হককথা ডেস্ক: নিউ আমেরিকান ইয়ূথ ফোরাম, নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্লাব এবং নিউ আমেরকিান ওমেন্স ফোরাম-এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের নবম বার্ষিক ডিনার এবং নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনে উদযাপন উপলক্ষ্যে এবারের আয়োজন ছিলো ব্যাপক উৎসবমুখর ও চমকপ্রদ। গত ১১ জানুয়ারী শনিবার সন্ধ্যায় জ্যামাইকার তাজমহল পার্টি হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এজন্য কয়েক মাস ধরেই নানা প্রস্তুতি, আয়োজন আর প্রচার-প্রচারণা ছিলো। অনুষ্ঠানটি উৎসবমুখর ছিলো এজন্যই যে, ইতিপূর্বের কোন অনুষ্ঠানে এতো মূলধারার রাজনীতিক আর বাংলাদেশীর উপস্থিতি ছিলো। আর আয়োজনও ছিলো আকর্ষনীয়। অপরদিকে অনুষ্ঠানটি চমকপ্রদ হয়েছে এজন্যই যে আয়োজকরা এই প্রথমবারের মতো কোন ইউএস সিনেটর-কে তাদের অনুষ্ঠানে তথা বাংলাদেশী কমিউনিটির অনুষ্ঠানে উপস্থিত করতে পেছেন। সেই অর্থে ইউএস সিনেটের মাইনোরিটি দলের লীডার চাক শুমার ছিলেন অনুষ্ঠানের ‘চমক’। এজন্য আয়োজকরা বিশেষ ধন্যবাদ পাওয়ার দাবীদার। অনুষ্ঠানে দুই ইউএস কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং ও ইভেক্ট ক্লার্ক এবং নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেটর জন ল্যু, অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিট ওয়েপ্রীন, নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক এডভোকেট জুমানী উইলিয়াম, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল মিজ সাদিয়া ফয়জুননেসা সহ মূলধারার প্রায় এক ডজন রাজনীতিক আমন্ত্রিত এবং উপস্থিত ছিলেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনএ’র অনুসন্ধানে জানা যায়, উল্লেখিত অনুষ্ঠানটিতে সিনেটর চাক শুমার আগমনের খবর জানা যায় অনুষ্ঠানটির আগের দিন। ফলে খবরটি চারিদিকে ছড়িয়ে পরায় কমিউনিটিতে হৈ-চৈ পড়ে যায় এবং অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের উপস্থিতিও বেড়ে যায়। কিন্তু সিনেটর চাক শুভার-কে ঘিরে কি হলো অনুষ্ঠানে? সব মিলিয়ে সিনেটর চাক শুমারের কারণে ঐ অনুষ্ঠানটি এখন ‘টক অব দ্যা কমিউনিটি’।
তিন সংগঠনের যৌথ আয়োজনে শনিবার অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টার দিকে। সিনেটর চাক শুমার অনুষ্ঠান স্থলে এছে পৌছান রাত পৌনে ৯টার দিকে। এর আগেই কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং ও ইভেক্ট ক্লার্ক সহ অন্যান্যরা অনুষ্ঠান স্থলে এসে পৌছান। সিনেটর চাক শুমার হাস্যোজ্জল মুখে অনুষ্ঠান স্থলে পৌছার পর পরই তাকে ঘিরে ধরে অনেকেই। শুরু হয়ে যায় ছবি তোলার প্রতিযোগিতা। যা ছিলো দৃষ্টিকটু। আবার তাকে অনুষ্ঠান স্থলে কোন আসনে বসানোর আগেই হৈ-চৈয়ের মাঝে মঞ্চে তোলা হলো। এই পরিস্থিতিও ছিলো চরম দৃষ্টিকটু। এরই মধ্যে এক কতিপয় ব্যক্তিবর্গ সিনেটরের সাথে ছবি তোলায় প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। সেই সাথে শুরু হয়ে যায় সেলফি তোলারও অঘোষিত প্রতিযোগিতা। যা ছিলো আরো দৃষ্টিকটু। এই মধ্যে মাইক্রোফোন চলে যায় এক হাত থেকে আরেক হাতে। ফলে অনুষ্ঠানে সৌন্দর্য্য চরমভাবে ব্যহত হয়। আবার সিনেটর তার বক্তব্য প্রদানের সময় উপস্থিত দর্শক-শ্রোতার হৈচৈ-এর ফলে সিনেটর চাকশুমার নিজেই তার ঠোটে আঙ্গুল উচিয়ে শীষ দিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলেন। এমন কি এক পর্যায়ে একজনের কাছ থেকে বাংলা ভাষা ধার করে নিয়ে নিজেই বলে উঠেন ‘চুপ করুন’। এমনি পরিস্থতিতে বাংলাদেশী কমিউনিটি সম্পর্কে তার উচ্চাশা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে তিনি তার বক্তব্য রাখেন এবং সংক্ষেপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে আগামী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থীদের ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। বলেন, আগামী দিনে নিউইয়র্কের রাজনীতিতে বাংলাদেশীরাই নেতৃত্ব দেবেন, নেতৃত্বে দেবেন ইউএস কংগ্রেসে।
সিনেটর চাক শুমার তার বক্তব্য শেষ করার পর তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। ‘বিশিষ্ট ব্যক্তি’দের চাপাচাপির মধ্যেই সিনেটরের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন ইয়ূথ ফোরাম, ডেমোক্রেটিক ক্লাব এবং ওমেন্স ফোরাম-এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম এবং অনুষ্ঠানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। এরপর রাত ১০টা ১০ মিনিটে সিনেটর মূল মঞ্চ ত্যাগ করে চলে যান। তার যাওয়ার সময় আবার শুরু হয় ফটো তোলার অশুভ প্রতিযোগিতা। যা কোনভাবেই এমন অনুষ্ঠানে গ্রহণ যোগ্য নয়, কাম্য নয়। আর এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি, দৃষ্টিকটুর ফলে চরমভাবে সৌন্দর্য্যহানী ঘটেছে চমৎকার এক অনুষ্ঠানের। কমিউনিটি হারিয়েছে মান-মর্যাদা। এমন মন্তব্য সচেতন বাংলাদেশী-আমেরিকানদের। এতে মানহানীও ঘটেছে স্বয়ং সিনেটর চাক শুমারের- এমন মন্তব্যও তাদের।
অথচ একটি ‘চমৎকার, দৃষ্টান্তমূলক’ এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য একটি ‘মাইল ফলক অনুষ্ঠান’ হতে পারতো অনুষ্ঠানটি। কারো কারো ভাষায় ‘ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান’। যদি না সিনেটর চাক শুমারকে অভ্যর্থনা জানিয়ে সুন্দর পরিবেশে এনে মঞ্চের সামনে সংরক্ষিত আসনে বসিয়ে, আনুষ্ঠানিকভাবে মঞ্চে আনা, চমৎকার উপস্থাপনায় তার সম্পর্কে দু’চারটি কথা বলে তাকে বক্তব্য প্রদান ও সম্মাননা জানানো এবং অফিসিয়ালী ফটো সেশন করা যেতো। আর তা হয়নি বলেই সার্বিক অর্থে ‘ভালো’র চেয়ে ‘মন্দ’ই টক অব দ্যা কমিউনিটি-তে পরিণত হয়েছে নিউ আমেরিকান ইয়ূথ ফোরাম, নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্লাব এবং নিউ আমেরকিান ওমেন্স ফোরাম-এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের নবম বার্ষিক ডিনার অনুষ্ঠান। অথচ একটি সুন্দর ও চমৎকার আয়োজনের কোন কমতি ছিলো না অনুষ্ঠনটি-তে। কমিউনিটির অনেকেরই প্রশ্ন কেনো এমন হলো?ছবি: নিহার সিদ্দিকী