বর্ণাঢ্য আয়োজনে জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি’র বাংলা বর্ষবরণ
- প্রকাশের সময় : ০৮:২১:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ এপ্রিল ২০১৫
- / ১২৭৩ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: ‘হৃদয় নাচে বৈশাখী সাজে’ শ্লোগান নিয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা আর ব্যাপক আয়োজনে প্রতি বছরের মতো এবছরও বাংলা বর্ষবরণ করেছে নিউইয়র্কের স্বনামধন্য সামাজিক সংগঠন জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি ইন্্ক। ‘সিতারা বৈশাখী মেলা-১৪২২’ শিরোনামে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে ফ্রেন্ডস সোসাইটির উদ্যোগে গত ১৯ এপ্রিল রোববার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো দ্বিতীয়বারের মতো খোলা মাঠে পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন, বর্ণাঢ্য র্যালী, আকর্ষনীয় মেলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি। ‘সিতারা ফার্মেসী বৈশাখী মেলা’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন: ফ্রেন্ডস সোসাইটির বাংলা বর্ষণ অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিলো পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন। ঐদিন দুপুরে জ্যামাইকার হাইল্যান্ড এভিনিউ সংলগ্ন ক্যাপ্টেন টিলি পার্কে এই ভোজন পর্বের আয়োজন করা হয়। বেলা দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত প্রবাসের সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোর-কিশোরী, নারী-পুরুষ পান্তা-ইলিশ, আলু ও বেগুন ভর্তা আর ডাল ভাত ভোজন করেন। এই পর্বের উদ্বোধন করেন এটর্নী মঈন চৌধুরী। এর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি বিলাল চৌধুরী, মেলা কমিটির আহ্বায়ক রেজাউল করীম চৌধুরী, প্রধান সমন্বয়কারী ও ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, মেলা কমিটির সদস্য সচিব এএফ মিসবাহউজ্জামান প্রমুখ। সহযোগিতায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সেবুল মিয়া।
অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ড. দেলোয়ার হোসেন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, সাবেক এমপি ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীন, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি কামাল আহমেদ, এডভোকট এন মজুমদার, বিশিষ্ট রিয়েল এষ্টেট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। অতিথিবৃন্দ, সাংবাদিক এবং সংগঠনের উপদেষ্টাবৃন্দ সকল প্রবাসীর সাথে ভোজন পর্বে অংশ নেন। সংগঠনের সহ সভাপতি ও আপ্যায়ন উপ কমিটির চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন ও সদস্য সচিব সহদেব তালুকদারের নেতৃত্বে সোসাইটির কর্মকর্তারা অতিথিবৃন্দ ও উপস্থিত প্রবাসীদেরকে আপ্যায়িত করেন। উল্লেখ্য, পান্তা-ইলিশ ভোজনের খাবার পরিবেশন করে জ্যামাইকার স্টার কাবাব রেষ্টুরেন্ট।
এসময় ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টাদের মধ্যে নাসির আলী খান পল, ডা. ওয়াজেদ, ছদরুন নূর, মনজুর আহমেদ চৌধুরী, এবিএম ওসমান গনি, ডা. টমাস দুলু রায়, ডা. মাসুদুল হাসান, অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, মোস্তফা কামাল, মিসবাহ আহমেদ, এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, ফরিদ আলম ছাড়াও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের, আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. নাজমুল খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় এলামনাই এসোসিয়েশন ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী জাকির এইচ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বর্ণাঢ্য র্যালী: ভোজন পর্ব শেষে শুরু হয় বর্ণাঢ্য ও আকর্ষণীয় র্যালী। বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পাল্্কী, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে প্রবাসীরা ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক থেকে র্যালীতে অংশ নেন। র্যালীর অগ্রভাগে ছিলো পাল্্কী বহর, এরপর ছিলো বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা হাতে নতুন প্রজন্ম, ব্যানার হাতে ছিলেন অতিথি ও সোসাইটির উপদেষ্টাবৃন্দ। রং বে রং এর পোশাক পড়ে প্রবাসীরা র্যালীতে অংশ নেন। র্যালীটি ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক থেকে হ্যাইল্যান্ড এভিনিউ ধরে হিলসাইড এভিনিউ পরিদর্শ করে। র্যালীটি হিলসাইড এভিনিউ ধরে আসার পথে রাস্তায় চলাচলকারী দেশী ও ভিনদেশীরাসহ আশপাশের বিভিন্ন এপার্টমেন্ট থেকে জানালা খুলে জ্যামাইকাবাসীরাও র্যালীটি উপভোগ করেন এবং হাত নেড়ে সাধুবাদ জানান। সোসাইটির সহ সভাপতি ও র্যালী উপ কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হায়দার আলী ও সদস্য সচিব মাহবুবুল হক মোকাদ্দেসের নেতৃত্বে র্যালীর তত্ত্বাবধানে ছিলেন র্যালী কমিটির সদস্যবৃন্দ। উল্লেখ্য, র্যালী সফল করতে জ্যাকসন হাইটস ক্লাবও সার্বিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করে।
এদিকে অপরাহ্নে মেলার বিশেষ অতিথি কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কাট্্স আমাজুরায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এসময় ফ্রেন্ডস সোসাইটির কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: জ্যামাইকার আমাজুরা হলে ‘সিতারা বৈশাখী মেলার’ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এতে দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। মেলার অতিথিবৃন্দ সহ শত শত প্রবাসী প্রাণভরে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টাবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সোসাইটির পক্ষ থেকে এবছর অর্থাৎ ১৪২১ বাংলা বছরের ‘বৈশাখী পদক’ প্রদান করা হয় বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও ফ্রেন্ডস সোসাইটির অন্যতম উপদেষ্টা এবিএম ওসমান গনিকে। এছাড়া কমিউনিটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ফ্রেন্ডস সোসাইটির পক্ষ থেকে প্ল্যাক প্রদান করা হয়।
‘হৃদয়ে বংলা’ প্রকাশনা: বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবছরও ‘হৃদয়ে বাংলা’ শীর্ষক আকর্ষনীয় স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এটি সম্পাদনা করেন ফ্রেন্ডস সোসাইটির অন্যতম উপদেষ্টা এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ। প্রকাশনার সহযোগিতায় ছিলো ডিজাইন স্টুডিও।
বৈশাখী মেলা উপলক্ষে আমাজুরায় খাবারের স্টলসহ শাড়ী-কাপড়-গহনার স্টল বসে। হাজার হাজার প্রবাসী সপরিবারে মেলাটি উপভোগ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেলার কর্মকান্ড চলে। মেলা প্রাঙ্গনে স্থান সংকুলান না হওয়ায় শত শত প্রবাসীকে অনুষ্ঠানগুলো উপভোগ করতে বেশ কষ্ট করতে হয়।
‘সিতারা বৈশাখী মেলা’ সফল করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে ছিলেন মেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন, সৈয়দ আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম সদস্য সচিব রেজাউল আজাদ ভূইয়া, একেএম সফিকুল ইসলাম, গোলাম মহিউদ্দিন মিঠু, রিজু মোহাম্মদ, আলী কে খান কাকন, সামিউর রহমান, হামিদুর রহমান, সুলতান খান, ইমাম জাকির, শেখ আনসার আলী, আলহাজ সাজ্জাদ হোসেন, এডভোকেট কামরুজ্জামান, সফিকুল আলম শাহিদ, সৈয়দ লিটন আলী, সৈয়দ নীর নবী, গোলাম আজম জাকি প্রমুখ।