বিশেষ প্রতিনিধিঃ প্রথম যৌবন থেকে দেশ মাতৃকার জন্য লড়াই সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন নুরুল ইসলাম। প্রথম মাতৃভাষার জন্য আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সময়ের দ্রোহ তাঁকে দূর পশ্চিমের জনপদেও আন্দোলিত করেছে। বৃটেনের রাজপথে নাগরিক আন্দোলন করেছেন নুরুল ইসলাম। দেশে ফিরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রবাসীদের দাবী দাওয়া এবং বাঙালীর প্রবাস যাত্রা নিয়ে গবেষণা কাজে নিবেদিত থেকে রেখে গেছেন ‘প্রবাসীর কথা’ নামের অমূল্য গ্রন্থ। শুধু প্রবাসীরাই নয় বাংলাদেশের অগ্রসর মানুষ নুরুল ইসলামের জীবন ও কর্মকে স্মরণ করবে সময়ের সীমানা পেরিয়েও।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ভাষা সৈনিক, লেখক-সাংবাদিক নুরুল ইসলাম স্মরণে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন। গত ২১ জানুয়ারী শনিবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস্থ জুইশ সেন্টারে অনুষ্ঠিত স্মরণ ও আলোচনা অনুষ্টানে সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাস। অথিতি হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আখতারুল ইসলাম, একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা ফেরদৌস নাজমী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল প্রমুখ।
লেখক-সাংবাদিক রওশন হকের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে মরহুম নুরুল ইসলামের ভাগ্নে সাংবাদিক এমদাদ চৌধুরী দীপু মরহুমের জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। লেখক-সাংবাদিক ও জনসমাজ-এর ব্যানারে আয়োজিত স্মরণ সভায় সমবেত প্রবাসী বাংলাদেশীরা দাঁড়িয়ে মরহুম নুরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানান।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করে প্রবীণ সাংবাদিক তাসের মাহমুদ বলেন, নুরুল ইসলামের মতো সময়ের সাহসী মানুষের পথ ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ে এমন লোকজনের কর্মের বিবরণ বাঙালীর প্রেরণা হয়ে থাকবে।
প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর যে প্রবাসীরা দেশের তহবিলে প্রথম বৈদেশিক মুদ্রার যোগান দিয়েছিলেন, নুরুল ইসলাম তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করে গেছেন আমৃত্যু।
সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের বলেছেন, প্রবাসীর কথা এখন পর্যন্ত বাঙালীর প্রবাসযাত্রা নিয়ে একমাত্র গবেষণাগ্রন্থ। এই গ্রন্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত হয়, প্রবাসীদের বোহেমিয়ান যাত্রা নিয়ে জানার জন্য ‘প্রবাসীর কথা’ বইয়ের চর্চার মধ্যেই নুরুল ইসলাম বেঁচে থাকবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নুরুল ইসলামের মতো অগ্রজদের পথ ধরেই বাঙালী জনসমাজ এগিয়ে গেছে। অহংকারের সাথে প্রবাসীরাও তাদের কথা স্মরণ রাখবেন।
লেখক-সাংবাদিক মাহবুব রহমান বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকেও নিজের কর্মদিয়ে নুরুল ইসলাম জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করে গেছেন। এ কর্ম নিয়ে উত্তরসূরিদের অহংকার করার কারণ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ল’ সোসাইটি ইউএসএ’র সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, সিলেটের সন্তান হিসেবে নুরুল ইসলামকে নিয়ে তিনি অহংকার করেন। সিলেটের লোকজনই বাঙালীর প্রবাসযাত্রার পথিকৃৎ। নুরুল ইসলামের ‘প্রবাসীর কথা’ বই এই পথিকৃতদের নিয়েই রচিত করেছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল তার বক্তব্যে প্রবাসীদের জন্য আজীবন কাজ করে যাওয়া নুরুল ইসলামের স্মৃতি সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।
শেখ আখতারুল ইসলাম মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একজন যুবক নুরুল ইসলামের কর্ম তৎপরতাকে স্মরণ এবং মরহুমের বিদেহী আতœার মাফফেরাত তবামনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, মরহুম নূরুল ইসলাম নিকটাত্মীয় হলেও তাঁকে দেখেছেন প্রবাসীদের কল্যাণে ‘ওভারসিজ সেন্টার’ নামের প্রতিষ্ঠান নিয়ে নিজেকে নিবেদিত রাখতে। মরহুম নুররুল ইসলামের প্রবাসীদের নিয়ে করা বহু কর্মে নিজে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্মরণ করেন আব্দুস সালাম।
একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা ফেরদৌস নাজমী মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করে বলেন একাত্তরে বাংলার খাটি সন্তান নুরুল ইসলামদের স্মরণ করে যাবে বাঙালী জাতি সময়ের সীমানা পেরিয়েও।
নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন আজমল বলেন, নুরুল ইসলামরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সেদিন শুধু সাড়া দিয়েই ক্ষান্ত হননি। সারা জীবন মহান নেতার বাণী বুকে ধারণ করে বাঙালীর জন্য কাজ করে গেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহিবুর রহমান বলেন নুরুল ইসলামের মতো লোকজন স্বাধীন বাংলাদেশে কোন সুবিধা নেয়ার জন্য নিজেদের নিয়োজিত করেননি।
সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাস বলেন, যে চিন্তা চেতনা নিয়ে একাত্তরে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম, তার সবই হয়তো অর্জিত হয়নি। তারপরও বলবো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। প্রয়াত নুরুল ইসলামকে স্মরণ করতে গিয়ে এ কথাই আবার উচ্চারণ করা যায় বলে সুব্রত বিশ্বাস দৃঢ়তার সাথে বলেন।
অনুষ্ঠানে লেখক-সাংবাদিকদের উচ্চারণে, কবিতায় মরহুম নুরুল ইসলামকে স্মরণ পর্ব পরিচালনা করেন লেখক-সাংবাদিক এইচ বি রিতা। এই পর্বে অংশ নেন আবদুস শহীদ, রওনক চৌধুরী, শেলী জামান খান, মুকুল হক, শাহানা বেগম, মনজুরুল হক, মাহমুদুল চৌধুরী, তোফাজ্জল লিটন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সাংবাদিক সালাউহদ্দিন আহমেদ, সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, রাজিয়া নাজমী, এনায়েত চৌধুরী, সৈয়দ মাসুদুল কবির, মুতাসিম বিল্লাহ তুষার, তানিম চৌধুরী, আজিজুর রহমান, মুহিবুর রহমান, মাহমুদুল চৌধুরী, আসাবুর রহমান সাবু, গৌতম দে, শাহীন আহমেদ, আব্দুস শহীদ, এমডি লৎফুর রহমান, বুশরা রহমান, নাজু চৌধুরী, আশরাফা চৌধুরী, নুরুল হক, জগদীশ চৌধুরী, সৈয়দ উতবা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ছবিঃ সৈয়দ মাসুদুল কবির