নিউইয়র্ক ০২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার সি. আর. দত্ত (বীর উত্তম) আর নেই

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:২৬:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অগাস্ট ২০২০
  • / ৫০ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বর্ণাঢ্য গৌরবময় জীবনের অধিকারী মেজর জেনারেল (অব:) সি. আর. দত্ত (বীর উত্তম) আর নেই। তাঁর পুরো নাম চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। সোমবার রাত দিবাগত ১১:১৫ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বয়নটন বীচ জি বেথসদা (Boynton Beach Gi Bethesda) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
এদিকে মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্তের মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট সি আর দত্তের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্তের ভূমিকা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
সি আর দত্তের মৃত্যুতে পৃথক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান দেশ ও জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে চিরদিন স্মরণ রাখবে। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত ফ্লোরিডায় বসবাসকারী তার কন্যা কবিতা দত্তের বাসায় অবস্থানকালীন সময়ে গত ২০ আগষ্ট বাথরুমে পড়ে যান। এতে তার পা ভেঙে যায়। পরবর্তীতে হাসপাতালে তার সফল অপারেশন হলেও শারীরিক অবস্থার দ্রæত অবনতি ঘটতে থাকে। এছাড়াও তিনি বার্ধক্যজনিত শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন।
মুক্তধারা নিউইয়র্ক-এর কর্ণধার বিশ্বজিত সাহা জানান, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের প্যারেড অনুষ্ঠানে যোগ দেয়াই ছিল ঘরের বাইরে মেজর জেনারেল (অবঃ) সি আর দত্তের জীবনের শেষ অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২০১৬ সাল থেকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ৬ বছরের কর্মসূচী শুরু করে। ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টার মিলনায়তনে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগ দেন। ২০১৯ সালেও তাকে আমন্ত্রণজানানো হয় কিন্তু শরীর অসুস্থ থাকার ফলে তিনি আর যোগ দিতে পারেননি। জীবনের শেষ সময় তিনি পুত্র ও কন্যার কাছে নিউইয়র্কে বসবাস করতেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: সি. আর দত্তের জন্ম ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারী ভারতের আসামের শিলংয়ে। তার পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি গ্রামে। তার বাবার নাম উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত এবং মায়ের নাম লাবণ্য প্রভা দত্ত। শিলংয়ের লাবান গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে হবিগঞ্জে এসে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। হবিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে কলকাতার আশুতোষ কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়ে ছাত্রাবাসে থাকা শুরু করেন। পরে খুলনার দৌলতপুর কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন। পরে এই কলেজ থেকেই বিএসসি পাস করেন।
তিনি ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কিছুদিন পর ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন পান। ১৯৬৫ সালে সৈনিক জীবনে প্রথম যুদ্ধে লড়েন তিনি। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে আসালংয়ে একটা কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন তিনি। এই যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে পুরস্কৃত করে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানী সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউকি সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে চার নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে সি আর দত্তকে দায়িত্ব দেন। সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সিলেটের রশীদপুরে প্রথমে ক্যাম্প বানান সি আর দত্ত। চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চা-বাগান। চা-বাগানের আড়ালকে কাজে লাগিয়ে তিনি যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি যুদ্ধে আক্রমণের সুবিধার্থে রশীদপুর ছেড়ে মৌলভীবাজারে ক্যাম্প স্থাপন করেন।

নিউইয়র্ক বইমেলায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে সিআর দত্ত
তিনি ১৯৭২ সালে রংপুরে ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সীমান্ত রক্ষা প্রহরী গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সরকার। এই বিষয়ে সি আর দত্তকে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ সরকার। পরবর্তীকালে তিনি সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলস গঠন করেন। বর্তমানে এ বাহিনীর নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম মহাপরিচালক। এ ছাড়া, ১৯৭১-এর পর থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তাকে নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি হেড কোয়ার্টার চিফ অব লজিস্টিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৯ সালে বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮২ সালে তিনি পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় তিনি ৪নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্র্তৃক ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত হন। বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারের সময় তৎকালীন অবিভক্ত ঢাকার মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকা দেশের বীর সন্তানদের প্রতি সম্মান জানানোর অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ‘কাঁটাবন থেকে কাওরান বাজার সিগন্যাল’ পর্যন্ত সড়কটি ‘বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক’ নামে নামকরণ করা হয়।।
শোক প্রকাশ: যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দিন আজাদ, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক ড. আবদুল বাতেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদ-এর অন্যতম সভাপতি নবেন্দ দত্ত, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা ও বাকসু’র সাবেক জিএস ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফেরদৌস সাজেদীন, নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার আহবায়ক ড. জিয়াউদ্দীন আহমেদ এবং সিইও বিশ্বজিত সাহা প্রমুখ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার সি. আর. দত্ত (বীর উত্তম) আর নেই

প্রকাশের সময় : ০৩:২৬:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অগাস্ট ২০২০

হককথা ডেস্ক: বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বর্ণাঢ্য গৌরবময় জীবনের অধিকারী মেজর জেনারেল (অব:) সি. আর. দত্ত (বীর উত্তম) আর নেই। তাঁর পুরো নাম চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। সোমবার রাত দিবাগত ১১:১৫ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বয়নটন বীচ জি বেথসদা (Boynton Beach Gi Bethesda) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
এদিকে মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্তের মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট সি আর দত্তের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্তের ভূমিকা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
সি আর দত্তের মৃত্যুতে পৃথক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান দেশ ও জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে চিরদিন স্মরণ রাখবে। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত ফ্লোরিডায় বসবাসকারী তার কন্যা কবিতা দত্তের বাসায় অবস্থানকালীন সময়ে গত ২০ আগষ্ট বাথরুমে পড়ে যান। এতে তার পা ভেঙে যায়। পরবর্তীতে হাসপাতালে তার সফল অপারেশন হলেও শারীরিক অবস্থার দ্রæত অবনতি ঘটতে থাকে। এছাড়াও তিনি বার্ধক্যজনিত শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন।
মুক্তধারা নিউইয়র্ক-এর কর্ণধার বিশ্বজিত সাহা জানান, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের প্যারেড অনুষ্ঠানে যোগ দেয়াই ছিল ঘরের বাইরে মেজর জেনারেল (অবঃ) সি আর দত্তের জীবনের শেষ অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২০১৬ সাল থেকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ৬ বছরের কর্মসূচী শুরু করে। ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টার মিলনায়তনে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগ দেন। ২০১৯ সালেও তাকে আমন্ত্রণজানানো হয় কিন্তু শরীর অসুস্থ থাকার ফলে তিনি আর যোগ দিতে পারেননি। জীবনের শেষ সময় তিনি পুত্র ও কন্যার কাছে নিউইয়র্কে বসবাস করতেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: সি. আর দত্তের জন্ম ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারী ভারতের আসামের শিলংয়ে। তার পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি গ্রামে। তার বাবার নাম উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত এবং মায়ের নাম লাবণ্য প্রভা দত্ত। শিলংয়ের লাবান গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে হবিগঞ্জে এসে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। হবিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে কলকাতার আশুতোষ কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়ে ছাত্রাবাসে থাকা শুরু করেন। পরে খুলনার দৌলতপুর কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন। পরে এই কলেজ থেকেই বিএসসি পাস করেন।
তিনি ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কিছুদিন পর ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন পান। ১৯৬৫ সালে সৈনিক জীবনে প্রথম যুদ্ধে লড়েন তিনি। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে আসালংয়ে একটা কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন তিনি। এই যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে পুরস্কৃত করে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানী সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউকি সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে চার নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে সি আর দত্তকে দায়িত্ব দেন। সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সিলেটের রশীদপুরে প্রথমে ক্যাম্প বানান সি আর দত্ত। চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চা-বাগান। চা-বাগানের আড়ালকে কাজে লাগিয়ে তিনি যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি যুদ্ধে আক্রমণের সুবিধার্থে রশীদপুর ছেড়ে মৌলভীবাজারে ক্যাম্প স্থাপন করেন।

নিউইয়র্ক বইমেলায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে সিআর দত্ত
তিনি ১৯৭২ সালে রংপুরে ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সীমান্ত রক্ষা প্রহরী গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সরকার। এই বিষয়ে সি আর দত্তকে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ সরকার। পরবর্তীকালে তিনি সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলস গঠন করেন। বর্তমানে এ বাহিনীর নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম মহাপরিচালক। এ ছাড়া, ১৯৭১-এর পর থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তাকে নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি হেড কোয়ার্টার চিফ অব লজিস্টিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৯ সালে বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮২ সালে তিনি পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় তিনি ৪নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্র্তৃক ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত হন। বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারের সময় তৎকালীন অবিভক্ত ঢাকার মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকা দেশের বীর সন্তানদের প্রতি সম্মান জানানোর অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ‘কাঁটাবন থেকে কাওরান বাজার সিগন্যাল’ পর্যন্ত সড়কটি ‘বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক’ নামে নামকরণ করা হয়।।
শোক প্রকাশ: যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দিন আজাদ, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক ড. আবদুল বাতেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদ-এর অন্যতম সভাপতি নবেন্দ দত্ত, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা ও বাকসু’র সাবেক জিএস ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফেরদৌস সাজেদীন, নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার আহবায়ক ড. জিয়াউদ্দীন আহমেদ এবং সিইও বিশ্বজিত সাহা প্রমুখ।