নিউইয়র্কে জাকির খান হত্যা মামলায় ঘাতক মাহরানের ১৫ বছরের জেল

- প্রকাশের সময় : ০৭:৩৯:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৯
- / ৩৬০ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: নিউইয়র্কে ব্রঙ্কসে বাড়ীর মালিক আর ভাড়াটিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতে নিহত কমিউনটির পরিচিত মুখ ও বাংলাদেশী-আমেরিকান রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী জাকির খান হত্যা মামলার রায়ে ঘাতক তাহার মাহরান (৫১)-কে ব্রঙ্কস সুপ্রীম কোর্টের মাননীয় আদালত ১৫ বছরের জেল ভোগের রায় দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তাকে ১০ বছর কারাগারে কাটাতে হবে এবং ৫ বছর প্রবেশনে থাকবে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ব্রঙ্কসে বাংলাদেশী অধ্যুষিত থ্রগসনেক এলাকার ভাড়া বাসার সামনে বাড়ীর মালিক মিসরীয় বংশোদ্ভূত তাহার মাহরান (৫১)-এর উপর্যুপরি ছুরিকাতে জাকির খান (৪৪) গুরুতর আহত হওয়ার পর তাকে স্থানীয় জ্যাকোবী হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার অকাল মৃত্যুতে কমিউনিটতে শোকের ছায়া নেমে আসার পাশাপাশি মর্মান্তিক এই ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। নয় মাস বাসা ভাড়া না দেয়ায় ক্ষুব্ধ বাড়িওয়ালা মাহরান এই হত্যাকান্ড ঘটায় বলে জানা যায়। পরবর্তীতে ঐদিনই পুলিশ মাহরানকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘাতক তাহার মাহরান
এদিকে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী রোববার জাকিরের মরদেহ সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে তার গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে মরহুম জাকিরের মা-বাবার কবরের পাশেই তার মরদেহ দাফন করা হয়। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার বাদ জুমা দুপুর দু’টায় ব্রঙ্কসের ভার্জিনিয়া এভিনিউর পার্কচেস্টার জামে মসজিদে জাকির খানের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ব্রঙ্কস তথা নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে স্মরণকালের বৃহৎ এ জানাজায় শতসহস্র লোক অংশ নেন। মূলধারার রাজনীতিক সহ নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী নের্তৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের প্রবাসীরা জাকির খানের জানাজায় উপস্থিত হয়ে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। জানাজা শেষে বিকেল প্রায় পাঁচটার দিকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে জাকির খানের মরদেহ জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিমানবন্দরে তার পরিবারের সদস্য ছাড়াও বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। কফিনে মোড়ানো মরদেহ বিমানে করে দেশে পাঠানোর আগে জাকির খানকে শেষ বিদায় জানাতে গিয়ে অনেকেই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।
বিমানবন্দরে মরদেহ গ্রহণের নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুক্রবার রাত ১১ টায় এ্যামিরাটস এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইটে জাকির খানের মরদেহ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করে। জাকির খানের ছোট ভাই নিয়াজ খান তার মরদেহের সাথে ছিলেন। ৭ ভাই ৫ বোনের মধ্যে তার তিন ভাই বাংলাদেশে বসবাস করেন।
যেভাবে নিহত হন জাকির: জাকির খানের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, হত্যাকান্ডের দিন জাকির খান অন্যান্য দিনের মত কাজ শেষে ব্রঙ্কসের লোগান এবং বারকলি এভিনিউর ভাড়া বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই সময় বাড়ির মালিক জাকির খানকে ছুরিকাঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বাড়ীর মালিক নিজেই চিৎকার করে পুলিশে খবর দিতে বলেন। পুলিশ এবং এম্বুলেন্স দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আহত জাকির খানকে উদ্ধার করে নিকটস্থ জ্যাকবি হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যান। চিকিৎসাবস্থায় জাকির খানের মৃত্যু হয়। জাকির খানের মরদেহ পোস্টমর্টেম শেষে পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে পার্কচেস্টার জামে মসজিদের হিমাঘারে রাখা হয়।
জাকির খানের বাড়ির মালিক মিসরীয় বংশোদ্ভূত তাহার মাহরানকে পুলিশ ঘটনারদিন অর্থাৎ বুধবার রাতেই গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারের পর থেকেই তিনি কারাগারে আটক ছিলেন। এলাকাবাসীর মতে, বাড়ী ভাড়া নিয়ে বছর খানেক ধরে বাড়ির মালিকের সঙ্গে জাকির খানের বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি পুলিশ এবং আদালত পর্যন্ত গড়ায়। জাকির খানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শত শত প্রবাসী বাংলাদেশী জ্যাকবি হাসপাতালে ভীড় জমান। কমিউনিটিতে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাংলাদেশী কমিউনিটির নের্তৃবৃন্দ এ হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
কে এই জাকির খান: সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের সন্তান জাকির খান ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে আসেন। নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে বসবাস শুরু করেন। জাকির খান নিউইয়র্কে এসে পড়াশুনা শেষ করে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি ব্রঙ্কসে শীর্ষ স্থানীয় রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী হিসেবে কমিউনিটিতে পরিচিত লাভ করেন। নিউইয়র্কের ডেইলী নিউজ পত্রিকায় তাকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি তাকে ‘কিং অব রিয়েল এস্টেট অব ব্রঙ্কস‘ নামে অভিহিত করে। জাকির খান মূলধারার পাশাপাশি কমিউনিটির নানা সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনীতে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ডে’ পালনের অন্যত উদ্যোক্তাও ছিলেন তিনি। জাকির খানের স্ত্রী ন্যান্সী খান একজন সঙ্গীত শিল্পী। জাকির খানের ১৩ বছর বয়সী এক মেয়ে এবং দশ ও সাত বছর বয়সী দুই ছেলে রয়েছে। তারা স্কুলে যাচ্ছে। পিতাকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল এ তিন শিশু। জাকির খানের পিতা মরহুম এজামত খান। তার মাও বেঁচে নেই।