তুমুল হট্টগোলে জেবিবিএ’র সাধারণ সভা মুলতবী : সভাপতির দু:খ প্রকাশ

- প্রকাশের সময় : ১০:৪০:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০১৭
- / ৯৪৮ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়া-নেয়াকে কেন্দ্র করে তুমুল হট্টগোলে মুলতবী হয়ে গেছে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন-জেবিবিএ’র বার্ষিক সাধারণ সভা। নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন জেবিবিএ’র বার্ষিক সাধারণ সভা।
সিটির জ্যাকসন হাইটসের খাবার বাড়ি পালকি পার্টি সেন্টারে গত ২৩ মে মঙ্গলবার এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেবিবিএ’র সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ জিকো। পবিত্র কোরআন তেলোয়াতের পর সভায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম ড. মনসুর খান, ডিসকো রেকর্ডিংয়ের কর্নধার মরহুম মো. শাহীন, ট্যাক্স প্রিপেয়ারার মরহুম মো. হুমায়ুন এবং প্রয়াত রাসেল ঠাকুরকে স্মরণ করা হয়। এরপর সভায় বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন সাধারণ সম্পাদক তারেক হাসান খান।
সভায় বক্তব্য রাখেন জেবিবিএ’র প্রধান উপদেষ্টা মহসিন ননী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাঈদ রহমান মান্নান, বাংলাদেশ সোসাইটির সহ সভাপতি আব্দুর রহীম হাওলাদার, সাবেক সভাপতি মো. মহসীন মিয়া, সাবেক সভাপতি পিয়ার মোহাম্মদ, সিনিয়র সহ সভাপতি শাহনেওয়াজ, সহ সভাপতি মোল্লা এম এ মাসুদ, যুগ্ম-সম্পাদক ফাহাদ সোলাইমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক হাসান জিলানী, ট্রিপল-এ এর স্বত্ত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম, ব্যবসায়ী আবুল কাশেম, ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান টুকু, সদস্য মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের পর জেবিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিগত নির্বাচনে সভাপতি পদে পরাজিত প্রার্থী আবুল ফজল মো. দিদারুল ইসলাম দিদার সাধারণ সম্পাদকের এই রিপোর্ট নিয়ে বিশেষ করে আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেন এবং রিপোর্টটি মানতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, এই রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য নয়। এ সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে গালাগালি করতে থাকেন। এই পর্যায়ে গ্লোবাল এনওয়াই ট্রাভেলসের স্বত্ত্বাধিকারী মির্জা এম জামান শামীম ফ্লোর নিয়ে কথা বলতে চাইলে তাকে বাধা দেন দিদারুল ইসলাম। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা মহসিন ননী সভা মুলতবী করার প্রস্তাব দেন। এতে দিদার প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘সভা মুলতবী করার আপনি কে?’ উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উত্তেজনা দেখা দেয় সভা স্থলে।
সভায় জাকারিয়া মাসুদ জিকো বলেন, জ্যাকসন হাইটস এখন যেকোনো সময়ের তুলনায় ব্যস্ততম স্থান। গত দেড় বছরে আমরা এখানকার ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা বিধানে যথাসাধ্য কাজ করেছি। জেবিবিএ সদস্য ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রিসিংক্ট ১১৫ এর সাথে প্রতিমুহূর্তে আমাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। প্রিসিংক্টের সাথে জেবিবিএ’র সম্পর্কও খুবই আন্তরিক।
জিকো বলেন, পুলিশের সাথে জেবিবিএ’র নয় বার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। এসব সভায় হেইট ক্রাইম, সিকিউরিটি ইস্যু, সেক্স ক্রাইম, গ্যাং ফাইট, সাবওয়ে ক্রাইমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা চাঞ্চল্যকর অপরাধমূলক ঘটনা নিয়ে প্রিসিংক্টের কমান্ডিং অফিসার মিশেল ইরিজ্যারি ও পূর্বের কমান্ডিং অফিসার হ্যানেছির সাথে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সুফল ব্যবসায়ীরা পেয়েছেন। এভাবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে জেবিবিএ’র বর্তমান কমিটি ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা এবং নিরবছিন্ন ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রয়াস চালাচ্ছে।
বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করে সাধারণ সম্পাদক তারেক হাসান খান ব্যবসায়ীদের স্বার্থ ও পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে কমিটির কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, জ্যাকসন হাইটেসের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে এক শ্রেণীর আবাঞ্চিত গ্রাহক যারা যখন তখন এসে উৎপাত করতো এবং বিল পরিশোধ না করে অথবা পন্য ক্রয় করে মূল্য পরিশোধ না করে উপরোন্তু রেস্টুরেন্ট অথবা গ্রোসারী কর্মী, বিশেষ করে নারী কর্মীদের সাথে অশোভন আচরণ করে কেটে পড়তো। আমরা এই ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক প্রতিকার হিসাবে সিটির পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে খুব দ্রুততার সাথে এবং শক্ত হাতে তা মোকাবেলা করে সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হই। পুলিশের মাধ্যমে তাদের এলাকাতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয় এবং এলাকায় দেখা মাত্র তাদেরকে গ্রেফতার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এরপর থেকে এই উৎপাত কমে যায় এবং ব্যবসায়ীদের ব্যবসা কেন্দ্রে সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসে। তিনি বলেন, নেপালি এবং তিব্বতী দুষ্কৃতকারীদের উৎপাতে যখন বাঙালী ব্যবসায়ীরা দিশেহারা ঠিক তখনই আমাদের হস্তক্ষেপে ও পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সক্রিয় সহযোগিতায় আমরা এই দলের ৯ জনকে গ্রেফতার ও সাজা ভোগ করাতে সক্ষম হই। উল্লেখ যে, তাদের ব্যাপারে আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণ পুলিশ প্রসাশনকে দিয়েছি। যার ফলশ্রুতিতে পুলিশের এই দলটিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং জ্যাকজন হাইটসের ব্যবসায়ীরা এখন সুস্থ ও সুন্দর ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
জেবিবিএ’র পথমেলা প্রসঙ্গে তারেক হাসান খান বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের পরও আমরা একটা সার্থক এবং সুন্দর পথমেলা উপহার দিতে সক্ষম হয়েছি। যার ফলে জ্যাকসন হাইটসের অর্থনৈতিতে আরো গতি এসেছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, গত দুটি বছর জ্যাকসন হাইটসে পথমেলা না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে গভীরভাবে হতাশার জন্ম নিয়েছিল। পথমেলা আমাদের ব্যবসায়ীদের একটি প্রাণের দাবী। এই লক্ষ্যে ২০১৭ সালে মেলার জন্য ইতিমধ্যেই প্রশাসনের নিকট অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
তারেক হাসান খান আরো বলেন, আমরা একটি সফল ইফতার ও বাংলা নববর্ষ (১লা বৈশাখ) অনুষ্ঠান করেছি ২০১৬ তে। আমরা স্নো ক্লিন কর্মসূচির মাধ্যমে জ্যাকসন হাইটসের রাস্তা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে সফল হই। যা দৃষ্টান্তের সৃষ্টি করেছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।
আগামী ৬ মাসের মধ্যে যেসব কর্মসূচি জেবিবিএ হাতে নিয়েছে সেগুলো প্রসঙ্গে তারেক খান বলেন, রমজান মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ইফতার পার্টি অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই লক্ষ্যে আমরা ভেন্যু নির্ধারণ সম্পন্ন করেছি। জেবিবিএ’র সর্ববৃহৎ আয়োজন পথ মেলার জন্য সেপ্টেম্বর ২০১৭-এর মাঝামাঝি সময়ে দিন ধার্য্য করা হয়েছে এবং সেই লক্ষ্যে নিউইয়র্ক সিটিতে সময় অনুযায়ী আবেদন দাখিল করা হয়েছে। ডাইভারসিটি প্লাজায় আমাদের বাংলাদেশীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেকোনো বিশেষ দিন আয়োজনের সুবিধার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এছাড়াও সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনে বর্তমান কমিটির কার্যক্রমের নানা বিষয় তুলে ধরা হয়।
সভায় আর্থিক প্রতিবেদন পেশ করেন অর্থ সম্পাদক মো. সেলিম হারুন। প্রতিবেদনে তিনি সংগঠনের আয়-ব্যয়ের হিসাব বেশ স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। সদস্যদের যে কেউ হিসাব চাইলে তাকে হিসাব দেখানো হবে বলেও জানান তিনি। হারুন বলেন, পুরো বিশ্লেণমূলক হিসাব পেশ করতে কিছু সময় প্রয়োজন। আগামী সভায় তা উপস্থাপন করা হবে।
সভায় উপস্থিত কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা স্বতস্ফূর্ত আলোচনায় অংশ নেন। সভায় বিস্তরিত আলোচনার স্বার্থে পুনরায় আরেকটি সভার আয়োজন করার প্রস্তাব করেন সাধারণ সদস্যরা। জবাবে সভাপতি বলেন, পূর্ণাঙ্গভাবে সব কিছু উপস্থাপন করতে কিছু সময় প্রয়োজন। এসময় বর্তমান কার্যকরী কমিটির কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে তার জন্য দু:খ প্রকাশ করেন সভাপতি। তিনি শিগগির আবারো সভা আহ্বানের আশ্বাস দেন। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)