নিউইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে বাংলাদেশী পুলিশ অফিসার সহ ৪জন নিহত

- প্রকাশের সময় : ০২:০৯:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
- / ১৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নিউইয়র্কের সিটির মিডটাউন ম্যানহাটানে এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত এনওয়াইপিডি’র বাংলাদেশী পুলিশ অফিসার মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম রতন সহ ৪জন নিহত হয়েছেন। নিহত দিদারুল ইসলামের রতন বাড়ী মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া সদর উপজেলাধীর পৌর এলাকার মাগুড়া। রাত ৮টার দিকে সিটির পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ এই ঘটনার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। খবর ইউএনএ’র।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ছয়টার দিকে এক বন্দুকধারী ম্যানহাটান শহরের ৫১ ও ৫২ স্ট্রীটের মাঝামাঝি ৩৪৫ পার্ক এভিনিউ এলাকায় একটি বহুতল ভবনে প্রবেশ করে নিচ তলায় গেইটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশী-আমেরিকান নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) পুলিশ অফিসার দিদারুল রতন-কে ইসলামকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং তিনি গুরুতর আহত হন। পরে বন্দুকধারী বহুতল ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে লিফট যোগে দ্রæত ৩৩ তলায় গিয়ে আরও কয়েকজন-কে গুলি করে এবং এক পর্যায়ে সে তার নিজের বন্দুকের গুলিতে আত্মহত্যা করে। এদিকে পুলিশ অফিসার রতনকে দ্রæত স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় আরা ৪জন নিহত হন বলে জানা গেছে।
সানে ডি তামুরা
প্রত্যক্ষদর্শীরা রুডিন ম্যানেজমেন্ট রিয়েল এস্টেট ফার্মের লিফটের কাছে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। কেন কি কারণে এই হত্যাকাÐ ঘটিয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। তবে হামলাকারী ও আতœহত্যাকারী বন্দুকধারী লাসভেগাস থেকে এসেছেন এবং তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বলে জানা গেছে। তার নাম সানে ডি তামুরা (২৭)। এই ঘটনায় মোট ৪জন নিহত হয়েছেন বলে সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে জানা গেছে। ব্যক্তি জীবনে দিদারুল ইসলাম রতন দুই সন্তানের জনক এবং তিনি তার পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান ছিলেন। তার স্ত্রী অন্তসত্তা বলে জানা গেছে। তার দুই বোনও নিউইয়র্কে বসবাস করেন। রতন সিটির ব্রঙ্কসে বসবাস করতেন।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক বেন রাইডার হাওয়ের মতে, সোমবার সন্ধ্যা ৬:১০ নাগাদ, কয়েক ডজন অফিসার এলাকাটি প্লাবিত করে ফেলেন। ভবনটিতে অন্যান্য অফিসের মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ জায়ান্ট বø্যাকস্টোন, ন্যাশনাল ফুটবল লীগ এবং অ্যাকাউন্টিং ও আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি। এনএফএল কর্মীরা পুলিশের কাছ থেকে চলে যাওয়ার অনুমতির অপেক্ষায় সেখানেই আশ্রয় নিয়েছিলেন।
মিঃ হাও বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে, লোকেরা হাত তুলে ছোট ছোট দলে ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরে, পুলিশের হেলিকপ্টার ঘোরাফেরা করার সাথে সাথে, একটি বৃহত্তর দল ভবনটি ছেড়ে চলে যায়। কেউ কেউ যত দ্রæত সম্ভব দৌড়াচ্ছিল। অন্যরা হেঁটে যাচ্ছিল, তাদের চারপাশে কী ঘটছে তা দেখে তারা বিচলিত ছিল না। আশেপাশের যেসব ভবন তালাবদ্ধ ছিল, সেগুলোও খালি হতে শুরু করে, অনেক লোক হাত তুলে বেরিয়ে যেতে থাকে, সম্ভবত তারা সশস্ত্র নয় তা দেখানোর জন্য। ৩১ তলায় কর্মরত বø্যাকস্টোনের একজন কর্মচারী বলেন যে, সেখানে শ্রমিকরা উপর থেকে একটি বিকট শব্দ এবং গুলির শব্দ শুনতে পান।
ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস জরুরী সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং প্রকৃত ঘটনা জানতে তদন্ত চলছে বলে জানান। তার প্রশাসন নিহত বাংলাদেশী পুলিশ অফিসারকে ‘বীর’ হিসেবে সম্বোধন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তির গাড়ীতে একটি এম-ফোর রাইফেল এবং গুলিবিদ্ধ ম্যাগাজিনসহ একটি রিভলবার পাওয়া গেছে। তার নেভাদা রাজ্যের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন। সন্দেহভাজন বন্দুকধারীকে নিষ্ক্রিয় করার পর ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানিয়েছে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ।
এদিকে এনওয়াইপিডি’র বাংলাদেশী পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলাম রতনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনায় কুলাউড়া বাংলাদেশী এসোসিয়েশন অব ইউএসএ’র সভাপতি সৈয়দ ইলিয়াস খসরু গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।