নিউইয়র্কের অ্যাওয়ার্ড বাণিজ্য : কমিউনিটিতে প্রশ্ন কারা দেয়, কারা পায়
- প্রকাশের সময় : ০৩:৪০:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৪
- / ৯৭২ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র মিশ্র সংস্কৃতির দেশ। আর মিশ্র সংস্কৃতির আবাসভূমি হচ্ছে নিউইয়র্ক। কি নেই নিউইয়র্কে। কোন্্ দেশের মানুষ নেই এই নিউইয়র্কে। কোন্্ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি নেই নিউইয়র্কে। পিছিয়ে নেই বাংলা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিও। এই সংস্কৃতিকে ঘিরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা উপভোগ করছেন নানা অনুষ্ঠানমালা। একুশের অনুষ্ঠান, বিজয়ের অনুষ্ঠান, স্বাধীনতার অনুষ্ঠান ও বই মেলা থেকে শুরু করে পথমেলা, বনভোজন, অভিষেক প্রভৃতি অনুষ্ঠানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাঙালী সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি ঘিরেই প্রবাসে শুরু হয়েছে তথা কথিত ‘অ্যাওয়ার্ড আদান-প্রদান’-এর কালচার। খোদ নিউইয়র্ক সিটি হল প্রদত্ত অ্যাওয়ার্ড তথা ‘প্রক্লেমোশন বা সাইটেশন’ নিয়েও নান প্রশ্ন কমিউনিটিতে। যা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া কমিউনিটির সচেতন মহলে। কমিউনিটিতে প্রশ্ন কারা দেয় এই অ্যাওয়ার্ড, কে পায়, কিভাবে পায় অ্যাওয়ার্ড? এসব? অ্যাওয়ার্ড লেন-দেনের নীতিমালাই বা কি?
নিউইয়র্ক সিটি হলের ‘বাংলাদেশী কাউন্সিলম্যান’ হিসেবে পরিচিত সাবেক কাউন্সিলম্যান জিম এফ জেনারো, জন সি ল্যু, ডেভিট ওয়েপ্রীন প্রমুখের উদ্যোগে সিটি হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালনকে কেন্দ্র করে চালু করা হয় ‘প্রক্লেমোশন বা সাইটেশন’ প্রদান কালচার। প্রথম দিকে এই ‘প্রক্লেমোশন বা সাইটেশন’ আদান-প্রদান কমিউনিটিতে গুরুত্ব পেলেও ক্রমশ: এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে। এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে ‘স্বজনপ্রীতি আর পক্ষপাতিত্ব’-এর অভিযোগ উঠে। অভিযোগ উঠে ‘প্রক্লেমেশন বা সাইটেশন’ প্রাপ্তদের কারো কারো যোগ্যতা নিয়ে। আরো অভিযোগ উঠে অনৈতিক পথে ‘প্রক্লেমোশন বা সাইটেশন’ প্রাপ্তীর।
এদিকে গত এক যুগ ধরে কমিউনিটিতে চালু ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড’। এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান আয়োজন, অ্যাওয়ার্ড আদান-প্রদান, মান-বিচার, যোগ্যতা প্রভৃতি বিষয়েও বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ উঠেছে কমিউনিটিতে। এছাড়াও আরো অনেক নামে কমিউনিটিতে শুরু হয়েছে ‘অ্যাওয়ার্ড লেন-দেন কালচার’। হাল আমলে ‘অ্যাওয়ার্ড লেন-দেন’ কালচালে যোগ হয়েছে ‘সার্চ মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’,‘এনআরবি অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘মানুষের জন্য মানুষ’,‘জেমিনি স্টার মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’।
অভিযোগ উঠেছে, কোন কোন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ‘অর্থ’ লেন-দেনের বিনিময়ে অ্যাওয়ার্ড/প্ল্যাক প্রদান করা হয়। জন প্রতি ৫০ থেকে ৫০০ বা হাজার ডলারোও লেন-দেন হচ্ছে এসব অনুষ্ঠানে। অভিযোগ রয়েছে কেউ কেউ অর্থের বিনিময়ে প্যাকেজ কিনছেন। ‘কি পরিমান অর্থ দিলে কয়টা অ্যাওয়ার্ড পাওয়া যাবে, কয়টা কিনলে কয়টা ফ্রি’ এভাবেও দর কষাকষি হচ্ছে অর্থ লেনদেনে আগে। অনেকের কাছে এসব অনুষ্ঠান বিনোদন নয়, ব্যবসা। প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনোদনের আগ্রহকে পুঁজি করেই এসব তথাকথিত অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে।
অপরদিকে ঢাকা থেকে নামিদামী ও খ্যাতিমান তারকা শিল্পীদের এসব অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে যোগদান নিয়েও কমিউনিটির সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সচেতন প্রবাসীদের প্রশ্ন বাংলাদেশের নামীদামী শিল্পী, অভিনেতারা জেনে শুনেই, নাকি না জেনেই এসব অনুষ্ঠানে আসছেন? কেননা, এসব অনুষ্ঠান নিয়ে নানা অনৈতিকতার প্রশ্ন রয়েছে। যার তার ডাকে যে কেউ কি অ্যাওয়ার্ড ‘দেন-দেন’ করার যোগ্যতা রাখেন? কমিউনিটির সচেতন মহলের মন্তব্য ‘যারা আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগেন’ তারাই অর্থের বিনিময়ে এমন অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে থাকেন।
মূলধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত একাধিক বাংলাদেশী-আমেরিকান অ্যাক্টিভিস্ট জানান, কমিউনিটির ‘প্রক্লেমোশন বা সাইটেশন’ প্রদান কালচারের অনৈতিকতার ব্যাপারে মূলধারার রাজনীতিকরা বিশেষ করে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত কংগ্রেসম্যান/ওম্যান, বরো প্রেসিন্টে অভিস আর সিটি কাউন্সিলম্যানরাও বিব্রত। ভবিষ্যতে তাঁদের কাছ থেকে ‘প্রক্লেমোশন বা সাইটেশন’ গ্রহণ সহজতর হবে না বলে তাদের ধারণা।