হাবিব রহমান: লেখার এই শিরোনামটি আমার নয়। ধার করা। ‘নিউইয়র্কে সমকামীদের বন্ধু বিপা’-এই শিরোনামে চলতি সংখ্যা ‘মুক্তচিন্তা’ একটা কভার স্টোরি করেছে। লেখাটা আমার ভালো লেগেছে। শিরোনামটি আমার পছন্দও হয়েছে। পাশাপাশি আমাকে একটি লেখা তৈরির জন্য অনুপ্রাণীত ও করেছে। তাই সম্পাদকের অনুমতি নিয়েই শিরোনামটি ধার নিয়েছি। বিপা-বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফরমিং আর্টস। প্রবাসে আমাদের এক গর্বিত সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নাম। প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতি লালন ও বিকাশে গত ২০ বছর ধরে কমিউনিটতে তার উজ্জল অবদান ধরে রেখেছে।
একসময় বিপার ব্যয় নির্বাহ হতো শুভার্থীদের অনুদান, শিক্ষার্থী ফি এবং অন্যন্য খাত থেকে। সময়ের পরিক্রমায় বিপা’র বয়স হয়েছে। বিপা ম্যাচুয়ুড হয়েছে। বিপা’র কাজের পরিধিরও ব্যপ্তি হয়েছে। পাশাপাশি বিপার আয়ের খাতও বেড়েছে। যতদূর জানি সিটি থেকে এখন আকর্ষনীয় আর্থিক সহযোগীতাও পায় বিপা। তাই তাদের কর্মক্ষেত্রের বৈচিত্রতাও বেড়েছে অনেক।
বিপাকে এখন অনেকের মন রক্ষা করে চলতে হয়। তাই কাজের বিষয়ব¯‘তেও এসেছে পরিবর্তন। গত ৪ সেপ্টেম্বর জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় বিপা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংগঠনের নেত্রী এ্যানি ফেরদৌস বলেন, বিপা বর্তমানে নাচ, গান, আবৃত্তি বা ছবি ছবি আঁকার কোর্স পরিচালনা করলেও এর পাশাপাশি আগামী অক্টোবর মাসের ২২তারিখ থেকে সমকামীদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে। তাঁর মতে নিজেদের পরিবার, পরিচিতজন এবং বন্ধুদের মধ্যে অনেক সমকামী রয়েছেন। তারা একটু ‘অন্য রকম’। তারা কেনো অন্য রকম সেটা জানার জন্য, বুঝার জন্য আগামী দুই বছর বিপা অনেক কর্মশালা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বলে জানান এ্যানি ফেরদৌস। তিনি আরো বলেন বিপার মধ্যে সমকামীদের জন্য একটা জায়গা তৈরির জন্য তারা কাজ করতে চান।
আগামী ২২ অক্টোবর জ্যামাইকা সেন্টার ফর আর্টস এন্ড লার্নিং থিয়েটার হলে তারা প্রথম কর্মশালা করবেন। এই প্রকল্পের পরিচালক হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করবেন সংগীত শিক্ষক নাদিম আহমেদ। এরই মধ্যে এই প্রকল্পের জন্য অনুদান পেয়েছেন বলেও এ্যানি ফেরদৌস জানান। এরই মধ্যে এ্যানি ফেরদৌসের ফেসবুক পেজে আপ কামিং ইভেন্ট হিসাবে একটি পোস্ট দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তথ্যের জন্য এ্যানি ফেরদৌস, সেলিমা আশরাফ, নিলুফার জাহান এবং নাদিম আহমেদের নাম দেয়া হয়েছে।
আমাদের কমিউনিটির প্রগতিশীল অনেকে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এদের অন্যতম হলেন শিরিন বকুল, ক্লার্ক রোজারিও, মিনহাজ আহমেদ, মুনিরা মাহমুদ, গোপন সাহা, রোকেয়া আখতার প্রমুখ।কার কোনটা ভালো লাগবে বা লাগবেনা এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। আর তাই স্বাভাবিক। এতে আমার কিছু বলার নেই। তবে এ প্রসঙ্গে আমারও কিছু ভালো লাগা বা মন্দ লাগা আছে। তাই কাউকে হার্ট করতে নয় এই নিবন্ধে স্বাধীনভাবে আমি আমার কিছু বক্তব্য তুলে ধরতে চাই।
আমাকে যারা চেনেন তারা জানেন আমি একজন ইয়ার রাউন্ড পরিব্রাজক। শীত-গ্রীস্ম সারা বছর আমি পাঁচটি মহাদেশের বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াই। সম্প্রতি আমি ইজরায়েল ভ্রমণ করে এসেছি। যে দেশে যাই সে দেশ সম্পর্কে আগে থেকেই হোম ওয়ার্ক করি। প্রায়োরিটি করে দর্শনীয় তালিকা করি। সেগুলো ঘুরে দেখতে চেষ্টা করি। ইজরায়েল ভ্রমণে আমার দর্শনীয় তালিকার অন্যতম ছিলো মৃত সাগর বা ডেড সী। যা আরবদের কাছে ‘বাহরুল মায়্যিত’ নামে পরিচিত। জর্দান নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হলেও এটি মূলত একটি হ্রদ। ডেড সি বা মৃত সাগরের দৈর্ঘ্য ৬৭ কিলোমিটার, প্রায়¯’ ১৮ কিলোমিটার আর গভীরতা ১.২৪০ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২২ মিটার উচচতায় অবস্হিত এ সাগরের পশ্চিমে রয়েছে ইসরায়েল ও পূর্বে জর্দান। এখান থেকে পবিত্র জেরুজালেম নগরীর দূরত্ব মাত্র ১৫ মাইল।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সমকামিতার মতো জঘন্য পাপ ও অপরাধে লিপ্ত হওয়ার কারণে সডম ও গোমাররাহ নামের লোকালয় এই স্হানটি আল্লাহর হুকুমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। তৈরি হয় একটি হ্রদ। ঘটনাটি আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগের। আল্লাহর নবী হজরত লুত (আ.)-এর বারবার সাবধান বাণী সত্ত্বেও সে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী অবৈধ যৌন সম্পর্ক ও সমকামিতার অভ্যাস পরিত্যাগ করেনি। পৃথিবীর বুকে একমাত্র তারাই যৌন ক্ষুধা চরিতার্থের উদ্দেশ্যে মহিলাদের বাদ দিয়ে পুরুষদের ওপর উপগত হতো। আমি যখন ডেড সি ভ্রমণ করছিলাম প্যালেস্টাইনী গাইডের মুখে ঘটনার ইতিহাস শুনছিলাম। তিনি বলছিলেন পবিত্র কোরআনে কিভাবে এ ঘটনার কথা বলা হয়েছে।
কোরআনুল কারিমে অত্যন্ত চমৎকারভাবে এই ঘটনা বিধৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি লুতকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা এমন কুকর্ম করছ, যা তোমাদের আগে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো কামতৃপ্তির জন্য নারী ছেড়ে পুরুষের কাছে গমন করো, তোমরা সীমা লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৮০-৮১)।
এ দেশের প্রক্ষাপটে সমকামিতা কোন দোষের নয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, বৃটেন সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশীদের মধ্যে বিশেষ করে তরুণসমাজ সমকামীতার দিকে ঝুকছে। সে সব দেশ বা রাষ্ট্র মাথার উপর ছাতা হয়ে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্ত মুসলমান হিসাবে আসুন দেখি সমকামীতা নিয়ে পবিত্র কোরআন কি বলছে।
homosexuality বা সমকামিতা ইসলামে হারাম ও সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমনকি অবৈধ যৌনাচার, জেনা-ব্যভিচারের গোনাহসমূহের চেয়েও মারাত্মক ধ্বংসযোগ্য অপরাধ যড়ন্তকারীর সমকামিতাকে ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম করে দিয়েছে। এবং স্বাভাবিক ব্যভিচারের চেয়েও খারাপ। লুত (আ) এর কওমকে (Sodom আর Gomorrah নগরী) আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন যেসব কারণে এর মধ্যে সমকামিতা ছিল একটি।’
“এবং আমি লুতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ? তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ। (আরাফ ৭:৮১-৮২) ‘সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরূষদের সাথে কুকর্ম কর? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ (সূরা শুয়ারা ২৬:১৬৫-১৬৬) ‘স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ! তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়। উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লুত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়। অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া। কেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম। (কুরআন ২৭:৫৪-৫৭) ‘আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা লুতের জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা অপরাধী।’ (২৯:৩১) যে সমকামিতার অপরাধে একটি জাতিকে ধ্বংসের ভয়াল পরিণতি বরণ করতে হয়েছে সেই ঘৃণ্য কাজটিকেই ‘আধুনিকতা’ এবং ‘অধিকারের’ কথা বলে আবার ছড়িয়ে দিতে কিছু মস্তিষ্কবিকৃত মানুষের চেষ্টা চলছে অব্যাহতভাবে। দৈহিকভাবে মানুষ রেখে চেতনায় পশু বানিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতা।
অভিশপ্ত সম্প্রদায় ‘কওমে লুত’ ধ্বংস হয়েছিল সমকামের অপরাধে। হজরত লুত (আ.)’র জাতি ছিল সমকামী। হজরত লুত তাদেরকে এহেন কাজ থেকে বিরত থাকার এবং হালাল পন্থায় নারীদের সঙ্গে তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করার অনুরোধ করেছেন বারবার। কিন্তু কে শুনে লুতের কথা! হজরত লুত ব্যর্থ হলেন। এমতাবস্য়হায় তার ঘরে চারজন সুদর্শন যুবক মেহমান আসলো। মেহমানের আগমণের খবর পেয়ে সমকামে অভ্যস্ত লোকেরা মেহমানদের সঙ্গেই কুকর্ম করতে চাইল। হজরত লুত ভীত হলে যুবক চারজন তাঁকে বললেন, ‘হে লুত, আমরা ফেরেশতা’। শুধু ইসলাম ধর্মগ্রন্থ কুরআনই নয়, পবিত্র বাইবেলেও সমকামিতা একরকমের পাপ (আদি পুস্তক ১৯:১-১৩; লেবীয় ১৮:২২; রোমীয় ১:২৬-২৭; ১ করিনীয় ৬:৯) রোমীয় ১:২৬-২৭ পদ ।
ডেড সীর তীরে দাঁড়িয়ে যখন গাইডের মুখে কথাগুলো শুনছিলাম তখন শরীর বারবার রোমাঞ্চিত হয়েছিল। যাগকে এসব কাহিনী বলে লেখার কলেবর দীর্ঘ করবো না। আমার কয়েকটি প্রশ্ন রেখেই লিখার ইতি টানবো।
প্রথম প্রশ্ন বিপার কাছেঃ
সমকামিতা নিয়ে আপনাদের এই যে কার্যক্রম সে সম্পর্কে আপনাদের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা কি অবগত? অনেক অভিভাবক আছেন যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী এবং ধর্ম ভীরু। সমকামিতা ব্যাপারটি নিয়ে তারা তেমন বিশেষ কিছু জানেন না। এই সমকামিতা ইসলাম ধর্মে একটি অত্যন্ত সেনসেটিভ বিষয়। আপনাদের কর্ম পরিধিতে সমকামিতা বিষয়টি সংযোজিত হয়েছে অনেকে হয়ত তা অবগত নন। অভিভাবকদের সাথে এ ব্যাপারে খোলাখুলিভাবে মত বিনিময় করুন। তারপরও উদারপনš’ী অভিভাবক যারা তাদের সন্তানদের এখানে শিক্ষা দিতে চান তাদের নিয়ে আপনাদের কার্যক্রম চালু রাখুন। তাতে তখন কারো আপত্তি থাকবেনা।
যারা বিপার এই কার্যক্রমকে বাইরে থেকে সমর্থন দিয়েছেন তাদের বলছি, আপনার পরিবার, আপনার সন্তান কি এই সমকামিতাকে সমর্থন করে? আপনার নিজের সন্তান যদি সমকামিতায় লিপ্ত হয় তাকে কি আপনি সমর্থন দিবেন বা উৎসাহিত করবেন? এবার সমাজের কাছে আমার প্রশ্ন পুরুষ যদি পুরুষেই বা নারী যদি নারীতেই যৌন চাহিদা পুরণ করতে পারে তাহলে এই সমাজ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? পুরুষ যদি নারীর কাছে না যায় তাহলে মানুষের বংশবৃদ্ধির কী হবে? সমকামিতার ফলে যেমন এইডস মহামারি ছড়াবে তেমনি মানুষের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যহত হবে নিশ্চিতভাবে। হুমকির মুখে পড়বে মানবসভ্যতা। কথাগুলো কি ভাবার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আপনারা মনে করেন?
আমরা যারা মুসলমান তারা বিশ্বাস করি সমকামিতার অপরাধে একটি জাতিকে ধ্বংসের ভয়াল পরিণতি বরণ করতে হয়েছিলো। সেই ঘৃণ্য কাজটিকেই ‘আধুনিকতা’ এবং ‘অধিকারের’ কথা বলে কেউ আবার ছড়িয়ে দিতে চাইলেই কি আমরা তা গ্রহন করবো?আমরা অবনত মস্তকে তা মেনে নেবো? এবার একটু আমার নিজের কথায় আসি। এটা তো বাক স্বাধীনতার দেশ। নিশ্চিতই আমার কথা বলার অধিকার রয়েছে। (তবে অবশ্যই তা হবে আমার একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত।) এই অভিমতটা যদি একটু বড় গলায় চীৎকার করে বলি তাহলে কেমন হয়? বলেই ফেলা যাক তা হলে। তা হলো- SHAME ON BIPA…..BIPA….BIPA….. (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)
হককথা/এমউএ