নিউইয়র্কে বীচে ডুবে ২ বাংলাদেশীর অকাল মুত্যু

- প্রকাশের সময় : ০২:৪৭:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ অগাস্ট ২০২২
- / ৪৯ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: নিউইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়ার বাসিন্দা প্রবাসী আর্জু হায়দারের আর কিছুই নেই। একমাত্র সন্তান আফ্রিদ হায়দার (৩৫) তলিয়ে গেছে গভীর পানিতে। একই সাথে পানিতে তলিয়ে মারা গেছে আফ্রিদের শ্যালক বাশির আমিন (১৮)। আর জীবন মৃত্যুর সাথে পাল্লা লড়ছেন শ্যালিকা নাসরিন আমিন (২১)। রোববার (২৮ আগষ্ট) বিকেলে নিউইয়র্কের আপস্টেটে ক্যাটসকিলে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার আকস্মিকতায় কমিউিনিটতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিজ সন্তানের এমন মর্মন্তদ মৃত্যুতে তিনি, পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের গোমর কান্নায় এস্টোরিয়ার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সন্তানের হাতে শেষ বিদায় নেয়ার পরিবর্তে এখন নিজেই চির বিদায় জানাবেন একমাত্র সন্তানকে। রোববার সন্ধ্যায় আর্জু হায়দারের অস্পুর্ট বাকফাঁটা আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছিল পরিবেশ। অনেকেই ছুটে গেছেন তার বাড়িতে সমবেদনা জানাতে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সবাই ছিলেন বাকরুদ্ধ।
জানা গেছে, এস্টোরিয়ার বাসিন্দা আফ্রিদ হায়দার স্ত্রী, শাশুড়ী, শ্যালক, শালিকাকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন নিউইয়র্কের ক্যাটসকিলে। রোববার বিকেলে তারা সেখানকার একটি লেকে বেড়াতে যান। সেখানে প্রথমে আফ্রিদ পানিতে নামেন। যেখানে পানি ছিল পায় তিন ফুট। পানিতে হাটার এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই তিনি তলিয়ে যান গভীর পানিতে। এ সময় সেখানে দাঁড়ানো শ্যালক বাশির আমীন দুলাভাইকে উদ্ধার করতে ঝাপ দেন পানিতে। একই সময় তিনিও তলিয়ে যেতে থাকেন গভীর পানিতে। এই অবস্থায় আফ্রিদের শ্যালিকা নাসরিন আমীন ভাই ও ভগ্নিপতির পরিণতি চিন্তা করে নিজেই এগিয়ে যান তাদের সাহায্য করতে। একই ভাবে তিনিও তলিয়ে যান পানিতে।
অবস্থার ভয়াবহতায় শাশুড়ী রেহানা আমীন পানিতে নামলেও তিনি আটকা পড়েন সেখানে। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে লেকের পাশে দাঁড়ানো আফ্রিদের স্ত্রী সাহায্য চাইলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাৎক্ষনিকভাবে তিনি ৯১১ কল করলে সেখানে পুলিশ এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। প্রায় ৫০ মিনিট তল্লাসীর পর আফ্রিদি ও বাশিরকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। একই সময়ে উদ্ধার করা হয় নাসরিনকে। স্থানীয় একটি হাসপাতালে তাদের নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আফ্রিদি ও বাশিরকে মৃত ঘোষণা করেন। একই সময় লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়েছে নাসরিনকে। তার অবস্থাও সঙ্গীন। আফ্রিদির শাশুড়ীকেও হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তবে তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।
আফ্রিদ এস্টোরিয়ার বাসিন্দা। তার শশুড়বাড়ী নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের উপকন্ঠ বেলরোজে অবস্থিত। সেখান থেকেই তিনি শাশুড়ী, শ্যালক ও শালিকা নিয়ে পরিবার সহ বেড়াতে গিয়েছিলেন ক্যাটসকিলে।
অফ্রিদ গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিয়ে করেছিলেন। আগামী মাসে তাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী পালন করার কথা ছিল। এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত তাদের জানাজার সময় ঠিক করা হয়নি। আফ্রিদের বাড়ী বৃহত্তর নোয়াখালীর ফেনীতে। তার বাবা আর্জু হায়দার ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তখন আফ্রিদের বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর। এস্টোরিয়াতেই তিনি বেড়ে উঠেছিলেন।
ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে কমিউনিটির অনেকেই ছুটে যান আফ্রিদের এস্টোরিয়ার বাড়ীতে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি নেতা শরীফ লস্কর, নিশান রহিম আরো অনেকে। তাৎক্ষনিকভাবে বাড়ীতে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শরীফ লস্কর বলেন, অনেকেই এখন বিভিন্ন লেক ও বীচে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সাঁতার না জানলে পানিতে না নামতে তিনি আহŸান জানান সবার প্রতি। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)