উপজাতী সম্প্রদায়কে দেশে ফিরিয়ে এনে ঘর-বাড়ী-জমি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিই আওয়ামী লীগ সরকারের অসাম্প্রদায়ীক চিন্তা-চেতনার জ্বলন্ত উদাহরণ। স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশে সকল সরকারী বেসরকারী চাকুরীতে নিয়োগ, পদন্নোতি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বৈষম্যহীন পদক্ষেপ আজ প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে সচিব, চেয়ারম্যান, জেনারেল ইত্যাদিতে অবাধ সুযোগ তার বলিষ্ঠ উদাহরণ।
বিবৃতিতে বলা হয়: পাকিস্তানের পরাজিত শক্তি ও তার দোসররা ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আবার যে সাম্প্রদায়ীকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে দিয়েছিল দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ধীরে ধীরে আবার মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে একতাবদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের হারানো মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনাসহ সকল হত্যাকান্ডের বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার সাথে সাথে স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামাত বিভিন্ন ব্যানারে দেশে-বিদেশে অপতৎপরতা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে লবিষ্ট নিয়োগ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ মামলার স্বাক্ষী কিনে ফেলা, প্রসিকিউশন টিমের প্রধান থেকে শুরু করে বিচারপতি ও তদন্ত কর্মকর্তা তাদের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে ভোল পাল্টে মামলার স্বচ্ছতার ও আন্তর্জাতিক মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দূ’চারজন প্রতিনিধিকে দিয়ে বই লেখা, কলাম লেখা, সেমিনার সিম্পোজিয়ামের নামে বিদেশের মাটিতে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের, দেশে জঙ্গী তৎপরতা বৃদ্ধি করে নিরীহ বিদেশী এনজিও কর্মকর্তা, ধর্মযাজক, পুরোহিত, পদ্মা সেতুর কনসালটেন্ট থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে শেখ হাসিনা সরকারকে বিদেশী রাষ্ট্রের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে সকল বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের বিরামহীন অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জানিনা শিতাংসু গুহ, মিনা ফারাহ, ইসরাইলী নাগরিক মেন্দী সাফাদী সেই ষড়যন্ত্রের অংশ কি-না? ডা. মিনা ফারাহ এক যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে সাক্ষী থেকে রাতারাতি বদলে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে জামাতীদের মিডিয়ায় সরব। শিতাংশু গুহ বিএনপি-জামাতের ২০০১ এর নির্বাচনত্তোর দূঃসহ নির্যাতনের পর গড়ে ওঠা হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে দেশ-বিদেশের আন্দোলনে পরিচিতি পাওয়ার সুবাদে অসীম ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে এবং নীজেকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী পদে জাহির করে আমেরিকা, ইউরোপ ও ভারতে সেমিনার-সিস্পোজিয়াম করে খ্যাতি লাভ করে। অন্যদিকে তার স্ব-ঘোষিত পদপদবী ব্যবহারের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ তিন টুকরো হয়। মাঝে কিছুদিন হালে পানি পায়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদীদের কিছু কার্যক্রমকে পূজি করে পুরনো সেই ব্যানারে এবং সাথে পূজা সমিতি, উগ্রবাদী হিন্দুদের দূ’একটি সংগঠন এবং সম্প্রতি বিএনপি-জামাতের সাথে সখ্য গড়ে তোলা ইসরাইলী বংশদ্ভূত লিকুদ পার্টি নেতা ও মোসাদ এজেন্ট মেন্দী এন সাফাদীকে তার বিক্ষোভ সভায় এনে প্লাকার্ড ধরিয়ে দিয়ে নিউজ-ভিউজে সরব হয়ে তার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। শোনা যায় বাংলাদেশের সাথে সিতাংসু গুহের কোন নারীর টান নাই। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি বাংলাদেশে যান না। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সিংহভাগ হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান নেতৃবৃন্দ তার সাথে নাই। উনি বর্তমানে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য চাকুরীতেও নিয়োজিত নাই বলে জানা যায়। সার্বক্ষণিক সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের বিপুল অর্থের যোগানদাতা কে? বর্তমানে উনি ঐক্য পরিষদের কোন পদে আছেন এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদের কোন নির্দেশে উনি এখানে রাতদিন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ছুটে বেড়াচ্ছেন? দেশ ও প্রবাসের কোটি কোটি অসাম্প্রদায়ীক চিন্তা-চেতনার শান্তিপ্রিয় জনগন তা জানতে চায়।
বিবৃতিতে বলা হয়: বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া দু’চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদীদের দ্বারা কিছু নিরীহ মানুষ আক্রান্ত ও নির্যাতিত হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দোষী ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও আইনে সোপর্দ করে কঠোর শাস্তি প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্থদের সকল প্রকার সাহায্য প্রদান, ঘরবাড়ী পূনঃ নির্মান, নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন, পার্শ্ববতী দেশ ভারতসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রিটেন, ইটালী, জাপান ইত্যাদি সরকারের সাথে সকল প্রকার কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করে শান্তি-শৃঙ্ঘলা ফিরিয়ে আনছেন। শুধুমাত্র বিএনপি-জামাতের প্রধান আমীর বেগম খালেদা জিয়া ও তাদের দেশী-বিদেশী এজেন্ট শিতাংশু গুহ ও মিনা ফারাহ গং শান্তিতে নেই বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কত মিলিয়ন ডলারে শিতাংসু গুহ ও মিনা ফারাহ বিক্রি হয়েছেন তা তদন্ত সাপেক্ষে বের করা এবং জনগনের সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচনের সময় এসেছে বলেই সুধীজনেরা মনে করছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়: বিশ্বের বড় বড় মিডিয়া ও সংস্থা যেখানে বাংলাদেশকে শান্তিপ্রিয় সহঅবস্থানের দেশ হিসেবে জরীপের ফলাফল প্রকাশ করছে সেখানে গুহ সাহেবের কেন ঘুম হারাম হলো যিনি নীজেকে চরম সাম্প্রদায়ীক বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির প্রতিভূ হিসেবে কাজ করছে বলেই আমাদের কাছে মনে হয়েছে। সাময়ীকভাবে বিদেশের মাটিতে ভূয়া ও ফ্রেব্রিকেটেট নিউজ-ভিউজ দিয়ে কতিপয় মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায় কিন্তু সত্যকে কখনও ধামাচাঁপা দেয়া যায় না।
বিবৃতিতে বলা হয়: বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রেী শেখ হাসিনা আজ বিশ্বে একটি আলোচিত নাম, একজন বিশ্বসেরা সফল রাষ্ট্রনায়ক। বাংলাদেশের জন্মের মৌলিক চেতনার ধারক-বাহক, অসাম্প্রদায়ীক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতীক এবং সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের রক্ষক ও অভিভাবক। যিনি জীবনের মায়া ত্যাগ করে ভোগ-বিলাস ও বিশ্রামকে হারাম করে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে যেতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কোন ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ, বিশ্বের পরাশক্তির কাছে ধরণা দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিবৃত করা যাবে না। কারণ বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশ এখন আর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নয় যে ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে।
উল্লেখ্য যে, শিতাশু গুহ দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় যাবৎ যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত এবং উক্ত সংগঠনের সভাপতি ড. নূরান নবী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ-এর উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। বাঙালী জাতির মহানায়ক ও ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামের সংগঠনে থেকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিরবিচ্ছিন্ন মিথ্যাচার ও ভূয়া প্রোপাগান্ডা করায় শিতাংশু গুহ উক্ত পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছে। সাথে সাথে ড. নূরান নবী তার সকল অপকর্মকে নিরব সম্মতি দিয়ে ও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তার নিরব ভূমিকা প্রবাসী বিবেকবান মানুষকে হতবাক করেছে।
বিবিৃতিতে শিতাংশু গুহ গংদেরকে ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে, সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এনে সমাধানের চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়: ত্রিশ লক্ষ মানুষের আত্মদান, দু’লক্ষাধীক মা’বোনের সম্ভ্রম হারানো বাংলাদেশ আজ মাথা তুলে দাড়িয়েছে। বিজয়ের মাসে আসুন সকলে মিলে সকল ধর্ম-বর্ণের সহাবস্থান নিশ্চিত করে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ে তুলি।