ড. সিদ্দিক কখনো ছাত্রলীগ করেননি, অবিলম্বে পদত্যাগ চাই
- প্রকাশের সময় : ০৮:০৬:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৭
- / ৬৭৮ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র জাসদ-এর সভায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের ঘটনা এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান প্রদত্ত বক্তব্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ফূঁসে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ। ছাত্রলীগ সম্পর্কে ড. সিদ্দিকুর রহমানের বক্তব্যের প্রতিবাদে গত ১২ নভেম্বর রোববার সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ বলেছেন ড. সিদ্দিকুর রহমান কখনো ছাত্রলীগ করেননি। তিনি মিথ্যাচার করছেন, ইতিহাস বিকৃত করছেন। বঙ্গবন্ধু আর নেত্রী (শেখ হাসিনা) সহ ছাত্রলীগ নেতাদের অসম্মানিত করেছেন। তারা অবিলম্বে ড. সিদ্দিকুর রহমানের পদত্যাগ দাবী করেন।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ইত্যাদি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদ সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা। খবর ইউএনএ’র।
সাংবাদিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও বাকসু’র সাবেক জিএস ড. প্রদীপ কর, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান ও ড. মহসিন আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহীম বাদশা, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, প্রচার সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য হাজী এনাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শাহ বখতিয়ার, জনসংযোগ সম্পাদক ও সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাজী কয়েস প্রমুখ।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: নিউইয়র্কে ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ যুক্তরাষ্ট্র শাখার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দকে অশালীন ভাষা ব্যবহার করে দেশ এবং জাতির সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ৭১’র স্বাধীনতা, ৬৬’র ছয় দফা, ১১ দফা, ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অদ্যাবধি সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যাদের গাত্রদাহের কারণ তাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ করার আর কোন অধিকার নেই। ড. সিদ্দিকের ১/১১ ভূমিকাও রহস্যাবৃত। সম্প্রতি তথাকথিত ফারাক্কা প্রতিরোধ কমিটি অর্থাৎ বিএনপি নেতা আজাহারুল হক মিলন কর্তৃক আয়োজিত সভায় ড. সিদ্দিক বলেন, ‘এখনই সময় ভারত প্রতিরোধের’।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নেত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ সকলের সামনে ঘোষনা দিয়েছিলেন ৯০ দিনের মধ্য একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। ড. সিদ্দিক কৌশলে কার্যকরী কমিটির মিটিং বাতিল করে, নির্বাচনের পূর্বে কোন সম্মেলন হবে না বলে ঘোষনা দেন। কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে নিজেকে ক্ষমতাধর প্রমান করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। বর্তমান জাসদের মূল নেতা হাসানুল হক ইনু জাসদের ভুল স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ড. সিদ্দিকুর রহমান সেই ভুলকে সত্য প্রমাণিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। এটা একটি ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। বর্তমানে জাসদ আমাদের বন্ধুপ্রতিম সংগঠন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মহত্বের মহিমা দেখিয়ে সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে জাসদকে শরীক জোটের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়: নির্বাচনের পূর্বে ড. সিদ্দিকুর রহমানের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে তিনি কার পার্সপাস সার্ভ করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন? আমরা মনে করি ড. সিদ্দিকুর রহমানের ন্যুন্যতম আত্মসম্মান জ্ঞান থেকে থাকলে ‘পাবলিক রিট্র্যাকশন’ ক্ষমার মাধ্যমে পদত্যাগ করা। অন্যথায় ৯০ দিন অতিক্রান্ত হলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক একজন সিনিয়র সদস্যের সভাপতিত্বে নেত্রীর নির্দেশ অমান্য ও দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকায় ড. সিদ্দিকুর রহমানকে ‘তলবী’ সভা ডেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। পাশাপাশি ড. সিদ্দিকুর রহমানকে বগুড়ায় তার নির্বাচনী এলাকা নিয়ে চিন্তা/ভাবনা করতে অনুরোধ করা গেলো। আর সমগ্র বাংলাদেশ নিয়ে নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
সাংবাদিক সম্মেলনে ড. প্রদীপ কর বলেন, মিথ্যা ইতহাস বলা চরম অপরাধ। ড. সিদ্দিকুর রহমান কখনোই ছাত্রীগের সদস্য ছিলেন না। একজন কর্মী বা নেতা সব ইতিহাস জানবেন, তা নয়। কিন্তু মিথ্যা ইতহাস বলা চরম অপরাধ। ড. সিদ্দিক সবসময় মিথ্যা কথা বলছেন, তিনি বারবার মিথ্যা ইতিহাস তুলে ধরছেন। তিনি শুধু আমাদেকেই মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন না, কেন্দ্রকেও ভুল তথ্য দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ১১ ধারায় মোতাবেক আমরা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের জন্য তলবী সভা করতে পারি। ১৫ দিনের মধ্যে সভা না করলে এক মাসের মধ্যে তলবী সভা করার বিধান রয়েছে। তিনি বলেন, জাসদ-এর হটকারী সিদ্ধান্ত ও পরিবেশের কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যার পথ প্রশস্ত হয়।
ড. মহসিন আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রলীগ নেতাদের নেতৃতেই আমরা এক দফার আন্দোলন করেছি। তিনি যুক্তরাষ্ট্র জাসদ-এর সভায় ড. সিদ্দিকের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ করে বলেন, দলের সভাপতি হিসেবে তিনি ছাত্রলীগ সম্পর্কে এমন কথা বলতে পারেন না।
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, ড. সিদ্দিকের কর্মকান্ড সম্পর্কে আমরা কেন্দ্রকে জানিয়েছি। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ঐ সভার ভিডিও পাঠানো হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যে দিবস আওয়ামী লীগ মানে না, পালন করেনা সেই দিবসে ড. সিদ্দিক যান কি করে? তিনি সংগঠনকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছেন। ইতিপূর্বে ড.সিদ্দিক নিউইয়র্কে ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে আয়োজিত এক সভায় বলেছেন শেখ হাসিনাকে দিয়ে কিছু হবে না, প্রয়োজনে ঐ বাধ ভেঙে ফেলা উচিৎ। তাছাড়া ভাসানী ফাউন্ডেশনের সভায় দল বিরোধী বক্তব্য দেন। তিনি বাইচাঞ্জ সভাপতি। আমরা অবিলম্বে তার পদত্যাগ চাই।
কাজী কয়েস বলেন, তৎকালীন মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য ড. সিদ্দিকের স্ত্রী-ই ভিডিও করে তা প্রচার করেন। তিনি তোষামোদকারী নেতা। তিনি একেক সময় একেক কথা বলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু ও নেত্রী (শেখ হাসিনা) সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর কথা বলেন। তিনি সংগঠন মানেন না। ড. সিদ্দিক বলেছেন, ‘তিনি, নেত্রী আর সচিব ওয়াজেদ জয় দল চালান’। তার কর্মকান্ডে আমরা সন্তুষ্ট নই। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হিসেবে আমরা বঙ্গবন্ধু বা ছাত্রলীগ বা ছাত্রলীগের নেতা সম্পর্কে কোন অপমান সহ্য করবো না। নেত্রী বলেছেন, তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিল করতে। সারাদেশে সম্মেলন হলেও যুক্তরাষ্ট্রে হচ্ছে না। নেত্রীর পরিষ্কার নির্দেশনাকে তিনি ভুল বুঝাচ্ছেন। আমরা ৭ নভেম্বর পালন করিনা, অথচ তিনি কিভাবে ৭ নভেম্বরের সভায় যান।
হাজী এনাম বলেন, ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ বলার পরই আমরা নেত্রীর সাথে কথা বলেছি। ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছেন সম্মেলন করতে। আমি উপস্থিত থাকতে না পারলেও জয় থাকবেন’। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করতে হলে গঠনতন্ত্র মানতে হবে। তিনি বলেন, ড. সিদ্দিকুর রহমান গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলেই আমরা তার বিরোধীতা করছি। তিনি দলের অনেক সিদ্ধান্ত মানছেন না। তিনি জীবনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামী লীগও করেনি। দলের গঠনতন্ত্র রক্ষা করতে হবে, আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হবে। দলের সম্মান বাচাঁতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হিন্দাল কাদের বাপ্পা বলেন, বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকি। আমাদের কথা নেত্রীর কাছে পৌঁছতে সময় লাগে। ড. সিদ্দিক চরম পর্যায়ে পৌছে গেছেন। যার কারণে তার বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করতে হচ্ছে। তার (ড. সিদ্দিক) পদত্যাগ করা উচিৎ। তিনি বলেন, আমরা ছাত্রলীগ করে জেল খেটেছি। দল আমাদের রাজনীতির প্রেরনা। ড. সিদ্দিক দলের জন্য লাইবেলিটি। তিনি পদত্যাগ না করলে কেন্দ্রকে জানাবো এবং সাংগঠনিক প্রক্রিয়াতেই আমরা এগিয়ে যাবো। তিনি বলেন, ড. সিদ্দিক একজন অথর্ব। জেলা পর্যায়ের একটি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তিনি ছাত্রলীগ সম্পর্কে এমন কথা বলতে পারেন না। তাকে পদত্যাগ করতে হবে। তার মতো ঘাপটি মেরে থাকা নেতাদের দল থেকে বের করার এখনই সময়।
উল্লেখ্য, গত ৫ নভেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে মামুন’স টিউটোরিয়ালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ‘কতিপয় গর্দভ ছাত্রলীগ নেতার কারণে জাসদের সৃষ্টি হয়। জাসদ সৃষ্টি না হলে বঙ্গবন্ধুর এভাবে মৃত্যু হতো না। বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র তৈরী করেছিল জাসদ। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে বাংলাদেশ আজ সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতো।’
জনাকীর্ণ এই সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে নিউজার্সী আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুজন আহমদ সাজু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদ সদস্য শরীফ কামরুল আলম হীরা, আশরাফ মাসুক, নিউজার্সী আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, শামিম আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুমানা আক্তার, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি দুরুদ মিয়া রনেল ও সাধারণ সম্পাদক সুবল দেবনাথ, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জেড এ জয়, আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল মাহমুদ, আবদুস শহীদ দুদু, সিরাজ সরকার, জিয়াউর রহমান মোরশেদ, নাফিসুর রহমান তুরান, ইলিয়ার রহমান, জালাল আহমেদ, টুটুল আহমেদ, আমিনুল হক পান্না, জিল্লু আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।