নিউইয়র্ক ০৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশী কমিউনিটিকেই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:১৯:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ মে ২০১৮
  • / ৮৬৭ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হোপ বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ফাস্ট ইউএসএ সাউথ এশিয়ান ফ্রেন্ডশীপ কনভেনশন’-এ বক্তারা বলেছেন,  বাংলাদেশের কল্যাণে অভিবাসী বাংলাদেশীদের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন কমিউনিটি এম্পাওয়ারমেন্ট জোরদার করা। বাংলাদেশী-আমেরিকানরা মূলধারায় যত বেশী সম্পৃক্ত হবেন, স্থানীয় প্রশাসন সহ ইউএস কংগ্রেস-সিনেটে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবেন তারা ততবেশী কমিউনিটির জন্য কাজ করতে পারবেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশী কমিউনিটিকেই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। কমিউনিটিকে শক্তিশালী করতে হবে। আর কমিউনিটি শক্তিশালী হলে বালাদেশও শক্তিশালী হবে।
কনভেনশনে অপরাপর বক্তারা প্রেডিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আমরা ইমিগ্র্যান্টরা ‘আন্ডার অ্যাট্যাক’। এখনই সময় ঐক্যবদ্ধভাবে একই ভয়েস রেইজ করা। জোড়েসোরে নিজেদের অধিকার তুলে ধরা।
জ্যাকসন হাইটসের বেলিজনো পার্টি হলে গত ৩ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কংগ্রেসওম্যান নাদিয়া ভ্যালাজকুইজ, নিউইয়র্ক ষ্টেট অ্যাসেম্বীম্যান মাইকেল সি. সোলাজেজ, অ্যাসেম্বলীম্যান মাইকেল ডেন ডেকার, অ্যাসেম্বলীম্যান ফিল রামোস, অ্যাসেম্বলীওম্যান মিখাইল সি সোলাজেস, এটর্নী ডেভিড কংগোল্ড, নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শওকত আলী, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, হোপ বাংলাদেশ-এর নীরা রব্বানী ও আয়োজক জ্যাকব মিল্টন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের প্রফেসর ড. জিলানী ওয়ার্সী।
অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য অ্যাসেম্বলীম্যান ফিল রামোস-এর পক্ষ থেকে একটি প্রতিষ্ঠান ও ৪জন বাংলাদেশীকে সাইটেশন প্রদান করা হয়। সাইটেশন প্রাপ্তরা হলেন বংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মরহুম জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের কলাম্বাস খ্যাত কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মরহুম ইব্রাহীম চৌধুরী এবং উই আর দ্য পিপল ইনক।  মরহুম জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী, বেগম খালেদা জিয়া, মাহমুদুর রহমান ও মরহুম ইব্রাহীম চৌধুরীর পক্ষে প্রতিনিধিরা তাদের সাইটেশন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান চলাকালে ভিডিও-তে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারের মানবাধিকার বিরোধী কর্মকান্ড বিশেষ করে নারী-শিশু নির্যাতন, বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের উপর পুলিশী নির্যাতন, গ্রেফতার প্রভৃতি তুলে ধরা হয়। সন্ধ্যা ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কনভেনশনের মূল পর্ব চলে।
অনুষ্ঠানে কংগ্রেসওম্যান নাদিয়া ভ্যালাজকুইজ বলেন, আমাদের জানতে হবে আমরা কমিউনিটিতে কতটুকু ইম্পাওয়ার বৃদ্ধি করতে পেরেছি। আমাদের কমিউনিটির সমস্যা ইউএস অফিসিয়ালদের জানাতে হবে। সিটি কাউন্সিলম্যান, ইউএস কংগ্রেসম্যান ও সিনেটরদের কমিউনিটির সমস্যা জানাতে হবে। প্রয়োজনে সোস্যাল মিডিয়ায় সমস্যাগুলো তুলে ধরতে হবে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে তার আগে কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী করতে হবে, স্টংগ্রার হতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কর্মকান্ডের সমালোচনা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে সুন্দর দেশ হিসেবে গড়তে হলে পলিটিক্যাল ম্যাসল তৈরী করতে হবে। বাংলাদেশী কমিউনিটি সহ সকল নেইবরকে (প্রতিবেশী) শক্তিশালী করতে হবে। সবাইকে ভোটার হতে হবে।
অ্যাসেম্বলীম্যান ফিল রামোস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এশিয়ান কমিউনিটি শিক্ষিত কমিউনিটি। দিনে দিনে কমিউনিটির রূপ পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশ বিষয়ক ভিডিও চিত্রের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রসঙ্গত তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই।
অ্যাসেম্বীম্যান মাইকেল ডেনডেকার বলেন, পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, কমিউনিটির সবাইকে একই ভয়েজ রেইজ করতে হবে। কমিউনিটিকে একসাথে থাকতে হবে এবং একসাথে লড়তে হবে। তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই নিজ নিজ কমিউনিটি আর দেশের জন্য অনেক কিছুই করার রয়েছে।
অ্যাসেম্বলীওম্যান মিখাইল সি সোলাজেস বলেন, নিজের ভয়েস নিজেদেরকেই রেইজ করতে হবে। ইমিগ্রান্টদের সামাজিক শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। ইস্যু ভিত্তিক সমস্যা নিয়ে অফিসিয়ালদের সাথে কথা বলতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা ইমিগ্র্যান্টরা মেজরিটি হলেও আমরা ট্রাস্প প্রশাসনের ‘আন্ডার অ্যাট্যাক’।
এটর্নী ডেভিড কংগোল্ড তার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলা ও কারাবরণ বিষয় তুলে ধরে বলেন, খালেদা জিয়া ও তার দলের লোকেরা প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়ের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে।
হোপ বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট জ্যাকব মিল্টন বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোট এবং গরীব দেশ। ১৮ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু দেশের সন্তান হিসেবে জন্মভূমি বাংলাদেশের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার রয়েছে। কাউকে না, কাউকে কিছু করতে হবে। দেশে প্রতিনিয়ত গুম, খুন, হত্যাকান্ড ঘটছে। মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। আমরা এই অবস্থা দেখতে চাই না। দুর্নীতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন এবং এই অবস্থায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐক্যবদ্ধ ভয়েজ রেইজ করতে হবে।
উল্লেখ্য, জ্যাকব মিল্টন তার বক্তব্যের আগে ডিএমপি’র ডিবি শাখার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য’র সাথে তার সাম্প্রতিক টেলি কনফারেন্সের কথোপকথন ভিডিও-তে তুলে ধরেন। এতে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় বিষয়ক ছাড়াও হলিঅর্টিজেনে সন্ত্রাসী হামলা, সাদা পোশাকে অস্ত্রধারী কর্তৃক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা-কে ভয় দেখানো সহ প্রভৃতি বিষয়ে প্রশ্ন-উত্তর তুলে ধরা হয়। উত্তরে ডিএিমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন, যাতে মানবাধিকার লংঘন, পুলিশ বাহিনী তথা সরকারের জোড়জুলুমের চিত্রই ফুটে উঠেছে।
অনুষ্ঠানে ড. শওকত আলী বলেন, আজকের কনভেশন একটি ইউনিক অনুষ্ঠান। এটি দেশ ও জাতির জন্য সময়োপযুগী। এই কনভেনশন কমিউনিটি আর দেশের মানুষকে উদ্ভুদ্ধ হবে। তিনি ক্ষমতাসীন সরকারের কর্মকান্ডের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যাংক থেকে লুটপাট করা হচ্ছে। অথচ সরকার নির্বকার।
ড. শওকত আলী নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের একটি বক্তব্যের উদৃতি দিয়ে গণতন্ত্রের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা দরকার মন্তব্য এবং কনভেনশনের আয়োজন এবং জ্যাকব মিল্টনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
নীরা রব্বানী ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমার জন্মভুমি বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর পরই এক দলীয় শাসনে, এক ব্যক্তির শাসনে পরিণত হয়। মিডিয়ার স্বাধীনতা রোধ করা হয়। আর বাংলাদেশ আজ গুম-খুন-হত্যায় বদ্ধ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্র্যাসী’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, অন্যানভাবে তিন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্স বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তিনি সাধারণ নারী নন। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তিনি বলেন, তারুন্যের প্রতীক, নতুন প্রজন্মের অহংকার এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারের অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ড এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি ইউএস কংগ্রেসম্যান ও সিনেটরদের করনীয় ব্যাপারে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। নৈশভোজের মধ্য দিয়ে কনভেনশনের সমাপ্তি ঘটে। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশী কমিউনিটিকেই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে

প্রকাশের সময় : ০৪:১৯:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ মে ২০১৮

নিউইয়র্ক: নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হোপ বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ফাস্ট ইউএসএ সাউথ এশিয়ান ফ্রেন্ডশীপ কনভেনশন’-এ বক্তারা বলেছেন,  বাংলাদেশের কল্যাণে অভিবাসী বাংলাদেশীদের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন কমিউনিটি এম্পাওয়ারমেন্ট জোরদার করা। বাংলাদেশী-আমেরিকানরা মূলধারায় যত বেশী সম্পৃক্ত হবেন, স্থানীয় প্রশাসন সহ ইউএস কংগ্রেস-সিনেটে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবেন তারা ততবেশী কমিউনিটির জন্য কাজ করতে পারবেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশী কমিউনিটিকেই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। কমিউনিটিকে শক্তিশালী করতে হবে। আর কমিউনিটি শক্তিশালী হলে বালাদেশও শক্তিশালী হবে।
কনভেনশনে অপরাপর বক্তারা প্রেডিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আমরা ইমিগ্র্যান্টরা ‘আন্ডার অ্যাট্যাক’। এখনই সময় ঐক্যবদ্ধভাবে একই ভয়েস রেইজ করা। জোড়েসোরে নিজেদের অধিকার তুলে ধরা।
জ্যাকসন হাইটসের বেলিজনো পার্টি হলে গত ৩ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কংগ্রেসওম্যান নাদিয়া ভ্যালাজকুইজ, নিউইয়র্ক ষ্টেট অ্যাসেম্বীম্যান মাইকেল সি. সোলাজেজ, অ্যাসেম্বলীম্যান মাইকেল ডেন ডেকার, অ্যাসেম্বলীম্যান ফিল রামোস, অ্যাসেম্বলীওম্যান মিখাইল সি সোলাজেস, এটর্নী ডেভিড কংগোল্ড, নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শওকত আলী, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, হোপ বাংলাদেশ-এর নীরা রব্বানী ও আয়োজক জ্যাকব মিল্টন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের প্রফেসর ড. জিলানী ওয়ার্সী।
অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য অ্যাসেম্বলীম্যান ফিল রামোস-এর পক্ষ থেকে একটি প্রতিষ্ঠান ও ৪জন বাংলাদেশীকে সাইটেশন প্রদান করা হয়। সাইটেশন প্রাপ্তরা হলেন বংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মরহুম জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের কলাম্বাস খ্যাত কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মরহুম ইব্রাহীম চৌধুরী এবং উই আর দ্য পিপল ইনক।  মরহুম জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী, বেগম খালেদা জিয়া, মাহমুদুর রহমান ও মরহুম ইব্রাহীম চৌধুরীর পক্ষে প্রতিনিধিরা তাদের সাইটেশন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান চলাকালে ভিডিও-তে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারের মানবাধিকার বিরোধী কর্মকান্ড বিশেষ করে নারী-শিশু নির্যাতন, বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের উপর পুলিশী নির্যাতন, গ্রেফতার প্রভৃতি তুলে ধরা হয়। সন্ধ্যা ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কনভেনশনের মূল পর্ব চলে।
অনুষ্ঠানে কংগ্রেসওম্যান নাদিয়া ভ্যালাজকুইজ বলেন, আমাদের জানতে হবে আমরা কমিউনিটিতে কতটুকু ইম্পাওয়ার বৃদ্ধি করতে পেরেছি। আমাদের কমিউনিটির সমস্যা ইউএস অফিসিয়ালদের জানাতে হবে। সিটি কাউন্সিলম্যান, ইউএস কংগ্রেসম্যান ও সিনেটরদের কমিউনিটির সমস্যা জানাতে হবে। প্রয়োজনে সোস্যাল মিডিয়ায় সমস্যাগুলো তুলে ধরতে হবে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে তার আগে কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী করতে হবে, স্টংগ্রার হতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কর্মকান্ডের সমালোচনা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে সুন্দর দেশ হিসেবে গড়তে হলে পলিটিক্যাল ম্যাসল তৈরী করতে হবে। বাংলাদেশী কমিউনিটি সহ সকল নেইবরকে (প্রতিবেশী) শক্তিশালী করতে হবে। সবাইকে ভোটার হতে হবে।
অ্যাসেম্বলীম্যান ফিল রামোস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এশিয়ান কমিউনিটি শিক্ষিত কমিউনিটি। দিনে দিনে কমিউনিটির রূপ পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশ বিষয়ক ভিডিও চিত্রের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রসঙ্গত তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই।
অ্যাসেম্বীম্যান মাইকেল ডেনডেকার বলেন, পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, কমিউনিটির সবাইকে একই ভয়েজ রেইজ করতে হবে। কমিউনিটিকে একসাথে থাকতে হবে এবং একসাথে লড়তে হবে। তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই নিজ নিজ কমিউনিটি আর দেশের জন্য অনেক কিছুই করার রয়েছে।
অ্যাসেম্বলীওম্যান মিখাইল সি সোলাজেস বলেন, নিজের ভয়েস নিজেদেরকেই রেইজ করতে হবে। ইমিগ্রান্টদের সামাজিক শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। ইস্যু ভিত্তিক সমস্যা নিয়ে অফিসিয়ালদের সাথে কথা বলতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা ইমিগ্র্যান্টরা মেজরিটি হলেও আমরা ট্রাস্প প্রশাসনের ‘আন্ডার অ্যাট্যাক’।
এটর্নী ডেভিড কংগোল্ড তার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলা ও কারাবরণ বিষয় তুলে ধরে বলেন, খালেদা জিয়া ও তার দলের লোকেরা প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়ের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে।
হোপ বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট জ্যাকব মিল্টন বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোট এবং গরীব দেশ। ১৮ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু দেশের সন্তান হিসেবে জন্মভূমি বাংলাদেশের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার রয়েছে। কাউকে না, কাউকে কিছু করতে হবে। দেশে প্রতিনিয়ত গুম, খুন, হত্যাকান্ড ঘটছে। মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। আমরা এই অবস্থা দেখতে চাই না। দুর্নীতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন এবং এই অবস্থায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐক্যবদ্ধ ভয়েজ রেইজ করতে হবে।
উল্লেখ্য, জ্যাকব মিল্টন তার বক্তব্যের আগে ডিএমপি’র ডিবি শাখার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য’র সাথে তার সাম্প্রতিক টেলি কনফারেন্সের কথোপকথন ভিডিও-তে তুলে ধরেন। এতে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় বিষয়ক ছাড়াও হলিঅর্টিজেনে সন্ত্রাসী হামলা, সাদা পোশাকে অস্ত্রধারী কর্তৃক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা-কে ভয় দেখানো সহ প্রভৃতি বিষয়ে প্রশ্ন-উত্তর তুলে ধরা হয়। উত্তরে ডিএিমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন, যাতে মানবাধিকার লংঘন, পুলিশ বাহিনী তথা সরকারের জোড়জুলুমের চিত্রই ফুটে উঠেছে।
অনুষ্ঠানে ড. শওকত আলী বলেন, আজকের কনভেশন একটি ইউনিক অনুষ্ঠান। এটি দেশ ও জাতির জন্য সময়োপযুগী। এই কনভেনশন কমিউনিটি আর দেশের মানুষকে উদ্ভুদ্ধ হবে। তিনি ক্ষমতাসীন সরকারের কর্মকান্ডের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যাংক থেকে লুটপাট করা হচ্ছে। অথচ সরকার নির্বকার।
ড. শওকত আলী নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের একটি বক্তব্যের উদৃতি দিয়ে গণতন্ত্রের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা দরকার মন্তব্য এবং কনভেনশনের আয়োজন এবং জ্যাকব মিল্টনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
নীরা রব্বানী ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমার জন্মভুমি বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর পরই এক দলীয় শাসনে, এক ব্যক্তির শাসনে পরিণত হয়। মিডিয়ার স্বাধীনতা রোধ করা হয়। আর বাংলাদেশ আজ গুম-খুন-হত্যায় বদ্ধ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্র্যাসী’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, অন্যানভাবে তিন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্স বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তিনি সাধারণ নারী নন। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তিনি বলেন, তারুন্যের প্রতীক, নতুন প্রজন্মের অহংকার এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারের অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ড এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি ইউএস কংগ্রেসম্যান ও সিনেটরদের করনীয় ব্যাপারে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। নৈশভোজের মধ্য দিয়ে কনভেনশনের সমাপ্তি ঘটে। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।