‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে দলীয় নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে’
- প্রকাশের সময় : ০৬:৩০:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৪
- / ১১৬৫ বার পঠিত
জাতীয় শ্রমিক লীগের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আমাদের নেতা একজন জননেত্রী শেখ হাসিনা। দলের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে। তাই বলে নেতৃত্বের জন্য নেতা-কর্মীদের বিভক্ত হলে চলে না। দেশ, জাতি আর আওয়ামী লীগ নিয়ে দেশে-প্রবাসে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মুজিব আদর্শের সৈনিকদের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় রাখতে হবে। সেই সাথে মহাজোট সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতির তথ্য বিশ্ববাপী তুলে ধরতে হবে। তা নাহলে দেশে আবার বিএনপি-জামায়াতের অরাজকতা শুরু হবে, দেশে গণতন্ত্র থাকবে না। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে দলীয় নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে।
সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ জুইস সেন্টারে গত ২৭ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় আয়োজিত জাতীয় শ্রমিক লীগের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস জহির চৌধুরী সুফিয়ান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, সহ সভাপতি সামসুদ্দিন আজাদ ও লুৎফুল করিম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান ও চন্দন দত্ত, প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া (হাজী এনাম), জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস, উপ প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনি এবং নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও গোপালগঞ্জ জেলা সমিতি ইউএসএ’র সভাপতি হিরু ভূঁইয়া।
উল্লেখ্য, পূর্ব ঘোষিত অনুযায়ী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। শ্রমিক লীগ নেতৃবৃন্দের আমন্ত্রণে প্রবীণ রাজনীতিক, সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস জহির চৌধুরী সুফিয়ান অনুষ্ঠানে যোগ দিলে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম তার (প্রবীণ রাজনীতিক সুফিয়ান) প্রতি সম্মান জানিয়ে তাকে প্রধান অতিথি হিসেবে ঘোষণা দেন। সিরাজুল ইসলামের এই সিদ্ধান্ত এবং দলের প্রবীণ নেতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে। আব্দুর জহির চৌধুরী সুফিয়ান তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে তিনটি স্বর্ণ পদক লাভ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকনের সভাপতিত্ত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিরাজউদ্দিন আহমেদ সোহাগ। এছাড়া অতিথিবৃন্দসহ অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য শাহানা রহমান ও জসিম উদ্দিন মিঠু, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সভাপতি মিসবাহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রব খান জামাল, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সভাপতি জেড এ জয়, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেক লীগ নেতা নূরুজ্জামান সরদার, সাখাওয়াত হোসেন বিশ্বাস, আব্দুল হামিদ, দরুদ মিয়া রনেল, শ্রমিক লীগ নেতা মওলানা বজলুর রহমান, আব্দুল শহীদ দুদু, তাহাজ্জদ হোসেন, খান শওকত, টি মোল্লা, লস্কর মইজুর রহমান, মোহাম্মদ রকিব উদ্দিন, আব্দুর মমিন, কাজী জাকির, সাইদুল ইসলাম, কাজী শাহাবুদ্দীন প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদ। খবর ইউএনএ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা বজলুর রহমান। এরপর ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর মাহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর গণ আন্দোলন, ৭৫-এর ১৫ আগষ্ট আর ২০০০ সালের ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলাসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিটি নিরবতা পালন করা হয়। তারপর দেশ থেকে আগত দুই নেতার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা বরণ করে নেন। সবশেষে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি কেক কেটে জাতীয় শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সমাপ্ত করেন।
অনুষ্ঠানে আব্দুস জহির চৌধুরী সুফিয়ান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আমরা ভাগ্যক্রমে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পেয়েছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনাই দেশ, জাতি আর দলের কান্ডারী। যারা দেশে গণতন্ত্র আর সাংবিধানিক রাজনীতি বন্ধ করতে চেয়েছিলো তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন দেশ, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন কাকে বলে। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে হাসিনা সরকার আর আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করা। নেতা-কর্মীদের ঐক্য ধরে রাখা। দলে নেতৃত্বে প্রতিযোগিতার মধ্যেও দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে- ওরা (বিএনপি-জামায়াত) বসে নেই। ব্যর্থ হয়ে ওরা সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। সম্মিলিতভাবে এই ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। তিনি বলেন, অর্থনীতি যারা নিয়ন্ত্রণ করে তারাই এখন শাসনকর্তা। যুক্তরাষ্ট্র এমনি একটি দেশ যে দেশে প্রবাসী বাঙালীরা বাস করে দেশ-জাতির মর্যাদা ধরে রেখেছেন। সকল প্রবাসীকে বাংলাদেশের দূত হিসেবে কাজ করতে হবে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে একটি মডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। দেশের ইতিহাসে যেকোন সরকারের চেয়ে হাসিনা সরকারের উন্নয়ন আল অগ্রগতি সহ গণতন্ত্র রক্ষায় ভূমিকা থাকার জন্যই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। তাই আগামীতে আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় রাখতে বিগত সরকারের সকল অর্জন আর সফলতা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের নেতা একজন শেখ হাসিনা। দল পরিচালনার জন্য নেতার দরকার তবে নেতার পক্ষে সকল কাজ করা সম্ভব নয়। এজন্য চাই কর্মী। তাই দেশে-প্রবাসে আমাদের কর্মী তৈরী করতে হবে। কর্মী ছাড়া সেনাপতি যুদ্ধে গেলে বিজয়ী হতে পারবেন না, শূন্য হাতে ফিরে আসতে হবে। তিনি বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তারা বসে নেই, নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা সত্যকে মিথ্যে হিসেবে প্রমাণিত করার চেষ্টা করছে। রাজপথে থেকেই ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের সময় দলের অনেক নেতই ভীত ছিলেন। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবল আর শক্ত ও সাহসী পদক্ষেপে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। সেই সময় আমরা বিরোধীদেরকে রাস্তায় নামতে দেইনি। তাদের ঢাকার দূর্গ আমরা ভেঙ্গে দিয়েছিলাম। তাদের জন্ম ক্যান্টনমেন্টে, তারা ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসতে চায়। পিছনের দরজা দিয়ে আর ক্ষমতায় আসা যাবে না। জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দেশের জনগণ সমর্থন রয়েছে। ১/১১-এ প্রবাসীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে সবাইকে কর্মী হিসেবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, দলের বিভক্তি সাংগঠকে দূর্বল করে দেয়। তাই ঐক্যের বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন আমি লক্ষ্য করেছি, ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। এই নির্বাচন দলীয়ভাবে হয়েছে। বিএনপি’র ভোটের কাছে আমাদের আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি।
কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম তার বক্তব্যের মাঝে আব্দুর রহিম বাদশাকে জাতীয় শ্রমিক লীগের আন্তর্জাকি সম্পাদক এবং যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সভাপতি হিসেবে কাজী আজিজুল হক খোকন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জুয়েল আহমেদকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং প্রবাসে শ্রমিক লীগকে আরো শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে অনেক বক্তাই জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপিকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাজী আব্দুর রহমান, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, গোপালগঞ্জ সমিতির সাবেক সভাপতি বেলাল আহমেদ সহ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।