দেশ ও প্রবাসের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের উপর গুরুত্বারোপের মধ্য দিয়ে এবিবিএ’র অষ্টম বিজনেস সামিট অনুষ্ঠিত

- প্রকাশের সময় : ১০:৫৯:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬
- / ৯২৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যকার ঐক্য, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি জোরদার আর বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরীর জন্য সরকারী উদ্যোগের উপর গুরুত্বারোপের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হলো আমেরিকান বাংলাদেশী বিজনেস অ্যালায়েন্স (এবিবিএ)’র অষ্টম বিজনেস সামিট ও ডিনার। সামিটে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ বান্ধব দেশে পরিণত হতে চলেছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, প্রবাসীসহ বিদেশী ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ আকর্ষণীয় গন্তব্য। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দল-মতের উর্ধ্বে উঠে দেশের ভাল-মন্দ বুঝে তবেই না দেশকে ভালোবাসতে হবে। এফবিবিসিআই’র সভাপতি আব্দুল মতলুব আহমেদ বলেন, এবিবিএ ও এফবিবিসিআই’র যৌথ উদ্যোগে ‘এমওইউ’র মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার হতে পারে।
সিটির লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলের বলরুমে ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এবিবিএ’র বার্ষিক বিজনেস সামিটে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ‘দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাষ্ট্রিজ’ (এফবিসিসিআই)-এর সভাপতি আব্দুল মতলুব আহমেদ। এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজিবুর রহমান, সচিব বেগম শামসুন্নাহার, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কামার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্টি’র সভাপতি ও মালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুবুল আলম, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল শামীম আহসান ও বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। খবর ইউএনএ’র।
এবিবিএ’র বিজনেস সামিটের কনভেনার আকতার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অতিথিদের সাথে অন্যান্যের মধ্যে মূল মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন বিজেএমএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআই’র সহ সভাপতি শফিকুল ইসলাম, আইপি টিভি রেডিঅ্যান্ট’র সিইও সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী, জেবিবিএ নিউইয়র্ক’র সভাপতি ও সাপ্তাহিক আজকাল-এর প্রধান সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ জিকু, এবারের সামিটের চেয়ারম্যান সৈয়দ রহমান মান্নান, চীফ কো-অর্ডিনেটর শাহ নেওয়াজ, চীফ এডভাইজার ডা. মাসুদুল হাসান, মেম্বার সেক্রেটারী বিলাল চৌধুরী, কো কনভেনার ইমরান কে বুলু ও আব্দুল কাদের মিয়া এবং পিপল এনটেক’র সিইও ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিফ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বিশিষ্ট রাজনীতিক ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট সোলেমান আলী। এরপর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর বাংলা ভাষা আন্দোলন ও একাত্তুরের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবিবিএ’র বিজনেস সামিটের মেম্বার সেক্রেটারী বিলাল চৌধুরী এবং এই সামিটের লক্ষ্য/উদ্দেশ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন এবিবিএ’র বিজনেস সামিটের কো কনভেনার ফরিদ আলম। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জেবিবিএ নিউইয়র্ক’র সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ জিকু, বিজনেস সামিটের উপদেষ্টা ও জেবিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম, চীফ কো-অর্ডিনেটর শাহ নেওয়াজ, কো কনভেনার আব্দুল কাদের মিয়া, এটর্নী পেরী ডি সিলভার এবং পিপল এনটেক’র সিইও ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিফ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশিষ্ট উপস্থাপক আশরাফুল হাসান বুলবুল। বিশেষ সহযোগিতায় ছিলেন বিজনেস সামিটের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর আতিকুল ইসলাম জাকির ও জয়েন্ট মেম্বার সেক্রেটারী এএফ মিসবাহউজ্জামান।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্র আর পরিকল্পনা নিয়ে দেশ পরিচালনা করছেন বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। ফলে উন্নয়ন আর অগ্রগতির মধ্য দিয়ে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। দেশে বিনিয়োগের সময় এখন।
ডা. দীপু মনি তার বক্তব্যের শুরুতে এবিবিএ’র বিজনেস সামিটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যকার নেটওয়ার্ক জোরদার হবে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তা আর আমাদের বলার দরকার নেই। এখন সারাবিশ্বই বাংলাদেশের উন্নয়ন/অগ্রগতির কথা বলছে। সরকারের উদ্যোগে ব্যবসায় বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলেই জাপান সহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ গড়াই সরকারের কাজ।
ডা. দীপু মনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, যোগ্যতা আর সাহসের বলেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সাহসের পিছনের মানুষ দেশ ও প্রবাসীদের সাহস ও সমর্থন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়ীক গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, আবেগের বসে দেশ নিয়ে ভুল মন্তব্য করা ঠিক নয়। দেশেরই সুনাম নষ্ট হয় এমন করা কারো উচিৎ নয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী মেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন। তিনি বলেন, প্রতিকুলতার মধ্য দিয়েই ব্যবসা-বাজিন্য সহ সব কিছুই করতে হয়। চ্যালেঞ্জ ছাড়া সফলতা আসে না। সরকারের নানা উদ্যোগে সামনে দেশের শিল্প-বাণিজ্যে স্বর্ণালী সময় আসছে। তিনি সজিব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধে প্রবাসীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নানা অপপ্রচারের শিকার বাংলাদেশ। এসব থেকে সাবধান থাকতে হবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, সরকার প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রবাসীদের প্রেরীত রেমিটেন্সের কারণেই দেশ আর্থিভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে। এজন্য সরকার প্রবাসীদের ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে। দেশ না থাকলে আমরাও থাকবো না, বাঁচবো না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন আর ‘ডিজিস্টার বাংলাদেশ নয়, জিজিটাল বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী ভবন হয়েছে, কনস্যুলেটেরও স্থায়ী ভবন হবে।
আব্দুল মতলুব আহমেদ বলেন, সরকারের সঠিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন আর অগ্রগতি দেখে বিদেশীরা বলছে, ‘বাংলাদেশ মিরাকল কান্ট্রি’। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ৭০ ভাগ প্রইভেটাইজেশনে আর ৩০ ভাগ সরকারের হাতে। দেশের সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বুরোক্রেসী মনোভাব চলে গেছে। সরকার ব্যবসার দিকে জোর দিচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্ভয়ে বিনিয়োগ করার মতো পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে আরো উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার।
ফরিদ আলম তার বক্তব্যে এবিবিএ ও এফবিসিসিআই’র যৌথ উদ্যোগে দেশে-প্রবাসে ব্যবসা জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং ভ্যাট আইন সংশোধন বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দেশের ১০০ ইকোমিক জোনে প্রবাসী ব্যবসায়ীদের কোটা বরাদ্ধের দাবী করেন।
বিলাল চৌধুরী তার বক্তব্যে অষ্টমবারের মতো বিজনেস সামিট সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই সামিটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যকার সুসম্পর্ক আরো জোরদার হবে এবং ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধানে ভূমিকা রাখবে।
প্ল্যাক প্রদান: নিউইয়র্কে ব্যবসায় সফলতার জন্য অনুষ্ঠানে ১০জন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীকে এবিবিএ’র পক্ষ থেকে প্ল্যাক প্রদান করা হয়। প্ল্যাক প্রাপ্তরা হলেন- মাকসুদুর রহমান, শিবলী নোমানী, রোক্সানা ফারুক, খোকন উদ্দিন ববি, আমজাদ হোসেন সেলিম, খায়রুল আসলাম কোকন, জাকির এ খান, আব্দুল কাদের মিয়া, জয়নাল আবেদীন, সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী।
এছাড়াও তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্মারক প্ল্যাক প্রদান করা হয়। এরা হলেন- কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, এফবিসিসিআই’র সভাপতি আব্দুল মতলুব আহমেদ ও এনবিআর-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজিবুর রহমান। প্ল্যাক প্রাপ্তরা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কাছ থেকে প্ল্যাক গ্রহণ করেন। তবে খোকন উদ্দিন ববি ও জয়নাল আবেদীন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। জয়নাল আবেদীনের পক্ষে তার প্ল্যাক গ্রহণ করেন আবু নাসের।
মন্ত্রীর জন্মদিন পালন: প্ল্যাক প্রদান পর্বেন আগে মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে কেক কাটা হয়। মঞ্চে অতিথি ও এবিবিএ’র কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে মন্ত্রী কেক কাটেন।
ভাষা সৈনিক শামসুল হুদা, ক্যালিফোর্নিয়ার লসএঞ্জলেসে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল প্রিয়তোষ সাহা, এনআরবি’র শেকিল চৌধুরী ছাড়াও অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের কয়েকশ ব্যবসায়ী সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। ছবি: নিহার সিদ্দিকী