জয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী সাদী-মিল্টনকে আইনের আওতায় আনার দাবী
- প্রকাশের সময় : ০৪:৪৭:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০১৬
- / ৭৩৯ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: ইসরাইলে ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির কথিত নেতা মেনদি সাফাদির সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বৈঠক হওয়ার খবরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কথিত উপদেষ্টা জাহিদ এফ সরদার সাদী ও বিএনপি’র এজেন্ট জ্যাকব মিল্টনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে আইনের আওতায় আনার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবী জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি হার্ভার্ড থেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারী জয়ের সাথে তারেক রহমানের তুলনা না করে এহেন অপপ্রচারের মদদদাতা হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দায়ী করে নেতৃবৃন্দ বলেন, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার দায়ে গ্রেফতারকৃত বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর মদদদাতা হিসেবে তাদেরকেও (খালেদা-তারেক) অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনে কাছে সোপর্দ করার দাবী করা উচিৎ। এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ যেকোন খবর পরিবেশনে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখার পাশাপাশি কমিউনিটির ‘ষড়যন্ত্রকারী, বাটপার, দূর্নীতিবাজ, ধোকাবাজ, প্রতারণাকারী, ধান্ধাবাজ’-দের মিডিয়ায় গুরুত্ব না দেয়ার জন্য প্রবাসের সকল বাংলা মিডিয়ায়ার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
‘সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ’-এ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সভায় দলীয় নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত দাবী জানান। গত ১ জুন বুধবার রাতে সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ ‘ইত্যাদি’ পার্টি সেন্টারে এই সভার আয়োজন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ বসারত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদেও সংরক্ষিত ঢাকা-৯ আসনের এমপি শিরিন নাঈম পুনম। সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সভার সঞ্চালক যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। দ্বিতীয় পর্যায়ে সভার কার্যক্রম পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ।
সভায় বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান, সহ-সভাপতি যথাক্রমে মোহাম্মদ আকতার হোসেন, সামসুদ্দীন আজাদ ও লুৎফুল কবীর, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক সোলায়মান আলী, সহ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মালেক, মূলধারার রাজনীতিক খোরশেদ খন্দকার, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আলম, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মমতাজ শাহনেওয়াজ।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের জন সংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকন, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম, গাজীপুরের ভাওয়াল কলেজের সাবেক ভিপি হালিম সরকার, মূলধারার রাজনীতিক মঞ্জুর চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদ সদস্য শরীফ কামরুল হীরা, আব্দুল হামিদ, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ কিবরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সা্েক সভাপতি এজেড জয়, সাধারণ সম্পাদক আল আমীন আকন্দ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক সোলায়মান আলী। এরপর ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধুসহ দেশের সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভায় নিউইয়র্ক ষ্টেট যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সেবুল মিয়া ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রহিমুজ্জামান সুমন সহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় শিরিন নাঈম পুনম এমপি বলেন, ‘জাতির জনক’কে হত্যা আর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে সামরিক ছাউনি থেকে জন্ম নেয়া বিএনপি জনসমর্থন হারিয়ে এখন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ক্ষমতা হারিয়ে তারা বিশেষ করে খালেদা-তারেক কুকুরের মতা ক্ষ্যাপা ধরেছে। তারা ইসরাইলের সহায়তায় ক্ষমতা গ্রহণের চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে এখন তারা বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র জয় সম্পর্কে জঘন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে আর বিভ্রান্ত করা যাবে না।
পুনম এমপি বলেন, সজিব ওয়াজেদ জয় এমন কাজ করতে পারেন না যাতে তার নানা, মা, বোনের বদনাম হয়। তাই তারেকের সাথে জয়ের তুলনা হতে পাওে না। তিনি বলেন, খালেদার নাম মুখে নিতেও ঘেন্না হয়। আর বিএনপির আন্দোলন করার মতো কোন ইস্যু নেই। বিএনপির মাথা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও নেই।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দলের সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর উদ্যোগেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানোর জন্য তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় আব্দুস সামাদ আজাদ ‘সাফাদীর সাথে জয়ের বৈঠক’-এর খবরকে ভুয়া, মিথ্যা, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ এবং এই খবরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জাহিদ এফ সরদার সাদী একজন প্রতারক, দূর্ণীতিবাজ, বাটপার। ফ্লোরিডাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতারণা, জালিয়াতি, ধাপ্পাবাজির ঘটনায় গত এক দশকে সে কমপক্ষে ২৯ বার জেলে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ৬ জন কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জাল করে বিএনপির পক্ষে এবং শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি তৈরী করেছিলো এই সাদী। অপরদিকে জ্যাকব মিল্টনও একজন দূর্নীতিবাজ, জেলখাটা মানুষ। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ঠিকাদারি করা অবস্থায় দুর্নীতির দায়ে অপসারিত হওয়ার অপকর্মের বিচার এড়াতে পালিয়ে নিউইয়র্কে এসে নানা ধরনের জঘন্য অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। একটি মর্টগেজ কোম্পানীর নামে সে বেশ ক’জন প্রবাসীর সর্বনাশ করে কয়েক বছর জেলে ছিল। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। তাদের কাজ দূর্নীতি আর অন্যকে ফাঁসিয়ে নিজের আখের গোছানো। তিনি বলেন, বাংলাদেশী পাসপোর্টারী ‘সাদী-মিল্টন’ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে জঘন্য অপপ্রচারের অংশ হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রস্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে হাস্যকর একটি প্লট তৈরী করেছে। তারা জয়ের গায়ে কালো রং মাখিয়েছে। তাদেও ষড়যন্ত্র ডিজিটাল কারসাজি। সাদী-মিল্টন উভয়ের বাড়ি বরিশাল এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার নামেও ইমিগ্রেশনের সাথে প্রতারণা করেছে। তাদের ব্যাপারে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে খোঁজ-খবর নেয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও দাবী জানান তিনি।
সামাদ আজাদ বলেন, বাংলাদেশে এযাবতকালের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি হচ্ছেন তারেক রহমান। লন্ডনে পালিয়ে থেকে সে যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্ত আর বাটপার হিসেবে পরিচিতদের দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের ইমেজ বিনষ্টের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
ডা. মাসুদুর রহমান বলেন, টাইম টেলিভশনের ‘জয়-সাফাদী’-কে নিয়ে টক শো’র কথা শুনে আমি সাথে সাথেই তীব্র প্রতিবাদ করেছি, নিন্দা জানিয়েছি। সম্মিলিতভাবে আমাদেরকে ষড়যন্ত্রকারী, বাটপারদেরকে বয়কট করতে হবে।
আকতার হোসেন বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সাদী-মিল্টন যে অপপ্রচারে নেমেছে তা বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে সক্ষম হয়েছে। তাদের প্রকৃত মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। ইসরাইলের সহায়তা নিয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের হোতা হিসেবে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী গ্রেফতার হবার পরই জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হিসেবে হার্ভার্ড থেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারী জয়ের বিরুদ্ধে নেমেছে তারা। জয়ের সাথে কোন দলের কারোর তুলনা হয় না। তিনি বলেন, প্রয়োজনে বিবিসি’র বিরুদ্ধেও অ্যাকশন নেবো।
সামসুদ্দীন আজাদ বলেন, জয়ের ইমেজ নষ্ট করতে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের মদদেই সাদী-মিল্টন জঘন্য অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। তিনি বলেন, জয়ের সাথে কারো তুলনা হয় না।
লুৎফুল করিম বলেন, সজিব ওয়াজেদ জয় সৎ চরিত্রের অধিকারী একজন ভালো মানুষ। আমরা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা বলতে পারি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগ নেই। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ।
ফারুক আহমেদ বলেন, বলেন, এর আগে যখন সজিব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার আতœসাতের ভুয়া অভিযোগ সম্বলিত খবর প্রকাশিত হয়েছিলো তখন যদি সেই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারতাম তাহলে আজকে জয়ের বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র করার সাহস দেখাতে পারতো না, আমাদেরকেও প্রতিবাদ সভা করতে হতো না। তিনি বলেন, আইনের দেশে থেকে আমাদেরকে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। এব্যাপারে তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দেও সুদৃষ্টি কামনা করেন।
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র নতুন নয়। তিনি বলেন, টাইম টিভি-তে সাফাদী’র সাক্ষাৎকার আমি দেখিছি। সেখানে টাইম টিভি’র আবু তাহের ভাই’র প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি সাফাদী যে জয়ের সাথে তার কোথায়, কবে, কখন সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়াগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকরা হলেন জাতির বিবেক, সমাজের আয়না। তারা কার পক্ষে কথা বলবেন, কাদের গুরুত্ব দিবেন তা ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে।
ফরিদ আলম সজিব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ অতীতের মতো আগামী দিলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যেকোন ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবে।
মমতাজ শাহনেওয়াজ বলেন, টাইম টেলিভিশনের টক শোটি দেখার পর আমি সজিব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমরা মিডিয়ার কাছে সঠিক তথ্য চাই।
সভায় বক্তাদের কেউ কেউ টাইম টেলিভিশনে প্রচারিত জ্যাকব মিলন্টনের অনুষ্ঠানটি বন্ধ করারও দাবী জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ বসারত আলী বলেন, সজিব ওয়াজেদ জয় (তার ভাষায় জয় মামা) আমাদের গর্ব, আমাদেও অহংকার, আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা। তার চরিত্র হননের চেষ্টা করা হলে আমরা বরদাস্ত করবো না।