নিউইয়র্ক ১১:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্কের সাবওয়ে পানিতে সয়লাব

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:১৯:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৪
  • / ১১৮৪ বার পঠিত

নিউইয়র্ক সিটির অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত ব্রঙ্কসের ৬ ট্রেন। ব্রুকলীন থেকে ব্রঙ্কসের এই ট্রেনটি নিউইয়র্কবাসী ও যাত্রীদের কাছে প্রয়োজনীতার প্রধান কারণ হচ্ছে ম্যানহাটনের ২৫ স্ট্রীট, ফিফটি নাইন লেক্সিংটন এভিনিউ এবং মিডটাউনের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল হয়ে ব্রুকলীন-ব্রঙ্কস রুটে চলাচল করে। বলা যায় কুইন্স’সহ অন্যান্য এলাকায় কর্মরতরাও সিক্স ট্রেনে যাতায়াত করতে পারেন নির্ভিঘেœ। কিন্তু বিধি বাম। গেল ২১ নভেম্বর শুক্রবার মধ্যরাত সাড়ে ১১টার দিকে ম্যানহাটনের ১১০ স্ট্রীটে এসে থমকে যায় ব্রঙ্কসগামী ট্রেনটি। দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে ট্রেনে অবস্থানরত শত শত যাত্রী। প্রথম দিকে কিছুটা আশা থাকলেও প্রায় ১ঘন্টা পর এমটিএর পক্ষ থেকে জানানো হয় ব্রঙ্কসগামী ৬ ট্রেন আর সামনে যেতে পারছে না। কারন হিসেবে জানানো হয়, রাতে হঠাৎই ৬ সাবওয়ের ১৪৩ স্টেশনের ওপরের বড় পানির লাইন ভেঙ্গে ঢুকেপড়া পানিতে সয়লাব হয়ে যায় ট্রেন লাইনের অনেকটা অংশ। এসময় থার্ড এভিনিউ স্টেশন থেকে হান্টস পয়েন্ট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা আসে।
খবর শুনে অনেকেই থমকে যায়। ট্রেনে অবস্থানকারি শত-শত যাত্রী শঙ্কায় পড়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছা নিয়ে। যদিও বিকল্প হিসেবে সাবওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে ৫ ট্রেন, ২ ট্রেন বিএক্স ১৯ বাস এবং হান্টস পয়েন্ট থেকে সাটল বাসের রুটের তথ্য জানানো হয়। উল্লেখ্য, ৬ ট্রেন লাইনে বাংলাদেশী অধ্যুষিত পার্কচেস্টার ও ক্যাসেল হীল হওয়ায় উক্ত ট্রেনে অসংখ্য বাংলাদেশীও ছিলো। রাতের কাজ শেষে ঘরে ফেরা এসব যাত্রীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়ে। যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নতুন। এমটিএর নির্দেশনামূল ভাষা বুঝতেও সমস্যা হয় অনেকের।
১১০ স্ট্রীট থেকে কেউবা আবার পায়ে হেঁটে চলে গেছেন ১২৫ স্ট্রীটে। এর মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় টিকিট সরবরাহ করে সাবওয়ে কর্তৃপক্ষ। ৫ ট্রেন, সাটল বাস কিংবা বিএক্স ১৯ বাসে এই টিকিট ব্যবহার করে যাত্রীরা। যাত্রীদের ঘরে ফেরা নির্বিঘœ করতে সবধরণের প্রয়োজনীয় এবং জরুরী ব্যবস্থা হাতে নেয় এমটিএ কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবারের সেই ঘটনায় উক্ত ট্রেনের যাত্রী ছিলো এই প্রতিবেদকও। কথা হয় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশীর সাথে। যাদের বেশীরভাগই গন্তব্য ছিলো পার্কচেস্টার, ক্যাসেল হীল, ঝেরেগা, ওয়েস্টচেস্টার ইস্ট ট্রিমন্ট এভিনিউ’সহ আশ-পাশের এলাকা। একমাত্র প্রতিবেদকের গন্তব্য ছিল ৬ ট্রেনের শেষ মাথা। প্রতিবেদককে অনেকেই বলেন, ‘আসলে আমরা ট্রেন বিড়ম্বনায় আরো অনেক সময় পড়েছি। তবে, আজকের এই ঘটনায় এবছরের সবচে বড় ডিজাস্টার বলে মনে হচ্ছে। অপেক্ষা, সময় নষ্ট এবং নির্ঘুম রাত কাটানোর প্রতিকুলতা এই প্রথম মোকাবেলা করলাম। সত্যি বলতে এমটিএ কর্তৃপক্ষ আমাদের দিকনির্দেশনামূলক সহায়তা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেরই সকালে কাজে যেতে হবে। কেউ টেক্সি চালাচ্ছি। বলতে পারেন এই ঘটনায় আমাদের অনেক ভুগিয়েছে। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন এখনো পার্কচেস্টার পৌঁছায়নি প্রায় রাত দুটো বেজে গেছে’। এভাবেই বাংলাদেশী বেশীরভাগ তাদের যাত্রা পথের তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং দুর্বিসহ যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন।
শুক্রবারের ঘটনার পরবর্তী সময়ে হান্টস পয়েন্ট থেকে ছেড়ে যাওয়া ৬ ট্রেন পেহলাম বে পার্ক পৌঁছাতে ততক্ষণে ২.৪৫ বেজে যায়। পরের দিন শনিবারও একই অবস্থায় বিশেষ সাটল বাস এবং ২ এবং ৫ ট্রেনে করে যাতায়াত করেন। ১২৫ থেকে হান্টস পয়েন্ট পর্যন্ত ৬ ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিলো। ফলে এই লাইনে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। শনিবার ও রোববার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অফিসগামীদের চাপ কম থাকলেও বিনোদন তথা অন্যান্য কাজে ঘর থেকে বের হওয়া সাধারণ যাত্রীরা বিপাকে পড়েন এই ট্রেন বিড়ম্বনায়।
উল্লেখ্য, জরুরী মেরামতের পর দুই দিনের বিপর্যয় কাটিয়ে ৬ ট্রেনের চলাচল স্বাভাবিক হয় রোববার। এমটিএর কর্মীরা দুই দিনের চেষ্টায় পানি ঢুকে পড়ার ভাঙ্গা অংশ মেরামত করতে সমর্থ হন। এসময় তারা লাইন থেকে প্রায় ৮ লাখ গ্যালন পানি অপসারণ করেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে কি কারণে স্টেশনের ঐ পানি সরবরাহ লাইন ভেঙ্গেছে তা জানায় নি কর্তৃপক্ষ।   সোমবার থেকে ৬ ট্রেনের চলাচল নির্বিঘœ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। ঐ লাইনের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর বসবাস হওয়ায় দৈনন্দিন চলাচলকারী সেসব বাংলাদেশীরা ভোগান্তিতে পড়েন তাদের মনেও আশার সঞ্চার ঘটে। (বাংলা পত্রিকা)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

নিউইয়র্কের সাবওয়ে পানিতে সয়লাব

প্রকাশের সময় : ০৬:১৯:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৪

নিউইয়র্ক সিটির অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত ব্রঙ্কসের ৬ ট্রেন। ব্রুকলীন থেকে ব্রঙ্কসের এই ট্রেনটি নিউইয়র্কবাসী ও যাত্রীদের কাছে প্রয়োজনীতার প্রধান কারণ হচ্ছে ম্যানহাটনের ২৫ স্ট্রীট, ফিফটি নাইন লেক্সিংটন এভিনিউ এবং মিডটাউনের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল হয়ে ব্রুকলীন-ব্রঙ্কস রুটে চলাচল করে। বলা যায় কুইন্স’সহ অন্যান্য এলাকায় কর্মরতরাও সিক্স ট্রেনে যাতায়াত করতে পারেন নির্ভিঘেœ। কিন্তু বিধি বাম। গেল ২১ নভেম্বর শুক্রবার মধ্যরাত সাড়ে ১১টার দিকে ম্যানহাটনের ১১০ স্ট্রীটে এসে থমকে যায় ব্রঙ্কসগামী ট্রেনটি। দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে ট্রেনে অবস্থানরত শত শত যাত্রী। প্রথম দিকে কিছুটা আশা থাকলেও প্রায় ১ঘন্টা পর এমটিএর পক্ষ থেকে জানানো হয় ব্রঙ্কসগামী ৬ ট্রেন আর সামনে যেতে পারছে না। কারন হিসেবে জানানো হয়, রাতে হঠাৎই ৬ সাবওয়ের ১৪৩ স্টেশনের ওপরের বড় পানির লাইন ভেঙ্গে ঢুকেপড়া পানিতে সয়লাব হয়ে যায় ট্রেন লাইনের অনেকটা অংশ। এসময় থার্ড এভিনিউ স্টেশন থেকে হান্টস পয়েন্ট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা আসে।
খবর শুনে অনেকেই থমকে যায়। ট্রেনে অবস্থানকারি শত-শত যাত্রী শঙ্কায় পড়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছা নিয়ে। যদিও বিকল্প হিসেবে সাবওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে ৫ ট্রেন, ২ ট্রেন বিএক্স ১৯ বাস এবং হান্টস পয়েন্ট থেকে সাটল বাসের রুটের তথ্য জানানো হয়। উল্লেখ্য, ৬ ট্রেন লাইনে বাংলাদেশী অধ্যুষিত পার্কচেস্টার ও ক্যাসেল হীল হওয়ায় উক্ত ট্রেনে অসংখ্য বাংলাদেশীও ছিলো। রাতের কাজ শেষে ঘরে ফেরা এসব যাত্রীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়ে। যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নতুন। এমটিএর নির্দেশনামূল ভাষা বুঝতেও সমস্যা হয় অনেকের।
১১০ স্ট্রীট থেকে কেউবা আবার পায়ে হেঁটে চলে গেছেন ১২৫ স্ট্রীটে। এর মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় টিকিট সরবরাহ করে সাবওয়ে কর্তৃপক্ষ। ৫ ট্রেন, সাটল বাস কিংবা বিএক্স ১৯ বাসে এই টিকিট ব্যবহার করে যাত্রীরা। যাত্রীদের ঘরে ফেরা নির্বিঘœ করতে সবধরণের প্রয়োজনীয় এবং জরুরী ব্যবস্থা হাতে নেয় এমটিএ কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবারের সেই ঘটনায় উক্ত ট্রেনের যাত্রী ছিলো এই প্রতিবেদকও। কথা হয় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশীর সাথে। যাদের বেশীরভাগই গন্তব্য ছিলো পার্কচেস্টার, ক্যাসেল হীল, ঝেরেগা, ওয়েস্টচেস্টার ইস্ট ট্রিমন্ট এভিনিউ’সহ আশ-পাশের এলাকা। একমাত্র প্রতিবেদকের গন্তব্য ছিল ৬ ট্রেনের শেষ মাথা। প্রতিবেদককে অনেকেই বলেন, ‘আসলে আমরা ট্রেন বিড়ম্বনায় আরো অনেক সময় পড়েছি। তবে, আজকের এই ঘটনায় এবছরের সবচে বড় ডিজাস্টার বলে মনে হচ্ছে। অপেক্ষা, সময় নষ্ট এবং নির্ঘুম রাত কাটানোর প্রতিকুলতা এই প্রথম মোকাবেলা করলাম। সত্যি বলতে এমটিএ কর্তৃপক্ষ আমাদের দিকনির্দেশনামূলক সহায়তা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেরই সকালে কাজে যেতে হবে। কেউ টেক্সি চালাচ্ছি। বলতে পারেন এই ঘটনায় আমাদের অনেক ভুগিয়েছে। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন এখনো পার্কচেস্টার পৌঁছায়নি প্রায় রাত দুটো বেজে গেছে’। এভাবেই বাংলাদেশী বেশীরভাগ তাদের যাত্রা পথের তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং দুর্বিসহ যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন।
শুক্রবারের ঘটনার পরবর্তী সময়ে হান্টস পয়েন্ট থেকে ছেড়ে যাওয়া ৬ ট্রেন পেহলাম বে পার্ক পৌঁছাতে ততক্ষণে ২.৪৫ বেজে যায়। পরের দিন শনিবারও একই অবস্থায় বিশেষ সাটল বাস এবং ২ এবং ৫ ট্রেনে করে যাতায়াত করেন। ১২৫ থেকে হান্টস পয়েন্ট পর্যন্ত ৬ ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিলো। ফলে এই লাইনে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। শনিবার ও রোববার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অফিসগামীদের চাপ কম থাকলেও বিনোদন তথা অন্যান্য কাজে ঘর থেকে বের হওয়া সাধারণ যাত্রীরা বিপাকে পড়েন এই ট্রেন বিড়ম্বনায়।
উল্লেখ্য, জরুরী মেরামতের পর দুই দিনের বিপর্যয় কাটিয়ে ৬ ট্রেনের চলাচল স্বাভাবিক হয় রোববার। এমটিএর কর্মীরা দুই দিনের চেষ্টায় পানি ঢুকে পড়ার ভাঙ্গা অংশ মেরামত করতে সমর্থ হন। এসময় তারা লাইন থেকে প্রায় ৮ লাখ গ্যালন পানি অপসারণ করেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে কি কারণে স্টেশনের ঐ পানি সরবরাহ লাইন ভেঙ্গেছে তা জানায় নি কর্তৃপক্ষ।   সোমবার থেকে ৬ ট্রেনের চলাচল নির্বিঘœ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। ঐ লাইনের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর বসবাস হওয়ায় দৈনন্দিন চলাচলকারী সেসব বাংলাদেশীরা ভোগান্তিতে পড়েন তাদের মনেও আশার সঞ্চার ঘটে। (বাংলা পত্রিকা)