বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত : যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কেউ পদ পেলেন না
- প্রকাশের সময় : ১০:৩৮:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ অগাস্ট ২০১৬
- / ৬৫৬ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: অবশেষে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকায় ৬ আগষ্ট এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদসহ ৫৯২ জনের নির্বাহী কমিটির নাম ঘোষণা করেন। এবার দলের নতুন কমিটিতে অনেক নতুন মুখ জায়গা পেলেও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোন নেতা-কর্মী জায়গা পাননি। এনিয়ে দলের কেউ কেউ মনোক্ষুন্ন। কারো মন্তব্য ‘দল করে কি পেলাম, কি লাভ’। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সম্মেলনের সাড়ে চার মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলো। সেই সম্মেলনে দলীয় চেয়ারপার্সন হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে রিজভী আহমেদসহ কয়েকজনের নাম ঘোষণা করা হয়।
প্রায় চার বছর হলো যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কোন কমিটি নেই। এই কমিটির দাবীতে দলীয় নেতা-কর্মীরা দ্বিধা-ত্রিধায় বিভক্ত হয়ে সভা-সমাবেশ, আন্দোলন করলেও আজো কেন্দ্র এব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য কমিটির ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় কেন্দ্রীয় বিএনপি। এই লক্ষ্যে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক মিলনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নেতা মিলন গত বছর প্রথম দফায় যুক্তরাষ্ট্র সফরকালীন সময়ে ছয়টি অঙ্গরাজ্যের কমিটি গঠন করেন। পরবর্তীতে এই কমিটিগুলো কেন্দ্র কর্তৃক অনুমোদনও পায়। কেন্দ্রীয় নেতা মিলন দ্বিতীয় দফা যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। এবার তিনি নিউইয়র্ক ষ্টেট কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী ১৪ আগষ্ট কাউন্সিলের মাধ্যমে নিউইয়র্ক ষ্টেট কমিটি গঠন করা প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়েছে পড়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
ইতিপূর্বে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্র সফরকালীন সময়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের সময় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি থেকেও ২/১জন স্থান পাবেন। কেন্দ্রীয় নেতা মিলনের বিভিন্ন সভা-সমাবেশের বক্তব্যেও এমন আভাষ পাওয়া যায়। দলের নেতা-কর্মীদের ধারণা ছিলো যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু এবং সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি ও সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস আহমেদ-এর মধ্যে কেউ না কেউ নতুন কমিটিতে স্থান পাবেন। আর তাদের কেন্দ্রে জায়গা দেওয়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতৃত্বের মধ্যকার দ্বিধা-বিভক্তির অবসান সহজ হবে। সূত্র মতে, সংশ্লিষ্ট নেতারা এব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও তারা কেন্দ্রের নতুন কমিটিতে জায়গা পাবেন এমন প্রত্যাশা জানিয়েছিলেন ঘনিষ্ঠজনদের কাছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকল আশা গুড়ে বালি হয়ে গেলো।
উল্লেখ্য, ১/১১-এর সময় গিয়াস আহমেদ কেন্দ্রীয় বিএনপি’র আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদ লাভ করেছিলেন। দলীয় চেয়ারপার্সন তাঁর বিশেষ ক্ষমতাবলে তাকে এই পদে নিয়োগ দেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যুবদল নেতা এম এ বাতেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্র জাসাস-এর সাবেক সভাপতি কেন্দ্রীয় জাসাস-এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া আশির দশকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে গিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক পদ অলংকৃত করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক মিলন। ইতিপূর্বে বিএনপি’র মনোনয়নে একাধিকবার জাতীয় সংসদের সদস্যও নিবাচিত এবং পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নতুন কমিটিতে একই পদে (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক) বহাল রয়েছেন। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, কমিউনিটির পরিচিত মুখ আতাউর রহমান আতা গত বছর বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত হলেও আজো তাকে বিএনপি, যুবদল বা ছাত্রদলের কোন কমিটিতে রাখা হয়নি।
কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নতুন কমিটি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তথা আমেরিকা মহাদেশ থেকে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোন নেতা কর্মীর স্থান না পাওয়া দু:খজনক। এব্যাপারে অনেকেই ফোন করে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। যুক্তরাজ্য থেকে চারজন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে একজনও স্থান না পাওয়ায় উত্তর আমেরিকার নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। সবার প্রত্যাশা ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মধ্যে কারো না কারো কেন্দ্রীয় কমিটিতে মূল্যায়ণ হবে। তারপরও বলবো, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, আমরা স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার রহমানের আদর্শের দল করি। আমাদের কাছে ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াস আহমেদ বলেন, নতুন কমিটিকে আমি অভিনন্দন জানাই। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি একটি শক্তিশালী হয়েছে এবং এই কমিটির নেতৃত্বে দেশ-প্রবাসে আওয়ামী-বাকশালী সরকারের পতন আন্দোলন ঘটিয়ে বাংলাদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখনো আরো কয়েকটি পদ খালি রয়েছে, তাই হতাশার কিছু নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সৈনিক হিসেবে আমরা পদ-পদবীর জন্য রাজনীতি নয়, শহীদ জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই রাজনীতি করি। তিনি বলেন, নতুন কমিটির নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আরো শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ হবেন এই বিশ্বাস রাখি। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)