নিউইয়র্ক সিটিতে ‘ট্রু ইকুইটি নাউ’র ভোটার নিবন্ধন অভিযান শুরু

- প্রকাশের সময় : ০১:৪৯:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ১১ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী কমিউনিটি সহ অন্যান্য কমিউনিটি নিয়ে মূলধারার রাজনীতিতে অবদান রাখার প্রত্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘ট্রু ইকুইটি নাউ’ (টিইএন) নামের একটি সামাজিক কল্যাণমূলক অলাভজনক সংস্থা। মূলত: বঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাগরিক শিক্ষা, ভোটার অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো-ই এই সংস্থার কাজ। নিউইয়র্ক সিটিতে ভোটার নিবন্ধন অভিযান শুরুর মধ্যদিয়ে সংস্থাটি আতœপ্রকাশ করলো। খবর ইউএনএ’র।
নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকার হিলসাইড এভিউস্থ দারুল উলুম মসজিদের বাইরে পার্কিং লপের সামনে গত ১৫ আগষ্ট শুক্রবার বাদ জুমা আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থাটি ২০২৫ সালের ভোটার নিবন্ধন অভিযান শুরু করে। যাতে সহজে ও বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশে বেশি মানুষের কাছে ভোটার নিবন্ধনের গুরুত্ব পৌঁছানো যায়- এজন্যই জুমার নামাজ শেষে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় বলে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মুহাম্মাদ কামরুল ইসলাম এই প্রতিনিধিকে জানান।
মুহাম্মাদ কামরুল ইসলাম বলেন, টিইএন নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার, উপাসনালয় ও জনসমাগম স্থানে ভোটার নিবন্ধন অভিযান চালিয়ে যাবে, যতদিন না এই বছরের ভোটার নিবন্ধন সময়সীমা শেষ হয়। সংস্থাটির লক্ষ্য হলো প্রতিটি যোগ্য নাগরিককে- বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত- ভোট দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য, সুযোগ ও উপকরণ তাদের হাতে দেয়া এবং দৌড়গোড়ায় পৌছানো, যাতে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পূর্ণভাবে অংশ নিতে পারেন।
কমিউনিটি নেতাদের অংশগ্রহণে উদ্বোধনী কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মুহাম্মাদ রাকিবুল ইসলাম, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট জে মোল্লা সানি, আনিসুল কবির জাসির, মাহতাব খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচীটি চলাকালে টিইএন কর্মকর্তারা আগ্রহীদের মাঝে ভোটার নিবন্ধনের ফর্ম ও তথ্যপত্র বিতরণ করার পাশাপাশি ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
উল্লেখ্য, ট্রু ইকুইটি নাউ (টিইএন) একটি অরাজনৈতিক, সামাজিক কল্যাণমূলক অলাভজনক সংস্থা, যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাগরিক অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে কাজ করে। তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ, শিক্ষা ও অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে টিইএন মানুষকে সচেতন, সম্পৃক্ত ও সক্রিয় নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে ভোটার নিবন্ধন, নাগরিক শিক্ষা, কমিউনিটি সংগঠন, নেতৃত্ব উন্নয়ন এবং ন্যায় ও সমতার জন্য একতা গড়ে তোলা।
ভোটার নিবন্ধনের বাইরে আরও সেবা: যদিও ভোটার নিবন্ধন টিইএন-এর কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, সংস্থার লক্ষ্য শুধু নাম তালিকাভুক্ত করা নয়- বরং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেমন অভিবাসী, বর্ণবৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠী, কর্মজীবী পরিবার এবং অন্যান্য বঞ্চিত স¤প্রদায়কে নাগরিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা।
টিইএন-এর কাজের মধ্যে রয়েছে: ১. নাগরিক শিক্ষা বৃদ্ধি: ওয়ার্কশপ, সভা ও তথ্য প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সরকার কীভাবে কাজ করে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভূমিকা এবং স্থানীয়, অঙ্গরাজ্য ও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার গুরুত্ব বোঝানো।
২. ভোটার সচেতনতা বাড়ানো: ভোটারদের শেখানো কিভাবে প্রার্থী ও ভোটের প্রস্তাব সম্পর্কে তথ্য খুঁজে বের করতে হয়, তাদের ভোটাধিকার সম্পর্কে জানা এবং ভোটকেন্দ্র বা ডাকযোগে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া বোঝা।
৩. নীতি পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলা: ভাষাগত সহায়তা, ভোটার অ্যাক্সেস এবং ন্যায্য নির্বাচনী এলাকা বণ্টনের মতো বাধা দূর করার জন্য নীতিগত সংস্কারের দাবি তোলা (অরাজনৈতিকভাবে)।
৪. কমিউনিটি নেতৃত্ব তৈরি: প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নতুন নেতাদের উৎসাহিত ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা নির্বাচনে দাঁড়ায়, নাগরিক বোর্ডে অংশ নেয় বা অন্য নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে।
৫. একতা গড়ে তোলা: স্থানীয় সংগঠন, ধর্মীয় নেতা ও অ্যাডভোকেসি গ্রæপের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও শ্রমিক অধিকারসহ নানা বিষয়ে কমিউনিটির কণ্ঠ জোরদার করা।
৬. সারা বছর ভোটার সক্রিয় রাখা: শুধু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নয়, স্থানীয় ও বিশেষ নির্বাচনে অংশ নিতে মানুষকে উৎসাহিত করা, যেগুলো সরাসরি দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনেক উৎসাহী নাগরিক উপস্থিত ছিলেন- যাদের মধ্যে অনেকে এখনো ভোটার হিসাবে নিবন্ধিত হননি। এসময় স্বেচ্ছাসেবক ও নেতারা তাদেরকে সরাসরি সহায়তা দেন, নিবন্ধন প্রক্রিয়া দেখিয়েছেন এবং ভোটার স্ট্যাটাস কীভাবে যাচাই করতে হয় তা বুঝিয়েছেন।
নাগরিকদের ভোট কীভাবে স্থানীয় স্কুল, জননিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রভাব ফেলে- সে সম্পর্কেও মৌলিক ধারণা দেওয়া হয়। লক্ষ্য ছিল শুধু ভোটার তালিকায় নাম তোলা নয়, বরং কেন ভোট দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝানো।
টিইএন-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মুহাম্মাদ কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিনিধিত্ব শুরু হয় নিবন্ধন থেকে। প্রতিটি ভোট একটি কণ্ঠস্বর। আমরা এখানে এসেছি যেন আমাদের স¤প্রদায়- যারা দীর্ঘদিন অবহেলিত— তাদের ভোটের মাধ্যমে কথা বলতে পারে।
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মুহাম্মাদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, এটা শুধু একটি প্রচারণা নয়; এটি একটি আন্দোলন। নাগরিক অংশগ্রহণ সুস্থ গণতন্ত্রের মূলভিত্তি, আর যত বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক আমাদের ভোটাররা হবে, তত বেশি শক্তিশালী হবে আমাদের সমাজ। আমরা প্রতিশ্রæতিবদ্ধ যে কাউকে এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হবে না।
টিইএন’র আগামী পরিকল্পনা: ট্রু ইকুইটি নাউ (টিইএন) শিগগিরই নতুন ভোটার নিবন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করবে, বিশেষ করে এমন এলাকায় যেখানে আগে ভোটার নিবন্ধন ও ভোটদানের হার কম ছিল। এর মধ্যে থাকবে যুবসংগঠন, অভিবাসী সহায়তা সংগঠন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সঙ্গে অংশীদারিত্ব, যাতে ভাষা, সংস্কৃতি ও অবস্থান অনুযায়ী মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়।
নিবন্ধন অভিযানের সঙ্গেই ছোট তথ্যসেশনও থাকবে- যেমন আগে ভোট দেওয়ার নিয়ম, ডাকযোগে ভোটের আবেদন কীভাবে করতে হয় এবং ভোটের বাইরে কীভাবে নিজের কমিউনিটির পক্ষে আওয়াজ তুলতে হয়।