নিউইয়র্ক ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্ক বইমেলা ও আন্তজাতিক বাংলা উৎসব ১৯-২১ মে : সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৪২:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ মে ২০১৭
  • / ৯৪০ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: আগামী ১৯ মে শুক্রবার থেকে সিটির জ্যাকসন হাইটসে শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী নিউইয়ক বইমেলা ও আন্তজাতিক বাংলা উৎসব। চলবে ২১ মে রোববার পর্যন্ত। সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ পিএস ৬৯ মিলনায়তনে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এবারের মেলার আহ্বায়ক হচ্ছেন প্রবাসের বিশিষ্ট লেখক ফেরদৌস সাজেদীন। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে থাকবে মঙ্গল শোভাযাত্রা, প্রবাসী লেখকদের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা, নতুন প্রজন্মের লেখকদের সাথে আলাপচারিতা, লেখক-পাঠক মুখোমুখী, কবি শহীদ কাদরী ও সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা নিয়ে আলেখ্য, রবীন্দ্রনাথের গানের পেছনের গল্প, পুরনো দিনের গান, কালিকা প্রসাদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, স্বরচিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি। এবারের মেলা ও উৎসবে যোগ দিচ্ছেন নিউইয়র্ক, ঢাকা, কলকাতা, ইউরোপ থেকে বিভিন্ন অতিথিবৃন্দ। উল্লেখযোগ্য অতিথিদের মধ্যে থাকবেন শামসুজ্জামান খান, পবিত্র সরকার, আবুল হাসনাত, কণা বসু মিশ্র, ড. লীনা তাপসী, ইকবাল হাসান, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম, আহমাদ মাযহার, সাইমন জাকারিয়া, হুমায়ুন কবীর ঢালী, নাজমুন নেসা পিয়ারী প্রমুখ।
বইমেলা ও বাংলা উৎসবে আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে থাকবে সৈয়দ আব্দুল হাদী, ফেরদৌস আরা, শামা রহমান, দেবাঙ্গনা সরকার, শিরীন বকুল প্রমুখ। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সাল থেকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত বইমেলায় শিশু-কিশোরদের মধ্যে বাংলা লেখা, চিত্রাঙ্গণ প্রতিযোগিতা চালু হয়। এদিকে ২৫ বছর পর এবারই প্রথম বইমেলার আগের সপ্তাহে অনুষ্টিত হলো শিশু-কিশোর মেলা।
এবারের ২৬তম নিউইয়র্ক বইমেলা ও আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানিয়েছেন আয়োজক মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা।শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা, শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা ও রোববার বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বইমেলা ও অনুষ্ঠান চলবে।
অপরদিকে বিশেষ প্রতিনিধি জানান, গত ১৩ মে শনিবার নিউইয়র্কের বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে শতাধিক শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকেরা সমবেত হয়েছিল জ্যাকসন হাইটসের পাবলিক স্কুল ৬৯-এ। এখানেই আয়োজিত হয়েছিল প্রথম আলো (উত্তর আমেরিকা)-র সহায়তায় ও মুক্তধারার উদ্যোগে সারাদিন ব্যাপী শিশু-কিশোর মেলা। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই মেলায় নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও আলোচনার মাধ্যমে আমেরিকা প্রবাসী বাঙালীদের মাঝে তৈরী হয়েছে এক নতুন ইতিহাস।
আহ্বায়ক হাসান ফেরদৌস-এর নেতৃত্বে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের একদল কমী কাজ করলেও মূলত পুরো দিনের অনুষ্ঠানটি আগা-গোড়া অংশগ্রহণ ও পরিচালনা করে আমেরিকায় বেড়ে ওঠা-শিশু-কিশোররা। ইতিপূবে প্রবাসের নতুন প্রজন্ম বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠানে অংগ্রহণ করলেও এভাবে ইতিপূবে কখনো এমনটি ঘটেনি বলে তারাই তাদেরে বক্তব্যে উল্লেখ করেছে। বাংলা ও ইংরেজী দুই ভাষাতেই প্রায় পুরো অনুষ্ঠানটি পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পবে উঠে আসে বাংলা ভাষা নিয়ে নতুন প্রজন্মের ভাবনা।
শনিবার সকাল থেকেই ভিড় জমে যায় আগ্রহী প্রতিযোগীদের। ঠিক দুপুর বারোটায় সাতটি ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে সকল প্রতিযোগীকে বয়সানুক্রমে বিভক্ত করে শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা। সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগী ছিল ছবি আঁকা বিভাগে। মূল মঞ্চের ওপর উপুড় হয়ে বসে গভীর মনোযোগে দিয়ে তারা যখন ছবি আঁকছিল, মনে হচ্ছিল ঢাকায় কচিকাঁচার আসরের শিশু মেলা।  ছবির বিষয়বস্তু আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল বাংলাদেশের পতাকা, শহীদ মিনার ও বাংলাদেশের গ্রাম।
এছাড়াও ছিল কবিতা আবৃত্তি, গান ও নাচ। আরো ছিল গল্পবলা প্রতিযোগিতা, ছোটদের জন্য প্রিয় রূপকথা, বড়দের জন্য মুক্তিযুদ্ধের গল্প। এদেশে বড় হওয়া ছেলেমেয়েদের ভাষা সমস্যার কথা মাথায় রেখে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছিল। তবে অধিকাংশই হয় বাংলায়, নয়ত বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে রচনা লেখায় বা গল্প বলায় অংশ নেয়।
প্রায় ছয় ঘন্টা ধরে প্রতিযোগিতা চলার পর শুরু হয় পুরষ্কার বিতরণ। বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব জামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন বিজয়ী প্রতিযোগীদের হাতে পুরষ্কার ও সনদপত্র তুলে দিতে। সব গ্রুপের সেরা প্রতিযোগীরা যখন সবাই মঞ্চে জামাল উদ্দিন হোসেন ও মেলার অন্যান্য ব্যবস্থাপকদের নিয়ে ছবি তোলার জন্য ঘিরে দাঁড়ায়, শিশুদের মুখে তখন ছিল উল্লাস, তাদের পিতামাতার মুখে গর্ব।
সন্ধ্যায় ছিল বিজয়ী প্রতিযোগী ও অতিথি শিশু তারকাদের অনুষ্ঠান। এই পর্বটি পরিচালনা করে দুটি কিশোর ও কিশোরী।  সন্ধ্যার অপর প্রধান আয়োজন ছিল শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে একটি উন্মুক্ত আলোচনা, যার বিষয়বস্তু ছিল, বাবা-মা আমাকে বোঝে না। বিপুল কলরব ও হৈ-হুল্লোড়ের ভেতর দিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোররা খোলামেলা ভাবে পিতামাতার সাথে তাদের প্রজন্মগত ব্যবধানের সংকটের চিত্রটি তুলে ধরে। অভিভাবকেরাও ছেলেমেয়েদের কাছে তাঁদের প্রত্যাশার কথা বলেন। অধিকাংশ শিশু-কিশোর বক্তা অবশ্য একথায় একমত হয় যে বাবা-মায়ের কাছ থেকেই তারা বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের ইতিহাসের গল্প শুনেছে। সেজন্য তারা কৃতজ্ঞ, একথাটা তারা নিজেদের মত করে জানায়।
৫ থেকে ১৮ বছরের শিশু-কিশোরদেরকে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ তিনটি বিভাগে ভাগ করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রতিযোগিতা চলে দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত । বিষয়গুলো ছিলো বাংলা লিখন, চিত্রাঙ্কণ, রচনা প্রতিযোগিতা, নৃত্য, আবৃত্তি, গল্প বলা ও সঙ্গীত। বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোর স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রতিযোগিতায় অংগ্রহণ করে। ভিন্ন সংস্কৃতির মাঝে বড় হয়ে ওঠা প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বিষয়গুলো ছিলো সময়োপযোগী । প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় ।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদক প্রাপ্ত বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব জামাল উদ্দিন হোসেন। পুরস্কার বিতরণ করেন বইমেলা ২০১৭’র আহবায়ক ফেরদৌস সাজেদীন, সাংবাদিক ও লেখক হাসান ফেরদৌস, মুক্তধারার কর্ণধার বিশ্বজিত সাহা, সাহিত্য একাডেমি’র পরিচালক মোশাররফ হোসেন, সউদ চৌধুরী, ফাহিম রেজা নূর, নিনি ওয়াহেদ প্রমুখ ।
পুরস্কার বিতরণী শেষে ছড়কার মনজুর কাদের-এর সঞ্চালনায় তিন ছড়াকারের ছড়া নিয়ে বৃন্দ ছড়া পরিবেশন করে শিশু-কিশোররা । এতে অংশগ্রহণ করে লিওনা মুহিত, কাব্য, কইশি, ঋতিকা দেব, রাহুল দেব, নাবিলা তাবাস্সুম, তাহমিদ, আওসাফ আহমেদ, ঈশিকা আহমেদ অহনা, আশরাফ আসিম, ঋতু বালা, রাখি বালা, লা-ম মীম, মেহজাবীন মাইশা, সারাহ্ শাম্স, নাহিনসহ আরো অনেকে। শিশু কিশোরদেরকে অনুপ্রাণিত করতে তিন ছড়াকার খালেদ সরফুদ্দীন, শাম্স চৌধুরী রশো ও মনজুর কাদেরও মঞ্চে তাদের সাথে ছিলেন।
সবশেষে শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের অংশগ্রহণে ‘মা-বাবা আমাকে বোঝে না’ বিষয়টি নিয়ে ছিলো উন্মুক্ত আলোচনা । পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন রানু ফেরদৌস, সেমন্তী ওয়াহেদ ও মাকসুদা আহমেদ ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

নিউইয়র্ক বইমেলা ও আন্তজাতিক বাংলা উৎসব ১৯-২১ মে : সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

প্রকাশের সময় : ০২:৪২:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ মে ২০১৭

নিউইয়র্ক: আগামী ১৯ মে শুক্রবার থেকে সিটির জ্যাকসন হাইটসে শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী নিউইয়ক বইমেলা ও আন্তজাতিক বাংলা উৎসব। চলবে ২১ মে রোববার পর্যন্ত। সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ পিএস ৬৯ মিলনায়তনে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এবারের মেলার আহ্বায়ক হচ্ছেন প্রবাসের বিশিষ্ট লেখক ফেরদৌস সাজেদীন। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে থাকবে মঙ্গল শোভাযাত্রা, প্রবাসী লেখকদের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা, নতুন প্রজন্মের লেখকদের সাথে আলাপচারিতা, লেখক-পাঠক মুখোমুখী, কবি শহীদ কাদরী ও সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা নিয়ে আলেখ্য, রবীন্দ্রনাথের গানের পেছনের গল্প, পুরনো দিনের গান, কালিকা প্রসাদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, স্বরচিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি। এবারের মেলা ও উৎসবে যোগ দিচ্ছেন নিউইয়র্ক, ঢাকা, কলকাতা, ইউরোপ থেকে বিভিন্ন অতিথিবৃন্দ। উল্লেখযোগ্য অতিথিদের মধ্যে থাকবেন শামসুজ্জামান খান, পবিত্র সরকার, আবুল হাসনাত, কণা বসু মিশ্র, ড. লীনা তাপসী, ইকবাল হাসান, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম, আহমাদ মাযহার, সাইমন জাকারিয়া, হুমায়ুন কবীর ঢালী, নাজমুন নেসা পিয়ারী প্রমুখ।
বইমেলা ও বাংলা উৎসবে আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে থাকবে সৈয়দ আব্দুল হাদী, ফেরদৌস আরা, শামা রহমান, দেবাঙ্গনা সরকার, শিরীন বকুল প্রমুখ। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সাল থেকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত বইমেলায় শিশু-কিশোরদের মধ্যে বাংলা লেখা, চিত্রাঙ্গণ প্রতিযোগিতা চালু হয়। এদিকে ২৫ বছর পর এবারই প্রথম বইমেলার আগের সপ্তাহে অনুষ্টিত হলো শিশু-কিশোর মেলা।
এবারের ২৬তম নিউইয়র্ক বইমেলা ও আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানিয়েছেন আয়োজক মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা।শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা, শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা ও রোববার বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বইমেলা ও অনুষ্ঠান চলবে।
অপরদিকে বিশেষ প্রতিনিধি জানান, গত ১৩ মে শনিবার নিউইয়র্কের বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে শতাধিক শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকেরা সমবেত হয়েছিল জ্যাকসন হাইটসের পাবলিক স্কুল ৬৯-এ। এখানেই আয়োজিত হয়েছিল প্রথম আলো (উত্তর আমেরিকা)-র সহায়তায় ও মুক্তধারার উদ্যোগে সারাদিন ব্যাপী শিশু-কিশোর মেলা। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই মেলায় নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও আলোচনার মাধ্যমে আমেরিকা প্রবাসী বাঙালীদের মাঝে তৈরী হয়েছে এক নতুন ইতিহাস।
আহ্বায়ক হাসান ফেরদৌস-এর নেতৃত্বে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের একদল কমী কাজ করলেও মূলত পুরো দিনের অনুষ্ঠানটি আগা-গোড়া অংশগ্রহণ ও পরিচালনা করে আমেরিকায় বেড়ে ওঠা-শিশু-কিশোররা। ইতিপূবে প্রবাসের নতুন প্রজন্ম বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠানে অংগ্রহণ করলেও এভাবে ইতিপূবে কখনো এমনটি ঘটেনি বলে তারাই তাদেরে বক্তব্যে উল্লেখ করেছে। বাংলা ও ইংরেজী দুই ভাষাতেই প্রায় পুরো অনুষ্ঠানটি পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পবে উঠে আসে বাংলা ভাষা নিয়ে নতুন প্রজন্মের ভাবনা।
শনিবার সকাল থেকেই ভিড় জমে যায় আগ্রহী প্রতিযোগীদের। ঠিক দুপুর বারোটায় সাতটি ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে সকল প্রতিযোগীকে বয়সানুক্রমে বিভক্ত করে শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা। সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগী ছিল ছবি আঁকা বিভাগে। মূল মঞ্চের ওপর উপুড় হয়ে বসে গভীর মনোযোগে দিয়ে তারা যখন ছবি আঁকছিল, মনে হচ্ছিল ঢাকায় কচিকাঁচার আসরের শিশু মেলা।  ছবির বিষয়বস্তু আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল বাংলাদেশের পতাকা, শহীদ মিনার ও বাংলাদেশের গ্রাম।
এছাড়াও ছিল কবিতা আবৃত্তি, গান ও নাচ। আরো ছিল গল্পবলা প্রতিযোগিতা, ছোটদের জন্য প্রিয় রূপকথা, বড়দের জন্য মুক্তিযুদ্ধের গল্প। এদেশে বড় হওয়া ছেলেমেয়েদের ভাষা সমস্যার কথা মাথায় রেখে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছিল। তবে অধিকাংশই হয় বাংলায়, নয়ত বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে রচনা লেখায় বা গল্প বলায় অংশ নেয়।
প্রায় ছয় ঘন্টা ধরে প্রতিযোগিতা চলার পর শুরু হয় পুরষ্কার বিতরণ। বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব জামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন বিজয়ী প্রতিযোগীদের হাতে পুরষ্কার ও সনদপত্র তুলে দিতে। সব গ্রুপের সেরা প্রতিযোগীরা যখন সবাই মঞ্চে জামাল উদ্দিন হোসেন ও মেলার অন্যান্য ব্যবস্থাপকদের নিয়ে ছবি তোলার জন্য ঘিরে দাঁড়ায়, শিশুদের মুখে তখন ছিল উল্লাস, তাদের পিতামাতার মুখে গর্ব।
সন্ধ্যায় ছিল বিজয়ী প্রতিযোগী ও অতিথি শিশু তারকাদের অনুষ্ঠান। এই পর্বটি পরিচালনা করে দুটি কিশোর ও কিশোরী।  সন্ধ্যার অপর প্রধান আয়োজন ছিল শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে একটি উন্মুক্ত আলোচনা, যার বিষয়বস্তু ছিল, বাবা-মা আমাকে বোঝে না। বিপুল কলরব ও হৈ-হুল্লোড়ের ভেতর দিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোররা খোলামেলা ভাবে পিতামাতার সাথে তাদের প্রজন্মগত ব্যবধানের সংকটের চিত্রটি তুলে ধরে। অভিভাবকেরাও ছেলেমেয়েদের কাছে তাঁদের প্রত্যাশার কথা বলেন। অধিকাংশ শিশু-কিশোর বক্তা অবশ্য একথায় একমত হয় যে বাবা-মায়ের কাছ থেকেই তারা বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের ইতিহাসের গল্প শুনেছে। সেজন্য তারা কৃতজ্ঞ, একথাটা তারা নিজেদের মত করে জানায়।
৫ থেকে ১৮ বছরের শিশু-কিশোরদেরকে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ তিনটি বিভাগে ভাগ করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রতিযোগিতা চলে দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত । বিষয়গুলো ছিলো বাংলা লিখন, চিত্রাঙ্কণ, রচনা প্রতিযোগিতা, নৃত্য, আবৃত্তি, গল্প বলা ও সঙ্গীত। বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোর স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রতিযোগিতায় অংগ্রহণ করে। ভিন্ন সংস্কৃতির মাঝে বড় হয়ে ওঠা প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বিষয়গুলো ছিলো সময়োপযোগী । প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় ।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদক প্রাপ্ত বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব জামাল উদ্দিন হোসেন। পুরস্কার বিতরণ করেন বইমেলা ২০১৭’র আহবায়ক ফেরদৌস সাজেদীন, সাংবাদিক ও লেখক হাসান ফেরদৌস, মুক্তধারার কর্ণধার বিশ্বজিত সাহা, সাহিত্য একাডেমি’র পরিচালক মোশাররফ হোসেন, সউদ চৌধুরী, ফাহিম রেজা নূর, নিনি ওয়াহেদ প্রমুখ ।
পুরস্কার বিতরণী শেষে ছড়কার মনজুর কাদের-এর সঞ্চালনায় তিন ছড়াকারের ছড়া নিয়ে বৃন্দ ছড়া পরিবেশন করে শিশু-কিশোররা । এতে অংশগ্রহণ করে লিওনা মুহিত, কাব্য, কইশি, ঋতিকা দেব, রাহুল দেব, নাবিলা তাবাস্সুম, তাহমিদ, আওসাফ আহমেদ, ঈশিকা আহমেদ অহনা, আশরাফ আসিম, ঋতু বালা, রাখি বালা, লা-ম মীম, মেহজাবীন মাইশা, সারাহ্ শাম্স, নাহিনসহ আরো অনেকে। শিশু কিশোরদেরকে অনুপ্রাণিত করতে তিন ছড়াকার খালেদ সরফুদ্দীন, শাম্স চৌধুরী রশো ও মনজুর কাদেরও মঞ্চে তাদের সাথে ছিলেন।
সবশেষে শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের অংশগ্রহণে ‘মা-বাবা আমাকে বোঝে না’ বিষয়টি নিয়ে ছিলো উন্মুক্ত আলোচনা । পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন রানু ফেরদৌস, সেমন্তী ওয়াহেদ ও মাকসুদা আহমেদ ।