‘নিউইয়র্ক নট ফর সেল’ শ্লোগানে মামদানীর বিশাল নির্বাচনী সমাবেশ
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ
- প্রকাশের সময় : ০১:৪৯:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
- / ৭ বার পঠিত
যোগ দিলেন বার্নি স্যান্ডার্স, ওকাসিও, ক্যাথি হোকুল সহ আরো অনেকে
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ‘নিউইয়র্ক নট ফর সেল’ এই শ্লোগানে উজ্জীবিত হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো ডেমোক্র্যাটিক দলীয় মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানীর বিশাল নির্বাচনী সমাবেশ। স্মরণকালের ইতিহাসে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে এতে বিশাল সমাবেশ আর দেখা যায়নি। গত ২৬ অক্টোবর রোববার রাতে কুইন্সের ফরেস্ট হিলস স্টেডিয়ামে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে জোহরান মামদানী ছাড়াও প্রবীণ সিনেটর বার্নি স্যান্ডাস এবং বহুল আলোচিত ইউএস কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ ছাড়াও নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল, অ্যাসেম্বলি স্পিকার কার্ল হিস্টি, সিনেটর আন্দ্রেয়া স্টুয়ার্ট-কাজিন্স এবং সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার সহ আরো অনেকেই বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে জোহরান মামদানীকে নিউইয়র্ক সিটির যোগ্য মেয়র হিসেবে উল্লেখ করে তাকে বিপুল ভোটে জয়ী করার জন্য আহ্বান জানান বক্তারা। উল্লেখ্য, আগামী ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার সিটি নির্বাচন। চলছে আগাম ভোট। খবর ইউএনএ’র।
বিশাল এই সমাবেশে আমেরিকান তরণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। ১৩ হাজার আসনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে ছিল না কোন ফাঁকা স্থান। মুহুর্মুহ স্লোগান আর করতালিতে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শুরু হওয়া মূল অনুষ্ঠানের তিন ঘন্টা সবার মাঝে ছিল পরিবর্তনের উন্মাদনা।
সমাবেশে বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, কুওমোর প্রচারণায় যথেষ্ট যুদ্ধবাজ ভাব আছে। তিনি মামদানীর সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান যে তারা যেন প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাউকেই অবমূল্যায়ন না করেন। স্যান্ডার্স বলেন, ‘নির্বাচনের পরদিন আমরা কেউই ঘুম থেকে উঠে দেখতে চাই না যে আমাদের বিরোধীরা আমাদের পরাজিত করেছে বলে আমরা এই নির্বাচনে হেরেছি। এটা হওয়া উচিত নয়।’ তিনি মামদানী’র প্রার্থীতাকে ট্রাম্পের ‘সবচেয়ে খারাপ দুঃস্বপ্ন’ হিসাবে বর্ণনা করে বলেন, মামদানির প্রচারণা ‘অলিগার্কি শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য’ সকল স্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।
সমাবেশে ওকাসিও-কর্টেজ জোহরান মামদানীর সমর্থনে আবেগপূর্ণ বক্তৃতায় বলেন, নিউইয়র্ক সিটি ‘আশার পাদদেশে’ দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, মামদানীর নির্বাচন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে একটি ‘জোরে বার্তা’ পাঠাবে, যাকে তিনি একজন কর্তৃত্ববাদী নেতা এবং ফ্যাসিবাদী বলে বর্ণনা করেছেন।
ওকাসিও-কর্টেজ আরো বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে দাসদের দ্বারা নির্মিত ঘরে নয়, বরং স্বাধীন মানুষের দ্বারা নির্মিত শহরে, ইউনিয়নবাদী এবং অভিবাসীদের দ্বারা নির্মিত শহরে।
সমাবেশে গভর্নর ক্যাথি হোকুল তার বক্তব্যে প্রেসিডেন্টড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করে বলেন যে, ট্রাম্প আমেরিকান মূল্যবোধের বিরুদ্ধে এক বিরাট পদক্ষেপ নিয়েছেন। গভর্ণর নিউইয়র্কে আইসিই এজেন্ট পাঠানোর জন্যও ফেডারেল সরকারের সমালোচনা করেন।
সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা আন্দ্রেয়া স্টুয়ার্ট-কাজিন্স মামদানীকে একজন ‘ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং নির্বাচনের শেষ দিনগুলিতে তাকে মেয়র নির্বাচিত করার জন্য জনতাকে প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন- ‘এটা তোমাদের হাতে। তোমাদের ক্ষমতা আছে, আমরা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে পারি না’।
ব্র্যাড ল্যান্ডার বলেন, ‘অ্যান্ড্রু কুওমো এবং তার বিলিয়নেয়ার দাতারা তার রাজনৈতিক লাভের জন্য ইহুদি-বিদ্বেষ এবং ইসলামোফোবিয়া উভয়কেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। এটি জঘন্য, এবং আমরা এটি সহ্য করব না।
সমাবেশে জোহরান মামদানী হাজার হাজার নগরবাসী প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে সব অন্ধকার মুছে ফেলুন। সবাইকে নিয়ে আমরা নিউইয়র্ক সিটিকে আলোকিত করতে চাই। তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোটিপতিরা যখন মনে করেন যে এই নির্বাচন কেনার জন্য তাদের কাছে অর্থ আছে, তখন আমাদের কাছে জনসাধারণের একটি আন্দোলন আছে। আমাদের ভয় নেই। তিনি বলেন, প্রাইমারীতে বিজয়ী হওয়ার পর ‘আমরা আত্মতুষ্টিকে এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করতে দিতে পারি না। আমাদেরকে আরো এগিয়ে যেতে হবে’।
সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে মামদানী বলেন, আসুন আমরা এমন একটি সিটি হল জয় করি যা মুদিখানা কিনতে কষ্ট পাওয়া লোকদের জন্য কাজ করে, আমাদের গণতন্ত্র কিনতে কষ্ট পাওয়া লোকদের জন্য নয়।
মামদানী তার বক্তব্যে কুওমো এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন যে, তারা নিউইয়র্ক সিটিকে ‘ডিস্টোপিয়ান নরক’ হিসেবে চিত্রিত করে মেয়র পদকে ভয়ঙ্কর করার চেষ্টা করছেন। তারা ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করে না।
সমাবেশে নিউইয়র্ক সিটির ইসলামিক সেন্টারের ইমাম খালিদ লতিফ, কনগ্রেগেশন বেইট সিমচ্যাট তোরাহের রাব্বি শ্যারন ক্লেইনবাউম এবং অ্যালায়েন্স ট্যাবারনেকলের রেভারেন্ড চার্লস ও’গালব্রেথও উপস্থিত ছিলেন, যারা সকলেই মামদানীর প্রচারণাকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং সকল ধর্মের মানুষের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।
সমাবেশের এক পর্যায়ে বার্ণি স্যান্ডার্স, ওকাসিও-কর্টেজ ও জোহরান মামদানী হাত তুলে উপস্থিত সবস্তরের মানুষের প্রতি শুভেচ্ছা জানান।
এদিকে মামদানীর নির্বাচনী সমাবেশ ঘিরে রোববার বিকেল চারটা থেকেই শত শত নারী পুরুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন এবং রাতে স্টেডিয়ামের খোলা গ্যালারিতে ঠান্ডার মধ্যেও দীর্ঘক্ষন অবস্থান করে তারা সবার বক্তব্য শুনেন।
অপরদিকে জোহরান মামদানির সমাবেশ ঘিরে আশেপাশের এলাকায় যত শব্দের অভিযোগ উঠেছে, রেকর্ড বলছে, সম্প্রতি ওই স্থানে অনুষ্ঠিত ফিশ কনসার্টের মতোই শব্দের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, এই সমাবেশে ঘিরে ৩১১ নম্বরে ২৯টি অভিযোগ কল করা হয়েছিল- যার মধ্যে ১২টি ছিল অতিরিক্ত শব্দের জন্য। ষ্টেডিয়াম সংলগ্ন বিরক্ত প্রতিবেশীদের বর্ণনায় ‘জোরে গান’ এবং ‘জোরে কথা বলা’ থেকে শুরু করে ‘জোরে পার্টি’ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এবং প্রায় রাত ৯টা পর্যন্ত স্থায়ী ছিল সমাবেশ। উল্লেখ্য, চলতি বছরের গ্রীষ্মে একটি কনসার্ট ঘিরে প্রতিবেশীদের দ্বারা দায়ের করা অভিযোগের সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে মামদানীর সমাবেশে ঘিরে অভিযোগ। যা এত জোরে ছিল যে স্টেডিয়ামটি শহরের পরিবেশ সুরক্ষা বিভাগের লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।











