নিউইয়র্ক ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বর্ণাঢ্য আয়োজনে ফ্রেন্ডস সোসাইটি’র ‘ইফাদ লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা’য় প্রবাসীদের ঢল

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৩০:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ মে ২০১৭
  • / ৬৯৫ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: ‘হৃদয় নাচে বৈশাখী সাজে’ শ্লোগান নিয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা আর ব্যাপক আয়োজনে প্রতি বছরের মতো এবছরও বাংলা বর্ষবরণ করেছে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকার স্বনামধন্য সামাজিক সংগঠন জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি ইনক। ‘ইফাদ লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা-১৪২৪’ শিরোনামে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে ফ্রেন্ডস সোসাইটির উদ্যোগে ২৯ এপ্রিল শনিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো খোলা পার্কে পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন, বর্ণাঢ্য র‌্যালী, আকর্ষনীয় মেলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মরণিকা প্রকাশ প্রভৃতি।
বেলা দেড়টার দিকে জ্যামাইকার ক্যাপ্টেন টিলি পার্কে ভোজন পর্বের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের সহকারী এটর্নী জেনারেল ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকীব মন্টু। ভোজন পর্ব শেষে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ। র‌্যালীর গ্র্যান্ড মার্শাল ছিলেন অ্যাডভোকেট এন মজুমদার। পরবর্তীতে মূলমঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিষ্ট্রিক্ট লার্জ লীডার এটর্নী মঈন চৌধুরী।
জ্যামাইকার ডিএমভি ফাস্ট পার্কিং লটে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। এরপর শ্রী চিন্ময় সেন্টারের শিল্পীরা বৈশাখী গান পরিবেশন করেন। খবর ইউএনএ’র।
অনুষ্ঠানে মূলধারার নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশী কমিউনিটিকে অগ্রসরমান কমিউনিটি হিসেবে উল্লেখ এবং নিজেদের অধিকার অবস্থান শক্তিশালী আর অধিকার প্রতিষ্ঠায় মূলধারায় নিজেদের অংশগ্রহণ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। বক্তারা ফ্রেন্ডস সোসাইটির কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন এবং এই সংগঠনের সকল কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন: ফ্রেন্ডস সোসাইটির বাংলা বর্ষণ অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিলো পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন। ঐদিন দুপুরে জ্যামাইকার হাইল্যান্ড এভিনিউ সংলগ্ন ক্যাপ্টেন টিলি পার্কে এই ভোজন পর্বের আয়োজন করা হয়। বেলা দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত প্রবাসের সর্বস্তরের সহ¯্রাধিক সংখ্যক শিশু-কিশোর-কিশোরী, নারী-পুরুষ পান্তা-ইলিশ, আলু ও বেগুন ভর্তা আর ডাল ভাত ভোজন করেন। এসময় ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা এবিএম ওসমান গনি, উপদেষ্টা যথাক্রমে নাসির আলী খান পল, ডা. ওয়াজেদ এ খান, ছদরুন নূর, মনজুর আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, ডা. টমাস দুলু রায়, মোস্তফা কামাল, এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও ফারুক হোসেন তালুকদার, মূলধারার রাজনীতিক দিলীপ নাথ, সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আজাদ ভূঁইয়া, মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, মেলা কমিটির সদস্য সচিব ইফজাল আহমেদ চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক যথাক্রমে মনির হোসেন, সৈয়দ আতিকুর রহমান, শেখ হায়দার আলী, এএফ মিসবাহউজ্জামান ও শেখ আনসার আলী, সিনিয়র নির্বাহী যুগ্ম আহ্বায়ক বিলাল চৌধুরী, প্রধান সমন্বয়কারী ও উপদেষ্টা রেজাউল করীম চৌধুরী, সমন্বয়কারী রিজু মোহাম্মদ সহ সংগঠনের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক/পরিচালক, সাংবাদিক এবং সংগঠনের উপদেষ্টাবৃন্দ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে ভোজন পর্বে অংশ নেন। উল্লেখ্য, পান্তা-ইলিশ ভোজনের খাবার পরিবেশন করে জ্যামাইকার স্টার কাবাব রেষ্টুরেন্ট। মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন প্রবাসের জনপ্রিয় উপস্থাপক আশরাফুল হাসান বুলবুল ও টাইম টিভি’র নিউজ প্রেজেন্টোর সাদিয়া খন্দকার।
বর্ণাঢ্য র‌্যালী: ভোজন পর্ব শেষে শুরু হয় বর্ণাঢ্য ও আকর্ষণীয় র‌্যালী। বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আর বিভিন্ন প্লাকার্ড ও বৈশাখী পোষ্টার হাতে প্রবাসীরা ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক  থেকে র‌্যালীতে অংশ নেন। র‌্যালীর অগ্রভাগে ছিলো বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা আর ব্যানার হাতে নতুন প্রজন্ম, অতিথি, সোসাইটির উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাবৃন্দ। রং বে রং এর পোশাক পড়ে প্রবাসীরা র‌্যালীতে অংশ নেন। র‌্যালীটি ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক থেকে বের হয়ে হ্যাইল্যান্ড এভিনিউ ধরে ১৬৮ প্লেস হয়ে হিলসাইড এভিনিউ ধরে ১৬৮ স্ট্রীট ধরে মেলার মূল অনুষ্ঠানস্থল জ্যামাইকার ডিএমভি ফাস্ট পার্কিং লটে এসে শেষ হয়। র‌্যালীটি হিলসাইড এভিনিউ ধরে আসার পথে রাস্তায় চলাচলকারী দেশী ও ভিনদেশীরাসহ আশপাশের বিভিন্ন এপার্টমেন্ট থেকে জানালা খুলে জ্যামাইকাবাসীরাও র‌্যালীটি উপভোগ করেন এবং হাত নেড়ে সাধুবাদ জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান: বর্ণাঢ্য র‌্যালী শেষে বিকেল ৫টার দিকে শুরু হয় ‘ইফাদ লোক উৎসব  ও বৈশাখী মেলা’র মূল অনুষ্ঠান। রঙ-বেরঙের বেলুন উড়িয়ে ও ফিতা কেটে বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী। এসময় অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার নিউইয়র্ক ষ্টেট অ্যাসেম্বলিউইমেন এলিসিয়া হাইন্ডম্যানসহ ফ্রেন্ডস সোসাইটির কর্মকর্তা ও অতিথিরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন জ্যামাইকার ঐহিত্য শ্রী চিন্ময় সেন্টারের শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টাবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন মেলার আহ্বায়ক ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেটর লিরয় কমরি, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের স্থানীয় কাউন্সিলম্যান ররি ল্যান্সম্যান, বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সিএম হাসান, আগামী নির্বাচনে নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিলম্যান প্রার্থী হেলাল শেখ, মেলা কমিটির প্রধান সমম্বয়কারী রেজাউল করিম চৌধুরী, সিনিয়র নির্বাহী যুগ্ম আহ্বায়ক বিলাল আহমদ চৌধুরী, ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, মেলা কমিটির সদস্য সচিব ইফজাল আহমদ চৌধুরী, মেলার সমন্বয়কারী ও আয়োজক সংগঠনের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন, সহ সভাপতি এএফ মিসবাহউজ্জামান, ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আজাদ ভূঁইয়া প্রমুখ।
পদক ও অ্যাওয়ার্ড প্রদান: বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিতায় এবছরও ফ্রেন্ডস সোসাইটির পক্ষ থেকে ‘বৈশাখী পদক’ এবং কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ফ্রেন্ডস সোসাইটির পক্ষ থেকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। চলতি বছর অর্থাৎ ১৪২৪ বাংলা বছরের ‘বৈশাখী পদক’ প্রদান করা হয় বিশিষ্ট সমাজসেবী ও মূলধারার রাজনীতিক অ্যাডভোকেট এন মজুমদার।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: মেলার মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক পর্বে দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। মেলার অতিথিবৃন্দ সহ শত শত প্রবাসী প্রাণভরে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। সাংস্কৃতিক পর্বে শ্রী চিন্ময় শিল্পী গোষ্ঠী, জ্যামাইকা থিয়েটার, সঙ্গীত পরিষদ, সুর-ছন্দ, সুরবাহার, স্বরলিপি সঙ্গীত বিদ্যালয় দলীয় সঙ্গীত/নৃত্য পরিবেশন করে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পী সেলিম চৌধুরী ছাড়াও প্রবাসের জনপ্রিয় শান্তনীল ধর, মীরা সিনহা, তনিমা হাদী, কৃষ্ণা তিথি, কামরুজ্জামান বকুল, রোকসানা মির্জা, রানু নেওয়াজ, দেবযানী দেবনাথ বর্ষা, মঈন চৌধুরী, উদীপ্ত চৌধুরী এবং স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠী মেলায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
স্মরণিকা প্রকাশ: বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবছরও ‘হৃদয়ে বাংলা’ র্শীষক স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এটি সম্পাদনা করেন সোসাইটির সহ সভাপতি এএফ মিসবাহউজ্জামান। প্রকাশনার সহযোগিতায় ছিলো ডিজাইন স্টুডিও।
‘ইফাদ লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে ডিএমভি ফাস্ট পার্কিং লটে খাবারের স্টলসহ শাড়ী-কাপড়-গহনার স্টল বসে। হাজার হাজার প্রবাসী সপরিবারে মেলাটি উপভোগ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেলার কর্মকান্ড চলে। বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ উৎসবমুখর হয়ে এক টুকরো বাংলাদেশে পরিণত হয়।
‘ইফাদ লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা’ সফল করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে আরো সহযোগিতায় ছিলেন গোলাম মহিউদ্দিন মিঠূ, সেবুল মিয়া, মুক্তার হোসেন, দরুদ মিয়া রনেল, আলী কে কাকন ও জুয়েল মিয়া, এডভোকেট কামরুজ্জামান বাবু, সফিকুল আলম শাহিদ, শহীদুল ইসলাম, একেএম সফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন কবীর, আব্দুল মন্নাফ তালুকদার, গিয়াস উদ্দিন মঞ্জু, মাহবুবুল হক মোকাদ্দেস, কাজী এন ইসলাম, আব্দুল মজিদ আকন্দ, আফরোজা রোজী, সামিউর রহমান, হামিদুর রহমান, সুলতান খান, ইমাম জাকির, আলহাজ সাজ্জাদ হোসেন, সৈয়দ লিটন আলী, সৈয়দ রাব্বী, গোলাম আজম জাকি, সহদেব তালুকদার, মোহাম্মদ কবীর হোসেন মুন্সি, দেলোয়ার হোসেন মানিক প্রমুখ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বর্ণাঢ্য আয়োজনে ফ্রেন্ডস সোসাইটি’র ‘ইফাদ লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা’য় প্রবাসীদের ঢল

প্রকাশের সময় : ০২:৩০:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ মে ২০১৭

নিউইয়র্ক: ‘হৃদয় নাচে বৈশাখী সাজে’ শ্লোগান নিয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা আর ব্যাপক আয়োজনে প্রতি বছরের মতো এবছরও বাংলা বর্ষবরণ করেছে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকার স্বনামধন্য সামাজিক সংগঠন জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি ইনক। ‘ইফাদ লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা-১৪২৪’ শিরোনামে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে ফ্রেন্ডস সোসাইটির উদ্যোগে ২৯ এপ্রিল শনিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো খোলা পার্কে পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন, বর্ণাঢ্য র‌্যালী, আকর্ষনীয় মেলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মরণিকা প্রকাশ প্রভৃতি।
বেলা দেড়টার দিকে জ্যামাইকার ক্যাপ্টেন টিলি পার্কে ভোজন পর্বের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের সহকারী এটর্নী জেনারেল ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকীব মন্টু। ভোজন পর্ব শেষে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ। র‌্যালীর গ্র্যান্ড মার্শাল ছিলেন অ্যাডভোকেট এন মজুমদার। পরবর্তীতে মূলমঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিষ্ট্রিক্ট লার্জ লীডার এটর্নী মঈন চৌধুরী।
জ্যামাইকার ডিএমভি ফাস্ট পার্কিং লটে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। এরপর শ্রী চিন্ময় সেন্টারের শিল্পীরা বৈশাখী গান পরিবেশন করেন। খবর ইউএনএ’র।
অনুষ্ঠানে মূলধারার নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশী কমিউনিটিকে অগ্রসরমান কমিউনিটি হিসেবে উল্লেখ এবং নিজেদের অধিকার অবস্থান শক্তিশালী আর অধিকার প্রতিষ্ঠায় মূলধারায় নিজেদের অংশগ্রহণ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। বক্তারা ফ্রেন্ডস সোসাইটির কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন এবং এই সংগঠনের সকল কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন: ফ্রেন্ডস সোসাইটির বাংলা বর্ষণ অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিলো পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন। ঐদিন দুপুরে জ্যামাইকার হাইল্যান্ড এভিনিউ সংলগ্ন ক্যাপ্টেন টিলি পার্কে এই ভোজন পর্বের আয়োজন করা হয়। বেলা দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত প্রবাসের সর্বস্তরের সহ¯্রাধিক সংখ্যক শিশু-কিশোর-কিশোরী, নারী-পুরুষ পান্তা-ইলিশ, আলু ও বেগুন ভর্তা আর ডাল ভাত ভোজন করেন। এসময় ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা এবিএম ওসমান গনি, উপদেষ্টা যথাক্রমে নাসির আলী খান পল, ডা. ওয়াজেদ এ খান, ছদরুন নূর, মনজুর আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, ডা. টমাস দুলু রায়, মোস্তফা কামাল, এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও ফারুক হোসেন তালুকদার, মূলধারার রাজনীতিক দিলীপ নাথ, সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আজাদ ভূঁইয়া, মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, মেলা কমিটির সদস্য সচিব ইফজাল আহমেদ চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক যথাক্রমে মনির হোসেন, সৈয়দ আতিকুর রহমান, শেখ হায়দার আলী, এএফ মিসবাহউজ্জামান ও শেখ আনসার আলী, সিনিয়র নির্বাহী যুগ্ম আহ্বায়ক বিলাল চৌধুরী, প্রধান সমন্বয়কারী ও উপদেষ্টা রেজাউল করীম চৌধুরী, সমন্বয়কারী রিজু মোহাম্মদ সহ সংগঠনের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক/পরিচালক, সাংবাদিক এবং সংগঠনের উপদেষ্টাবৃন্দ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে ভোজন পর্বে অংশ নেন। উল্লেখ্য, পান্তা-ইলিশ ভোজনের খাবার পরিবেশন করে জ্যামাইকার স্টার কাবাব রেষ্টুরেন্ট। মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন প্রবাসের জনপ্রিয় উপস্থাপক আশরাফুল হাসান বুলবুল ও টাইম টিভি’র নিউজ প্রেজেন্টোর সাদিয়া খন্দকার।
বর্ণাঢ্য র‌্যালী: ভোজন পর্ব শেষে শুরু হয় বর্ণাঢ্য ও আকর্ষণীয় র‌্যালী। বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আর বিভিন্ন প্লাকার্ড ও বৈশাখী পোষ্টার হাতে প্রবাসীরা ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক  থেকে র‌্যালীতে অংশ নেন। র‌্যালীর অগ্রভাগে ছিলো বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা আর ব্যানার হাতে নতুন প্রজন্ম, অতিথি, সোসাইটির উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাবৃন্দ। রং বে রং এর পোশাক পড়ে প্রবাসীরা র‌্যালীতে অংশ নেন। র‌্যালীটি ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক থেকে বের হয়ে হ্যাইল্যান্ড এভিনিউ ধরে ১৬৮ প্লেস হয়ে হিলসাইড এভিনিউ ধরে ১৬৮ স্ট্রীট ধরে মেলার মূল অনুষ্ঠানস্থল জ্যামাইকার ডিএমভি ফাস্ট পার্কিং লটে এসে শেষ হয়। র‌্যালীটি হিলসাইড এভিনিউ ধরে আসার পথে রাস্তায় চলাচলকারী দেশী ও ভিনদেশীরাসহ আশপাশের বিভিন্ন এপার্টমেন্ট থেকে জানালা খুলে জ্যামাইকাবাসীরাও র‌্যালীটি উপভোগ করেন এবং হাত নেড়ে সাধুবাদ জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান: বর্ণাঢ্য র‌্যালী শেষে বিকেল ৫টার দিকে শুরু হয় ‘ইফাদ লোক উৎসব  ও বৈশাখী মেলা’র মূল অনুষ্ঠান। রঙ-বেরঙের বেলুন উড়িয়ে ও ফিতা কেটে বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী। এসময় অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার নিউইয়র্ক ষ্টেট অ্যাসেম্বলিউইমেন এলিসিয়া হাইন্ডম্যানসহ ফ্রেন্ডস সোসাইটির কর্মকর্তা ও অতিথিরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন জ্যামাইকার ঐহিত্য শ্রী চিন্ময় সেন্টারের শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টাবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন মেলার আহ্বায়ক ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেটর লিরয় কমরি, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের স্থানীয় কাউন্সিলম্যান ররি ল্যান্সম্যান, বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সিএম হাসান, আগামী নির্বাচনে নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিলম্যান প্রার্থী হেলাল শেখ, মেলা কমিটির প্রধান সমম্বয়কারী রেজাউল করিম চৌধুরী, সিনিয়র নির্বাহী যুগ্ম আহ্বায়ক বিলাল আহমদ চৌধুরী, ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, মেলা কমিটির সদস্য সচিব ইফজাল আহমদ চৌধুরী, মেলার সমন্বয়কারী ও আয়োজক সংগঠনের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন, সহ সভাপতি এএফ মিসবাহউজ্জামান, ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আজাদ ভূঁইয়া প্রমুখ।
পদক ও অ্যাওয়ার্ড প্রদান: বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিতায় এবছরও ফ্রেন্ডস সোসাইটির পক্ষ থেকে ‘বৈশাখী পদক’ এবং কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ফ্রেন্ডস সোসাইটির পক্ষ থেকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। চলতি বছর অর্থাৎ ১৪২৪ বাংলা বছরের ‘বৈশাখী পদক’ প্রদান করা হয় বিশিষ্ট সমাজসেবী ও মূলধারার রাজনীতিক অ্যাডভোকেট এন মজুমদার।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: মেলার মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক পর্বে দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। মেলার অতিথিবৃন্দ সহ শত শত প্রবাসী প্রাণভরে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। সাংস্কৃতিক পর্বে শ্রী চিন্ময় শিল্পী গোষ্ঠী, জ্যামাইকা থিয়েটার, সঙ্গীত পরিষদ, সুর-ছন্দ, সুরবাহার, স্বরলিপি সঙ্গীত বিদ্যালয় দলীয় সঙ্গীত/নৃত্য পরিবেশন করে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পী সেলিম চৌধুরী ছাড়াও প্রবাসের জনপ্রিয় শান্তনীল ধর, মীরা সিনহা, তনিমা হাদী, কৃষ্ণা তিথি, কামরুজ্জামান বকুল, রোকসানা মির্জা, রানু নেওয়াজ, দেবযানী দেবনাথ বর্ষা, মঈন চৌধুরী, উদীপ্ত চৌধুরী এবং স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠী মেলায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
স্মরণিকা প্রকাশ: বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবছরও ‘হৃদয়ে বাংলা’ র্শীষক স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এটি সম্পাদনা করেন সোসাইটির সহ সভাপতি এএফ মিসবাহউজ্জামান। প্রকাশনার সহযোগিতায় ছিলো ডিজাইন স্টুডিও।
‘ইফাদ লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে ডিএমভি ফাস্ট পার্কিং লটে খাবারের স্টলসহ শাড়ী-কাপড়-গহনার স্টল বসে। হাজার হাজার প্রবাসী সপরিবারে মেলাটি উপভোগ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেলার কর্মকান্ড চলে। বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ উৎসবমুখর হয়ে এক টুকরো বাংলাদেশে পরিণত হয়।
‘ইফাদ লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা’ সফল করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে আরো সহযোগিতায় ছিলেন গোলাম মহিউদ্দিন মিঠূ, সেবুল মিয়া, মুক্তার হোসেন, দরুদ মিয়া রনেল, আলী কে কাকন ও জুয়েল মিয়া, এডভোকেট কামরুজ্জামান বাবু, সফিকুল আলম শাহিদ, শহীদুল ইসলাম, একেএম সফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন কবীর, আব্দুল মন্নাফ তালুকদার, গিয়াস উদ্দিন মঞ্জু, মাহবুবুল হক মোকাদ্দেস, কাজী এন ইসলাম, আব্দুল মজিদ আকন্দ, আফরোজা রোজী, সামিউর রহমান, হামিদুর রহমান, সুলতান খান, ইমাম জাকির, আলহাজ সাজ্জাদ হোসেন, সৈয়দ লিটন আলী, সৈয়দ রাব্বী, গোলাম আজম জাকি, সহদেব তালুকদার, মোহাম্মদ কবীর হোসেন মুন্সি, দেলোয়ার হোসেন মানিক প্রমুখ।