নিউইয়র্ক ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্কে প্রবাসী নাগরিক সম্বর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : ভোটারদের মন জয় করেই আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে হবে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৫৮:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • / ৯৯৮ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে দলের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, দলের মন্ত্রী-এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কাজ-কর্ম আর আচার-ব্যবহার দিয়ে জনগণের মন জয় করে, ভোটারদের বিশ্বাস-আস্থা আর্জন করে ভোট আদায় করতে হবে। তানাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না। তিনি বলেন, বড় বড় গড়ি-বাড়ি হলেই মানুষ ভোট দেবে না। প্রধানমন্ত্রী বিগত দিনের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে গণবিরোধী সরকার হিবেবে পুনরুল্লেখ করে বলেন, তারা জনগণের সরকার ছিলো না বলেই ক্ষমতায় থাকাকালে মানুষ খুন করেছে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, দূর্নীতি করেছে। আর দূর্নীতির কারণেই খালেদা জিয়া আইনগতভাবে তা মোকাবেলা করতে পারবে না বলেই আদালত থেকে বার বার সময় নিয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা মানেই উন্নতি-অগ্রগতি, আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকা মানেই লুটপাট, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস। তিনি বলেন, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করাই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য।
জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সম্মানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘প্রবাসী সম্বর্ধণা সভায়’ তিনি ভাষণদানকালে আরো বলেন, একাত্তুরের বাংলাদেশী শরণার্থীদের কথা মনে করে আর মানবিক দি বিবেচনা করেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। কেননা, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে শত্রুতা নয়, বন্ধুত্ব চায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যদি দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে ৫/৬ লাখ রোহিঙ্গাকে থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা করতে হবে। তবে মায়ানমারকে নিপিড়ন-নির্যাতন বন্ধ করে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের স্ব সম্মানে ফিরিয়ে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশ জাতিসংঘ এবং ওআইসি সহ আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। খবর ইউএনএ’র।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটানাস্থ বিলাশবহুল ম্যারিয়ট মারর্কাস হোটেলের বলরুমে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই সম্বর্ধণা সভার আয়োজন করা হয়। এদিন জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকান্ডে যোগদান শেষে রাত ৯টা ৫৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী এই সভায় যোগ দেন। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ৩৯ মিনিটের ভাষণে তার সরকারের বিভিন্ন বিভিন্ন কর্মকান্ড সহ জাতিসংঘ, রোহিঙ্গা সঙ্কট, বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের কর্মকান্ড এবং আগামী নির্বাচনে জয়ের জন্য দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রবাসীদের করণীয় তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ।
সভায় প্রধানন্ত্রীর পুত্র ও আইটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় বক্তব্য রাখলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমএইচ মোহাম্মদ আলী এমপি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী এমপি ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনেদ আহমেদ এমপি সহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন।
সভার শুরুই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিঠক থেকে পাঠ করা হয়। এছাড়া জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের খতিব মওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিজবুর রহমান সহ সকল শহীদের বিদেহী আতœার শান্তি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করেন। এরপর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্র নাথ রায়, শহীদ হাসান ও ফকির আলমগীরের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আইরিন পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক যথাক্রমে ফারুক আহমেদ, আব্দুল হাসিব মামুন, মহিউদ্দিন দেওয়ান, আব্দুর রহিম বাদশা ও চন্দন দত্ত, প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম, জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস, আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহ বখতিয়ার, উপ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মালেক, আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরী, হিন্দাল কাদির বাপ্পা, মুজিবুল মওলা, আলী হোসেন গজনবী, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হারুল ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, ওয়াশিংটন মেট্রো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী বাকী, মেরিল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সেলিম, ভার্জিনিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিক পারভেজ, নিউইয়র্ক সিটি আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহনাজ মমতাজ, জাতীয় শ্রমিক লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকন, যুুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসবক লীগ সভাপতি নূরুজ্জামান সরদার ও যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ্যম যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের মধ্যে বিভক্তি থাকার কারণে সভায় যুবলীগের কাউকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখার সুযোগ দেয়া হয়নি।
সভায় উপস্থিত হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকান্ডে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করার পর ক্লান্তিতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এই সভায় এসে আপনাদের দেখে আমার কান্তি দূর হয়ে গেছে। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সহ স্বাধীনতা যুদ্ধ আর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, আপনাদের সমর্থনই আমাতের জন্য প্রেরণা। তিনি আগামী নির্বাচনে নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের যোগ্য প্রার্থীদের ভোট দেয়ার জন্য প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের এক পর্যায়ে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা শ্লোগান তুললে প্রধানমন্ত্রী তাদের শ্লোগান বন্ধ করা আহ্বান জানিয়ে বলেন, শ্লোগান দিয়ে নয় মানুষের মন জয় করেই নির্বাচনে জয়ী হতে হবে। এপ্রসঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানার কণ্যা বৃটিশ এমপি টিউলিপের বিজয়ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিউলিপের আসনে একজন অস্কার বিজয়ী প্রথমে কয়েকশ ভোটে জয় লাভ করলেও পরবর্তীতে টিউলিপ তাকে ১১ ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত করে জয়লাভ করে এমপি হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় টিউলিপ ১৬ হাজার ভোটের ব্যাবধানে তার প্রতিদ্বন্দ্বিকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্টের স্মৃতিচারণ করে বলেন, মাত্র সাড়ে বছর সময়ে ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু যেভাভে একটি বিধ্বস্ত দেশ গড়েছেন, আইন প্রণয়ন করেছেন, সংবিধান রচনা করেছেন এমন নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত জিয়া সরকার স্বাধীনতার চেতনা ভুলন্ঠিত করে, স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসিত করে। তিনি বলেন, জিয়া সরকার আমাকে দেশে আসতে বাঁধা দিয়েছে, আমার পাসপোর্ট রিনিউ করতে দেয়নি। কিন্ত বাংলাদেশের জনগণ আর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে জিয়া সরকার পরবর্তীতে আমাকে দেশে ঢুকতে দিতে বাধ্য হয়। আমার অনুপস্থিতেই ৮১ সালে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনার চেতরায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পথ ধরেই আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করছে এবং আগামীতেও সঠিক নেতৃত্বেও মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করে সোনার বাংলা আর ডিজটার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এজন্য তিনি দেশবাসী ও প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

নিউইয়র্কে প্রবাসী নাগরিক সম্বর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : ভোটারদের মন জয় করেই আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে হবে

প্রকাশের সময় : ০২:৫৮:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নিউইয়র্ক: প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে দলের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, দলের মন্ত্রী-এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কাজ-কর্ম আর আচার-ব্যবহার দিয়ে জনগণের মন জয় করে, ভোটারদের বিশ্বাস-আস্থা আর্জন করে ভোট আদায় করতে হবে। তানাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না। তিনি বলেন, বড় বড় গড়ি-বাড়ি হলেই মানুষ ভোট দেবে না। প্রধানমন্ত্রী বিগত দিনের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে গণবিরোধী সরকার হিবেবে পুনরুল্লেখ করে বলেন, তারা জনগণের সরকার ছিলো না বলেই ক্ষমতায় থাকাকালে মানুষ খুন করেছে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, দূর্নীতি করেছে। আর দূর্নীতির কারণেই খালেদা জিয়া আইনগতভাবে তা মোকাবেলা করতে পারবে না বলেই আদালত থেকে বার বার সময় নিয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা মানেই উন্নতি-অগ্রগতি, আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকা মানেই লুটপাট, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস। তিনি বলেন, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করাই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য।
জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সম্মানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘প্রবাসী সম্বর্ধণা সভায়’ তিনি ভাষণদানকালে আরো বলেন, একাত্তুরের বাংলাদেশী শরণার্থীদের কথা মনে করে আর মানবিক দি বিবেচনা করেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। কেননা, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে শত্রুতা নয়, বন্ধুত্ব চায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যদি দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে ৫/৬ লাখ রোহিঙ্গাকে থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা করতে হবে। তবে মায়ানমারকে নিপিড়ন-নির্যাতন বন্ধ করে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের স্ব সম্মানে ফিরিয়ে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশ জাতিসংঘ এবং ওআইসি সহ আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। খবর ইউএনএ’র।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটানাস্থ বিলাশবহুল ম্যারিয়ট মারর্কাস হোটেলের বলরুমে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই সম্বর্ধণা সভার আয়োজন করা হয়। এদিন জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকান্ডে যোগদান শেষে রাত ৯টা ৫৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী এই সভায় যোগ দেন। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ৩৯ মিনিটের ভাষণে তার সরকারের বিভিন্ন বিভিন্ন কর্মকান্ড সহ জাতিসংঘ, রোহিঙ্গা সঙ্কট, বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের কর্মকান্ড এবং আগামী নির্বাচনে জয়ের জন্য দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রবাসীদের করণীয় তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ।
সভায় প্রধানন্ত্রীর পুত্র ও আইটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় বক্তব্য রাখলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমএইচ মোহাম্মদ আলী এমপি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী এমপি ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনেদ আহমেদ এমপি সহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন।
সভার শুরুই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিঠক থেকে পাঠ করা হয়। এছাড়া জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের খতিব মওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিজবুর রহমান সহ সকল শহীদের বিদেহী আতœার শান্তি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করেন। এরপর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্র নাথ রায়, শহীদ হাসান ও ফকির আলমগীরের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আইরিন পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক যথাক্রমে ফারুক আহমেদ, আব্দুল হাসিব মামুন, মহিউদ্দিন দেওয়ান, আব্দুর রহিম বাদশা ও চন্দন দত্ত, প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম, জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস, আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহ বখতিয়ার, উপ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মালেক, আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরী, হিন্দাল কাদির বাপ্পা, মুজিবুল মওলা, আলী হোসেন গজনবী, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হারুল ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, ওয়াশিংটন মেট্রো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী বাকী, মেরিল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সেলিম, ভার্জিনিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিক পারভেজ, নিউইয়র্ক সিটি আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহনাজ মমতাজ, জাতীয় শ্রমিক লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকন, যুুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসবক লীগ সভাপতি নূরুজ্জামান সরদার ও যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ্যম যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের মধ্যে বিভক্তি থাকার কারণে সভায় যুবলীগের কাউকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখার সুযোগ দেয়া হয়নি।
সভায় উপস্থিত হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকান্ডে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করার পর ক্লান্তিতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এই সভায় এসে আপনাদের দেখে আমার কান্তি দূর হয়ে গেছে। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সহ স্বাধীনতা যুদ্ধ আর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, আপনাদের সমর্থনই আমাতের জন্য প্রেরণা। তিনি আগামী নির্বাচনে নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের যোগ্য প্রার্থীদের ভোট দেয়ার জন্য প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের এক পর্যায়ে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা শ্লোগান তুললে প্রধানমন্ত্রী তাদের শ্লোগান বন্ধ করা আহ্বান জানিয়ে বলেন, শ্লোগান দিয়ে নয় মানুষের মন জয় করেই নির্বাচনে জয়ী হতে হবে। এপ্রসঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানার কণ্যা বৃটিশ এমপি টিউলিপের বিজয়ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিউলিপের আসনে একজন অস্কার বিজয়ী প্রথমে কয়েকশ ভোটে জয় লাভ করলেও পরবর্তীতে টিউলিপ তাকে ১১ ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত করে জয়লাভ করে এমপি হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় টিউলিপ ১৬ হাজার ভোটের ব্যাবধানে তার প্রতিদ্বন্দ্বিকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্টের স্মৃতিচারণ করে বলেন, মাত্র সাড়ে বছর সময়ে ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু যেভাভে একটি বিধ্বস্ত দেশ গড়েছেন, আইন প্রণয়ন করেছেন, সংবিধান রচনা করেছেন এমন নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত জিয়া সরকার স্বাধীনতার চেতনা ভুলন্ঠিত করে, স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসিত করে। তিনি বলেন, জিয়া সরকার আমাকে দেশে আসতে বাঁধা দিয়েছে, আমার পাসপোর্ট রিনিউ করতে দেয়নি। কিন্ত বাংলাদেশের জনগণ আর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে জিয়া সরকার পরবর্তীতে আমাকে দেশে ঢুকতে দিতে বাধ্য হয়। আমার অনুপস্থিতেই ৮১ সালে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনার চেতরায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পথ ধরেই আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করছে এবং আগামীতেও সঠিক নেতৃত্বেও মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করে সোনার বাংলা আর ডিজটার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এজন্য তিনি দেশবাসী ও প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করেন।