নিউইয়র্ক ০৯:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ড. সুলতান আহমেদ আর নেই

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:২৭:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৪ বার পঠিত

হককথা রিপোর্ট: বিশ্বব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, নর্থ আমেরিকা নজরুল কনফারেন্স কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সাহসী ভ‚মিকায় নিবেদিত প্রাণ ড. সুলতান আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন। তিনি গত ১৩ অগাস্ট বুধবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর বয়স ছিল ৯১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, একপুত্র, এক কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়ার ভিয়েনায় বসবাসরত ড. সুলতান দীর্ঘদিন থেকে কিডনী সমস্যা ছাড়াও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
জানা যায়, ড. সুলতান আহমেদকে ড. সুলতান আহমেদকে সপ্তাহে তিনদিন ডায়ালাইসিস করতে হতো। ঐদিন ডায়ালাইসিস থেকে বাড়ি আনা হয়েছিল এবং ফল খাওয়া এবং তারপর বিশ্রাম নেওয়ার নিয়মিত রুটিন অনুসরণ করা হয়েছিল। যখন তিনি শুতে যান, তখন তার খিঁচুনি হয় এবং তিনি সোফায় পড়ে যান। সাথে সাথে ৯১১ নম্বরে ফোন করা হয় এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তিনি শেষ নি;শ্বাস ত্যাগ করেন। হৃদরোগের জটিলতা এবং স্বাস্থ্যের অবনতি-ই মৃত্যুর কারণ বলে চিকিৎসকরা জানান।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্যে পাক-বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন যে সামরিক অস্ত্র দিয়েছিল, সেই অস্ত্র বোঝাই জাহাজটি ম্যারিল্যান্ডের বাল্টিমোরে আটকে দিতে অসমসাহসী ভূমিকা পালনকারির অন্যতম এই সুলতান আহমেদ সে সময় পিএইচডি’র ছাত্র ছিলেন। স্ত্রী এবং শিশু সন্তান সাথে নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে কাজ করেছেন সুলতান আহমেদ।
শোক প্রকাশ: রাজশাহীর সন্তান, ওয়াশিংটন মেট্র এলাকার প্রবাসীদের সামাজিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র সাবেক সভাপতি ড. সুলতান আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শতদল-এর প্রতিষ্ঠাতা-প্রেসিডেন্ট কবির কিরণ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ফাইজুল ইসলাম, ড. আশরাফ আহমেদ প্রমুখ ড. সুলতান আহমেদের ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: ড. সুলতান আহমেদ ১৯৩৭ সালের ১০ মার্চ রাজশাহীর শহরতলির মিরেরচক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী মাদ্রাসায় (বর্তমানে হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে) পড়ার জন্য তিন মাইল হেঁটে যেতোন। তার পড়াশোনা রাজশাহী কলেজে এবং তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে তিনি এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন এবং অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। তার স্ত্রীর নাম সুফিয়া আহমেদ। তার দুই সন্তান শামীম খান এবং ইফতিখার আহমেদ এবং চার নাতি-নাতনী রয়েছে।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে প্রভাষক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং তারপর কমনওয়েলথ স্কলারশিপে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স (এলএসই) থেকে অর্থনীতিতে এম.এসসি. ডিগ্রি অর্জন করেন। এলএসই থেকে স্নাতক হওয়ার পর, তিনি ফিলাডেলফিয়ার পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (পেন) যোগদানের জন্য ফোর্ড ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ লাভ করেন, যেখানে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পেন-এ তিনি (প্রয়াত) অধ্যাপক ইরভিং ক্রাভিসের নেতৃত্বে একটি দলের গবেষণা সহযোগী হিসেবেও কাজ করেন।
ড. সুলতান আহমেদ ১৯৭৩ সালে ওয়ার্ড ব্যাংকে যোগদান করেন। যেখানে তিনি পিপিপি প্রোগ্রাম পরিচালনার জন্য তার বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন। ১৯৯৯ সালে বিশ্বব্যাংক থেকে অবসর নেন। অবসর গ্রহণের পর, তিনি তার বেশিরভাগ সময় ধর্মীয় কর্মকাÐ, ঈদ ও জুমার নামাজের নেতৃত্ব, ধর্মীয় বিষয়ে ব্যক্তিগত সমাবেশ করে সময় অতিবাহিত করতেন।
ড. সুলতান আহমেদ দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে উত্তর আমেরিকা নজরুল সম্মেলন কমিটির (এনএনসিসি) সভাপতি ছিলেন। তিনি স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিএএআই-এর সভাপতিও ছিলেন এবং ওয়াহেদ হোসেনীর কুরআনের ‘ভাবনুবাদ’ তৈরিতে সহায়তা করেন।

 

 

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ড. সুলতান আহমেদ আর নেই

প্রকাশের সময় : ০১:২৭:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

হককথা রিপোর্ট: বিশ্বব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, নর্থ আমেরিকা নজরুল কনফারেন্স কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সাহসী ভ‚মিকায় নিবেদিত প্রাণ ড. সুলতান আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন। তিনি গত ১৩ অগাস্ট বুধবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর বয়স ছিল ৯১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, একপুত্র, এক কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়ার ভিয়েনায় বসবাসরত ড. সুলতান দীর্ঘদিন থেকে কিডনী সমস্যা ছাড়াও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
জানা যায়, ড. সুলতান আহমেদকে ড. সুলতান আহমেদকে সপ্তাহে তিনদিন ডায়ালাইসিস করতে হতো। ঐদিন ডায়ালাইসিস থেকে বাড়ি আনা হয়েছিল এবং ফল খাওয়া এবং তারপর বিশ্রাম নেওয়ার নিয়মিত রুটিন অনুসরণ করা হয়েছিল। যখন তিনি শুতে যান, তখন তার খিঁচুনি হয় এবং তিনি সোফায় পড়ে যান। সাথে সাথে ৯১১ নম্বরে ফোন করা হয় এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তিনি শেষ নি;শ্বাস ত্যাগ করেন। হৃদরোগের জটিলতা এবং স্বাস্থ্যের অবনতি-ই মৃত্যুর কারণ বলে চিকিৎসকরা জানান।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্যে পাক-বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন যে সামরিক অস্ত্র দিয়েছিল, সেই অস্ত্র বোঝাই জাহাজটি ম্যারিল্যান্ডের বাল্টিমোরে আটকে দিতে অসমসাহসী ভূমিকা পালনকারির অন্যতম এই সুলতান আহমেদ সে সময় পিএইচডি’র ছাত্র ছিলেন। স্ত্রী এবং শিশু সন্তান সাথে নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে কাজ করেছেন সুলতান আহমেদ।
শোক প্রকাশ: রাজশাহীর সন্তান, ওয়াশিংটন মেট্র এলাকার প্রবাসীদের সামাজিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র সাবেক সভাপতি ড. সুলতান আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শতদল-এর প্রতিষ্ঠাতা-প্রেসিডেন্ট কবির কিরণ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ফাইজুল ইসলাম, ড. আশরাফ আহমেদ প্রমুখ ড. সুলতান আহমেদের ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: ড. সুলতান আহমেদ ১৯৩৭ সালের ১০ মার্চ রাজশাহীর শহরতলির মিরেরচক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী মাদ্রাসায় (বর্তমানে হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে) পড়ার জন্য তিন মাইল হেঁটে যেতোন। তার পড়াশোনা রাজশাহী কলেজে এবং তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে তিনি এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন এবং অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। তার স্ত্রীর নাম সুফিয়া আহমেদ। তার দুই সন্তান শামীম খান এবং ইফতিখার আহমেদ এবং চার নাতি-নাতনী রয়েছে।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে প্রভাষক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং তারপর কমনওয়েলথ স্কলারশিপে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স (এলএসই) থেকে অর্থনীতিতে এম.এসসি. ডিগ্রি অর্জন করেন। এলএসই থেকে স্নাতক হওয়ার পর, তিনি ফিলাডেলফিয়ার পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (পেন) যোগদানের জন্য ফোর্ড ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ লাভ করেন, যেখানে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পেন-এ তিনি (প্রয়াত) অধ্যাপক ইরভিং ক্রাভিসের নেতৃত্বে একটি দলের গবেষণা সহযোগী হিসেবেও কাজ করেন।
ড. সুলতান আহমেদ ১৯৭৩ সালে ওয়ার্ড ব্যাংকে যোগদান করেন। যেখানে তিনি পিপিপি প্রোগ্রাম পরিচালনার জন্য তার বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন। ১৯৯৯ সালে বিশ্বব্যাংক থেকে অবসর নেন। অবসর গ্রহণের পর, তিনি তার বেশিরভাগ সময় ধর্মীয় কর্মকাÐ, ঈদ ও জুমার নামাজের নেতৃত্ব, ধর্মীয় বিষয়ে ব্যক্তিগত সমাবেশ করে সময় অতিবাহিত করতেন।
ড. সুলতান আহমেদ দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে উত্তর আমেরিকা নজরুল সম্মেলন কমিটির (এনএনসিসি) সভাপতি ছিলেন। তিনি স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিএএআই-এর সভাপতিও ছিলেন এবং ওয়াহেদ হোসেনীর কুরআনের ‘ভাবনুবাদ’ তৈরিতে সহায়তা করেন।