বর্নাঢ্য আয়োজনে ৩২তম ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন : নতুন প্রজন্মের পরিবেশনায় আটলান্টায় ভেসে উঠলো বাংলাদেশ
- প্রকাশের সময় : ০২:০৮:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুলাই ২০১৮
- / ৭৭০ বার পঠিত
আটলান্টা (জর্জিয়া) থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ॥ ‘আমাদের সন্তান, আগামীর নেতৃত্ব’ শ্লোগানে বর্নাঢ্য আয়োজনে ৩২তম ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো। নতুন প্রত্যাশায় ফোবানার পর্দা উঠলো মানবতাবাদী নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের শহর তথা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বের অন্যতম প্রধান রাজ্য জর্জিয়ার রাজধানী আটলান্টা সিটির জর্জিয়া ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সেন্টারে। সিএনএন ভবন সংলগ্ন এই সেন্টারে ২৭-২৯ জুলাই অর্থাৎ শুক্র, শনি ও রোববার এই তিনদিন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশী আমেরিকান এসোসিয়েশন অব জর্জিয়া (বিএএজি)। ২৭ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের চলমান সম্পর্ক জোরদারে এই সম্মেলন ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আর ইউএস কংগ্রেসম্যান বব উডল। সেই সাথে ফোবানা কর্মকর্তারা ঘোষণা দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নেতৃত্ব দেয়ার সময় আসছে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের। বাংলাদেশী-আমেরিকান নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে। একদিন তারাই নেতৃত্ব দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের সিটি, ইউএস কংগ্রেস আর ইউএস সিনেটে। আর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি।
আটলান্টা ফোবানা সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসি-তে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ। গেষ্ট অব অনার ছিলেন ইউএস কংগ্রেসম্যান বব উডল। বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনের ইউএস স্মল বিজনেস এডমিনিসট্রেশন-এর রিজিওন-৪ এর রিজিওনাল এডমিনিসষ্ট্রেটর অ্যাসলে ডি বেল, সিটি অব জর্জিয়ার ডিরেক্টর ভ্যানেসা ইভারা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান: শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উদ্বেধনী অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও এই পর্ব শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায়। আমন্ত্রিত অতিথি, ফোবানা সহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তা আর সহ¯্রাধিক প্রবাসী বাংলাদেশীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের শুরুতেই মূল মঞ্চ ‘সিডনী মার্কাস অডিটরিয়াম’-এ বেজে উঠে আজানের ধ্বনি। এরপর পর্যায়ক্রমে গীর্জা আর প্যাগোডায় বেজে উঠা ঘন্টার ধ্বনি, সবশেষে ভেসে উঠে সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের গ্রামবাংলার সুর। পরবর্তীতে স্থানীয় শিল্পীরা বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। জাতীয় সঙ্গীতগুলো পরিবেশনের সময় মূলমঞ্চে ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে তিন দেশ তুলে ধরা হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর স্থানীয় চার শিল্পী যৌথভাবে পরিবেশন করেন ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমার…….’ জনপ্রিয় দেশের গান। গানটি পরিবেশনের সময় শব্দ বিভ্রাট দর্শক-শ্রোতাদের বিরক্তির সৃষ্টি করে।
পরবর্তীতে আটলান্টা ফোবানা সম্মেলনের সদস্য সচিব নাহিদুল খান সাহেল সবাইকে স্বাগত জানিয়ে সম্মেলনের কনভেনর জসিম উদ্দিনকে মঞ্চে আহ্বান জানান। জসিম উদ্দিন অতিথি সহ সবাইকে স্বাগত জানিয়ে ফোবানা’র স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান এম আতিকুর রহমান, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী শাহ হালিম, ফোবানা সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়কারী এম মওলা দিলু, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ আলী মানিক, চীফ কনসালটেন্ট গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও পৃষ্ঠপোষকদের মঞ্চে আহ্বান করার পর রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও কংগ্রেসম্যান বব উডল যৌথভাবে ফিতা কেটে ৩২তম ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর মঞ্চে উপস্থিত সবাইকে লাল-সবুজের ফোবানা পতাকা পড়িয়ে দেয় হয়। এছাড়াও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও কংগ্রেসম্যান বল উডল-কে ফোবানা’র পক্ষ থেকে প্ল্যাক প্রদান করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সুন্দর শহর আটলান্টায় ৩২তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর বসবাস এই শহর তথা জর্জিয়ায়। বাংলাদেশীরাও এই শহরকে সমৃদ্ধ করছে। তিনি বলেন, গ্লোবাল যুগে বাংলাদশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ফোবানা সম্মেলন ভূমিকা রাখবে। আমেরিকায় বাংলাদেশী কমিউনিটিকে সমৃদ্ধ করবে। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর পথে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের ভীষণ ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। সরকারের রয়েছে ভীষণ ২০৪১। তিনি বলেন, ডিজিটালের যুগে এখন সবই সম্ভব। তাই বাংলাদেশের পক্ষেও সব কিছুই সম্ভব।
রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশী-আমেরিকান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সহ প্রফেশনালরা আমেরিকার উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। তিনি নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে আরো সম্পৃক্ত রাখতে এবং বিনিয়োগের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশী অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।
কংগ্রেসম্যান বব উডল তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সুস্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, ফোবানা সম্মেলনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের শিল্প-সংস্কৃতি লালন-পালন করার সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, সকল অভিভাসীদের শিল্প-সংস্কৃতি নিয়েই আমেরিকা এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিটি পরিবারকে সুন্দর ও শক্তিশালী করতে করতে চাই।
রিজিওনাল এডমিনিসষ্ট্রেটর অ্যাসলে ডি বেল তার বক্তব্যে আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। আমরা ফ্রেন্ডশীপে বিশ্বাস করি। আমরা নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানাই। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো বিনিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
আটলান্টা সিটি মেয়রের প্রতিনিধি, সিটি অব জর্জিয়ার ডিরেক্টর ভ্যানেসা ইভারা বলেন, এই শহরে ৪০ হাজার বাংলাদেশীর বসবাস। সিটিবাসীদের সুন্দর রাখতে, ভালো রাখতে সিটি প্রশাসন আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফোবানা সম্মেলনের সদস্য সচিব নাহিদুল খান সাহেল বলেন, আমরা প্রবাসে থাকলেও আমাদের গোল হচ্ছে বাংলাদেশ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশী বংশদ্ভুত নতুন প্রজন্মের শিল্পী ছাড়াও প্রবাসের শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের একাধিক দলীয় সঙ্গীত ও নৃত্য উপস্থিত সকল দর্শক-শ্রোতাকে মুগ্ধ করে।
অন্যান্য প্রসঙ্গ: জর্জিয়া ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সেন্টারের সুবিশাল সিডনী মার্কাস অডিটোরিয়াম ১৮০০ আসন বিশিষ্ট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৩/৪শত প্রবাসীর অংশগ্রন লক্ষ্য করা যায়। তবে সম্মেলনে যোগ দিতে প্রথম দিন ৩৭টি সংগঠন রেজিষ্ট্রেশন করে এবং দেড় থেকে দুই হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী যোগ দেন বলে সংশ্লিস্টরা জানান। সম্মেলনের অনুষ্ঠানমালায় থাকছে, সেমিনার, আলোচনা, সাহিত্য সভা, কন্স্যুলেট সার্ভিস, বই মেলা, চিত্র প্রদর্শণী, বাংলা ছবি প্রদর্শন, সম্মানণা প্রদান, পুনর্মিলনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে উত্তর আমেরিকায় বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের জন্যে ফোবানা কর্তৃক ঘোষিত ছাত্র বৃত্তি-২০১৮ প্রদান ছাড়াও বিশেষ অনুষ্ঠান। এবারের সম্মেলন উপলক্ষ্যে ‘পরানের কথা’ শীর্ষক একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে। এটি সম্পাদনা করেছেন আশফাক স্বপন।
উপেক্ষিত মিডিয়া: তবে ফোবানা সম্মেলনে প্রবাসের বাংলাদেশী মিডিয়া উপেক্ষিত হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। এনিয়ে অনেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নানা অভিযোগও করেছেন। বিশেষ করে নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়ার একাধিক সম্পাদক এই প্রতিনিধিকে জানান, এবারের ফোবানা সম্মেলনে প্রবাসের বাংলা মিডিয়াগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এজন্যই নিউইয়র্কের অনেক মিডিয়া যোগ দেয়নি সম্মেলনে। এদিকে সম্মেলন স্থলে ফোবানার মিডিয়া সেন্টার থাকলেও সেখানে কারো উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। নেই কোন ব্রিফিং-এর ব্যবস্থা। সম্মেলনের অনুষ্ঠান সূচী বা যাবতীয় তথ্যাদিও জানানো হয়নি সম্মেলন কভার করতে যোগদানকারী সাংবাদিকদের। ফলে সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।