নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাইমারী নির্বাচন ২৩ জুন

- প্রকাশের সময় : ০১:০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুন ২০২০
- / ৪৮ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি: আগামী ২৩ জুন মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাইমারী নির্বাচন। ইতিমধ্যেই এই নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলছে আগাম ভোট প্রদান। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই ভোট গ্রহণ চলবে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত। বিশেষ করে করোনাকালীন প্রেক্ষাপটে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। এবারের প্রাইমারী নির্বাচনে নতুন প্রজন্মের সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশী-আমেরিকান প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নির্বাচনে ইউএস কংগ্রেসওম্যান, ষ্টেট অ্যাসেম্বীওম্যান, ষ্টেট অ্যাসেম্বলীম্যন, সিটি কাউন্সিলম্যান, ডিষ্ট্রিক্ট লীডার প্রভৃতি পদে একাধিক বাংলাদেশী-আমেরিকান অংশ নিচ্ছেন। ফলে নতুন স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশী কমিউনিটি। বিশেষ করে পেলসেলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের অডিটর জেনারেল নির্বাচনের প্রাইমারী বাংলাদেশী-আমেরিকান ড. নীনা আহমেদর জয়ের পর নিউইয়র্কের প্রাইমারীতেও জয়ের স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশী আমেরিকানরা। সবমিলিয়ে বাংলাদেশীরা আমেরিকান রাজনীতির ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে- এমনটাই ভাবছেন অনেকেই। এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারনে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের চেয়ে যাতে অ্যাবসেন্টি ব্যালটে ভোট দেয়া যায় সেজন্য নিউইয়র্ক বোর্ড অব ইলেকশন ঘরে ঘরে অ্যাবসেন্টি ব্যালট প্রেরণ করছে। তবে এজন্য সংশ্লিস্ট ভোটারকে আবেদন করতে হবে। ফোনে বা ইমেইলে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
আগামী ২৩ জুনের প্রাইমারী নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশদ্ভুত প্রার্থীদের মধ্যে ইউএস কংগ্রেসওম্যান পদে নিউইয়র্কের কংগ্রেশনাল ডিষ্ট্রিক্ট-১৪ থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা লড়ছেন বদরুন্নাহার মিতা, কংগ্রেশনাল ডিষ্ট্রিক্ট-৫ থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা লড়ছেন সানিয়াত চৌধুরী, নিউইয়র্কের অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৩৭ (লং আইল্যান্ড সিটি, সানি সাইড, উডসাইড) থেকে অ্যাসেম্বলীওম্যান পদে লড়ছেন মেরী জোবায়দা, অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ থেকে অ্যাসেম্বলীম্যান পদে লড়ছেন মাহফুজুল ইসলাম, ও অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৩৪ থেকে লড়ছেন জয় চৌধুরী। এছাড়াও ডেমোক্র্যাট দলীয় ডিষ্ট্রিক্ট লীডার পদে অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ থেকে লড়ছেন মৌমিতা আহমেদ ও মাহতাব খান। ব্রঙ্কসের অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৮৭ থেকে লড়ছেন এন মজুমদার। এছাড়াও অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ থেকে জুডিলিয়াল ডেলিগেট পদে লড়ছেন মোহাম্মদ এম রহমান।
এদিকে এশিয়ান আমেরিকান ফেডারেশনের আদমশুমারি বিশেষজ্ঞ হাওয়ার্ড শিহের মতে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কে ৮৪ হাজার ২৪৮ জন বাংলাদেশী রয়েছেন। ন্যাশনাল এশিয়ান আমেরিকান সমীক্ষা বলছে, জাতীয়ভাবে ৯০ শতাংশ আমেরিকান বাংলাদেশী হিলারী ক্লিনটনের পক্ষে ভোট দিয়েছে যা যে কোনও এশীয় উপগোষ্ঠীর চেয়ে বেশি। এই মানুষদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তেমন সমর্থন ছিলনা বললেও চলে।
আগামী নির্বাচন ঘিরে সদ্য গঠিত তৃণমূল দল বাংলাদেশী আমেরিকান ফর পলিটিকাল প্রগ্রেস (বিএপিপি) এর সহ প্রতিষ্ঠাতা থাহিতুন মরিয়ম বলেন, অনেক তরুণ বাংলাদেশী আমেরিকান রেপ আলেকজান্ডারিয়া ওকাসিও-কর্টেজ এবং টিফনি ক্যাবনকে সমর্থন করেছিল এবং এটি তাকে কুইন্স জেলার অ্যাটর্নি বানাতে ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু বর্তমানে তারই একজন প্রাথমিক প্রতিপক্ষ হলেন নিউইয়র্কবাসী বাংলাদেশী বদরুন খান। সংগঠন এবং প্রার্থীদের মতে, এখানে বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক উত্থানের জন্য দুটি ঐতিহাসিক মঞ্চ তৈরি হয়েছে। প্রথমটি হল, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, যা এটা ব্যাখ্যা দেয় যে কোন সংকল্পিত জাতির কাছে অতীতের অতীত বিমূর্ততা নয়। মরিয়ম বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা আমাদের বেঁছে নিতে হবে। প্রবীণ অভিবাসীদেরা এটির অর্থ হিসেবে একটি মুক্ত বাংলাদেশ ছিল। কিন্তু আমাদের জন্য, এর অর্থ সাদা আধিপত্যের মধ্যে জড়িত সিস্টেমগুলি থেকে দূরে সরে যাওয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাধরণ ‘চাচা’ সম্পর্কের প্রবীণ পুরুষ সদস্যরা, স্বাধীনতার পক্ষে আক্রমণাত্মকভাবে লড়াই করেননি। এবং তারা ‘উগ্রবাদী’ লেবেলযুক্ত হওয়ার ভয়ে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হননি। আমরা মুসলিম ক্ষমাবিদ হয়ে উঠলাম। আমরা সেই মুসলমান নই, যে মুসলিম সম্প্রদায়গুলিকে আমাদের রক্ষা করতে হয়েছিল।
বদরুন খান (বদরুন্নার খান মিতা) বর্তমানে ইউএস কংগ্রেসের অন্যতম শক্তিশালী ও আলোচিত কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিয়র বিরুদ্ধে লড়ছেন। গত নির্বাচনে ওকাসিও প্রবীণ রাজনীতিক কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়ে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে আলোচিত হন। অপরদিকে মেরী জোবাইদার প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী হচ্ছেন দীর্ঘ ৩০ বছরের অ্যাসেম্বলীওম্যান ক্যাথেরিন নোলান।
নির্বাচন প্রসঙ্গে মিডিয়ার সাথে আলাপকালে জোবায়দা বলেছেন, ২০০০ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই ২০০১ সালে ১৬ নভেম্বর মেরী জোবাইদা বাংলাদেশের একটি গ্রাম থেকে কুইন্সে চলে আসনে। সেই সময় তিনি বোরকা পড়তেন, তবে তখন তার কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিনো প্রতিবেশীদের জন্য সামান্য ইসলামফোবিয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানকার সম্প্রদায়গুলো আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছিল এবং আমাকে যেভাবে গ্রহণ করেছিল, ৯/১১-এর পরে তারা আমাকে মুসলিম হিসেবে অপমান করেনি। তারা আমার প্রতি খুব প্রতিরক্ষামূলক ছিল। আগামী ২৩ জুনের নির্বাচনে তিনি বর্তমান ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওম্যান ক্যাথি নোলানের বিপক্ষে মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকায় এসে তার প্রথম প্রথম যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাই মূলত দেশটিতে তার রাজনীতিকে গড়ে দিয়েছে। তাকে বিরোধিতা করার জন্য প্ররোচিত করেছে। সেই সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ মৃত্যুর প্রতিবাদে একজন সোচ্চার সমর্থক হতে প্ররোচিত করেছে। শুধু জোবায়দা একা নন, তার মতো নিউইয়র্কে অবস্থানরত কমপক্ষে আটজন বাংলাদেশী বর্তমানে স্থানীয়, রাজ্য এবং কংগ্রেশনাল পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার জন্য প্রার্থী হয়েছেন। (বাংলা পত্রিকা)