যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগের কর্মী সভায় দপ্তর সম্পাদকের বহিঃস্কার দাবী
- প্রকাশের সময় : ১০:৫৯:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৪
- / ৯১৪ বার পঠিত
প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফর, সেন্ট্রাল পার্কের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর যোগ না দেয়া, সর্বজনীন সংবর্ধনা আর দপ্তর সম্পাদক কর্তৃক সভা পরিচালনা, নেত্রীর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ না পাওয়া, রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সম্বর্ধনা সভা বাতিল সহ নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ উত্থাপন আর দফায় দফায় উত্তেজনার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মী সভা। সভায় সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে বহিষ্কারেরও দাবী উঠেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক সফর ও সম্বর্ধনা সভাসহ নানা ঘটনায় সৃষ্ট অপ্রীতিকর ঘটনা আর ব্যর্থতার জন্য সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দায় স্বীকার ও ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি কামনাসহ ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া এবং আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাসের মধ্য দিয়ে কর্মী সভা সমাপ্ত হয়েছে।
সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ পালকী পার্টি সেন্টারে গত ১২ অক্টোবর রোববার অনুষ্ঠিত কর্মী সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। সভা পরিচালনা সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ। বেলা তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সভার কার্যক্রম চলে। সভার শুরুতে সংগঠনের সহ সভাপতি নজমুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় আওয়ামী লীগ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ’সহ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লুৎফুল কবীর, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ, আব্দুল হাসিব মামুন ও চন্দন দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া (হাজি এনাম), উপ-প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনি, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিরিন আক্তার দীবা, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদ সদস্য রুহেল চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, জসিম উদ্দিন খান মিঠু, যুবলীগের সভাপতি মিসবাহ আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদুর রহমান জামাল, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ শাহনাজ, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের নুরুজ্জামান সরদার, দরুদ মিয়া রনেল, নূরুল আবসার সেন্টু, ব্রুকলীন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম নজরুল, শাহাদৎ হোসেন, হাজী নূরে আলম, শেখ আতিকুল ইসলাম, নূরুল আফসার সেন্টু, জালাল উদ্দিন রুমী, গজনবী সহ প্রায় ৪০ জন নেতা-কর্মী বক্তব্য রাখেন। সভায় যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
সভা সূত্রে জানা গেছে, কর্মী সভার আলোচনার শুরুতেই আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন নিয়ে হট্টগোল শুরু হয়। বিশেষ করে সভায় উপস্থিত অধিকাংশ নেতাকর্মীদের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর সর্বজনীন সম্বর্ধনায় ত্যাগী নেতাদের মঞ্চে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ না দেয়া, মূল্যায়ণ না হওয়া এবং যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের ডিংগিয়ে দপ্তর সম্পাদক কর্তৃক সম্বর্ধনা সভা পরিচালনা করার বিষয়টি বারবার উঠে আসে। অভিযোগ উঠে দলের বেশীর ভাগ নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে। এছাড়াও সেন্ট্রাল পার্কের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদান না করার কারণ, হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক আইরীন পারভিন ও দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর মধ্যকার সৃষ্ট অপ্রীতিকর ঘটনা প্রভৃতি বিষয়ও উঠে আসে বক্তাদের বক্তব্যে। সভায় বেশীর ভাগ বক্তাই দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে বিহ:স্কারের দাবি জানান। সভায় অনেক বক্তার মুখে দলের পদ-পদবী নিয়ে তা ব্যবহার করে কোন কোন নেতার ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠে। সেই সাথে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, ছাত্রলীগে বিভক্তি আর দলের মধ্যে এতো দ্বিধা-বিভক্তি, গ্রুপিং, নর্থ আমেরিকা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার কারণ কেন তারও জবাব চান কেউ কেউ।
সভায় লুৎফুল কবীর, চন্দন দত্ত, নূরুল ইসলাম নজরুল প্রমুখের বক্তব্যেকে কেন্দ্র করে একাধিকবার উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। শুরু হয় হৈচৈ, হট্টগোল, উদ্ভব হয় ধাক্কাধাক্কির মতো ঘটনা। তবে দলের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ ও আহ্বানে পরিস্থিতি শান্ত হয়। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে সিকিউরিটির উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশ হলেও এবারের কর্মসভায় কোন সিকিউরিটি না রাখায় দলীয় নেতা-কর্মীরা এর প্রশংসা করেন এবং সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ধন্যবাদ জানান।
সভায় সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ভুল তো মানুষই করে। সময় আর বাস্তবতার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে অনেক নেতাকে তার যথাযথ মর্যাদা দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এটা ভুল হয়েছে। আমি এ জন্য সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থী। আগামীতে আমরা এসব বিষয়ে আরো সচেতনতা অবলম্বন করবো’। তিনি বলেন, আমাদের বড় সফলতা হচ্ছে নানা ষড়যন্ত্রের পরও আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সফলভাবে সম্বর্ধিত করতে পেরেছি। এজন্য তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে, দলের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে বহিস্কার দাবীর বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। সভায় ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দলীয় সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যর বিকল্প নেই।
সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদও সভায় বিগত দিনের ভুল-ত্রুটির জন্য আন্তরিকভাবে দু:খ প্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে ভুলগুলো সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান এবং ভবিষ্যতে এমন ভুল হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, আমি অসুস্থ্য থাকায় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আযোজিত সম্বর্ধনা সভা পরিচালনা না করে সহ সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদকে দায়িত্ব দেই। কিন্তু সেই দায়িত্ব দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী কিভাবে পেলো তা আমি জানি না।
সভায় দলের উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে সহ সভাপতি আকতার হোসেন, সৈয়দ বসারত আলী, মাহবুবুর রহমান, লুৎফুল কবীর, সহ সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা, মহিউদ্দিন দেওয়ান, কোষাধ্যক্ষ আবুল মনসুর খান, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শাহ বখতিয়ার, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবীদ আশরাফুজ্জামান, প্রবাস বিষয়ক সম্পাদক সোলায়মান আলী, কার্যকরী পরিষদ সদস্য শাহানারা রহমান, খোরশেদ খন্দকার, আনোয়ার হোসেন, হাজী নিজাম উদ্দিন, আমিনুল ইসলাম কলিন্স, আতাউল গণি আসাদ, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের অপরাংশের সভাপতি সাখাওয়াত বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ, নিউইয়র্ক ষ্টেট যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সেবুল মিয়া, মহিলালীগ নেত্রী শিরিন আক্তার দীবা, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকন, যুবলগি নেতা সৈয়দ ওয়ালী, ইফজাল আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মীসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী নভেম্বর মাসে সুবিধাজনক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত এবং ঐ সভায় দল ও দলের অঙ্গ সংগঠনের মধ্যেকার দ্বন্দ নিরসনে উপ-কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত কাজ থাকায় কর্মী সভায় সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক আইরীন পারভিন ও দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী অনুপস্থিত ছিলেন।