নিউইয়র্ক ০৭:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্কের ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলাম জামিনে মুক্ত

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:০৭:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০১৭
  • / ৯১৩ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: গৃহকর্মী নির্যাতনের কথিত অভিযোগ সহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত নিউইয়র্কে গ্রেফতার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলাম জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা আটট ২০ মিনিটে তিনি সিটির ব্রঙ্কস বরোস্থ ভারমন সি কারেকশন সেন্টার থেকে মুক্ত হন তিনি। কনসাল জেনারেল শামীম আহসান তার মুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলামের মুক্তির সময় কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, কনস্যুলেটের প্রথম সচিব শামীম হোসেন এবং তৃতীয় সচিব আসিব আহমেদ সহ শাহেদুল ইসলামের কয়েকজন আতœীয়-স্বজন ভারমন সি কারেকশন সেন্টারের গেটের সমানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কনসাল জেনারেল শামীম আহসান সহ কনস্যুলেটের একাধিক কর্মকর্তা কারেকশন সেন্টারে প্রবেশ করেন এবং শাহেদুল ইসলামের জামিনের বিষয়টি তদারকি করেন। খবর ইউএনএ’র।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্বাবধানে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও নিউইয়র্কে কনস্যুলেট জেনারেলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় প্রায় ৩৬ ঘন্টা পর শাহেদুল ইসলাম মুক্ত হন। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি কনস্যুলেটের গাড়ীতে চড়ে সরাসরি বাসায় ফিরে যান বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার বিকেলে ভারমন সি কারেকশন সেন্টারের গেটের সামনে এই প্রতিবেদক সহ একাধিক মিডিয়ার প্রতিনিধিকে কনসাল জেনারেল শামীম আহসান ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলামের গ্রেফতার ও জামিনের বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত বছরের মে’তে শাহেদুল ইসলামের বাসা থেকে রুহুল আমীন (মামলার বাদী) নিরদ্দেশ হন। এ ব্যাপারে নিউইয়র্ক কনস্যুলেট অফিস থেকে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে অবহিত করা হয়েছিল। এসময় সেখানে অপেক্ষমান শাহেদুল ইসলামের আতœীয় পরিচয়দানকারী নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র সভাপতি ডা. মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ মিডিয়ার কাছে দাবী করে বলেন, শাহেদুল ইসলাম ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। আর এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেরর ভাবমূর্তি দারুনভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকারী উদ্যোগে নয়, আমরাই ব্যক্তিগতভাবে জামিনের অর্থ যোগান দিয়েছি।
শাহেদুল ইসলামের চাচা পরিচয়দানকারী মোস্তফা কামাল মিলটন বলেন, আমরা ছোট বেলা থেকেই রুহুল আমীন (শাহেদুল ইসলামের গৃহকর্মী, মামলার বাদী) চিনতাম। সে শাহেদুল ইসলামের বাড়ীতেই বড় হয়েছে এবং তার লেখাপড়ারও খরচ বহন করা হয়েছে। এক পর্যায়ে রুহল আমীন শাহেদুল ইসলামের পরিবারের সদস্যই হয়ে যায়। পরবর্তীতে রুহুল আমীনের অনুরোধে শাহেদুল নিউইয়র্কে তার বাসার কাজের লোক হিসেবে সরকারী উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে আসে। তিনি বলেন, রুহুল আমীন শাহেদুল ইসলামের বাসায় কাজ করার বিনিময়ে অর্থ দিয়ে দেশে বাড়ী করেছেন। তিনি দাবী করেন ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা।
ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলামকে গ্রেফতার ও জামিন প্রসঙ্গে বাংলাদেশী-আমেরিকান এটর্নী মঈন চৌধুরী ভারমন সি কারেকশন সেন্টারের গেটের সামনে এই প্রতিবেদকে বলেন, আমি শাহেদুল ইসলামের এটর্ণী নই, তবে একজন বাংলাদেশী-আমেরিকান হিসেবে তার খোঁজ-খবর নিতেই এখানে এসেছিলাম। তিনি বলেন, শাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুত্ব অভিযোগ থাকায় তাকে জামিন নিতে ৫০ হাজার ডলারের বন্ড দিতে হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের দিনই নগদ অর্থ বন্ড হিসেবে দিতে পারলে তিনি সেই দিনই জামিনে মুক্তি পেতে পারতেন।
উল্লেখ্য, গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলাম ১২ জুন সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গ্রেফতার করা হয়। নিউইয়র্কের পুলিশ সিটির কুইন্সে বসবাসকারী শাহেদুল ইসলামকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করার কয়েক ঘণ্টা পর কুইন্স সুপ্রীমকোর্টে হাজির করে।
আরো উল্লেখ্য, শাহেদুল ইসলাম ঠাকুরগাঁওয়ের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত খাদেমুল ইসলামের পুত্র। রাজনৈতিকভাবে নিয়োপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ২০১১ সালে নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে যোগ দেন। এর আগে তিনি কানাডাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে।
ইতিপূর্বে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠে এবং তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার আগেই মনিরুল ইসলাম তরিঘড়ি করে স্বস্ত্রীক নিউইয়র্ক ত্যাগ করে তার নতুন কর্মস্থলে (অন্য দেশ) চলে যান।
এদিকে শাহেদুল ইসলামকে গ্রেফতারের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এই প্রতিবাদ জানানো হয় বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জোয়েল রিফম্যান ও পলিটিক্যাল কাউন্সিলর আন্দ্রেয়া বি রড্রিগেজ মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মাহবুব উজ জামানের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেখা করেন। এসময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ডেপুটি কনসাল জেনারেলের অবিলম্বে মুক্তি চাওয়া হয়।
অভিযুক্ত ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলামকে আগামী ২৮ জুন আবারো আদালতে হাজির হতে হবে জানা গেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

নিউইয়র্কের ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলাম জামিনে মুক্ত

প্রকাশের সময় : ০৪:০৭:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০১৭

নিউইয়র্ক: গৃহকর্মী নির্যাতনের কথিত অভিযোগ সহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত নিউইয়র্কে গ্রেফতার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলাম জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা আটট ২০ মিনিটে তিনি সিটির ব্রঙ্কস বরোস্থ ভারমন সি কারেকশন সেন্টার থেকে মুক্ত হন তিনি। কনসাল জেনারেল শামীম আহসান তার মুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলামের মুক্তির সময় কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, কনস্যুলেটের প্রথম সচিব শামীম হোসেন এবং তৃতীয় সচিব আসিব আহমেদ সহ শাহেদুল ইসলামের কয়েকজন আতœীয়-স্বজন ভারমন সি কারেকশন সেন্টারের গেটের সমানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কনসাল জেনারেল শামীম আহসান সহ কনস্যুলেটের একাধিক কর্মকর্তা কারেকশন সেন্টারে প্রবেশ করেন এবং শাহেদুল ইসলামের জামিনের বিষয়টি তদারকি করেন। খবর ইউএনএ’র।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্বাবধানে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও নিউইয়র্কে কনস্যুলেট জেনারেলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় প্রায় ৩৬ ঘন্টা পর শাহেদুল ইসলাম মুক্ত হন। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি কনস্যুলেটের গাড়ীতে চড়ে সরাসরি বাসায় ফিরে যান বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার বিকেলে ভারমন সি কারেকশন সেন্টারের গেটের সামনে এই প্রতিবেদক সহ একাধিক মিডিয়ার প্রতিনিধিকে কনসাল জেনারেল শামীম আহসান ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলামের গ্রেফতার ও জামিনের বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত বছরের মে’তে শাহেদুল ইসলামের বাসা থেকে রুহুল আমীন (মামলার বাদী) নিরদ্দেশ হন। এ ব্যাপারে নিউইয়র্ক কনস্যুলেট অফিস থেকে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে অবহিত করা হয়েছিল। এসময় সেখানে অপেক্ষমান শাহেদুল ইসলামের আতœীয় পরিচয়দানকারী নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র সভাপতি ডা. মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ মিডিয়ার কাছে দাবী করে বলেন, শাহেদুল ইসলাম ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। আর এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেরর ভাবমূর্তি দারুনভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকারী উদ্যোগে নয়, আমরাই ব্যক্তিগতভাবে জামিনের অর্থ যোগান দিয়েছি।
শাহেদুল ইসলামের চাচা পরিচয়দানকারী মোস্তফা কামাল মিলটন বলেন, আমরা ছোট বেলা থেকেই রুহুল আমীন (শাহেদুল ইসলামের গৃহকর্মী, মামলার বাদী) চিনতাম। সে শাহেদুল ইসলামের বাড়ীতেই বড় হয়েছে এবং তার লেখাপড়ারও খরচ বহন করা হয়েছে। এক পর্যায়ে রুহল আমীন শাহেদুল ইসলামের পরিবারের সদস্যই হয়ে যায়। পরবর্তীতে রুহুল আমীনের অনুরোধে শাহেদুল নিউইয়র্কে তার বাসার কাজের লোক হিসেবে সরকারী উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে আসে। তিনি বলেন, রুহুল আমীন শাহেদুল ইসলামের বাসায় কাজ করার বিনিময়ে অর্থ দিয়ে দেশে বাড়ী করেছেন। তিনি দাবী করেন ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা।
ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলামকে গ্রেফতার ও জামিন প্রসঙ্গে বাংলাদেশী-আমেরিকান এটর্নী মঈন চৌধুরী ভারমন সি কারেকশন সেন্টারের গেটের সামনে এই প্রতিবেদকে বলেন, আমি শাহেদুল ইসলামের এটর্ণী নই, তবে একজন বাংলাদেশী-আমেরিকান হিসেবে তার খোঁজ-খবর নিতেই এখানে এসেছিলাম। তিনি বলেন, শাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুত্ব অভিযোগ থাকায় তাকে জামিন নিতে ৫০ হাজার ডলারের বন্ড দিতে হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের দিনই নগদ অর্থ বন্ড হিসেবে দিতে পারলে তিনি সেই দিনই জামিনে মুক্তি পেতে পারতেন।
উল্লেখ্য, গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলাম ১২ জুন সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গ্রেফতার করা হয়। নিউইয়র্কের পুলিশ সিটির কুইন্সে বসবাসকারী শাহেদুল ইসলামকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করার কয়েক ঘণ্টা পর কুইন্স সুপ্রীমকোর্টে হাজির করে।
আরো উল্লেখ্য, শাহেদুল ইসলাম ঠাকুরগাঁওয়ের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত খাদেমুল ইসলামের পুত্র। রাজনৈতিকভাবে নিয়োপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ২০১১ সালে নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে যোগ দেন। এর আগে তিনি কানাডাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে।
ইতিপূর্বে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠে এবং তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার আগেই মনিরুল ইসলাম তরিঘড়ি করে স্বস্ত্রীক নিউইয়র্ক ত্যাগ করে তার নতুন কর্মস্থলে (অন্য দেশ) চলে যান।
এদিকে শাহেদুল ইসলামকে গ্রেফতারের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এই প্রতিবাদ জানানো হয় বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জোয়েল রিফম্যান ও পলিটিক্যাল কাউন্সিলর আন্দ্রেয়া বি রড্রিগেজ মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মাহবুব উজ জামানের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেখা করেন। এসময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ডেপুটি কনসাল জেনারেলের অবিলম্বে মুক্তি চাওয়া হয়।
অভিযুক্ত ভাইস কনসাল শাহেদুল ইসলামকে আগামী ২৮ জুন আবারো আদালতে হাজির হতে হবে জানা গেছে।