নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের বিরুদ্ধে কোর্টে রায়: মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ : মুসলিম গোয়েন্দাবৃত্তি অবৈধ ঘোষণা
- প্রকাশের সময় : ০৮:১৯:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ এপ্রিল ২০১৮
- / ৭৮৩ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মুসলমানদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাবৃত্তি বিষয়ক মামলায় কোর্ট মুসলিম কমিউনিটির পক্ষে রায় দিয়েছে। ২০০১ সালের নাইন ইলেভেনের পর থেকে মুসলিম কমিউনিটির বিভিন্ন তৎপরতাকে গোপন গোয়েন্দবৃুত্তি কর্মসূচীর আওতায় এনেছিল এনওয়াইপিডি। কোর্টের রায়ের পর পর মুসলিম কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ স্বস্তি প্রকাশ করে গোয়েন্দাবৃত্তির এই কর্মসূচীকে বৈষম্যমুলক বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
২০১১-২০১২ সালে বার্তা সংস্থা এপি এই খবরটি প্রথম ঢাউর করে। অনুসন্ধানী এই প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ মুসলিম কমিউনিটির বিরুদ্ধে কিভাবে গোয়েন্দাবৃত্তি করছে তার বিষদ বিবরণ তুলে ধরা হয়। পরে তাদের এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি সংবাদ বিষয়ক শীর্ষ পুরষ্কার পুলিৎজারে ভূষিত হয়। ২০০২ সাল থেকে এপি’র প্রতিবেদনের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন মুসলিম কমিউনিটিকে এনওয়াইপিডি কিভাবে অনুসরণ করতো তার বিস্তারিত প্রকাশ করে এপি। এর ফলে ২০১৪ সালে এনওয়াইপিডি এই কর্মসূচী পরিত্যক্ত করতে বাধ্য হয়।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, এন ওয়াইপিডি নিউইয়র্ক, নিউজার্সীর প্রায় ২০টি মসজিদ, ১৪টি রেস্টুরেন্ট, ১১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্œ স্কুল ও দুটি মুসলিম ছাত্র সংগঠনকে গোয়েন্দা তৎপরতার আওতায় নিয়ে আসে। মুসলিম এডভোকেসী গ্রুপের প্রধান ফারহানা খেরা এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।
এই ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর পরই একটি মুসলিম এডভোকেসী গ্রুপ নিউজার্সীতে ফেডারেল কোর্টে এর বিরুদ্ধে বৈষম্যের মামলা দায়ের করেন। এতে বলা হয়েছিল এর কর্মসূচীর মাধ্যমে মুসলিম কমিউনিটির প্রথম সাংবিধানিক অধিকার-কে ভঙ্গ করেছে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ।
মামলাটি নিয়ে বছরের পর বছর প্রতীক্ষা শেষে গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সিটি মামলাটি নিস্পত্তিতে এগিয়ে আসে।
সেন্টার ফর দ্যা কনস্টিটিউশনাল রাইটের মুখপাত্র রাহার আজমী বলেছেন, এটা সকল ধর্ম বিশ্বাসীদের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এই উদ্যোগের ফলে সিটি প্রশাসন ভবিষ্যতে এধরনের কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হবে।
২০১৫ সালে ফিলাডেলফিয়াতে অবস্থিত ফেডালে আপীল কোর্ট এই কার্যক্রমকে অবৈধ আখ্যায়িত করে এই মামলাকে সঠিক বলে রায় দেয়। যদিও নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক বলে যুক্তি দেখিয়েছিল।
নিউইয়র্ক সিটি যুুক্তি দেখিয়েছিল যে, এর ফলে মামলার বাদী কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এটা নিরাপত্তা বিষয়টি একটি কর্মসূচী।
কিন্তু কোর্ট এর বিরুদ্ধে যুক্তি দেখিয়ে বলেছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে সবার সমান অধিকারকে নিশ্চিত করেছে। এক্ষেত্রে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে টার্গেট করার যে কর্মসূচী তা সংবিধানের দেয়া অধিকারের প্রকাশ্য লংঘন।
এই রায়ের পর পরই নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের পক্ষ থেকে ডেপুটি কমিশনার লরেন্স বার্নি এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই কর্মসূচীর মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন কথা কোন কোর্ট বলেনি। সুতরাং নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগকে এজন্য পক্ষপাতে বা বৈষম্যের জন্য অভিযুক্ত করা ঠিক হবে না।
মুসলিম কমিউনিটি মুখপাত্র আজমী বলেন, এই মামলায় নিউইয়র্ক সিটি যে সব বিষয়ে একমত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ধর্ম বিষয়ক কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কখনো গোয়েন্দাবৃত্তি না করা, কোন বিশেষ বিশ্¦াসী গ্রুপ টার্গেট হয় এমন কর্মসূচী না নেয়া, যে সব মসজিদ বা ধর্মীয় প্রতিষ্টানকে টার্গেট করা হয়েছিল তাদের ৪৭ হাজার ৫০০, মামলার বাদীদের ২৫ হাজার ক্ষতিপূরণ এবং প্রায় এক মিলিয়ন ডলারের লিগ্যাল ফি দেয়ার সম্মতি।
আজমী বলেছেন, এই রায়ের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের যারা বৈষম্যমুলক কর্মসূচী ও মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন তাদের কাছে একটি শক্ত বার্তা দেয়া হয়েছে। এরপরও কেউ ক্ষান্ত না হলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনী ব্যবস্থা পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মামলার অন্যতম বাদী যুক্তরাষ্ট্র আর্মির ১৬ বছরের অভিজ্ঞ ফরহাজ হাসান বলেন, যখন আমরা দেখলাম এর মাধ্যমে বিভিন্ন মসজিদ টার্গেটের শিকার হচ্ছে তখন আর বসে থাকিনি আমরা।(সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)