প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মহানগর আওয়ামী লীগ মুখোমুখী : বিভক্ত দলীয় নেতা-কর্মীরা
- প্রকাশের সময় : ০১:২৯:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৯৬ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি : জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র যুক্তরাষ্ট্র সফরকালীন সময়ে বিগত বছরগুলোর মতো এবারো তাঁকে দলের উদ্যোগে সংবর্ধনা দেয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ না নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ এই সংবর্ধনার আয়োজন করবে তা নিয়ে দলের মধ্যে বিভেদ-বিভক্তি সহ নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। এই সংবর্ধনা দেয়াকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এদিকে উল্লেখিত সংবর্ধনা ঘিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি’র ভূমিকা ও অবস্থান নিয়ে দলের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেবার লক্ষ্যে ম্যানহাটনস্থ ম্যারিয়ট মারকিউস হোটেলের সম্মেলন কক্ষ ভাড়া করা হয়েছে। অপরদিকে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনার আয়োজন করবে বলে পোস্টারিং ও সভা-সমাবেশ করছে, বিভিন্ন বরোতে চলছে টাউন হল মিটিং। এ লক্ষ্যে তারা একটি কমিটিও গঠন করেছে। মহানগর আওয়ামী লীগ বলছে, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি’র নির্দেশনা পেয়েই সংবর্ধনা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছেন। আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুর রহমান রফিক ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডকে গর্হিত কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, পোষ্টারিং ও মিছিল করলেই প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা যায় না। এটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। অনেক খরচের ব্যাপার। ইতোমধ্যেই আমরা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নামে সংবর্ধনার জন্য হোটেল বুক দিয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও মতামতের ভিত্তিতেই সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে। আমাদের করণীয় জানার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। গত শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় দলের উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, সহ সভাপতি সামসুদ্দীন আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দীন দেওয়ান, প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া (হাজি এনাম), নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমল হক শাহীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মেরাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মকবুল হোসেন তালুকদার, কৃষিবীদ আশরাফুজ্জামান, সোলায়মান আলী, জি আই রাসেল, আশরাফুজ্জামান, জাকারিয়া চৌধুরী, এডভোকেট মোরশেদা জামান, ড. মাহবুবুর রহমান টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেবার বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে ওদের কোন ধারনা নেই। তা থাকলে এই দু:সাহসিক কথা বলতো না। তারা অন্যায় কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মহানগর ও ষ্টেট আওয়ামী লীগগুলো। মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা যত শ্লোগান দেন বা পোষ্টার লাগান না কেন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেব না। বরং তাদের নিয়েই সংবর্ধনার আয়োজন করবো। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আকাশ থকে আসেনি। এটা শেখ হাসিনারই দেয়া। তাদের সাথে আমি কথা বলবো। তাদের সাথে আলোচনায় বসবো। মনে রাখতে হবে, আমরা সবাই শেখ হাসিনার কর্মি। নেত্রী যা করবেন সাংগঠনিকভাবেই করবেন। তার বাইরে তিনি কিছু করেন না। এই মহানগর আওয়ামী লীগও আমারই অনুমোদিত।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোনদিনই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হবে না। আমরা ইতোমধ্যেই হোটেল বুক দিয়েছি। তারা কি খোলা মাঠে জননেত্রীকে সংবর্ধনা দিতে চান? নিশ্চয়ই তা নয়। তিনি বলেন, নেত্রী জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনে যোগদানের জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে আসবেন। আমরা বিমানবন্দরও তাকে স্বাগত জানাবো। জাতিসংঘে ভাষন দেবার দিন (২২ সেপ্টেম্বর দুপুর) শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছি। ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করবো ইনশাল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের কতিপয় নেতার বিরোধীতার কারনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত পর্বের কর্তৃত্ব চলে যায় তৃতীয় পক্ষের হাতে। এবার আশা করবো তা হবে না। এদিকে জ্যাকসন হাইটসে ড. সিদ্দিকুর রহমানের সংবাদ সম্মেলনে আগে ডাইভারসিটি প্লাজায় নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভা চলছিল। সেখানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী বলেন, ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশেই সংবর্ধনার আয়োজন চলছে। এসময় দলীয় নেতা-কর্মীরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে নানা শ্লোগান দেয়।
এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুর রহমান রফিক ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ এবং আয়োজক কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসানের নেতৃত্বে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, ষ্টেট আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে সাথে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য এবং ভ্যানগার্ড হয়ে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি।
বিবৃতিতে তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন জেএফকে বিমানবন্দর থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, ষ্টেট আওয়ামী লীগ এবং সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সবাইকে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ভ্যানগার্ড হিসাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দেশ বিরোধীদের অপপ্রচার প্রতিহত করার জন্য ।
বিবৃতিতে বলা হয়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সামনে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য প্রবাসীদের সর্বাত্বক সহযোগিতা চাইবেন প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনার অনুষ্ঠান থেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধুর কন্যা সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। আমরা সবাই জননেত্রী শেখ হাসিনার অত্যান্ত বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড সে কথাটি মনে রাখতে হবে। আমাদের বিশেষভাবে বলা হয়েছে যাতে করে জেএফকে বিমানবন্দরে ও জাতিসংঘের সামনে অধিক সংখ্যক নেতাকর্মীদের সমাগম হয়। এটাই নেত্রীর প্রত্যাশা।’
বেলী/হককথা