ফিলিস্তিন সহ মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় উত্তর আমেরিকায় ঈদুল ফিতর পালিত
- প্রকাশের সময় : ১১:৫৯:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪
- / ৭১ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ধর্মীয় ভাব-গম্ভীর পরিবেশে ফিলিস্তিন সহ মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় উত্তর আমেরিকায় বুধবার (১০ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হয়েছে। উত্তর আমেরিকার মধ্যে নিঊইয়র্কের জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি) আয়োজিত ঈদেও জামাত সবেচেয়ে বড় অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে সর্বস্তরের ১০/১২ হাজার মানুষ অংশ নেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা। ঈদের নামাজ আদায় শেষে বিশেষ মুনাজাতে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে সমগ্র মুসলিম জাহান তথা মানব জাতির সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করা হয়েছে। বিশেষ প্রার্থনা করা হয়েছে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের মুক্তির জন্য। ঈদের দিন ছিলো চমৎকার আবহাওয়া। ফলে খোলা আকাশের নীচে খোলা মাঠে বা রাস্তার উপর ঈদের নামাজ আদায়ে কোন সমস্যা হয়নি। খবর ইউএনএ’র।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর রং বে রং এর বাহারী পোষাক পরে মুসলিম কমিউনিটি ঈদের জামাত শেষে একে অপরের সাথে কোলাকুলির মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এছাড়াও ফোনকল, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রবাসীরা। কেউ কেউ সপরিবারে আতœীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাসায় গিয়েও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটির শীর্ষ স্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)-এর উদ্যোগে একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে থমাস এডিশন হাই স্কুলের খেলার মাঠে। এতে ইমামতি ও বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন জেএমসি’র খতিব ও পেশ ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ এবং খুৎবা পাঠ করেন ইমাম শামসে আলী। এই জামাতে শিশু-কিশোর-কিশোরী আবাল-বৃদ্ধা-বণিতা সহ সর্বস্তরের ১০/১২ হাজার মুসল্লি অংশ নেন বলে জানা গেছে। ঈদের জামাতের আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেটর জন সি ল্যু, ষ্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিড উয়েপ্রীন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলম্যান জিম জিনারো ও জোহরান মামদানী, কুইন্স ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী ম্যালিন্ডা কাটস, জাজ সোমা সাঈদ, জেএমসি’র ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. নাজমুল এইচ খান, জেএমসি পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. মাহমুদুর রহমান ও সেক্রেটারী আফতাব মান্নান প্রমুখ। এদিকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে জেএমসি ভবন আলোকসজ্জা করা হয়।
এদিকে জেএমসি আয়োজিত ঈদুল ফিতরের জামাতে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এমপি নাম পড়তে আসলে বিব্রত পরিস্থিতির শিকার হন। নানাজ শুরুর আগে জেএমসি’র পক্ষ থেকে তাকে পরিচয় এবং কিছু বলার অনুরোধ করতেই কতিপয় মুসল্লী ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে হৈচৈ শুরু করে এবং কেই কেউ তার সাথে সেলফি তুলতে গেলে সাকিব বিব্রতবোধ করেন। উদ্ভুত পরিস্থিতে তিনি আর বক্তব্য রাখার সুযোগ পাননি। পরে তিনি ঈদের নামাজ শেষে বিশেষ মুনাজাতের সময় দ্রæত ঈদের মাঠ ত্যাগ করে চলে যান। এসময় কেউ কেউ তার পিছু নেয় এবং ‘ভুয়া ভুয়া’ ধ্বনি তুলতে থাকে।
অপরদিকে আমেরিকা মুসলিম সেন্টার (এএমসি)-এর উদ্যোগে ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল ৭টা, ৮টা ও ৯টায় মসজিদ প্রাঙ্গণে এবং অপর ২টি জামাত অনুষ্টিত হয় সকাল ১০টা ও সকাল ১১টায় যথাক্রমে মসজিদ সংলগ্ন রুফস কিং পার্কে।
জ্যামাইকার আল আরাফা ইসলামিক সেন্টারের উদ্যোগে এবছর প্রথম ঈদুল ফিতরের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল সাথে ৭টা ও সাড়ে ৮টায় সেন্টারের নিজস্ব নতুন ভবনে (৮৮-৪৯ ১৭৯ প্লেস, জ্যামাইকা)। এই জামাতে মহিলাদেরও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়।
জ্যামাইকার দারুস সালাম মসজিদে ঈদের ৪টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত সকাল সাড়ে সাতটায়, দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে আটটায়, তৃতীয় জামাত সকাল সাড়ে নয়টায় এবং চতুর্থ জামাত সকাল সাড়ে দশটায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত ব্যতীত অন্য সব জামাতে মহিলাদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা ছিলো।
হলিসউডের মসজিদ আল রায়ানের উদ্যোগে ঈদের ২টি জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল সাড়ে ৮টায় ও সকাল সাড়ে ৯টায়। এই জামাতে মহিলাদেরও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়।
এস্টোরিয়ার আল আমিন জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে আটটায় ৩৬ স্ট্রিটে (৩৬ ও ৩৭ অ্যাভিনিউর মাঝে) জামাত হয়।
জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ স্ট্রীট নামে স্বীকৃত ৭৩ স্ট্রীটের উপর জেবিবিএ’র উদ্যাগে ঈদের জামাত হয়েছে সকাল সাড়ে ৮টায়। এতে বিভক্ত জেবিবিএ’র নেতৃবৃন্দ ও মুসলিম ব্যবসায়ীরা সহ বিপুল সংখ্যক মুসল্লী অংশ নেন।
ম্যানহাটানের ইসলামিক কাউন্সিল অব আমেরিকা (মদিনা মসজিদ)-এর উদ্যোগে ঈদুল ফিতরের একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায় মসজিদ সংলগø ওপেন রোড পার্কে।
ব্রæকলীনের বায়তুল জান্নাহ জমে মসজিদ এন্ড মুসলিম কমিউনিটি সেন্টারের উদ্যোগে ঈদের একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টায় ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউতে (চার্চ এভিনিউ ও এভিনিউ সি’র মাঝে)। এখানেও সর্বস্তরের শত শত মুসলিম নরনারী জামাতে অংশ নেন।
এসব জামাতে সমগ্র মুসলিম উম্মার সৌহার্দ, সম্প্রীতি আর ঐক্য কামনার পাশাপাশি ফিলিস্তিন সহ দেশে দেশে নিপীড়িত-নির্যাতিত জনগণের কষ্ট দূরের পাশাপাশি স্বস্তি ও শান্তি কামনা করা হয়।
এছাড়াও নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের জ্যামাইকার হিলসাইড ইসলামিক সেন্টার, জ্যাকসন হাইটসের মসজিদ আবু হুরায়রা, দারুস সুন্নাহ মসজিদ, আল ফোরকান মসজিদ, ব্রæকলীনের বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, আসসাফা মসজিদ, গাউছিয়া মসজিদ, ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার ইসলামিক সেন্টার, ব্রঙ্কস মুসলিম সেন্টার প্রভৃতি মসজিদের উদ্যোগে খোলা মাঠে বা মসজিদ ভবনে ঈদুল ফিতরের একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে।
এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী, কানেকটিকাট, ম্যারিল্যান্ড, পেনসেলভেনিয়া, ভার্জেনিয়া, ওয়াহিও, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোরিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, এরিজোনা সহ প্রভৃতি স্টেটে ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।