বাংলাদেশের বিচার বিভাগ হান্ড্রেড পার্সেন্ট স্বাধীন: নিউইয়র্কে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা

- প্রকাশের সময় : ০৫:৪২:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৬
- / ১১২৯ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: ‘বাংলাদেশ ল’ সোসাইটি ইউএসএ ইনক’ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার ও বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনায় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন, বাংলাদেশে আইনের শাসন বিদ্যমান। ক্রমান্বয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম ডিজিটাল করা হচ্ছে। আদালতগুলো থেকে ন্যায় বিচার পাওয়ায় বিচার বিভাগ যে শেষ আশ্রয় স্থল দেশের মানুষ তা উপলব্দি করছে। তিনি বলেন, আগে সকলেই বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক সরকারের অঙ্গ হিসেবে মনে করতেন। প্রকৃত অর্থে বিচার বিভাগ হচ্ছে রাষ্ট্রের অঙ্গ এবং দেশের বিচার বিভাগ হান্ড্রেড পার্সেন্ট স্বাধীন।’ তিনি আরো বলেন, দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন বলেই মার্শাল ল’ আর কখনোই বাংলাদেশের মানুষের ওপর চেপে বসার সুযোগ পাবে না
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সম্মানে আয়োজিত সম্বর্ধনা ও আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। সিটির এস্টোরিয়াস্থ ক্লাব সনমে ১৬ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এডভোকেট মোর্শেদা জামান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর ল’ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম এ ওয়াহিদের নেতৃত্বে প্রবাসী আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্যে বাংলাদেশ ল’ সোসাইটির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের নেতা এডভোকেট শাহ বখতিয়ার। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ল’ সোসাইটির আমন্ত্রণেই প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সংক্ষিপ্ত এক সফরে ১৫ অক্টোবর শনিবার সকালে নিউইয়র্কে আসেন।
অনুষ্ঠান মঞ্চে অতিথি হিসেবে উপবিষ্ট ছিলেন বিচারপতি আবুল তারেক, বিচারপতি এম আর হাসান, সংসদ সদস্য ওয়ারেস হাসান খান বেলাল, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, এটর্নী অশোক কর্মকার, এটর্নী মঈন চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ ছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ল’ সোসাইটির সহ সভাপতি এ এস এম ফেরদৌস, সহকারী এটর্নী জেনারেল আব্দুর রকিব মন্টু প্রমুখ।
এনআরবি নিউজ-এর খবরে বলা হয়: বিষয়ভিত্তিক এই আলোচনায় প্রধান বিচারপতি সিনহা বলেন,‘সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী সরকার গঠন ও পরিবর্তনের ভিত্তি তৈরী হয়েছে বাংলাদেশে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন বলেই মার্শাল ল’ আর কখনোই বাংলাদেশের মানুষের ওপর চেপে বসার সুযোগ পাবে না। বাংলাদেশের আইন বিভাগ মার্শাল ল’কে চিরতরে কবর দিতে সক্ষম হয়েছে।’
প্রধান বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘বিভিন্ন সেক্টরের মত বিচার বিভাগেও কিছু দুর্নীতি এখনও রয়েছে। এটি অস্বীকারের উপায় নেই। তবে তার অবসানে আমরা সকলে আন্তরিক অর্থেই সচেষ্ট রয়েছি।’
এস কে সিনহা বলেন, ‘বিচারের জট খুলতে আমি শুরু থেকেই তৎপর। সে কারণে অনেকটা কমেছে। ক্রমান্বয়ে বিচার নিয়ে বিলম্ব ঘটার বিড়ম্বনা একেবারেই কমে যাবে।’ ‘বিচার বিভাগ যথাযথভাবে পরিচালনার জন্যে সুনির্দিষ্ট ফাউন্ডেশন তৈরী হয়েছে এখন। সুতরাং পরবর্তীতে যারা কাজ করবেন, তাদের বড় ধরনের সমস্যা হবে না। এখন থেকে সবকিছু আইন অনুযায়ী চালাতেও কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।’ অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এস কে সিনহা বলেন, ‘আমার বিচার বিভাগ এখন হান্ড্রেড পার্সেন্ট স্বাধীন’। সরকারের কোন পর্যায় থেকেই কোন ধরনের হস্তক্ষেপের ঘটনা নেই। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধসহ স্পর্শ কাতর সকল মামলা পরিচালিত হচ্ছে আইন অনুযায়ী। রাজনৈতিক কারণে অনেকে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নের অবতারণা করছেন। যদিও সেই রাজনীতিকরাও পুরো সুবিধা পাচ্ছেন নিজেদের মামলাতেও। এটি সর্বজনবিদিত। আর এভাবেই বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষায় বিচার বিভাগ তার ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এখন একযোগে কাজ করছে’। বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোর সহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখন কোন কিছুই চেপে রাখা সম্ভব নয়। মিডিয়া সোচ্চার থাকায় আমরাও সঠিকভাবে কাজে তৃপ্তি পাচ্ছি।’
সভায় এডভোকেট মোর্শেদা জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বহুমুখী কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যেই ‘জাতির জনক‘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার চলছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে জ্বালাও-পোড়াও সহ জঙ্গিবাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব পথ বেয়েই বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতি ঘটছে। মোর্শেদা জামান বলেন, মানবতা এবং গণতন্ত্রে আদৌ বিশ্বাসী নয়-এমন কতক মহলের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দেশপ্রেমিক প্রতিটি প্রবাসীকে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
মুক্ত আলোচনা আয়োজনে সার্বিক সমন্বয় করছেন এটর্নী অশোক কর্মকার, এডভোকেট মোহাম্মদ আলী বাবুল, এডভোকেট মজিবর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুধীজনের মধ্যে প্রধান বিচারপতির সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ঠিকানার প্রেসিডেন্ট ও সিইও সাঈদ-উর রব এবং চেয়ারম্যান সাবেক এমপি এম এম শাহীন।
এদিকে প্রধান বিচারপতি সিনহা ১৫ অক্টোবর শনিবার সকাল ৯টায় জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিশিষ্ট প্রবাসীরা তাকে স্বাগত জানান। এসময় অন্যান্যের মধ্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, কনসাল জেনারেল শামীম আহসান সহ বাংলাদেশ ল’ সোসাইটির নেতৃবৃন্দ বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। ১৯ অক্টোবর বুধবার তাঁর ঢাকার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগের কথা। এর আগে তিনি বস্টনে তার স্বজনদের সাথে মিলিত হবেন।