নিউইয়র্ক ০৭:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মুসল্লীদের অজান্তে বিক্রি হয়ে গেছে গাউসিয়া মসজিদ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৪০:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মার্চ ২০২৩
  • / ৭৯ বার পঠিত

এমদাদ চৌধুরী দীপু : নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এস্টোরিয়ার এক সময়ের অতি পরিচিত গাউসিয়া জামে মসজিদ বিক্রি করে দেয়া হযেছে। কোন ধরনের ঘোষণা ছাড়াই সবার অগোচরে অতি গোপনীয়তার সাথে মসজিদটি বিক্রি করে দেয়ায় এনিয়ে কমিউনিটিতে ব্যাপক বিতর্ক, মুসল্লিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যু প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ‘টক অব কমিউনিটি’ হয়েছে। তবে কোন মসজিদ বিক্রি বা মুসল্লিদের ফান্ড নিয়ে এধরনের নির্বিকার কর্মকান্ড এই প্রথম বলে কমিউনিটির অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

এস্টোরিয়ার গাউসিয়া মসজিদ ৩১ স্ট্রীট এবং ২৮ এভিন্যুর কোনায় অবস্থিত। কারো সাথে কোন ধরনের পরামর্শ বা কমিটিকে না জানিয়ে মসজিদ বিক্রির জন্য মসাজিদটির প্রতিষ্ঠা থেকে জড়িতদের সবাই মসজিদের খতিব ও ইমাম মাওলানা জালাল সিদ্দিকীকে অভিযুক্ত করেছেন।

জানা যায়, ৮০ দশকের শেষ দিকে প্রায় সোয়া দুই লাখ ডলারের বিনিময়ে এই মসজিদটি কেনা হয়। তখন থেকেই মাওলানা জালাল সিদ্দিকী এই মসজিদের খতিব ও ইমাম। ফুলতলী ঘরানার একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে অধিকাংশ মুসল্লিদের কাছে তিনি পীরের মর্যাদায় অধিষ্টিত ছিলেন। যার ফলে অন্ধ বিশ্বাসে তখন তার নামেই কেনা হয় গাউসিয়া জামে মসজিদের ভবন। এরপর এই মসজিদের পরিচালনা থেকে সমুদয় খরচ পরিচালনা হতো মুসল্লীদের দান ও অনুদান থেকে। যার কেনো হিসেব কখনো কেউ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন মুসল্লীদের অনেকে।

এ বিষয়ে গাউসিয়া মসজিদের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি আজিমুর রহমান বুরহান বলেন, চড়াদামে মসজিদ বিক্রি করে জালাল সিদ্দিকী বড় ধরনের অপরাধ করেছেন। যার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। মানুষের বিশ্বাস আমানত নিয়ে আলেম নামধারী কোন ব্যক্তি এমন কাজ করবেন এটা আমাদের বিস্মিত ও স্থম্ভিত করেছে। আমি অবিলম্বে এবিষয়ে মুসল্লিদের দেয়া অর্থের পুরো হিসেব দাবী করছি। প্রায় সোয়া দুই লাখ ডলারের বাড়ী তিনি বিক্রি করেছেন প্রায় ১২ লাখ বা ১.২ মিলিয়ন ডলারে। মর্টগেজের প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। আমাদের কথা হলো এত অল্পদামের কেনা মসজিদে যুগের পর যুগ ধরে মুসল্লীরা যে অনুদান দিলেন সেটা গেলো কোথায়? এর জবাব দিতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে মাওলানা জালাল সিদ্দিকীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি তার ইস্ট এলমার্স্টের বাসায় যেতে বলেন। মসজিদ বিক্রি এবং এনিয়ে মুসল্লীদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, মসজিদ আমার। এর থেকে যে আয় আসবে সেটি আমার। মসজিদের ব্যয় মেরামত সব খরচ সেটি আমি দেখবো। এই মসজিদ থেকে যে দান অনুদান আসবে সেটি আমারই। মসজিদ বন্ধ করে দেয়া কিংবা স্থান পরিবর্তন করে যে কোন স্থানে নিয়ে যাওয়াটাও আমার ব্যক্তিগত বিষয়।

মসজিদ বিক্রির পক্ষে নিজের যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, মুসল্লী কমে গেছেন গাউসিয়া মসজিদে। ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে গেছে মসজিদ ভবন। মসজিদ থেকে যে আয় আসে প্রতি সপ্তাহে তাতে মসজিদ পরিচালনা সম্ভব হয়না। এরফলে স্থান পরিবর্তন করে আরো বৃহৎ পরিসরে একটি উন্নত মানের মসজিদ নির্মাণ করা সম্ভব। এজন্য ব্রঙ্কস এলাকায় একটি নতুন ভবন ক্রয় করা হয়েছে মসজিদের জন্য। তিনি বলেন, আমি মসজিদ বিক্রি করে কোন অন্যায় বা অপরাধ করিনি।

মসজিদটি বিক্রির একক সিদ্ধান্তকে অনেকেই অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা আখ্যায়িত করে মাওলানা সিদ্দিকী বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন বলে স্থানীয় মুসল্লিদের অনেকেই মন্তব্য করেছেন। একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, প্রায় ১২শ হাজার ডলারে বিক্রি করে দেয়া গাউসিয়া মসজিদ বিল্ডিং স্থানান্তর করে ৭ লাখ ডলারে ব্রঙ্কসে মসজিদের জন্য আরেকটি বাড়ি কেনা হয়েছে। সূত্রটি আরো জানায়, জালাল সিদ্দিকীর পরিকল্পনা ছিল বাফেলোতে আরো কম দামে বাড়ি কেনা। যাতে অর্থ সাশ্রয় সম্ভব হতো। তবে এসব বিষয়ে তিনি কারো সাথেই কোন কথা বলেননি বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুব্ধ মুসল্লীদের অনেকে। মসজিদকে ব্যক্তিগত ব্যবসার উপলক্ষ্য বানানোর অভিযোগ করে অভিযুক্তরা বলেন, বিশেষ ধর্মীয় দিবস শবে মেরাজ, শবেবরাত এমনকি শুক্রবারে মুসল্লীরা বিরাট অংকের দান করতেন কিন্ত এর হিসেব কেউ জানতেন না কখনো। অনুদানের প্যাকেট এবং ব্যাগ তিনি (মওলানা জালাল) তার বাসায় নিয়ে যেতেন বলে অভিযোগ করেছেন মুসল্লীরা। ফলে তিন যুগে মসজিদ থেকে তিনি কত আয় করেছেন সে তথ্য আজো মুসল্লীদের অজানা।

গত শুক্রবার (৩ মার্চ) সরজমিনে এস্টোরিয়ার ৩১ স্ট্রীটে (২৫ এবং ২৬ এভিনিউ এর মাঝখানে) গাউছিয়া মসজিদের সামনে একটি ব্যানার ঝুলতে দেখা যায়। এই ব্যানারে লেখা আছে ‘মসজিদটি মুভ হয়ে গেছে ব্রঙ্কসে’। দেশী-বিদেশী অনেক মুসল্লী সেখানে প্রবেশের চেস্টা করে দেখেন মসজিদ তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। বয়স্ক একজন মুসল্লী বলেন- আল্লাহর ঘর মসজিদ বিক্রি করা যায়না। এস্টোরিয়া এলাকার বিশিস্ট ব্যক্তিবর্গ এবং মসজিদ সংলগ্ন প্রতিবেশীরা এই ঘটনায় ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

এস্টোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী প্রাইম প্রিন্টিং-এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম বলেন, মসজিদ বিক্রি করে উচিত কাজ করেননি মাওলানা জালাল সিদ্দিকী। নিজের দেয়া অনুদান সহ অগনিতদের দানের বিববরণ দিয়ে তিনি বলেন আমানতের এই অর্থকে নিজের সম্পদ জ্ঞান করা তার উচিত হয়নি আলেম পরিচয়ধারী একজন ব্যক্তির। বিষয়টি পরিস্কার ও স্পষ্ট না করলে এনিয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল ও ঘোলাটে হওয়ার আশংকা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মসজিদের অন্যতম মুসল্লী নজরুল ইসলাম বলেন, আর্থিক সমস্যার জন্য মসজিদ বিক্রির দরকার মনে করলে মাওলানা জালাল সিদ্দিকীর মুসল্লীদের সেটা জানানো প্রয়োজন ছিল। আজিমুর রহমান বুরহান গাউছিয়া মসজিদ-এর ইতিহাস তুলে ধরে আরো বলেন, বিভিন্ন সময় ব্যক্তির নাম বাদ দিয়ে মসজিদটি ওয়াকফ করার জন্য দাবী করা হলেও জালাল সিদ্দিকী সেটি করতে দেননি। তার মতে জালাল সিদ্দিকীর জিম্মী দশা থেকে গাউসিয়া মসজিদকে বের করার নানা চেস্টা করা হলেও তা সফল হয়নি।

গত শনিবার (৪ মার্চ) রাতে ইস্ট এলমহার্স্ট-এর ২৩ এভিনিউ ৯৯ স্ট্রীট-এ জালাল সিদ্দিকীর সাথে দীর্ঘ আলাপ হয় এই প্রতিবেদক-এর। তিনি বলেন, মসজিদটি সুদ থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি তার নামে এটি কিনেছিলেন। আবার ট্যাক্স থেকে বাঁচার জন্য তিনি ব্রঙ্কসে তার নামে বাড়ি কিনেছেন। দু’বছর আগে ঈদে মিলাদুন্নবীর এক মুসল্লী সমাবেশে মসজিদ বিক্রির সিদ্ধান্ত হয় বলে তিনি জানান। দু’বছর যাবত তিনি অসুস্থ এমন তথ্য জানিয়ে জালাল সিদ্দিকী বলেন, তার অসুস্থতার কারনে মসজিদ বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে চলে যায়। এবং সাপ্তাহিক আয় ১৭০ ডলারে নেমে আসে। জালাল সিদ্দিকী দাবী করেন তাকে বাদ দিয়ে তার ক্ষমতা খর্ব করে ২১ সদস্য বিশিস্ট একটি কমিটি দায়িত্ব নিয়ে মসজিদ পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। গত তিন যুগে গাউসিয়া মসজিদ থেকে কত আয় হয়েছে সে তথ্য আজো মুসল্লীদের অজানা কেন এই প্রশ্ন আজ সর্বত্র। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

মুসল্লীদের অজান্তে বিক্রি হয়ে গেছে গাউসিয়া মসজিদ

প্রকাশের সময় : ০২:৪০:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মার্চ ২০২৩

এমদাদ চৌধুরী দীপু : নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এস্টোরিয়ার এক সময়ের অতি পরিচিত গাউসিয়া জামে মসজিদ বিক্রি করে দেয়া হযেছে। কোন ধরনের ঘোষণা ছাড়াই সবার অগোচরে অতি গোপনীয়তার সাথে মসজিদটি বিক্রি করে দেয়ায় এনিয়ে কমিউনিটিতে ব্যাপক বিতর্ক, মুসল্লিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যু প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ‘টক অব কমিউনিটি’ হয়েছে। তবে কোন মসজিদ বিক্রি বা মুসল্লিদের ফান্ড নিয়ে এধরনের নির্বিকার কর্মকান্ড এই প্রথম বলে কমিউনিটির অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

এস্টোরিয়ার গাউসিয়া মসজিদ ৩১ স্ট্রীট এবং ২৮ এভিন্যুর কোনায় অবস্থিত। কারো সাথে কোন ধরনের পরামর্শ বা কমিটিকে না জানিয়ে মসজিদ বিক্রির জন্য মসাজিদটির প্রতিষ্ঠা থেকে জড়িতদের সবাই মসজিদের খতিব ও ইমাম মাওলানা জালাল সিদ্দিকীকে অভিযুক্ত করেছেন।

জানা যায়, ৮০ দশকের শেষ দিকে প্রায় সোয়া দুই লাখ ডলারের বিনিময়ে এই মসজিদটি কেনা হয়। তখন থেকেই মাওলানা জালাল সিদ্দিকী এই মসজিদের খতিব ও ইমাম। ফুলতলী ঘরানার একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে অধিকাংশ মুসল্লিদের কাছে তিনি পীরের মর্যাদায় অধিষ্টিত ছিলেন। যার ফলে অন্ধ বিশ্বাসে তখন তার নামেই কেনা হয় গাউসিয়া জামে মসজিদের ভবন। এরপর এই মসজিদের পরিচালনা থেকে সমুদয় খরচ পরিচালনা হতো মুসল্লীদের দান ও অনুদান থেকে। যার কেনো হিসেব কখনো কেউ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন মুসল্লীদের অনেকে।

এ বিষয়ে গাউসিয়া মসজিদের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি আজিমুর রহমান বুরহান বলেন, চড়াদামে মসজিদ বিক্রি করে জালাল সিদ্দিকী বড় ধরনের অপরাধ করেছেন। যার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। মানুষের বিশ্বাস আমানত নিয়ে আলেম নামধারী কোন ব্যক্তি এমন কাজ করবেন এটা আমাদের বিস্মিত ও স্থম্ভিত করেছে। আমি অবিলম্বে এবিষয়ে মুসল্লিদের দেয়া অর্থের পুরো হিসেব দাবী করছি। প্রায় সোয়া দুই লাখ ডলারের বাড়ী তিনি বিক্রি করেছেন প্রায় ১২ লাখ বা ১.২ মিলিয়ন ডলারে। মর্টগেজের প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। আমাদের কথা হলো এত অল্পদামের কেনা মসজিদে যুগের পর যুগ ধরে মুসল্লীরা যে অনুদান দিলেন সেটা গেলো কোথায়? এর জবাব দিতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে মাওলানা জালাল সিদ্দিকীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি তার ইস্ট এলমার্স্টের বাসায় যেতে বলেন। মসজিদ বিক্রি এবং এনিয়ে মুসল্লীদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, মসজিদ আমার। এর থেকে যে আয় আসবে সেটি আমার। মসজিদের ব্যয় মেরামত সব খরচ সেটি আমি দেখবো। এই মসজিদ থেকে যে দান অনুদান আসবে সেটি আমারই। মসজিদ বন্ধ করে দেয়া কিংবা স্থান পরিবর্তন করে যে কোন স্থানে নিয়ে যাওয়াটাও আমার ব্যক্তিগত বিষয়।

মসজিদ বিক্রির পক্ষে নিজের যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, মুসল্লী কমে গেছেন গাউসিয়া মসজিদে। ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে গেছে মসজিদ ভবন। মসজিদ থেকে যে আয় আসে প্রতি সপ্তাহে তাতে মসজিদ পরিচালনা সম্ভব হয়না। এরফলে স্থান পরিবর্তন করে আরো বৃহৎ পরিসরে একটি উন্নত মানের মসজিদ নির্মাণ করা সম্ভব। এজন্য ব্রঙ্কস এলাকায় একটি নতুন ভবন ক্রয় করা হয়েছে মসজিদের জন্য। তিনি বলেন, আমি মসজিদ বিক্রি করে কোন অন্যায় বা অপরাধ করিনি।

মসজিদটি বিক্রির একক সিদ্ধান্তকে অনেকেই অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা আখ্যায়িত করে মাওলানা সিদ্দিকী বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন বলে স্থানীয় মুসল্লিদের অনেকেই মন্তব্য করেছেন। একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, প্রায় ১২শ হাজার ডলারে বিক্রি করে দেয়া গাউসিয়া মসজিদ বিল্ডিং স্থানান্তর করে ৭ লাখ ডলারে ব্রঙ্কসে মসজিদের জন্য আরেকটি বাড়ি কেনা হয়েছে। সূত্রটি আরো জানায়, জালাল সিদ্দিকীর পরিকল্পনা ছিল বাফেলোতে আরো কম দামে বাড়ি কেনা। যাতে অর্থ সাশ্রয় সম্ভব হতো। তবে এসব বিষয়ে তিনি কারো সাথেই কোন কথা বলেননি বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুব্ধ মুসল্লীদের অনেকে। মসজিদকে ব্যক্তিগত ব্যবসার উপলক্ষ্য বানানোর অভিযোগ করে অভিযুক্তরা বলেন, বিশেষ ধর্মীয় দিবস শবে মেরাজ, শবেবরাত এমনকি শুক্রবারে মুসল্লীরা বিরাট অংকের দান করতেন কিন্ত এর হিসেব কেউ জানতেন না কখনো। অনুদানের প্যাকেট এবং ব্যাগ তিনি (মওলানা জালাল) তার বাসায় নিয়ে যেতেন বলে অভিযোগ করেছেন মুসল্লীরা। ফলে তিন যুগে মসজিদ থেকে তিনি কত আয় করেছেন সে তথ্য আজো মুসল্লীদের অজানা।

গত শুক্রবার (৩ মার্চ) সরজমিনে এস্টোরিয়ার ৩১ স্ট্রীটে (২৫ এবং ২৬ এভিনিউ এর মাঝখানে) গাউছিয়া মসজিদের সামনে একটি ব্যানার ঝুলতে দেখা যায়। এই ব্যানারে লেখা আছে ‘মসজিদটি মুভ হয়ে গেছে ব্রঙ্কসে’। দেশী-বিদেশী অনেক মুসল্লী সেখানে প্রবেশের চেস্টা করে দেখেন মসজিদ তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। বয়স্ক একজন মুসল্লী বলেন- আল্লাহর ঘর মসজিদ বিক্রি করা যায়না। এস্টোরিয়া এলাকার বিশিস্ট ব্যক্তিবর্গ এবং মসজিদ সংলগ্ন প্রতিবেশীরা এই ঘটনায় ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

এস্টোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী প্রাইম প্রিন্টিং-এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম বলেন, মসজিদ বিক্রি করে উচিত কাজ করেননি মাওলানা জালাল সিদ্দিকী। নিজের দেয়া অনুদান সহ অগনিতদের দানের বিববরণ দিয়ে তিনি বলেন আমানতের এই অর্থকে নিজের সম্পদ জ্ঞান করা তার উচিত হয়নি আলেম পরিচয়ধারী একজন ব্যক্তির। বিষয়টি পরিস্কার ও স্পষ্ট না করলে এনিয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল ও ঘোলাটে হওয়ার আশংকা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মসজিদের অন্যতম মুসল্লী নজরুল ইসলাম বলেন, আর্থিক সমস্যার জন্য মসজিদ বিক্রির দরকার মনে করলে মাওলানা জালাল সিদ্দিকীর মুসল্লীদের সেটা জানানো প্রয়োজন ছিল। আজিমুর রহমান বুরহান গাউছিয়া মসজিদ-এর ইতিহাস তুলে ধরে আরো বলেন, বিভিন্ন সময় ব্যক্তির নাম বাদ দিয়ে মসজিদটি ওয়াকফ করার জন্য দাবী করা হলেও জালাল সিদ্দিকী সেটি করতে দেননি। তার মতে জালাল সিদ্দিকীর জিম্মী দশা থেকে গাউসিয়া মসজিদকে বের করার নানা চেস্টা করা হলেও তা সফল হয়নি।

গত শনিবার (৪ মার্চ) রাতে ইস্ট এলমহার্স্ট-এর ২৩ এভিনিউ ৯৯ স্ট্রীট-এ জালাল সিদ্দিকীর সাথে দীর্ঘ আলাপ হয় এই প্রতিবেদক-এর। তিনি বলেন, মসজিদটি সুদ থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি তার নামে এটি কিনেছিলেন। আবার ট্যাক্স থেকে বাঁচার জন্য তিনি ব্রঙ্কসে তার নামে বাড়ি কিনেছেন। দু’বছর আগে ঈদে মিলাদুন্নবীর এক মুসল্লী সমাবেশে মসজিদ বিক্রির সিদ্ধান্ত হয় বলে তিনি জানান। দু’বছর যাবত তিনি অসুস্থ এমন তথ্য জানিয়ে জালাল সিদ্দিকী বলেন, তার অসুস্থতার কারনে মসজিদ বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে চলে যায়। এবং সাপ্তাহিক আয় ১৭০ ডলারে নেমে আসে। জালাল সিদ্দিকী দাবী করেন তাকে বাদ দিয়ে তার ক্ষমতা খর্ব করে ২১ সদস্য বিশিস্ট একটি কমিটি দায়িত্ব নিয়ে মসজিদ পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। গত তিন যুগে গাউসিয়া মসজিদ থেকে কত আয় হয়েছে সে তথ্য আজো মুসল্লীদের অজানা কেন এই প্রশ্ন আজ সর্বত্র। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)