নিউইয়র্ক ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্কে সংস্কৃতি কর্মীদের প্রতিবাদ সমাবেশ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:১৩:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০১৭
  • / ৭৮৩ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট চত্তর থেকে গ্রীক দেবীর মূর্তি অপসারণ এবং নারায়গঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে প্রবাসের সংস্কৃতি কর্মীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। ২৬ মে শুক্রবার বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৮ টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এই সমাবেশ চলে।
সমাবেশে বক্তারা মূতি অপসারণ ও শিক্ষক গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সুপ্রীম কোর্টের সাথে মূর্তি নয়, ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিলো। দেশের সর্বত্রই ভাস্কর্য রয়েছে এবং থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে প্রতিষ্ঠিত ‘অপরাজেয় বাংলা’ সহ দেশের অনেক ভাষ্কর্য ন্যায়ের প্রতীক হিবেবে জাতিকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। অপরদিকে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বক্তারা দাবী করে অবিলম্বে ভাস্কর্যটি পুন: স্থাপন এবং শ্যামল কান্তির মুক্তি দাবী করেন। খবর ইউএনএ’র।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মিথুন আহমেদ। নিউইয়র্ক সিটির সাবেক কাউন্সিলম্যান হাইরাম মুনসেরাত সহ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক শিতাংশু গুহ, লেখক সুব্রত বিশ্বাস, নাট্যাভিনেত্রী লুৎফুন্নাহার লতা, সাংবাদিক ফাহিম রেজা নূর ও মুজাহিদ আনসারীু, জনপ্রিয় শিল্পী মাকসুদ প্রমুখ। সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জোটের অন্যতম সংগঠক মিনহাজ আহমেদ এবং সম্মিলিতভাবে কবিতা আবৃতি করেন নজরুল কবীর, গোপন সাহা, পরভীন সুলতানা ও শুক্লা রায়। এছাড়া সমাবেশ স্থলে ছবি আঁকেন কার্টুনিষ্ট  টিপু আলম। সমাবেশে প্রবাসের শিল্পীরা একাধিক দেশের গানও পরিবেশন করেন।
সমাবেশে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বিশিষ্ট সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ ও নাজমুন নেসা পিয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের সমাপ্তি ঘটে।
সমাবেশে বক্তারা তাদের বক্তব্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কোন অপশক্তির সাথে সরকারের আপোষকামিতা দেশে ও প্রবাশে গণতন্ত্রমনা জনগণ মেনে নেবে না। ক্ষমতায় থাকার জন্য শুধু হেফাজতে ইসলাম-ই নয়, দেশের কোন মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের সাথে সরকারের নির্বাচনী জোটও আমরা মানবো না। বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দল বলেই আমরা এই সরকারের সমালোচনা করে সঠিক পথ দেখাতে চাই। আর সরকার যদি ভুল পথে চলে বা দেশকে ভুল পথে পরিচালিত করে তাহলে এজন্য জাতিকে চরম খেসারত দিতে হবে।
সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠকালে মিনহাজ আহমেদ বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে পরপর সংঘটিত দুটি ন্যক্কারজনক ঘটনায় দেশের সাধারণ মানুষসহ সারা বিশ্বের বাংলাদেশী কম্যুনিটিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম হয়েছে, তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ ও ঘৃণা প্রকাশ করা আবশ্যক বিবেচনা করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকা আজ আপনাদেরকে এখানে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ঘটনা দুটির প্রথমটি হলো শারীরিক নির্যাতনের শিকার নিরীহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্ছিত করা, নিরপেক্ষ তদন্তে প্রমাণিত অভিযুক্ত নির্যাতনকারীর জামিন মঞ্জুর করা এবং প্রমাণবিহীন মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে হয়রানি ও গ্রেফতার করা, এবং জামিন নামঞ্জুর করা। ন্যক্কারজনক অপর ঘটনাটি হলো ধর্মান্ধ মৌলবাদী অপশক্তির কাছে নতি স্বীকার করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ হতে ন্যায় বিচারের প্রতীক ভাস্কর্যটি অপসারণ করা।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল গঠিত সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সংঘটিত উপরোক্ত ঘটনা দুটিকে আপাতদৃষ্টি পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও সম্পর্কহীন মনে হলেও ঘটনা দুটির পিছনে যে একাত্তরের পরাজিত ঘাতক-দালাল-রাজাকারের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তির হাত রয়েছে, সেটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এই একই গোষ্ঠী কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে নিরীহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে শারীরিক নির্যাতনের শিকারে পরিণত করেছে। আমরা ভুলে যাইনি, এই একই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের প্রতীক ‘অপরাজেয় বাংলা’ ধংসের উদ্দেশ্যেও ব্যর্থ আক্রমণ করেছিল। পাকিস্তানী হানাদারদের দোসর এই গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসাবে পরিণত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে, চেষ্টা করছে দেশ জুড়ে একটি গোলযোগ সৃষ্টি করে একাত্তরের ঘাতক-দালাল-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দিতে।
এমন পরিস্থিতিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সমাবেশ থেকে-
* তীব্র ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি ঘটনা দুটির সাথে সম্পৃক্ত সরকারদলীয় ও দলবহির্ভূত ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি।
* নিরীহ নিরপরাধ শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের অবিলম্বে কারামুক্তি দাবি করছি।
* শ্যামল কান্তি ভক্তের উপর শারীরিক নির্যাতনকারী সেলিম উসমানের বিচার ও শাস্তি দাবি করছি, সাথে সাথে শ্যামল কান্তি ভক্তের উপর উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মামলাকারীর শাস্তি দাবি করছি।
* অনতিবিলম্বে ‘ন্যায় বিচারের প্রতীক’ শিল্পসিদ্ধ ভাস্কর্য প্রতিস্থাপন করার জন্য সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। সাথে সাথে নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনা দুটোর সাথে জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের আইনি বিচার শাস্তি দাবি করছি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার আহ্বান আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হই-
* বাংলাদেশে আইন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার,
* নৈতিকতা, মানবতা, শিষ্টাচার, ও দেশপ্রেমের পতন রোধ করার এবং
* একটি প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য।
আমরা সবাই মিলে শপথ করি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে আমরা কিছুতেই একটি ধর্মান্ধ মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হতে দেবো না।

যুক্তরাষ্ট্র উদীচী’র প্রতিবাদ: যুক্তরাষ্ট্র উদীচী’র পক্ষ থেকে প্রেীত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে- গভীর রাতে অতি গোপনীয়তার সাথে ‘ন্যায় বিচারের প্রতীক’ ভাস্কর্যটি হাতুড়ির আঘাতে ভেঙ্গে  ফেলার ঘটনাটি মুক্তিযুদ্ধকামী জনগনের হৃদয় ভেঙ্গে দেয়ার নামান্তর । বাংলা বর্ণমালা, সংস্কৃতি, ,  ঐতিহ্য, আত্মপরিচয়ের বহুমাত্রিক সংগ্রামে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র জনগনের এক রক্তাক্ত মুক্তিসংগ্রাম দেশ দুনিয়া কাঁপিয়েছিল। একথা মুক্তিযুদ্ধের অনুসারীরা  অস্বীকার করবে কোন মুখে? সাম্প্রদায়িকতাবাদী হেফাজতের কথিত মূর্তি যা বিশ্বজুডে ন্যায় বিচারের প্রতীক ভাস্কর্য তা অমর্যাদার সাথে অপসারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরাজয় ও সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের প্রতি নতি স্বীকার। আজকের হেফাজতে ইসলাম যা ’৭১ সনে ছিল নেজামে ইসলামী তথা  পাকবাহিনীর সহযোগী আল মুজাহিদ তাদের দাবিতে হাইকোর্টের ন্যায়বিচারের ভাস্কর্য অপসারণ আদর্শিক পশ্চাদপসারন। সাম্প্রদায়িক শক্তির চাপে নতি স্বীকার তথা এক আত্মঘাতি পদক্ষেপ।
বিবৃতিতে বলা হয়, লক্ষ্যনীয় যে একই যুক্তিতে পবিত্র ধর্মের অজুহাত  দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মৃতির মিনার শহীদ মিনার ৭ বার বর্বরভাবে ভেঙ্গেছিল পাকজান্তারা। মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন, লাখো শহীদ মিনার, শত শত ভাস্কর্য, পহেলা বৈশাখ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, একুশে ফেব্রুয়ারি, রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্তের জন্মমৃত্যু জয়ন্তী। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের গৌরব এগুলো বাঁচাতে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের অনুসারী সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং সকল মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মসহ তরুণ সমাজকে বহুমাত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার একান্ত আহ্বান জানাই।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

নিউইয়র্কে সংস্কৃতি কর্মীদের প্রতিবাদ সমাবেশ

প্রকাশের সময় : ০৭:১৩:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০১৭

নিউইয়র্ক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট চত্তর থেকে গ্রীক দেবীর মূর্তি অপসারণ এবং নারায়গঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে প্রবাসের সংস্কৃতি কর্মীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। ২৬ মে শুক্রবার বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৮ টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এই সমাবেশ চলে।
সমাবেশে বক্তারা মূতি অপসারণ ও শিক্ষক গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সুপ্রীম কোর্টের সাথে মূর্তি নয়, ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিলো। দেশের সর্বত্রই ভাস্কর্য রয়েছে এবং থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে প্রতিষ্ঠিত ‘অপরাজেয় বাংলা’ সহ দেশের অনেক ভাষ্কর্য ন্যায়ের প্রতীক হিবেবে জাতিকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। অপরদিকে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বক্তারা দাবী করে অবিলম্বে ভাস্কর্যটি পুন: স্থাপন এবং শ্যামল কান্তির মুক্তি দাবী করেন। খবর ইউএনএ’র।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মিথুন আহমেদ। নিউইয়র্ক সিটির সাবেক কাউন্সিলম্যান হাইরাম মুনসেরাত সহ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক শিতাংশু গুহ, লেখক সুব্রত বিশ্বাস, নাট্যাভিনেত্রী লুৎফুন্নাহার লতা, সাংবাদিক ফাহিম রেজা নূর ও মুজাহিদ আনসারীু, জনপ্রিয় শিল্পী মাকসুদ প্রমুখ। সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জোটের অন্যতম সংগঠক মিনহাজ আহমেদ এবং সম্মিলিতভাবে কবিতা আবৃতি করেন নজরুল কবীর, গোপন সাহা, পরভীন সুলতানা ও শুক্লা রায়। এছাড়া সমাবেশ স্থলে ছবি আঁকেন কার্টুনিষ্ট  টিপু আলম। সমাবেশে প্রবাসের শিল্পীরা একাধিক দেশের গানও পরিবেশন করেন।
সমাবেশে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বিশিষ্ট সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ ও নাজমুন নেসা পিয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের সমাপ্তি ঘটে।
সমাবেশে বক্তারা তাদের বক্তব্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কোন অপশক্তির সাথে সরকারের আপোষকামিতা দেশে ও প্রবাশে গণতন্ত্রমনা জনগণ মেনে নেবে না। ক্ষমতায় থাকার জন্য শুধু হেফাজতে ইসলাম-ই নয়, দেশের কোন মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের সাথে সরকারের নির্বাচনী জোটও আমরা মানবো না। বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দল বলেই আমরা এই সরকারের সমালোচনা করে সঠিক পথ দেখাতে চাই। আর সরকার যদি ভুল পথে চলে বা দেশকে ভুল পথে পরিচালিত করে তাহলে এজন্য জাতিকে চরম খেসারত দিতে হবে।
সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠকালে মিনহাজ আহমেদ বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে পরপর সংঘটিত দুটি ন্যক্কারজনক ঘটনায় দেশের সাধারণ মানুষসহ সারা বিশ্বের বাংলাদেশী কম্যুনিটিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম হয়েছে, তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ ও ঘৃণা প্রকাশ করা আবশ্যক বিবেচনা করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকা আজ আপনাদেরকে এখানে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ঘটনা দুটির প্রথমটি হলো শারীরিক নির্যাতনের শিকার নিরীহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্ছিত করা, নিরপেক্ষ তদন্তে প্রমাণিত অভিযুক্ত নির্যাতনকারীর জামিন মঞ্জুর করা এবং প্রমাণবিহীন মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে হয়রানি ও গ্রেফতার করা, এবং জামিন নামঞ্জুর করা। ন্যক্কারজনক অপর ঘটনাটি হলো ধর্মান্ধ মৌলবাদী অপশক্তির কাছে নতি স্বীকার করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ হতে ন্যায় বিচারের প্রতীক ভাস্কর্যটি অপসারণ করা।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল গঠিত সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সংঘটিত উপরোক্ত ঘটনা দুটিকে আপাতদৃষ্টি পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও সম্পর্কহীন মনে হলেও ঘটনা দুটির পিছনে যে একাত্তরের পরাজিত ঘাতক-দালাল-রাজাকারের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তির হাত রয়েছে, সেটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এই একই গোষ্ঠী কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে নিরীহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে শারীরিক নির্যাতনের শিকারে পরিণত করেছে। আমরা ভুলে যাইনি, এই একই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের প্রতীক ‘অপরাজেয় বাংলা’ ধংসের উদ্দেশ্যেও ব্যর্থ আক্রমণ করেছিল। পাকিস্তানী হানাদারদের দোসর এই গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসাবে পরিণত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে, চেষ্টা করছে দেশ জুড়ে একটি গোলযোগ সৃষ্টি করে একাত্তরের ঘাতক-দালাল-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দিতে।
এমন পরিস্থিতিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সমাবেশ থেকে-
* তীব্র ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি ঘটনা দুটির সাথে সম্পৃক্ত সরকারদলীয় ও দলবহির্ভূত ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি।
* নিরীহ নিরপরাধ শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের অবিলম্বে কারামুক্তি দাবি করছি।
* শ্যামল কান্তি ভক্তের উপর শারীরিক নির্যাতনকারী সেলিম উসমানের বিচার ও শাস্তি দাবি করছি, সাথে সাথে শ্যামল কান্তি ভক্তের উপর উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মামলাকারীর শাস্তি দাবি করছি।
* অনতিবিলম্বে ‘ন্যায় বিচারের প্রতীক’ শিল্পসিদ্ধ ভাস্কর্য প্রতিস্থাপন করার জন্য সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। সাথে সাথে নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনা দুটোর সাথে জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের আইনি বিচার শাস্তি দাবি করছি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার আহ্বান আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হই-
* বাংলাদেশে আইন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার,
* নৈতিকতা, মানবতা, শিষ্টাচার, ও দেশপ্রেমের পতন রোধ করার এবং
* একটি প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য।
আমরা সবাই মিলে শপথ করি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে আমরা কিছুতেই একটি ধর্মান্ধ মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হতে দেবো না।

যুক্তরাষ্ট্র উদীচী’র প্রতিবাদ: যুক্তরাষ্ট্র উদীচী’র পক্ষ থেকে প্রেীত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে- গভীর রাতে অতি গোপনীয়তার সাথে ‘ন্যায় বিচারের প্রতীক’ ভাস্কর্যটি হাতুড়ির আঘাতে ভেঙ্গে  ফেলার ঘটনাটি মুক্তিযুদ্ধকামী জনগনের হৃদয় ভেঙ্গে দেয়ার নামান্তর । বাংলা বর্ণমালা, সংস্কৃতি, ,  ঐতিহ্য, আত্মপরিচয়ের বহুমাত্রিক সংগ্রামে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র জনগনের এক রক্তাক্ত মুক্তিসংগ্রাম দেশ দুনিয়া কাঁপিয়েছিল। একথা মুক্তিযুদ্ধের অনুসারীরা  অস্বীকার করবে কোন মুখে? সাম্প্রদায়িকতাবাদী হেফাজতের কথিত মূর্তি যা বিশ্বজুডে ন্যায় বিচারের প্রতীক ভাস্কর্য তা অমর্যাদার সাথে অপসারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরাজয় ও সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের প্রতি নতি স্বীকার। আজকের হেফাজতে ইসলাম যা ’৭১ সনে ছিল নেজামে ইসলামী তথা  পাকবাহিনীর সহযোগী আল মুজাহিদ তাদের দাবিতে হাইকোর্টের ন্যায়বিচারের ভাস্কর্য অপসারণ আদর্শিক পশ্চাদপসারন। সাম্প্রদায়িক শক্তির চাপে নতি স্বীকার তথা এক আত্মঘাতি পদক্ষেপ।
বিবৃতিতে বলা হয়, লক্ষ্যনীয় যে একই যুক্তিতে পবিত্র ধর্মের অজুহাত  দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মৃতির মিনার শহীদ মিনার ৭ বার বর্বরভাবে ভেঙ্গেছিল পাকজান্তারা। মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন, লাখো শহীদ মিনার, শত শত ভাস্কর্য, পহেলা বৈশাখ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, একুশে ফেব্রুয়ারি, রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্তের জন্মমৃত্যু জয়ন্তী। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের গৌরব এগুলো বাঁচাতে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের অনুসারী সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং সকল মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মসহ তরুণ সমাজকে বহুমাত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার একান্ত আহ্বান জানাই।