হককথা ডেস্ক: বাংলাদেশী কমিউনিটির এখন সময় এসেছে আমেরিকার রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেয়ার। গেলো তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তারা অন্য কমিউনিটি থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করলেও সেই দিন আর নেই। বাংলাদেশীরা বর্তমানে মূলধারার রাজনীতিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় এবং ক্রমশই বাড়ছে তাদের অংশগ্রহণ। তাই অন্য কমিউনিটির নেতৃত্বের উপর নির্ভর না করে নিজেদের ভেতর থেকেই নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে সক্ষম তারা। আর সেই লক্ষ অর্জনে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহŸান জানানো হলো।
নিউ অ্যামেরিকান ইয়ূথ ফোরাম, নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্লাব এবং নিউ আমেরকিান ওমেন্স ফোরাম-এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের নবম বার্ষিক ডিনার এবং নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনে অংশ নেয়া বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ইউএস সিনেটের মাইনোরিটি দলের লিডার চাক শুমার বললেন, নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির ঘুরে দাঁড়ানোর কথা। তিনি বলেন, ‘আমি অনুমান করি আগামী দিনে বাংলাদেশীরা কংগ্রেসে নেতৃত্ব দেবে। শিক্ষা, ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রতিটি অঙ্গনে তারাই থাকবে আমেরিকার শীর্ষে’। নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত সেনেটর চাক শুমার এই প্রথম বাংলাদেশী কমিউনিটির কোনও অনুষ্ঠানে অতিথি হলেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এক ডজনেরও বেশি মূলধারার রাজনীতিবিদ। তাদের মধ্যে ছিলেন দু’জন ইউএস কংগ্রেসওম্যান, বেশ কয়েকজন নিউ ইয়র্ক ষ্টেট সেনেটর, ষ্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান।
প্রায় আড়াই দশক আগে, আমেরিকায় বাংলাদেশীদের সংখ্যা ছিলো একেবারেই নগন্য। তবু রাজনীতি-প্রেমি বাংলাদেশীদের দুই একজন সাহস করে যুক্ত হন মূলধারার রাজনীতিতে। তাদের একজন নিউইয়র্কের মোর্শেদ আলম। ষ্টেট সিনেটর পদে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েও পরাজিত হন। এরপর আর কোনও বাংলাদেশীকে দেখা যায়নি ষ্টেট পর্যায়ে প্রার্থী হতে। কিন্তু মোর্শেদ আলম স্বপ্ন দেখতে থাকেন-বাঙালীর রক্তে রাজনীতির দ্যোতনা তাদের একদিন নিয়ে যাবে ওইসব শীর্ষ স্থানে-যেখান থেকে বাংলাদেশীরা নিজেদের কথা নিজেরাই বলবে। নিজেরাই নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করবে। ভবিষ্যৎ সেই আকাঙ্কায় বাংলাদেশীদের ঐক্যবদ্ধ করতে মোর্শেদ আলম গড়ে তোলেন নিউ আমেরিকান ইয়ূথ ফোরাম, নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্লাব এবং নিউ আমেরকিান ওমেন্স ফোরাম। শুধু নামে নয়, এই অনুষ্ঠানে পরিপূর্ণ ভাবে দেখা গেলো নতুন এক বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটি। সেই কমিউনিটির সংঘবদ্ধ শক্তিকে সমিহ করেন সিনেটের মাইনরিটি দলের নেতা চাক শুমারও নির্দ্বিধায় স্বীকারও করেন তা। তিনি বলেন, বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটি খুবই শক্তিশালী কমিউনিটি। চাক শুমার ইউএস সেনেটে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান এবং সিনেট মাইনরিটি লিডার হিসেবে দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর আনোয়ার হোসেন সিনেটর চাকশুমারকে ক্রেস্ট প্রদান করে জানান সম্মান।
চাক শুমার নিজের অভিবাসী হওয়ার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘আমার নাম চাকশুমার অ্যালিস। অ্যালিস আইল্যান্ডে হাজারো অভিবাসীর সঙ্গে আমিও অভিবাসী হয়েছি। এবং আজ সিনেটে নেতৃত্ব দিচ্ছি। অভিবাসীদের কষ্ট, জীবন সংগ্রাম এবং উজ্জ্বল সম্ভাবনা আমি বুঝি বলেই অনুমান করি, একদিন আমেরিকার কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশীরা। শিক্ষা অর্থ-বাণিজ্য, বিজ্ঞান সবক্ষেত্রে তারাই থাকবে সবচেয়ে এগিয়ে।’ চাক শুমার আরো বলেন, ‘আমি গর্বিত এই জন্য যে আমেরিকার মধ্যে নিউইয়র্কেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশী বসবাস করে।’
আমেরিকার ৫০টি ষ্টেটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশীর বসবাস নিউইয়র্কে। তবু এখন পর্যন্ত এই কমিউনিটি থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়নি। বরং বাংলাদেশী কমিউনিটি যখন যে প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে তারাই নির্বাচিত হয়েছেন। যেকারণে কংগ্রেস ওম্যান গ্রেস মেং এবং ইভেক্ট ক্লার্ক বোঝেন এই কমউিনিটির গুরুত্বের কথা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ বললেন, অন্য কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে অনেক সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশীরা। এখন বাংলাদেশীদের সময় এসেছে নিজেদের নেতৃত্ব নিজেদের দেয়ার।
নিউইয়র্কের নির্বাচনী রাজনীতির মাঠে বর্তমানে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন, জনপ্রতিনিধি হতে লড়ছেন বিভিন্ন পদে। তাদের নির্বাচিত করতে বাংলাদেশী আমেরিকান তো বটেই, অন্য কমিউনিটিকেও এগিয়ে আসার আহŸান জানানো হয়।
ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং বিশ্বব্যাপী সকল শহীদ স্মরণে নিরবতা পালন করা হয়। নিউ আমেরিকান ইউয়্যুথ ফোরামের আনাফ আলম ও শেখ আল আমীন এবং নিউ আমেরিকান ওমেন্স ফোরামের রোমানা জেসমিন ও সালমা ফেরদৌস-এর অভ্যর্থনা শেষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নিউ আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মোর্শেদ আলম।
অনুষ্ঠানে সিনেটর চাক শুমার ছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ইউএস কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং ও ইভেক্ট ক্লার্ক, নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেটর জন ল্যু, অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিট ওয়েপ্রীন, নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক এডভোকেট জুমানী উইলিয়াম, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল মিজ সাদিয়া ফয়জুননেসা।
অনুষ্ঠানে মূলধারার রাজনীতিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এলিজাবেথ ক্রাউলী ছাড়াও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন নিউজার্সীর প্লেইন্স বরো সিটির কাউন্সিলম্যান মুক্তিযোদ্ধা নূরুন নবী, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, ষ্টেট অ্যাসেম্বলী ডিষ্টিক্ট-৩৭ এর আগামী প্রাইমারী নির্বাচনে প্রার্থী মেরী জোবায়দা, ষ্টেট অ্যাসেম্বলী ডিষ্টিক্ট-৩৪ এর প্রার্থী মওলা, জয় চৌধুরী, আগামী প্রাইমারী নির্বাচনে প্রার্থী নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিম্যান পদপ্রার্থী রাজিব গৌদা, মূলধারার রাজনীতিক মিলন রহমান, অ্যাসাল-এর জামিলা উদ্দিন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন, মোহাম্মদ আলী, আহমেদ শাকিল, কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম, ফিরোজ আহমেদ, আহসান হাবিব, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন সেলিম, পরেশ সাহা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আয়োজক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা মোর্শেদ আলমকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়াও কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য শাহ নেওয়াজ (নিউ আমেরিবান লিডার অব দ্যা ইয়ার), শায়লা আজিম (ওমেন এন্টারপ্রেনার অব দ্যা ইয়ার), গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ (বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্টস ওয়ার ভেটারান এন্ড অ্যাক্টিভিজম ইন মেইন স্ট্রীম অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স), এটর্নী হাসানুজ্জামান মালিক (ল’ইয়ার অব দ্যা ইয়ার), এলব্রেট বøাডিও (সিভিল রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট অব দ্যা ইয়ার), ড. জিনাত নবী (সাইনটিস্ট অব দ্যা ইয়ার), হেলাল উল করীম (বাংলাদেশী-আমেরিকান পলিটিক্যাল লিডার অব দ্যা ইয়ার) এবং টেকফিউস (কনসালটেন্ট ইউথ দ্যা মোস্ট জব রিপ্লেসমেন্ট অব দ্যা ইয়ার)-কে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। এতে স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আলী মাহমুদ।
সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নিউ আমেরিকান ওমেন্স ফোরামের সালেহা আলম ও রূপা আব্দুল্লাহ।
কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আব্দুল আওয়াল সিদ্দিকী, আলী ইমাম শিকদার,তাজুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান হাসান, এবিএম ওসমান গণি, ফাহিম রেজা নূর, হাসান জিলানী, মাকসুদুল হক চৌধুরী, মো: ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার প্রমুখ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী-আমেরিকান সপরিবারে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ছবি: নিহার সিদ্দিকী