ফোবানা’র সংবাদ সম্মেলনে হৈচৈ, হট্টগোল, বাক-বিতনন্ডা, গালিগালাজ

- প্রকাশের সময় : ০৮:১৮:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০২৩
- / ৫৫ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : ফেডারেশন অব বাংলাদেশী অর্গানাইজেশন্স অব নর্থ আমেরিকা-ফোবানা’র সংবাদ সম্মেলনে ‘চেয়ারম্যান দাবী’-কে কেন্দ্র করে ব্যাপক হৈচৈ, হট্টগোল, বাক-বিতন্ডা, গালিগালাজের ঘটনার পাশাপাশি ‘অর্থ আত্নসাৎ’-এর মতো অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রায় পন্ড হয়ে যাওয়া সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ৬ জুন মঙ্গলবার বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নজিরবিহীন এই ঘটনা ঘটে। বিভক্ত ফোবানা’র একাংশের চেয়ারম্যান দাবীদার আলী ইমাম ও মেম্বার সেক্রেটারী শাহ নেওয়াজ এই সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। খবর ইউএনএ’র।
জনাকীর্ণ এই সংবাদ সম্মেলনে ফোবানা’র স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান দাবীদার গিয়াস আহমেদ সহ অন্যান্যের মধ্যে ফোবানার বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের মোহাম্মদ হোসেন খান, নিশান রহীম, খন্দকার ফরহাদ, কাজী আজম, ফিরোজ আহমেদ, ওয়াহিদ কাজী এলিসন, সৈয়দ এনায়েত আলী ছাড়াও কাজী আশরাফ হোসেন (নয়ন), মিজানুর রহমান ভূইয়া (মিলন্টন ভূইয়া), ইঞ্জিনিয়ার আকাশ রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই আলী ইমাম স্বাগত বক্তব্য রাখেন এরপর লিখিত বক্তব্য রাখেন শাহ নেওয়াজ। এরপর আলী ইমাম নিজেকে ফোবানা’র চেয়ারম্যান দাবী করায় গিয়াস আহমেদ সহ কয়েকজন এর প্রতিবাদ করেন এবং সংবাদ সম্মেলন হৈচৈ আর হট্টগোলে পরিণত হয়। চলতে থাকে বাক-বিতন্ডা। এসময় গত বছর কানাডা সম্মেলনের ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটির একটি সভার ডকুমেন্ট প্রদর্শন করে গিয়াস আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে সভার ডকুমেন্ট আছে, সেখানে সভার স্বাক্ষরও রয়েছে। এতে আমি ফোবানার চেয়ারম্যান আর শাহ নেওয়াজ মেম্বার সেক্রেটারী। উল্লেখ্য, অতি সম্প্রতি গিয়াস আহমেদ আহুত এক সংবাদ সম্মেলনে ফোবানা’র উপদেষ্টা ও স্টিয়ারিং কমিটির নাম ঘোষণা করেন।
অপরদিকে সংবদ সম্মেলনে আলী ইমাম নিজেকে ফোবানার চেয়ারম্যান দাবী করে বলেন, কানাডা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হয়নি তাই আমি-ই এখনো চেয়ারম্যান। সংবাদ সম্মেলনে আলী ইমাম ও গিয়াস আহমেদের ফোবানার চেয়ারম্যান দাবীর প্রেক্ষিতে তাদের (আলী ইমাম ও গিয়াস আহমেদ) পাশাপাশি উভয়ের সমর্থকরা চরম হৈচৈ আর বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসব কেউ কেউ কেউ কারো কারো বিরুদ্ধে ফোবানা অর্থ অত্নসাৎ করার অভিযোগ সহ গালিগালাজও করেন। ফলে পন্ড হওয়ার পথে সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে উপস্থিত সিনিয়র নেতৃবৃন্দ পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভুত সমস্যার সমাধানের সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
আরো উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের লেবার ডে উইকেন্ডে আগামী ১-৩ সেপ্টেম্বর কানেকটিকাট রাজ্যে তিনদিনব্যাপী এবারের ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহ নেওয়াজ বলেন, সারাবিশ্ব আজ এক পরিবর্তনশীল সময় ও সমাজ বিনির্মানের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। দেশ-মহাদেশের মধ্যে নতুন করে সমন্বয় সাধনের সাথে সাথে দেশে দেশে আজ চলছে নতুন প্রত্যয়ের উন্মাদনা। আজ তারই বাংলাদেশী সংঘ-সাথীদের নবতর উন্মেষের লক্ষে দিনবদলের পালায় আমরা সক্রিয় থাকার অঙ্গিকার করছি। দীর্ঘ প্রায় এক বছর পরে আপনাদের কাছে আজ কিছুটা কৈফিয়ত দিতে চাই আমাদের ব্যহত পথযাত্রায়।
এই ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটি অনেক আগেই তার কাজের সমাপ্তির পথ রচনা করেছিল। মন্ট্রিয়েলে ফোবানার বিগত দায়িত্ব দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। কিন্ত আজ নয়মাস অতিক্রম হলেও যার বা যাদের উপর দায়িত্ব ছিল তারা নতুন কোন কমিটি ঘোষনা করতে পারে নি। আর তা বর্তমান কমিটির কাছ থেকে অনুমোদনও নিতে পারেনি। পরবর্তী সম্মেলনের আর মাত্র বাকি তিন মাস।
তিনি বলেন, আমরা এখানে আমাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের অমোঘ ধারাবাহিকতায় পরবর্তী ফোবানা সম্মেলন না হওয়া পযর্ন্ত বর্তমান স্টিয়ারিং কমিটি কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর দায়িত্ব গ্রহনপূর্বক কমিটির কাঠামোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কিছুটা পরিবর্তন করে ঢেলে সাজিয়েছি। আমার মনে করি ফোবানা’য় কমিউনিটির সকলের যেমন সম্পৃক্ততা রয়েছে, তেমনি বিষয়টি সকলের জানার অধিকারও রয়েছে। এই লক্ষ্যে গত ২৩ মে আমরা পূর্ববর্তী ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির এক ভার্র্চুয়াল সভার আয়োজন করি। ফোবানা কমিটির সাংগঠনিক চেয়ারম্যান আলী ইমাম সিকদার এই সভার আয়োজন করে। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটি দায়িত্ব পালন করে যাবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তদনুসারে বর্তমান সভাপতি আলী ইমাম সিকদার সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন এবং বর্তমান কমিটির মেম্বর সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করবেন শাহ নেওয়াজ। ৩১ সদস্য বিশিষ্ট ফোবানা কমিটিকে বর্তমানে আমরা সর্বসম্মতিক্রমে ৩৫ সদস্য উন্নীত করেছি। আগামী সম্মেলন পর্যন্ত এই ৩৩ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি কাজ করবে। যে সব সদস্য ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটিতে নতুন করে সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে,তাদের মধ্যে রয়েছেন ১.জিল্লুর রহমান জিল্লু, ২.মিজানুর রহমান ভূইয়া মিল্টন, ৩. হেলাল চৌধুরী, ৪. ইলিয়াস হোসেন, ৫.ইয়াহিয়া আহমদ, ৬. হাসান চৌধুরী, ৭. জি আই রাসেল, ৮. নিউজার্সি (নাম পরে জানানো হবে) ও ৯. পেনসিলভেনিয়া (নাম পরে জানানো হবে)।
শাহনেওয়াজ বলেন, ফোবানা হচ্ছে উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশী জন মানুষের বহু বছরের একটি পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। প্রতিটি সংঘের কিছু কিছু সাংগঠনিক কর্মকান্ড থাকে। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই দ্বায়ভার থেকে সরে দাঁড়াতে পারে না। সেই ক্ষেত্রে ফোবানারও অনেক কর্মকান্ড আছে। নেতৃত্বে থেকে আমরা এই সব দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারিনা। সেই দ্বায়ভারের কারণেই আমাদের আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলন। অভিষেকের আত্মপ্রচারের মতো ফোবানা ব্যক্তির পূজা করেনা। ফোবানা বাংলাদেশীদের সমষ্টিগত সংস্কৃতির বাহন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে, ২০২২ এর মন্ট্রিয়েলের ফোবানা কনভেনশন ছিল সকল দিক থেকে একটি সফল ফোবানা কনভেনশন। সকল বিবেচনায় আমরা আমাদের কনভেনশন স্বার্থকভাবে সম্পন্ন করেছিলাম। উল্লেখিত কনভেনশন করতে গিয়ে আমাদের লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করতে হয়নি। আমরা লক্ষ লক্ষ ডলারের শ্রাদ্ধ এবং লক্ষ লক্ষ ডলারের ঋণের চাকার নিচে পড়ে পৃষ্ঠ হইনি। শুনা যায়, ফোবানা করতে গিয়ে ঋনের বেড়াজাল থেকে আজও কারো কারো মুক্তি মিলেনি। অনেকে পাওনা টাকার জন্য ধরণা দিচ্ছেন।
এ নিয়ে আপনাদের ও আমাদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি দিয়েছে। এই সব নিয়ে আপনাদের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও নানাবিধ সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি। দেরীতে হলেও আমরা ফিরে এসেছি ফোবানা সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য নিয়ে। যা আপনাদের এবং আমাদের মাধ্যমে উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী সকল প্রবাসী বাংলাদেশী ভাই ও বোনদের জানান দেওয়া খুবই জরুরী বলে আমরা মনে করি। ফোবানার যাবতীয় বিষয়ে আমাদের অভিবাসীদের কাছে স্বচ্ছতার পরিচয় দেয়া আমাদের সাংগঠনিক এবং নৈতিক দ্বায়িত্ব।
শাহ নেওয়াজ বলেন, ফোবানা একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন হলেও গান-বাজনা সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মধ্যই তা সীমাবদ্ধ নয়। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ আক্রমণের কঠিন সময়ে আমাদের নেতা-কর্মীরা জনমানুষের সেবায় জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েছিল। আমরা নিউইয়র্কে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ থেকে শুরু করে চেষ্টা করেছি জনমানুষের পাশে থাকতে। যখন মানুষ করোনা ভাইরাসের ভয়ে ঘর থেকে বাহিরে বের হতে সাহস পায়না, তখন ফোবানার নেতা-কর্মীরা সাহায্যের ডালি নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়েছেন।
তিনি বলেন, উত্তর আমেরিকায় পাল্টাপাল্টি ফোবানা কনভেনশন, ফোবানার বিভক্তি/বিভাজন নিয়ে কমিউনিটির কাছে সব সময় বিব্রত বোধ করি। কমিউনিটি এই বিভক্তি ও বিভাজন নিয়ে যথেষ্ট বিরক্ত ও অন্য সম্প্রদায়ের কাছে বিব্রত। এই ফোবানার দীর্ঘ পথে ফোবানা বিভক্ত হয়েছে আবার ঐক্যবদ্ধ ফোবানা কনভেনশনও হয়েছে। ফোবানা ও আমাদের দূর্ভাগ্য যে, শেষ পর্যন্ত ফোবানা এবং আমাদেরকে বিভক্তি এবং বিভাজনের ফোবানা নিয়েই চলতে হচ্ছে।
শাহনেওয়াজ বলেন, আমরা আগেও মনে করেছি এখনও মনে করি আলাদা আলাদা ফোবানা করে যেতে পারবো, কিন্ত কোন দিনই বিভক্ত থেকে ফোবানার যৌক্তিক পরিনতিতে পৌঁছাতে পারবো না। শিঘ্রই একটি ভার্চুয়াল মিটিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং পর্যায়ক্রমে ফোবানার ঐক্য পুনস্থাপিত করা হবে। তাই আমাদের অঙ্গীকার হিসেবে প্রচেষ্টা বহাল থাকবে।