নিউইয়র্ক ১২:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় : শেখ হাসিনা এমন নির্বাচন না করলেও পারতেন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:১০:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৯
  • / ৮৫৭ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: টানা প্রায় ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিস্ময়কর কাজ করেছেন। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র ও সবচেয়ে কম উন্নত দেশের একটি এ দেশটিতে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা প্রায় ১৫০ ভাগ। চরম দারিদ্র্যে বসবাসকারী মানুষের হার শতকরা ১৯ ভাগ থেকে কমে এসেছে প্রায় ৯ ভাগে। তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, সরাসরি কর্তৃত্বপরায়ণতার দিকে ঝুঁকে যাওয়া ও এমন একটি নির্বাচন, যাতে শেখ হাসিনার দল জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টিতেই জয় পেয়েছে। শতকরা ৯৬ ভাগ জয় পাওয়া এক অসম্ভব ব্যাপার। এসব তার অর্জনকে খর্ব করেছে।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের কয়েক মাস ও সপ্তাহ আগে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো বিরোধী দলগুলোকে ভীতি প্রদর্শন, সহিংসতা থেকে শুরু করে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের গ্রেপ্তার, তাদের সমর্থকদের ওপর নজরদারি ও বহুল সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিষ্ঠুর ব্যবহার নিয়ে ধারাবাহিকভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ‘আগ্রাসী অথবা ভীতিকর’ কোনো উপাদান পোস্ট করা হলে জেলের বিধান রয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণায় সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৭ জন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার এক রিপোর্টে বর্ণনা করেছে বিচার ব্যবস্থা (ইনটিমিডেটেড জুডিশিয়ারি) অথবা নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ নেই এমন ‘একটি আতঙ্কের পরিবেশ নিয়ে। এমন আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজমান সমাজের উচ্চকিত কণ্ঠ থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত’।
ডিসেম্বরে দ্য টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যত সর্বত্র স্বৈরতন্ত্রের বিভ্রান্তি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেছেন যে, একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ হলো একটি প্রান্তিক (পেরিফেরাল) বিষয়। তিনি বলেছেন, ‘যদি আমি খাদ্য, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারি সেটাই হলো মানবাধিকার। বিরোধীরা বা নাগরিক সমাজ অথবা আপনার এনজিওরা যা বলছে- তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। আমি আমার দেশকে জানি এবং আমি জানি কিভাবে আমার দেশের উন্নতি করতে হয়’।
শেখ হাসিনার বয়স এখন ৭১ বছর। তিনি তার দেশকে জানেন- এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তাকে ১৯৭৫ সালে যখন হত্যা করা হয় তখন হাসিনা ছিলেন দেশের বাইরে। ১৯৮১ সালে তিনি দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিতে। তারপর থেকে তিনি এর নেতৃত্বেই আছেন। তার দল এবং আরেকজন শক্তিধর নারী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত পালাক্রমে ক্ষমতায় এসেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের প্রতিবাদ করে ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। এর ফলে শেখ হাসিনাকে একটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন ক্ষমতার মেয়াদ দেয়া হয়। গতবছর দুর্নীতির অভিযোগে জেল দেয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে। শেখ হাসিনা আরো এক দফায় ক্ষমতায় ফিরেছেন, যা এরই মধ্যে কার্যত একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আরো কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে প্রস্তুত তারা।
কিন্তু কেন? যখন জনমত জরিপ ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও শেখ হাসিনা ভালোভাবে বিজয়ী হবেন তাহলে কেন অপ্রয়োজনীয় নির্বাচনী ফল তৈরি করা হলো? এখন শেখ হাসিনার কতৃত্ববাদী পদ্ধতি (অথরিটারিয়ান মেথড) ও নিষ্পেষণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কলঙ্কিত করবে তার প্রতিটি অর্জনকে। তার সমালোচক, যারা নির্বাসনে গেছেন অথবা আন্ডারগ্রাউন্ডে গেছেন, তারা শুধু আরো বেশি কঠোর হয়ে উঠবেন। তার বিদেশি সমর্থক যারা আছেন তারাও আরো সতর্ক হবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী ও সবচেয়ে বড় সিঙ্গেল-কান্ট্রি বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনী প্রচারণার সময় হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং একই সঙ্গে এসব সমস্যা সমাধানে সব পক্ষকে নিয়ে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের প্রতি। যেসব সহিংসতা ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল, যা প্রচারণা ও ভোটকে কলঙ্কিত করেছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য একই রকমভাবে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত গতিবিধি বলে দেয়, এমন মৃদু ভর্ৎসনায় তিনি পাল্টে যাবেন বলে মনে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব দেশের নেতারা ব্যবসা করছেন এবং এদেশ দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের জন্য উল্লসিত, শেখ হাসিনাকেও তার মিত্রদের তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত যে, মানবাধিকার বহির্জাগতিক কোনো আরোপিত সংস্কৃতি নয়। এটা হলো উন্নয়ন ও অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
(যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সম্পাদকীয়র অনুবাদ)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় : শেখ হাসিনা এমন নির্বাচন না করলেও পারতেন

প্রকাশের সময় : ১০:১০:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৯

হককথা ডেস্ক: টানা প্রায় ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিস্ময়কর কাজ করেছেন। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র ও সবচেয়ে কম উন্নত দেশের একটি এ দেশটিতে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা প্রায় ১৫০ ভাগ। চরম দারিদ্র্যে বসবাসকারী মানুষের হার শতকরা ১৯ ভাগ থেকে কমে এসেছে প্রায় ৯ ভাগে। তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, সরাসরি কর্তৃত্বপরায়ণতার দিকে ঝুঁকে যাওয়া ও এমন একটি নির্বাচন, যাতে শেখ হাসিনার দল জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টিতেই জয় পেয়েছে। শতকরা ৯৬ ভাগ জয় পাওয়া এক অসম্ভব ব্যাপার। এসব তার অর্জনকে খর্ব করেছে।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের কয়েক মাস ও সপ্তাহ আগে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো বিরোধী দলগুলোকে ভীতি প্রদর্শন, সহিংসতা থেকে শুরু করে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের গ্রেপ্তার, তাদের সমর্থকদের ওপর নজরদারি ও বহুল সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিষ্ঠুর ব্যবহার নিয়ে ধারাবাহিকভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ‘আগ্রাসী অথবা ভীতিকর’ কোনো উপাদান পোস্ট করা হলে জেলের বিধান রয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণায় সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৭ জন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার এক রিপোর্টে বর্ণনা করেছে বিচার ব্যবস্থা (ইনটিমিডেটেড জুডিশিয়ারি) অথবা নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ নেই এমন ‘একটি আতঙ্কের পরিবেশ নিয়ে। এমন আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজমান সমাজের উচ্চকিত কণ্ঠ থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত’।
ডিসেম্বরে দ্য টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যত সর্বত্র স্বৈরতন্ত্রের বিভ্রান্তি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেছেন যে, একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ হলো একটি প্রান্তিক (পেরিফেরাল) বিষয়। তিনি বলেছেন, ‘যদি আমি খাদ্য, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারি সেটাই হলো মানবাধিকার। বিরোধীরা বা নাগরিক সমাজ অথবা আপনার এনজিওরা যা বলছে- তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। আমি আমার দেশকে জানি এবং আমি জানি কিভাবে আমার দেশের উন্নতি করতে হয়’।
শেখ হাসিনার বয়স এখন ৭১ বছর। তিনি তার দেশকে জানেন- এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তাকে ১৯৭৫ সালে যখন হত্যা করা হয় তখন হাসিনা ছিলেন দেশের বাইরে। ১৯৮১ সালে তিনি দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিতে। তারপর থেকে তিনি এর নেতৃত্বেই আছেন। তার দল এবং আরেকজন শক্তিধর নারী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত পালাক্রমে ক্ষমতায় এসেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের প্রতিবাদ করে ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। এর ফলে শেখ হাসিনাকে একটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন ক্ষমতার মেয়াদ দেয়া হয়। গতবছর দুর্নীতির অভিযোগে জেল দেয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে। শেখ হাসিনা আরো এক দফায় ক্ষমতায় ফিরেছেন, যা এরই মধ্যে কার্যত একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আরো কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে প্রস্তুত তারা।
কিন্তু কেন? যখন জনমত জরিপ ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও শেখ হাসিনা ভালোভাবে বিজয়ী হবেন তাহলে কেন অপ্রয়োজনীয় নির্বাচনী ফল তৈরি করা হলো? এখন শেখ হাসিনার কতৃত্ববাদী পদ্ধতি (অথরিটারিয়ান মেথড) ও নিষ্পেষণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কলঙ্কিত করবে তার প্রতিটি অর্জনকে। তার সমালোচক, যারা নির্বাসনে গেছেন অথবা আন্ডারগ্রাউন্ডে গেছেন, তারা শুধু আরো বেশি কঠোর হয়ে উঠবেন। তার বিদেশি সমর্থক যারা আছেন তারাও আরো সতর্ক হবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী ও সবচেয়ে বড় সিঙ্গেল-কান্ট্রি বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনী প্রচারণার সময় হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং একই সঙ্গে এসব সমস্যা সমাধানে সব পক্ষকে নিয়ে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের প্রতি। যেসব সহিংসতা ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল, যা প্রচারণা ও ভোটকে কলঙ্কিত করেছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য একই রকমভাবে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত গতিবিধি বলে দেয়, এমন মৃদু ভর্ৎসনায় তিনি পাল্টে যাবেন বলে মনে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব দেশের নেতারা ব্যবসা করছেন এবং এদেশ দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের জন্য উল্লসিত, শেখ হাসিনাকেও তার মিত্রদের তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত যে, মানবাধিকার বহির্জাগতিক কোনো আরোপিত সংস্কৃতি নয়। এটা হলো উন্নয়ন ও অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
(যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সম্পাদকীয়র অনুবাদ)