নিউইয়র্ক ১২:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্ক ফোবানা সম্মেলনে মানুষের ঢল : আগামী সম্মেলন ওয়াশিংটন ডিসিতে : ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ : সিদ্ধান্তহীনতায় টরন্টো সম্মেলন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৩১:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • / ৬৫৭ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক ফোবানা সম্মেলনের পর্দা নেমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের লেবার ডে উইকেন্ডে ইয়র্ক কলেজের পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে তিনদিন ব্যাপী আয়োজিত সম্মেলনের শেষ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঢল নামে। সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন ছিলো বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা। বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকা এলাকায় এই সম্মেলন হওয়ায় এলাকাবাসীর অংশগ্রহণও ছিলো চোখে পড়ার মতো। তবে এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐক্য হয়েও হলো না। অনৈক্যের ধারাবাহিকতায় আগামীর পথে ফোবানা সম্মেলন। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ২৯তম ফোবানা সম্মেলন থেকে আগামী বছর অর্থাৎ ৩০তম সম্মেলনের ভেনু নির্ধারণ করা হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি। যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন থাকবে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক। এছাড়া ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য ৩০তম সম্মেলনের জন্য বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা-কে দায়িত্ব দেয়া হয়। অপরদিকে কানাডার টরন্টোতে অনুষ্ঠিত বিভক্ত ফোবানার অপরাংশের সম্মেলন থেকে আগামী সম্মেলনের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এক মাসের মধ্যে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে টরন্টো থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ খবরে জানা গেছে। নিউইয়র্ক ও টরন্টো ফোবানা সম্মেলন থেকে কমিউনিটির ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
নিউইয়র্ক ফোবানা: ‘হৃদয়ে আকাশ, প্রবাসে বাঙালী’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে নিউইয়র্কের জ্যামাইকার ইয়র্ক কলেজে ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হয় তিনদিনব্যাপী ফেডারেশন অব বাংলাদেশী অ্যাসোসিয়েশন্স অব নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) সম্মেলন। অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলাদেশ এবং বাঙালি সংস্কৃতি জাগ্রত রাখার পাশাপাশি প্রবাসের অভিজ্ঞতায় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সার্বিক কল্যাণে সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সমেবত কণ্ঠে দেশের গান ছাড়াও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় ও শহীদ হাসানের যুগল কণ্ঠে মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি জাগানিয়া সঙ্গীতে আপ্লুত হন উপস্থিত সকলে।
বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশীর উপস্থিতিতে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত প্রখ্যাত সমাজকর্মী ডা. কালি প্রদীপ চৌধুরী। তিনি ফোবানা সম্মেলনে সাফল্য কামনা করে বলেন, সর্বত্র বাংলাদেশীদের জয়জয়কার। বাংলাদেশীরা বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এই ধারা অক্ষুণœ রাখতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ, কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং, ফোবানার প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন, নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট লেটিশিয়া জেমস, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কাটজ, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর লি রয় কমরি, যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, টাইটেল স্পন্সর উৎসব ডটকমের সিইও রায়হান জামান, অ্যাটর্নি আফফার বক্স, ফোবানার চেয়ারম্যান ডিউক খান, কো-কনভেনর আব্দুল কাদির চৌধুরী শাহীন প্রমুখ।
নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৪টি সংগঠনের কয়েকশ’ সংগঠক ছাড়াও সম্মেলন অংশগ্রহণ করে দুই শতাধিক শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিক্ষাবিদ ও নতুন প্রজন্মের মেধাবীরা। সকলেই দৃপ্ত প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে চলমান কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার কথা বলেন। একই সঙ্গে প্রবাসেও সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব পরিহার করে জাতিগত ঐক্য সুসংহত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ফোবানা হোস্ট কমিটির আহ্বায়ক ও এবারের আয়োজক সংগঠন লীগ অব আমেরিকার সভাপতি বেদারুল ইসলাম বাবলা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ফোবানা সম্মেলন কমিটির সদস্য সচিব জাকারিয়া চৌধুরী। উদ্বোধনী পর্বের উপস্থাপনায় ছিলেন আবীর আলমগীর ও তাসনিম মাহফুজ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উদ্বোধনী মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন ফোবানার চিফ কনসালট্যান্ট আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা আজাদুল হক, হোস্ট কমিটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ কো-কনভেনর এন আমিন, আব্দুল হাই জিয়া, আব্দুল কাদের মিয়া, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর আনোয়ার হোসেন, এনআরবি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আবু বকর চৌধুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ তথা এশিয়ানদের মেধা এবং কর্মনিষ্ঠায় পঞ্চমুখ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউসের সকল সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশীরাও যথাযথভাবে পাচ্ছে কিনা সেটি দেখভাল করতে হয় আমাকে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আহ্বান জানাচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রদত্ত অধিকারগুলো সম্পর্কে আরো বেশি সজাগ হবার জন্য। একই সঙ্গে মূলধারার রাজনীতিতেও আরো সোচ্চার হতে হবে।
কংগ্রেসউওম্যান গ্রেস মেং বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি এবং কর্মপরিবেশ নিরাপদ করার জন্য আমেরিকার তৈরি পোশাকের আমদানিকারকদের সঙ্গে আমি সব সময় দেন-দরবার চালাচ্ছি। একই সঙ্গে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সারা আমেরিকায় ঘটনা করে পালনের জন্য কংগ্রেসে বিল উঠিয়েছি। পাবলিক স্কুলে হালাল খাদ্য সরবরাহের বিধি তৈরির জন্যও আমি সহকর্মীদের সঙ্গে সোচ্চার রয়েছি। নিউইয়র্কের পাবলিক স্কুলে ঈদের দুদিন ছুটি ঘোষণার জন্য আমি অনেক আগে থেকেই সোচ্চার ছিলাম। সেটি সিটি মেয়রের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন বলেন, ২০১৫ সালটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ একটি সময়। বিশেষ করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের যথেষ্ট সুনাম হয়েছে। মানবতার সামগ্রিক উন্নয়ন ও কল্যাণে আমরা জাতিসংঘে ২০১০ সাল থেকেই ৪ ‘পি’ নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছিলাম।
রাষ্ট্রদূত মোমেন উল্লেখ করেন, এভাবেই বাংলাদেশের এগিয়ে চলার অনেক পরিকল্পনা আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনুসরণ করা হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে দারিদ্র মুক্তির লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়নের যে ১৭টি এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়েছে তার অধিকাংশই বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল- উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মোমেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি থেমে নেই। সারা দেশের মানুষ আজ বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, প্রবাসের বাঙালিরা মেধার বিনিয়োগ ঘটিয়ে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন সর্বত্র। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশও এগিয়ে চলেছে দীপ্ত প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন অর্জনের লক্ষ্যে।
বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সমেবত কণ্ঠে দেশের গান ছাড়াও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় ও শহীদ হাসানের যুগল কণ্ঠে মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি জাগানিয়া সঙ্গীতে আপ্লুত হন উপস্থিত সকলে। এর আগে প্রবাসের ১৩৫ শিল্পীর অংশগ্রহণে ‘বিশ্ব মানবতার স্বদেশ প্রেম’ শীর্ষক থিম সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরিচালনা করেন বিপার অন্যতম কর্ণধার সেলিমা আশরাফ। সাংস্কৃতিক পর্ব যৌথভাবে পরিচালনা করেন সাংস্কৃতিক কমিটির চেয়ারম্যান শারমিন রেজা ইভা, জিএইচ আরজু, ইভান চৌধুরী, সাবিনা শারমিন প্রমুখ।
নিউইয়র্ক ফোবানার দ্বিতীয় দিনে ছিলো বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনার, রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স, নারীর ক্ষমতায়ন ও ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স দিয়ে কনফারেন্স, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, মূলধারার রাজনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশগ্রহন সহ নানা বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশী প্রজন্ম মুলধারার রাজনীতিতে কতটা ভূমিকা রাখছে, কিভাবে তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে এসবই ছিলো সেমিনারের মূল থিম। ছিলো, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, ডক্টর সুলতান সালাহউদ্দিন আহমেদের বই, ‘সুতোর টানে’র মোড়ক উন্মোচন। আইটি শিক্ষা নিয়ে এদেশের বাংলাদেশী তরুণ প্রজন্মের ভাবনা শীর্ষক আলোচনায় উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রে তরুণদের আইটি শিক্ষার বিভিন্ন দিক। সাংষ্কৃতিক পর্বে, দেশ ও প্রবাসের শিল্পীদের পরিবেশনা মুগ্ধ করে সবাইকে। ক্যালিফোর্নিয়া, হিউস্টন, টেক্সাস, ফ্লোরিডার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন পর্বে অংশ নেন।
নিউইয়র্ক ফোবানার শেষ দিনে রোববারও ছিলো সেমিনার, আলোচনা আর সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। সন্মেলনের মুল মঞ্চের বাইরে সেমিনার কক্ষে কবিতা পাঠ ও সাহিত্য আলোচনায় অংশ নেন ইভান চৌধুরী ,মনজুর কাদের, কবি তমিজ উদ্দিন লোদী, জি এইজ আরজু। সমকালীন সাহিত্য নিয়ে কথা বলেন, মোশারফ হোসেন, হাসান ফেরদৌস। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সেন্ট্রাল কমান্ড কাউন্সিলের চেয়াম্যান মেজর জেনারেল (অব:) হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম প্রবাসে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের সাথে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্ন উত্তর পর্বে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন এর সম্পাদক নঈম নিমাজ, মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরনবী। সম্মেলনের বাইরে স্টল গুলোতে ছিল উপচে পড়া ভীড়। মুল মঞ্চে সাংষ্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনা মুগ্ধ করে সবাইকে। এমদাদুল হক, নিলুফার জাহান, এমা হকের এক পরিবেশনার পাশাপাশি নিউইয়র্কের সুর ছন্দ এবং বিপা’র নৃত্য পরিবেশনা। এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়া, হিউস্টন, টেক্সাস, ফ্লোরিডার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা, নিজ নিজ সংগঠনের পরিচয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
তিন দিনের এই সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে মোট ১৫টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। মিডিয়ার ভূমিকা নিয়েও একটি মুক্ত আলোচনা হয়। বাংলাদেশ থেকে আগত সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও নঈম নিজাম এতে অংশ নেন। বিষয়ভিত্তিক ১৫টি সেমিনার ছাড়াও এবারের ফোবানায় দেশ ও প্রবাসের গুণীজন এবং উত্তর আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যে সেরার চেয়েও সেরাদের অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। সুদূর এই পরবাসে বড় হওয়া বাংলাদেশী প্রজন্মের মধ্যে নেটওয়ার্কিংয়ের চমৎকার ও ব্যতিক্রমধর্মী একটি পর্বও ছিল । বাংলাদেশ, বাঙালি এবং প্রবাসের প্রজন্মকে প্রাধান্য দেয়ার এ সম্মেলনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সেমিনারের পাশাপাশি মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের অবস্থান নিয়েও খোলামেলা আলোচনা হয়। সম্মেলন কেন্দ্রে বসেছিল বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্যের স্টল। সেবামূলক কয়েকটি সংস্থাও পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য-চিকিৎসাসহ নানা বিষয়ে।
এই সম্মেলন থেকে তৃণমুল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুটস) -কে ‘ফোবানা আউটস্টান্ডিং কমিউনিটি সার্ভিসেস আ্যাওয়ার্ড অফ ২০১৫’ প্রদান করা হয়। ফোবানার ২৯তম সম্মেলন উপলক্ষে ‘চিরকালের বাংলা’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়।
NY_FOBANA-2স্টিয়ারিং কমিটির সভা: নিউইয়র্ক ফোবানা সম্মেলনের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় ফোবানার নতুন কমিটি গঠন এবং পরবর্তী সম্মেলনের আয়োজক ও ভেনু নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্মেলনের শেষ দিন রোববার অপরাহ্নে জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিকটস্থ রেডিসন হোটেলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকার ১০টায় সভা শুরুর কথা থাকলেও স্টিয়ারিং কমিটির সভা শুরু হয় বেলা দুটার দিকে। চেয়ারম্যান ডিউক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী আজাদুল হক। রুদ্ধদার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভার কার্যক্রম চলে আড়াই ঘন্টার মতো। মাঝে ত্রিশ মিনিটের বিরতি ছিলো। সভায় প্রথমে ফোবানার বার্ষিক রিপোর্ট (২০১৪-২০১৫) নিয়ে আলোচনার পর আগামী বছর অর্থাৎ ৩০তম সম্মেলনের ভেনু নির্ধারণ করা হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি। যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন থাকবে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বিএজি ডিসি) ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক (বিএএআই)। এছাড়া ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য ৩১তম সম্মেলনের জন্য বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা-কে দায়িত্ব দেয়া হয়। এজন্য নির্বাচনের প্রয়োজন পড়ে। সভায় গঠিত ডিউক খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি নির্বাচনী কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। সদস্যদের ভোটে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা ৩০তম সম্মেলনের দায়িত্ব পায়। সভার শেষ পর্যায়ে আজাদুল হক এক প্রেস ব্রিফিং এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ৩০তম সম্মেলনের কনভেনর মনোনীত হয়েছেন হোস্ট সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটর ডিসি’র এটিএম আলম আর মেম্বার সেক্রেটারী মনোনীত হয়েছেন নূরুল আমিন। তিনি জানান, সভায় আগামী দুই বছরের (২০১৫-২০১৬) জন্য ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটিও গঠন করা হয়। এই কমিটির শীর্ষ কর্মকর্তারা হলেন: চেয়ারপার্সন নাহিদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারপার্সন মোহাম্মদ আলমগীর, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী আজাদুল হক, জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী এম মওলা দিলু এবং ট্রেজারার শাহ হালিম।
এদিকে ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির সভা শুরুর আগে ওয়াশিংটন ডিসি’র আযোজকরা ঐক্যবদ্ধ, নাকি ঐক্যবদ্ধ নয় এমন প্রশ্নে কমিটির একাধিক সদস্যস্যের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এমনকি পরিস্থিতি হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায় বলে নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জনান। তবে এব্যাপারে খোজ নিয়ে ফোবানা কর্মকর্তারা জানান বিষয়টি ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির নয়, ওয়াশিংটন ডিসি’র কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
NY_FOBANA-3
FOBANA Logo'2015টরন্টো ফোবানা: কানাডার টরন্টোয় বিভক্ত ফোবানার একাংশের সম্মেলনেও ঐক্যের আহ্বান জানানো হলেও প্রত্যাশিত ঐক্য সুদূর পরাহত। ‘অনুভবে চেতনায় আমাদের বাংলাদেশ’ শ্লোগানে স্থানীয় পার্কওয়ে শেরাটন পার্কওয়ে হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে, সেমিনার, আলোচনা সভার পাশাপাশি ছিলো গান, নাচ, আবৃতি, নাটিকাসহ বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক আয়োজন। কানাডার মূলধারার প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্মেলনে এবার একটা নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন এর আয়োজকরা। ফোবানা এই অংশের স্টিরিয়াং কমিটির চেয়ারম্যান তৌফিক এজাজ আর এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী হচ্ছেন আলী ইমাম শিকদার।
বাংলাদেশ সোসাইটি (এস.সি)-এর ব্যানারে আয়োজিত ৫-৬ সেপ্টেম্বর শনি ও রোববার দুই দিনের এই সম্মেলন থেকে আগামী বছরের সম্মেলনের আয়োজক ও স্থান নির্ধারণ সম্ভব হয়নি। ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটির সভায় জানানো হয়, আগামী এক মাসের মধ্যে পরবর্তী ফোবানার আয়োজক ঠিক করা হবে। এই তথ্য জানিয়েছেন টরোন্টো ফোবানার কনভেনর দারা আবু জুবায়ের।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে টরন্টো ফোবানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। দু’ দিনের এই সম্মেলনে ছিলো সেমিনার, কাব্য জলসা, দেশ-বিদেশের শিল্পীদের পরিবেশনা, ফ্যাশন শো প্রভৃতি। সম্মেলনের মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক পর্বে জনপ্রিয় শিল্পী সামিনা চৌধুরী, কনক চাপা, বাদশা বুলবুল ও এস ডি রুবেলের সঙ্গীত পরিবেশনা দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

নিউইয়র্ক ফোবানা সম্মেলনে মানুষের ঢল : আগামী সম্মেলন ওয়াশিংটন ডিসিতে : ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ : সিদ্ধান্তহীনতায় টরন্টো সম্মেলন

প্রকাশের সময় : ০৭:৩১:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

নিউইয়র্ক: বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক ফোবানা সম্মেলনের পর্দা নেমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের লেবার ডে উইকেন্ডে ইয়র্ক কলেজের পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে তিনদিন ব্যাপী আয়োজিত সম্মেলনের শেষ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঢল নামে। সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন ছিলো বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা। বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকা এলাকায় এই সম্মেলন হওয়ায় এলাকাবাসীর অংশগ্রহণও ছিলো চোখে পড়ার মতো। তবে এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐক্য হয়েও হলো না। অনৈক্যের ধারাবাহিকতায় আগামীর পথে ফোবানা সম্মেলন। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ২৯তম ফোবানা সম্মেলন থেকে আগামী বছর অর্থাৎ ৩০তম সম্মেলনের ভেনু নির্ধারণ করা হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি। যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন থাকবে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক। এছাড়া ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য ৩০তম সম্মেলনের জন্য বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা-কে দায়িত্ব দেয়া হয়। অপরদিকে কানাডার টরন্টোতে অনুষ্ঠিত বিভক্ত ফোবানার অপরাংশের সম্মেলন থেকে আগামী সম্মেলনের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এক মাসের মধ্যে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে টরন্টো থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ খবরে জানা গেছে। নিউইয়র্ক ও টরন্টো ফোবানা সম্মেলন থেকে কমিউনিটির ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
নিউইয়র্ক ফোবানা: ‘হৃদয়ে আকাশ, প্রবাসে বাঙালী’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে নিউইয়র্কের জ্যামাইকার ইয়র্ক কলেজে ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হয় তিনদিনব্যাপী ফেডারেশন অব বাংলাদেশী অ্যাসোসিয়েশন্স অব নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) সম্মেলন। অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলাদেশ এবং বাঙালি সংস্কৃতি জাগ্রত রাখার পাশাপাশি প্রবাসের অভিজ্ঞতায় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সার্বিক কল্যাণে সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সমেবত কণ্ঠে দেশের গান ছাড়াও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় ও শহীদ হাসানের যুগল কণ্ঠে মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি জাগানিয়া সঙ্গীতে আপ্লুত হন উপস্থিত সকলে।
বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশীর উপস্থিতিতে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত প্রখ্যাত সমাজকর্মী ডা. কালি প্রদীপ চৌধুরী। তিনি ফোবানা সম্মেলনে সাফল্য কামনা করে বলেন, সর্বত্র বাংলাদেশীদের জয়জয়কার। বাংলাদেশীরা বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এই ধারা অক্ষুণœ রাখতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ, কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং, ফোবানার প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন, নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট লেটিশিয়া জেমস, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কাটজ, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর লি রয় কমরি, যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, টাইটেল স্পন্সর উৎসব ডটকমের সিইও রায়হান জামান, অ্যাটর্নি আফফার বক্স, ফোবানার চেয়ারম্যান ডিউক খান, কো-কনভেনর আব্দুল কাদির চৌধুরী শাহীন প্রমুখ।
নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৪টি সংগঠনের কয়েকশ’ সংগঠক ছাড়াও সম্মেলন অংশগ্রহণ করে দুই শতাধিক শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিক্ষাবিদ ও নতুন প্রজন্মের মেধাবীরা। সকলেই দৃপ্ত প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে চলমান কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার কথা বলেন। একই সঙ্গে প্রবাসেও সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব পরিহার করে জাতিগত ঐক্য সুসংহত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ফোবানা হোস্ট কমিটির আহ্বায়ক ও এবারের আয়োজক সংগঠন লীগ অব আমেরিকার সভাপতি বেদারুল ইসলাম বাবলা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ফোবানা সম্মেলন কমিটির সদস্য সচিব জাকারিয়া চৌধুরী। উদ্বোধনী পর্বের উপস্থাপনায় ছিলেন আবীর আলমগীর ও তাসনিম মাহফুজ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উদ্বোধনী মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন ফোবানার চিফ কনসালট্যান্ট আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা আজাদুল হক, হোস্ট কমিটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ কো-কনভেনর এন আমিন, আব্দুল হাই জিয়া, আব্দুল কাদের মিয়া, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর আনোয়ার হোসেন, এনআরবি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আবু বকর চৌধুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ তথা এশিয়ানদের মেধা এবং কর্মনিষ্ঠায় পঞ্চমুখ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউসের সকল সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশীরাও যথাযথভাবে পাচ্ছে কিনা সেটি দেখভাল করতে হয় আমাকে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আহ্বান জানাচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রদত্ত অধিকারগুলো সম্পর্কে আরো বেশি সজাগ হবার জন্য। একই সঙ্গে মূলধারার রাজনীতিতেও আরো সোচ্চার হতে হবে।
কংগ্রেসউওম্যান গ্রেস মেং বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি এবং কর্মপরিবেশ নিরাপদ করার জন্য আমেরিকার তৈরি পোশাকের আমদানিকারকদের সঙ্গে আমি সব সময় দেন-দরবার চালাচ্ছি। একই সঙ্গে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সারা আমেরিকায় ঘটনা করে পালনের জন্য কংগ্রেসে বিল উঠিয়েছি। পাবলিক স্কুলে হালাল খাদ্য সরবরাহের বিধি তৈরির জন্যও আমি সহকর্মীদের সঙ্গে সোচ্চার রয়েছি। নিউইয়র্কের পাবলিক স্কুলে ঈদের দুদিন ছুটি ঘোষণার জন্য আমি অনেক আগে থেকেই সোচ্চার ছিলাম। সেটি সিটি মেয়রের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন বলেন, ২০১৫ সালটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ একটি সময়। বিশেষ করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের যথেষ্ট সুনাম হয়েছে। মানবতার সামগ্রিক উন্নয়ন ও কল্যাণে আমরা জাতিসংঘে ২০১০ সাল থেকেই ৪ ‘পি’ নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছিলাম।
রাষ্ট্রদূত মোমেন উল্লেখ করেন, এভাবেই বাংলাদেশের এগিয়ে চলার অনেক পরিকল্পনা আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনুসরণ করা হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে দারিদ্র মুক্তির লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়নের যে ১৭টি এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়েছে তার অধিকাংশই বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল- উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মোমেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি থেমে নেই। সারা দেশের মানুষ আজ বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, প্রবাসের বাঙালিরা মেধার বিনিয়োগ ঘটিয়ে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন সর্বত্র। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশও এগিয়ে চলেছে দীপ্ত প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন অর্জনের লক্ষ্যে।
বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সমেবত কণ্ঠে দেশের গান ছাড়াও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় ও শহীদ হাসানের যুগল কণ্ঠে মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি জাগানিয়া সঙ্গীতে আপ্লুত হন উপস্থিত সকলে। এর আগে প্রবাসের ১৩৫ শিল্পীর অংশগ্রহণে ‘বিশ্ব মানবতার স্বদেশ প্রেম’ শীর্ষক থিম সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরিচালনা করেন বিপার অন্যতম কর্ণধার সেলিমা আশরাফ। সাংস্কৃতিক পর্ব যৌথভাবে পরিচালনা করেন সাংস্কৃতিক কমিটির চেয়ারম্যান শারমিন রেজা ইভা, জিএইচ আরজু, ইভান চৌধুরী, সাবিনা শারমিন প্রমুখ।
নিউইয়র্ক ফোবানার দ্বিতীয় দিনে ছিলো বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনার, রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স, নারীর ক্ষমতায়ন ও ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স দিয়ে কনফারেন্স, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, মূলধারার রাজনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশগ্রহন সহ নানা বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশী প্রজন্ম মুলধারার রাজনীতিতে কতটা ভূমিকা রাখছে, কিভাবে তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে এসবই ছিলো সেমিনারের মূল থিম। ছিলো, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, ডক্টর সুলতান সালাহউদ্দিন আহমেদের বই, ‘সুতোর টানে’র মোড়ক উন্মোচন। আইটি শিক্ষা নিয়ে এদেশের বাংলাদেশী তরুণ প্রজন্মের ভাবনা শীর্ষক আলোচনায় উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রে তরুণদের আইটি শিক্ষার বিভিন্ন দিক। সাংষ্কৃতিক পর্বে, দেশ ও প্রবাসের শিল্পীদের পরিবেশনা মুগ্ধ করে সবাইকে। ক্যালিফোর্নিয়া, হিউস্টন, টেক্সাস, ফ্লোরিডার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন পর্বে অংশ নেন।
নিউইয়র্ক ফোবানার শেষ দিনে রোববারও ছিলো সেমিনার, আলোচনা আর সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। সন্মেলনের মুল মঞ্চের বাইরে সেমিনার কক্ষে কবিতা পাঠ ও সাহিত্য আলোচনায় অংশ নেন ইভান চৌধুরী ,মনজুর কাদের, কবি তমিজ উদ্দিন লোদী, জি এইজ আরজু। সমকালীন সাহিত্য নিয়ে কথা বলেন, মোশারফ হোসেন, হাসান ফেরদৌস। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সেন্ট্রাল কমান্ড কাউন্সিলের চেয়াম্যান মেজর জেনারেল (অব:) হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম প্রবাসে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের সাথে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্ন উত্তর পর্বে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন এর সম্পাদক নঈম নিমাজ, মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরনবী। সম্মেলনের বাইরে স্টল গুলোতে ছিল উপচে পড়া ভীড়। মুল মঞ্চে সাংষ্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনা মুগ্ধ করে সবাইকে। এমদাদুল হক, নিলুফার জাহান, এমা হকের এক পরিবেশনার পাশাপাশি নিউইয়র্কের সুর ছন্দ এবং বিপা’র নৃত্য পরিবেশনা। এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়া, হিউস্টন, টেক্সাস, ফ্লোরিডার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা, নিজ নিজ সংগঠনের পরিচয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
তিন দিনের এই সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে মোট ১৫টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। মিডিয়ার ভূমিকা নিয়েও একটি মুক্ত আলোচনা হয়। বাংলাদেশ থেকে আগত সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও নঈম নিজাম এতে অংশ নেন। বিষয়ভিত্তিক ১৫টি সেমিনার ছাড়াও এবারের ফোবানায় দেশ ও প্রবাসের গুণীজন এবং উত্তর আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যে সেরার চেয়েও সেরাদের অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। সুদূর এই পরবাসে বড় হওয়া বাংলাদেশী প্রজন্মের মধ্যে নেটওয়ার্কিংয়ের চমৎকার ও ব্যতিক্রমধর্মী একটি পর্বও ছিল । বাংলাদেশ, বাঙালি এবং প্রবাসের প্রজন্মকে প্রাধান্য দেয়ার এ সম্মেলনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সেমিনারের পাশাপাশি মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের অবস্থান নিয়েও খোলামেলা আলোচনা হয়। সম্মেলন কেন্দ্রে বসেছিল বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্যের স্টল। সেবামূলক কয়েকটি সংস্থাও পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য-চিকিৎসাসহ নানা বিষয়ে।
এই সম্মেলন থেকে তৃণমুল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুটস) -কে ‘ফোবানা আউটস্টান্ডিং কমিউনিটি সার্ভিসেস আ্যাওয়ার্ড অফ ২০১৫’ প্রদান করা হয়। ফোবানার ২৯তম সম্মেলন উপলক্ষে ‘চিরকালের বাংলা’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়।
NY_FOBANA-2স্টিয়ারিং কমিটির সভা: নিউইয়র্ক ফোবানা সম্মেলনের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় ফোবানার নতুন কমিটি গঠন এবং পরবর্তী সম্মেলনের আয়োজক ও ভেনু নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্মেলনের শেষ দিন রোববার অপরাহ্নে জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিকটস্থ রেডিসন হোটেলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকার ১০টায় সভা শুরুর কথা থাকলেও স্টিয়ারিং কমিটির সভা শুরু হয় বেলা দুটার দিকে। চেয়ারম্যান ডিউক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী আজাদুল হক। রুদ্ধদার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভার কার্যক্রম চলে আড়াই ঘন্টার মতো। মাঝে ত্রিশ মিনিটের বিরতি ছিলো। সভায় প্রথমে ফোবানার বার্ষিক রিপোর্ট (২০১৪-২০১৫) নিয়ে আলোচনার পর আগামী বছর অর্থাৎ ৩০তম সম্মেলনের ভেনু নির্ধারণ করা হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি। যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন থাকবে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বিএজি ডিসি) ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক (বিএএআই)। এছাড়া ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য ৩১তম সম্মেলনের জন্য বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা-কে দায়িত্ব দেয়া হয়। এজন্য নির্বাচনের প্রয়োজন পড়ে। সভায় গঠিত ডিউক খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি নির্বাচনী কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। সদস্যদের ভোটে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা ৩০তম সম্মেলনের দায়িত্ব পায়। সভার শেষ পর্যায়ে আজাদুল হক এক প্রেস ব্রিফিং এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ৩০তম সম্মেলনের কনভেনর মনোনীত হয়েছেন হোস্ট সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটর ডিসি’র এটিএম আলম আর মেম্বার সেক্রেটারী মনোনীত হয়েছেন নূরুল আমিন। তিনি জানান, সভায় আগামী দুই বছরের (২০১৫-২০১৬) জন্য ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটিও গঠন করা হয়। এই কমিটির শীর্ষ কর্মকর্তারা হলেন: চেয়ারপার্সন নাহিদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারপার্সন মোহাম্মদ আলমগীর, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী আজাদুল হক, জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী এম মওলা দিলু এবং ট্রেজারার শাহ হালিম।
এদিকে ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির সভা শুরুর আগে ওয়াশিংটন ডিসি’র আযোজকরা ঐক্যবদ্ধ, নাকি ঐক্যবদ্ধ নয় এমন প্রশ্নে কমিটির একাধিক সদস্যস্যের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এমনকি পরিস্থিতি হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায় বলে নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জনান। তবে এব্যাপারে খোজ নিয়ে ফোবানা কর্মকর্তারা জানান বিষয়টি ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির নয়, ওয়াশিংটন ডিসি’র কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
NY_FOBANA-3
FOBANA Logo'2015টরন্টো ফোবানা: কানাডার টরন্টোয় বিভক্ত ফোবানার একাংশের সম্মেলনেও ঐক্যের আহ্বান জানানো হলেও প্রত্যাশিত ঐক্য সুদূর পরাহত। ‘অনুভবে চেতনায় আমাদের বাংলাদেশ’ শ্লোগানে স্থানীয় পার্কওয়ে শেরাটন পার্কওয়ে হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে, সেমিনার, আলোচনা সভার পাশাপাশি ছিলো গান, নাচ, আবৃতি, নাটিকাসহ বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক আয়োজন। কানাডার মূলধারার প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্মেলনে এবার একটা নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন এর আয়োজকরা। ফোবানা এই অংশের স্টিরিয়াং কমিটির চেয়ারম্যান তৌফিক এজাজ আর এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী হচ্ছেন আলী ইমাম শিকদার।
বাংলাদেশ সোসাইটি (এস.সি)-এর ব্যানারে আয়োজিত ৫-৬ সেপ্টেম্বর শনি ও রোববার দুই দিনের এই সম্মেলন থেকে আগামী বছরের সম্মেলনের আয়োজক ও স্থান নির্ধারণ সম্ভব হয়নি। ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটির সভায় জানানো হয়, আগামী এক মাসের মধ্যে পরবর্তী ফোবানার আয়োজক ঠিক করা হবে। এই তথ্য জানিয়েছেন টরোন্টো ফোবানার কনভেনর দারা আবু জুবায়ের।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে টরন্টো ফোবানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। দু’ দিনের এই সম্মেলনে ছিলো সেমিনার, কাব্য জলসা, দেশ-বিদেশের শিল্পীদের পরিবেশনা, ফ্যাশন শো প্রভৃতি। সম্মেলনের মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক পর্বে জনপ্রিয় শিল্পী সামিনা চৌধুরী, কনক চাপা, বাদশা বুলবুল ও এস ডি রুবেলের সঙ্গীত পরিবেশনা দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)