প্রবাসী মৌলভীবাজারবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে মৌলভীবাজার ডিষ্ট্রিক্ট সোসাইটি অব ইউএসএ ইন্ক গঠিত
- প্রকাশের সময় : ১০:০১:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৫
- / ১০৩০ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশন বিলুপ্ত করে প্রবাসী মৌলভীবাজারবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হলো মৌলভীবাজার ডিষ্ট্রিক্ট সোসাইটি অব ইউএসএ ইন্ক। নবগঠিত কমিটির প্রধান হচ্ছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান। গত ১১ জানুয়ারী রোববার সন্ধ্যায় এস্টোরিয়াস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইন্্ক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঐক্যবদ্ধ মৌলবীবাজার জেলাবাসীদের এক সাধারণ সভায় এই ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐক্যবদ্ধ কমিটির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবীণ মৌলভীবাজারবাসী গজনফর আলী চৌধুরী। সভা পরিচালনা করেন কমিটির সদস্য সচিব ইমরান হোসেন।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মওলানা ছয়ফুল আলম সিদ্দিকী আর স্বাগত বক্তব্য রাখেন আবু বকর চৌধুরী। সভায় যেকোন মূল্যে প্রবাসী মৌলভীবাজারবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করা ও ঐক্যবদ্ধ রাখার উপর গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য রাখেন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান আবুল কালাম, সভার অতিথি যথাক্রমে সৈয়দ শওকত আলী, ফখরুল ইসলাম, আবু বকর চৌধুরী, আবুল কালাম, আব্দুল মুসাব্বির, সিদ্দিকুল হাসান, সাইফুল ইসলাম রহীম, বদরুন নাহার খান মিতা, সালেহ চৌধুরী, সৈয়দ জুবায়ের আলী, শাহান খান, শাহ গিয়াস সহ নিউজার্সী বোর্ড অব এডুকেশনের কমিশনার আবুল হোসেন সুরমান, মওলানা ছয়ফুল আলম সিদ্দিকী, লায়েক তরফদার, হেলাল তরফদার, আব্দুল খালিক, নজরুল ইসলাম, সিদ্দিকুল হাসান, আব্দুল করীম, ইমরান প্রমুখ।
সাধারণ সভার আগে একই স্থানে মরহুম সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মৌলভীবাজারের সন্তান সৈয়দ নজরুল ইসলাম গত ৭ জানুয়ারী ইন্তেকাল করেন। দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন মওলানা ছয়ফুল আলম সিদ্দিকী। দোয়া মাহফিলে বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত সভাপতি আজমল হোসেন কুনু ও জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সভাপতি বদরুল হোসেন খানসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী মৌলভীবাজারবাসী উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ সভায় প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্রের আলোকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় হয়।
সভায় জানানো হয়, মৌলভীবাজার জেলা সমিতি ইউএসএ ইন্্ক ও মৌলভীবাজার ডিষ্ট্রিক্ট এসোসিয়েশন ইউএসএ ইন্্ক ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে বিগত দেড় বছর ধরে আবু সুফিয়ান ও ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছে। তারপরও প্রবাসী মৌলভীবাজারবাসীদের মধ্যে ৮০ভাগ প্রবাসী ঐক্যের পক্ষে রয়েছেন। বাকী প্রবাসীরাও ঐক্যবদ্ধ হবেন বলে সভায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। সভায় বলা হয়, নতুন নামকরণের শর্তে দুই সংগঠনের কর্মকর্তারা ঐক্যবদ্ধ হতে রাজী হন এবং এব্যাপারে উভয় সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদ্বয় একটি মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষরও করেন। কিন্তু তারপরও কতিপয় প্রবাসী ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হননি যা দু:খজনক। তারপরও তারা আমাদেরই ভাই, মৌলভীবাজারের সন্তান। সভায় বলা হয়, প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য আবুল কালামকে প্রধান করে ৬ সদস্য কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন: সৈয়দ শওকত আলী, আবু বকর চৌধুরী, আহমেদ জিলু, সৈয়দ জুবায়ের আলী ও শাহান খান।
সভায় সৈয়দ গজনফর আলী চৌধুরী বলেন, প্রবাসী মৌলভীবাজারবাসীদের সংগঠন অনেক পুরাতন সংগঠন। এই সংগঠনের প্রথম সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে আব্দুল মালেক সিপিএ আর ফরাসত আলী। তিনি বলেন, আমরা অনেক দিন ধরেই ঐক্যের পক্ষে। আমার স্ত্রী সাবেক এমপি সৈয়দা হাসনা বেগমও ঐক্যের জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কেন ঐক্য হচ্ছে না। তাহলে সংগঠন গড়ার দরকার কি, সংগঠনের কাজ কি? শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য সংগঠন নয়। তিনি বলেন, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সিনেটর, কংগ্রেসম্যানদের সহযোগিতা পেতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, ভোটার হতে হবে।
আবু বকর চৌধুরী বলেন, মৌলভীবাজারবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করতে আবু সুফিয়ান ও ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি গঠনের পর কতিপয় মৌলভীবাজারবাসী বিরোধীতা করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মৌলভীবাজারবাসীদের সমর্থনের ফলে সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এক সংগঠন চাই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলতে চাই।
আবুল কালাম বলেন, ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। নৈতিকতার প্রশ্নেই ঐক্যের দরকার। তিনি বলেন, কোন কাজেই ১০০ ভাগ সফলতা আসবে এমনটি ভাববার কারণ নেই। যেখানে ৮০ ভাগ মৌলভীবাজারবাসী ঐক্যের পক্ষে সেখানে বাকীরাও ঐক্যবদ্ধ হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আব্দুল মুসাব্বির বলেন, কারো বিরুদ্ধে কোন কথা নয়। আমরা সবাই মৌলভীবাজারবাসী। ঐক্যের মধ্য দিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে হবে, আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।
সালেহ চৌধুরী বলেন, মনে অনৈক্য থাকলে সংগঠনে ঐক্য আসবে না। ঐক্যের আগে নিজেদের মন সুন্দর করতে হবে। নিয়মমাফিক সংগঠন পরিচালিত করতে হবে। তিনি বলেন, মৌলভীবাজারের সংগঠনে ৪/৫জন মানুষ রয়েছেন যারা ক্যান্সারের মতো কাজ করছে বলেই বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
আবুল হোসেন সুরমান বলেন, আমরা পরষ্পর পরষ্পরকে, একে অপরকে সম্মান না করার কারণেই সামাজিক সংগঠনগুলোতে বিভক্তি দেখা দেয়, নিজেদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, ঐক্য ছাড়া জালালাবাদ এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সোসাইটি বা মূলধারায় আমরা নিজেদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবো না। তিনি সকল প্রবাসীকে সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি মূলধারার রাজনীতিতে অংশ নিয়ে মানুষের সেবায় আবদান রাখার আহ্বান জানান।
সাইফুল ইসলাম রহীম বলেন, কমিউনিটিতে পদ-পদবী, চেয়ারের জন্যই বিভক্তি, অনৈক্য। তাই যারা পদ-পদবীর জন্য বিভক্তি চান তাদেরকে সমন্বয়ের মাধ্যমে মৌলভীবাজারবাসীদের ঐক্য প্রক্রিয়া তড়ান্বিত করার আহ্বান জানান।
বদরুন নাহার খান মিতা বলেন, আমাদের ঐক্য কত জরুরী তার প্রমাণ মিলেছে বাংলাদেশ সোসাইটি আর জালালাবাদ এসোসিয়েশনের বিগত নির্বাচনে। ঐক্যবদ্ধ ছাড়া কমিউনিটিতে আমরা আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবো না।
সৈয়দ জুবায়ের আলী বলেন, বিগত দেড় বছর নয় আরো আগে থেকেই আমরা ঐক্য প্রক্রিয়ার জন্য কাজ করেছি। এজন্য দুই সংগঠন থেকে ৭ জন করে মোট ১৪জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। তারপরও দূর্ভাগ্য কেউ কেউ ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে আসেনি। তাদেরকে চিহ্নিত করা দরকার। তিনি বলেন, আমরা সকল প্রবাসী মৌলভীবাজারবাসীকে এক ছাতার তলে দেখতে চাই বলে বৃহত্তর স্বার্থে আমরা মৌলভীবাজার ডিষ্ট্রিক্ট এসোসিয়েশন ইন্ক বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
লায়েক তরফদার বলেন, যারা ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসতে চাননি, তাদের কোন কথা থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে সভায় এসে বলা উচিৎ। তিনি বলেন, ৯৯ জনের মধ্যে ৭১জনই ঐক্যের পক্ষে। আমাদের নতুন প্রজন্মের স্বার্থে ঐক্যের বিকল্প নেই।
সভায় সৈয়দ জুবায়ের আলী মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলা থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন। অপরদিকে সুরমান আলী সংগঠনের বোর্ড অব ট্রাষ্টির সদস্যদের বয়স কমপক্ষে ৫০ বছরের প্রস্তাব দেন।
উল্লেখ্য, প্রবাসী মৌলভীবাজারবাসী কমিউনিটির শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ সভায় অর্ধ শতাধিক প্রবাসী মৌলভীবাজারবাসী উপস্থিত ছিলেন। তবে মৌলভবীবাজার জেলা সমিতির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সভায় দেখা যায়নি। ফলে প্রবাসী মৌলভীবাজারবাসীদের ঐক্যবদ্ধতার বিষয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। তারপরও উপস্থিত সকলে ঐক্যের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং আগামী দিনে তারাও (যারা আজকের সভায় আসেননি তারা) আমাদের সাথে একাত্ততা প্রকাশ এবং মৌলভীবাজারবাসীকে সুসংগঠিত করবেন।