নিউইয়র্ক ০৭:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন অবিলম্বে পাশ করার দাবী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৩২:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১২৬ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: ইউনাইটেড হিন্দুস অফ ইউএসএ’র উদ্যোগে জাতিসংঘ ভবন সংলগ্ন ডাগ হেমারশোল্ড প্লাজায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর রাজনৈতিক জোটের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশ করার দাবিতে এক কেন্ডেল লাইট ভিজিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এই সমাবেশ চলে। সংগঠনের সভাপতি ভজন সরকারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রামদাস ঘরামীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে নিউইয়র্ক শহরের অন্যান্য বাংলাদেশেী সংখ্যালঘু সংগঠনের প্রতিনিধিরাও যোগ দেন।
সমাবেশে ইউনাইটেড হিন্দুস অফ ইউএসএ’র চেয়ারম্যান ড. প্রভাত দাস এবং সভাপতি ভজন সরকার তাদের বক্তব্যে নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অন্যান্য সেক্টরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জনের প্রশংসা করে বলেন যে, অত্যন্ত দু:খজনক বিষয় হলো দেশে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার অসহায় পৌনে দুই কোটি হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু নাগরিকের নিরাপত্তা ও সম-অধিকারের ব্যাপারে সরকার নির্বিকার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমলেই নিচ্ছেন না। তাই, এর প্রতি সরকার প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই সমাবেশ। তারা অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলেন যে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগের আমলেও হাজার হাজার সংখ্যালঘু নাগরিক অত্যাচারিত হয়ে দেশেত্যাগে বাধ্য হবে সেটা অনভিপ্রেত। তারা বলেন যে, ওয়শিংটনস্থ বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত ইমরান আহমেদের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী বরাবরে প্রেরিত স্মারকলিপির মাধমে এবং আজকের সমাবশে থেকে জানানো দাবি একটাই- প্রধানমন্ত্রী যেন আর বিলম্ব না করে, বর্তমান সংসদের এই চলমান শেষ সেশনে তাঁর ২০১৮ সালের নির্বচনী ইশতেহারে প্রদত্ত স্বপ্রতিশ্রæত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনটি ত্বরিৎ গতিতে পাশ করেন, ঠিক যেমনি সাইবার সিকিউরিটি আইন পাশ করা হলো।
সভায় অন্যান্য আরো বক্তব্য রাখেন শিতাংশু গুহ, ড. দ্বিজেন ভটাচার্য, সুশীল সিনহা, ভবতোষ মিত্র, সনজিৎ কুমার ঘোষ, জয়দেব গাইন, উত্তম কুমার সাহা, রতন কুমার চক্রবর্তি, মুনমুন সাহা, রতœা ঘোষ, তপু সরকার, শংকর বিশ্বাস, পূজিতা দাশ, রতœাবতী রায়, পলাশ ঘোষ, পরেশ ধর, দেবব্রত যোষ, সুমন সূত্রধর প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মকান্ডের প্রশংসার পাশাপাশি গভীর হতাশা এবং ক্ষোভও প্রকাশ করেন। অত্যন্ত দু:খ করে তারা বলেন, দেশে সবার দাবিই চাওয়া মাত্র মেনে নেওয়া হয়, কিন্ত শত্রæ সম্পত্তি আইন বাতিল করার জন্য, কিংবা রমনা কলীবাড়িতে প্রবেশাধিকারে জন্য আমাদের যুগ যুগ ধরে আন্দেলন করতে হয়েছে। আর এখন, ২০১৮ সালে প্রতশ্রæত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশ করার জন্য ২০২৩ সালেও দেশে সংখ্যালঘুদের মিছিল-সমাবেশ-লং মার্চ ও অনশন ধর্মাঘট করতে হচ্ছে, এখানে আমাদের সমাবেশ করতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। বক্তারা বলেন, এক দিকে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম আইন পাশ করে দিয়ে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে, অন্যদিকে সংখ্যালঘু নির্যাতকদের কোন দিনই বিচারের আওতায় না আনার ফলে সাম্প্রদায়িক শক্তি সংখ্যালঘু নির্যাতনে উৎসাহ পেয়েছে। প্রচলিত আইনে সংখ্যালঘু নির্যাতকদের দমন করা সম্ভব নয় উপলব্ধি করেই প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। সেটা সরকার গঠন করার পরপরই সংসদের প্রথম অধিবেশনে পাশ করে দিলে দেশে ২০২১-এর অক্টেবরের নারকীয় তান্ডব ঘটত না বলেও বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন যে, নিরন্তর জমি ও বাড়িঘর দখল, দেবালয়-দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস করা, উচ্ছেদ, ধর্ষন, বিভিন্নভাবে ধর্মান্তরিত করা ইত্যাদি বর্বর অত্যাচারের মুখে বাধ্য হয়ে দেশত্যাগের ফলে বাংলাদেশ আমলে, আপনার চোখের সামনে, দেশের মোট জনসংখ্যায় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব প্রায় ২০% (১৯৭০) থেকে নেমে ৯.১%-এ (শুধু হিন্দু ৭.৯৫%-এ) পৌঁছেছে। এবং গবেষকদের ভবিষদ্বানী আগামী তিরিশ বছরে বাংলাদেশ হিন্দুশূন্য হবে। দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকদের এই নিশ্চিত করুণ পরিণতি ঠেকানো সম্ভব এবং ঠেকাতেই হবে। বক্তারা বলেন যে, মাঝেমাঝেই প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন যে, “বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, সকলেরই সমান অধিকার রয়েছে” কিস্ত বাস্তবতা তো এর ঠিক বিপরীত। তাই সত্য স্বীকার করে নিয়ে, সমস্যার একটি টেকসই সমাধান করাই বরং শ্রেয়:, আর সেটা হল অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশ করা যার অন্তর্ভুক্ত অবশ্যই থাকা চাই-
১ (ক) সংখ্যালঘু নাগরিকদের “সংখ্যালঘু” বলে স্বীকৃতি প্রদান, খ) একটি হেইট স্পীচ ও হেইট ক্রাইম আইন, যার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের মত সরকার-বাদী-মোকদ্দমার মাধ্যমে হাইকোর্টের একটি বিশেষ ডিভিশনের তত্বাবধানে সংখ্যালঘু নির্যাতকের বিচার ও শাস্তি প্রদানের বিধান; গ) সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচারের জন্য জেলা প্রতি একটি করে দ্রæত-বিচারের ক্ষমতা সম্পন্ন আদালত, (২) জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন, (৩) একটি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়, (৪) বাতিলকৃত অর্পিত সম্পত্তি আইনে অধিগৃহীত সকল সম্পত্তি প্রকৃত মালিককে দ্রæত ফিরিয়ে দেওয়ার বিধান, (৫) সংসদে অন্তত: ২০% আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থীদের মনোনয়ন দানের বিধান, (৬) জজ সাহাবুদ্দীন কমিশন কর্তৃক বিচারের জন্য সুপারিশকৃত হাজার হাজার সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করার ব্যবস্থা, (৭) একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন পূর্বক ২০০৬ থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনের অপরাধীদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট আদালতের কাছে হস্তান্তর করা এবং নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্তদের যথেষ্ট পরিমান ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের পুনর্বাসন এবং শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, (৮) প্রতি জেলায় অন্তত: একটি করে মেগা মন্দির নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা এবং কাজ শুরু করার নির্দেশ, (৯) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আদলে হিন্দু ফাউন্ডেশেন গঠন করার জন্য নির্দেশ ও অর্থ বরাদ্দ করা, (১০) দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ আইন এবং (১১) ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনরুজ্জিবীত করা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন যে, প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো কিন্ত নতুন কিছু নয়- বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ’সব আইন আছে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে আছে হেইট ক্রাইম আইন, ভারতে রয়েছে সংখ্যালঘু কমিশন এবং সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়। বক্তারা দৃঢ় আশা ব্যক্ত করেন যে, তাদের প্রস্তাবগুলোর আশু বাস্তবায়ন হলে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, এবং তখন দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকরা স্বাভাবকি জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে, যা দেশের সকল প্রগতিশীল মানুষের কাছেই কাম্য। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন অবিলম্বে পাশ করার দাবী

প্রকাশের সময় : ০২:৩২:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিউইয়র্ক: ইউনাইটেড হিন্দুস অফ ইউএসএ’র উদ্যোগে জাতিসংঘ ভবন সংলগ্ন ডাগ হেমারশোল্ড প্লাজায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর রাজনৈতিক জোটের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশ করার দাবিতে এক কেন্ডেল লাইট ভিজিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এই সমাবেশ চলে। সংগঠনের সভাপতি ভজন সরকারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রামদাস ঘরামীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে নিউইয়র্ক শহরের অন্যান্য বাংলাদেশেী সংখ্যালঘু সংগঠনের প্রতিনিধিরাও যোগ দেন।
সমাবেশে ইউনাইটেড হিন্দুস অফ ইউএসএ’র চেয়ারম্যান ড. প্রভাত দাস এবং সভাপতি ভজন সরকার তাদের বক্তব্যে নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অন্যান্য সেক্টরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জনের প্রশংসা করে বলেন যে, অত্যন্ত দু:খজনক বিষয় হলো দেশে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার অসহায় পৌনে দুই কোটি হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু নাগরিকের নিরাপত্তা ও সম-অধিকারের ব্যাপারে সরকার নির্বিকার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমলেই নিচ্ছেন না। তাই, এর প্রতি সরকার প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই সমাবেশ। তারা অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলেন যে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগের আমলেও হাজার হাজার সংখ্যালঘু নাগরিক অত্যাচারিত হয়ে দেশেত্যাগে বাধ্য হবে সেটা অনভিপ্রেত। তারা বলেন যে, ওয়শিংটনস্থ বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত ইমরান আহমেদের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী বরাবরে প্রেরিত স্মারকলিপির মাধমে এবং আজকের সমাবশে থেকে জানানো দাবি একটাই- প্রধানমন্ত্রী যেন আর বিলম্ব না করে, বর্তমান সংসদের এই চলমান শেষ সেশনে তাঁর ২০১৮ সালের নির্বচনী ইশতেহারে প্রদত্ত স্বপ্রতিশ্রæত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনটি ত্বরিৎ গতিতে পাশ করেন, ঠিক যেমনি সাইবার সিকিউরিটি আইন পাশ করা হলো।
সভায় অন্যান্য আরো বক্তব্য রাখেন শিতাংশু গুহ, ড. দ্বিজেন ভটাচার্য, সুশীল সিনহা, ভবতোষ মিত্র, সনজিৎ কুমার ঘোষ, জয়দেব গাইন, উত্তম কুমার সাহা, রতন কুমার চক্রবর্তি, মুনমুন সাহা, রতœা ঘোষ, তপু সরকার, শংকর বিশ্বাস, পূজিতা দাশ, রতœাবতী রায়, পলাশ ঘোষ, পরেশ ধর, দেবব্রত যোষ, সুমন সূত্রধর প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মকান্ডের প্রশংসার পাশাপাশি গভীর হতাশা এবং ক্ষোভও প্রকাশ করেন। অত্যন্ত দু:খ করে তারা বলেন, দেশে সবার দাবিই চাওয়া মাত্র মেনে নেওয়া হয়, কিন্ত শত্রæ সম্পত্তি আইন বাতিল করার জন্য, কিংবা রমনা কলীবাড়িতে প্রবেশাধিকারে জন্য আমাদের যুগ যুগ ধরে আন্দেলন করতে হয়েছে। আর এখন, ২০১৮ সালে প্রতশ্রæত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশ করার জন্য ২০২৩ সালেও দেশে সংখ্যালঘুদের মিছিল-সমাবেশ-লং মার্চ ও অনশন ধর্মাঘট করতে হচ্ছে, এখানে আমাদের সমাবেশ করতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। বক্তারা বলেন, এক দিকে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম আইন পাশ করে দিয়ে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে, অন্যদিকে সংখ্যালঘু নির্যাতকদের কোন দিনই বিচারের আওতায় না আনার ফলে সাম্প্রদায়িক শক্তি সংখ্যালঘু নির্যাতনে উৎসাহ পেয়েছে। প্রচলিত আইনে সংখ্যালঘু নির্যাতকদের দমন করা সম্ভব নয় উপলব্ধি করেই প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। সেটা সরকার গঠন করার পরপরই সংসদের প্রথম অধিবেশনে পাশ করে দিলে দেশে ২০২১-এর অক্টেবরের নারকীয় তান্ডব ঘটত না বলেও বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন যে, নিরন্তর জমি ও বাড়িঘর দখল, দেবালয়-দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস করা, উচ্ছেদ, ধর্ষন, বিভিন্নভাবে ধর্মান্তরিত করা ইত্যাদি বর্বর অত্যাচারের মুখে বাধ্য হয়ে দেশত্যাগের ফলে বাংলাদেশ আমলে, আপনার চোখের সামনে, দেশের মোট জনসংখ্যায় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব প্রায় ২০% (১৯৭০) থেকে নেমে ৯.১%-এ (শুধু হিন্দু ৭.৯৫%-এ) পৌঁছেছে। এবং গবেষকদের ভবিষদ্বানী আগামী তিরিশ বছরে বাংলাদেশ হিন্দুশূন্য হবে। দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকদের এই নিশ্চিত করুণ পরিণতি ঠেকানো সম্ভব এবং ঠেকাতেই হবে। বক্তারা বলেন যে, মাঝেমাঝেই প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন যে, “বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, সকলেরই সমান অধিকার রয়েছে” কিস্ত বাস্তবতা তো এর ঠিক বিপরীত। তাই সত্য স্বীকার করে নিয়ে, সমস্যার একটি টেকসই সমাধান করাই বরং শ্রেয়:, আর সেটা হল অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশ করা যার অন্তর্ভুক্ত অবশ্যই থাকা চাই-
১ (ক) সংখ্যালঘু নাগরিকদের “সংখ্যালঘু” বলে স্বীকৃতি প্রদান, খ) একটি হেইট স্পীচ ও হেইট ক্রাইম আইন, যার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের মত সরকার-বাদী-মোকদ্দমার মাধ্যমে হাইকোর্টের একটি বিশেষ ডিভিশনের তত্বাবধানে সংখ্যালঘু নির্যাতকের বিচার ও শাস্তি প্রদানের বিধান; গ) সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচারের জন্য জেলা প্রতি একটি করে দ্রæত-বিচারের ক্ষমতা সম্পন্ন আদালত, (২) জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন, (৩) একটি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়, (৪) বাতিলকৃত অর্পিত সম্পত্তি আইনে অধিগৃহীত সকল সম্পত্তি প্রকৃত মালিককে দ্রæত ফিরিয়ে দেওয়ার বিধান, (৫) সংসদে অন্তত: ২০% আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থীদের মনোনয়ন দানের বিধান, (৬) জজ সাহাবুদ্দীন কমিশন কর্তৃক বিচারের জন্য সুপারিশকৃত হাজার হাজার সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করার ব্যবস্থা, (৭) একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন পূর্বক ২০০৬ থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনের অপরাধীদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট আদালতের কাছে হস্তান্তর করা এবং নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্তদের যথেষ্ট পরিমান ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের পুনর্বাসন এবং শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, (৮) প্রতি জেলায় অন্তত: একটি করে মেগা মন্দির নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা এবং কাজ শুরু করার নির্দেশ, (৯) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আদলে হিন্দু ফাউন্ডেশেন গঠন করার জন্য নির্দেশ ও অর্থ বরাদ্দ করা, (১০) দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ আইন এবং (১১) ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনরুজ্জিবীত করা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন যে, প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো কিন্ত নতুন কিছু নয়- বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ’সব আইন আছে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে আছে হেইট ক্রাইম আইন, ভারতে রয়েছে সংখ্যালঘু কমিশন এবং সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়। বক্তারা দৃঢ় আশা ব্যক্ত করেন যে, তাদের প্রস্তাবগুলোর আশু বাস্তবায়ন হলে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, এবং তখন দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকরা স্বাভাবকি জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে, যা দেশের সকল প্রগতিশীল মানুষের কাছেই কাম্য। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।