হককথা ডেস্ক: ডলারসংকট, বিদেশভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, কৃচ্ছ সাধন নীতিÑএসবের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলার সময় এ মেলা হবে। মেলার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস লিংকস, এলএলসি (ইউবিবিএল)। কাজ পাওয়ার চার দিন আগে নিউইয়র্কে কম্পানি হিসেবে নিবন্ধন নেয় ইউবিবিএল।
ইউবিবিএলের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মেলার অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে প্রচার করা হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রধান অতিথি থাকবেন বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার কোনো ধারণাও নেই।’
ইপিবির ওয়েবসাইটে থাকা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারে আগামী ২৩ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর এই বাণিজ্য মেলা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নেবে সেগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের স্টলভাড়ার ২০ থেকে ৫০ শতাংশ ইপিবি ভর্তুকি হিসেবে দেবে। অন্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পাবে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি। বিজ্ঞপ্তিতে ৯ বর্গমিটারের একেকটি স্টলের ভাড়া তিন লাখ টাকা (প্রায় তিন হাজার ডলার)।
নিজেদের সাইটে এই বিজ্ঞপ্তি প্রচার করলেও ইপিবির পরিচালক (মেলা) আবু মোখলেছ আলমগীর হোসেন বলেন, ইপিবি এ মেলার আয়োজক নয়। ইপিবি শুধু বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আয়োজনের বিষয়ে জানতে ইউবিবিএলের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
ইউবিবিএল তাদের ওয়েবসাইটে অতিথিদের নাম, পদবিসহ মেলার প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক বিশ্বজিৎ সাহা বলেছেন, ‘আমি শুধু গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। বাকি আয়োজনের পুরো বিষয় ইপিবি দেখছে।’ তাঁর ওয়েবসাইট থেকে করা প্রচারে মন্ত্রীদের নাম ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তখন সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে থাকবেন। ফলে কয়েকজন মন্ত্রীকে এমনিতেই পাওয়া যাবে।’
মেলার আয়োজক কে, তা নিয়ে ইপিবি ও ইউবিবিএল রাখঢাক করলেও এ মেলায় ক্রেতা পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে দুই পক্ষই সন্দেহ প্রকাশ করেছে। বিশ্বজিৎ সাহা মনে করেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় মেলা তাঁদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হবে বলে মনে হচ্ছে না। মেলায় ক্রেতা পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইপিবির পরিচালক আবু মোখলেছ আলমগীর হোসেন।
ইপিবির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার নির্দেশে এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনকে উপলক্ষ করে এটা করা হচ্ছে। কারণ চলমান পরিস্থিতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া বিদেশ সফর বন্ধ রয়েছে। ফলে সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতে পারবেন না অনেকেই।
এই মেলার অতিথি হিসেবে নাম আছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের। তিনি গতকাল বলেন, ‘এ মেলা কতটা সাফল্য পাবে সেটা জানি না। তবে আমি ওই সময় জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে নিউ ইয়র্কে থাকব। তাই অধিবেশনের পাশাপাশি এ মেলায় অংশ নেব।’
মেলায় অংশ নিতে ইপিবি ৬৭টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে চিঠি দিয়েছে। মেলায় অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ইপিবিতে আবেদন করেছে ৩১টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) আবেদন করেছে ইউবিবিএলের কাছে।
শর্ত অনুযায়ী, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ দুজন মেলায় অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ জনের বেশি ব্যক্তি আবেদন করেছেন। ই-ক্যাব থেকে করেছেন আটজন। মেলায় তৈরি পোশাক, আইসিটি খাত, হিমায়িত ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, ফুড ও বেভারেজ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হ্যান্ডলুম ও হ্যান্ডিক্রাফট পণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা অংশ নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক বলেন, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে ক্রেতা পাওয়া যতটা সহজ আমেরিকায় ততটা সহজ নয়। সেখানে রপ্তানি করতে অনেক শর্ত মানতে হয়। আর এই বৈশ্বিক সংকটের সময়ে নিউইয়র্কে মেলা করে খুব একটা লাভ হবে না। সূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ