লন্ডন: বাংলাদেশে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। এটি আরেমরিকার একটি অপরাধ তদন্ত সংস্থা। এই তদন্ত সংস্থার এক সোর্সকে ঘুষ দিয়ে তথ্য সংগ্রহের অভিযোগে এক বাংলাদেশীর ৪২ মাসের কারাদন্ড হয়েছে। সম্প্রতি আমেরিকার একটি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে এই দন্ড হয়। আমেরিকায় যখন এই দন্ডের ঘটনা ঘটে, তখন এফবিআই-এর অপর একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে ছিল। একুশের বই মেলায় অভিজিত রায় নামে একজন ব্লগারের হত্যাকান্ড তদন্তে এসেছিল এফবিআই। তারা ডিবি অফিসে গিয়ে ১০ মিনিটে ফেরত এসেছে এরকম সংবাদ পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে। সংবাদ গুলোতে বলা হয়েছে এফবিআই প্রতিনিধিরা এই হত্যাকান্ডের তদন্তে এসে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনে গিয়েছে। পরিদর্শন করেছে ঘটনাস্থল। সিআইডির সাথে দীর্ঘ বৈঠক করলেও ডিবিতে প্রবেশ করেই আবার ফিরে গেছে।
এই দুইটি সংবাদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহে চেস্টাকারী যুবকের দন্ডের খবরটি। তোলপাড় চলছে এফবিআই সোর্সকে ঘুষ প্রদান করে তথ্য সংগ্রহ প্রচেস্টার অভিযোগে বাংলাদেশী যুবকের কারাদন্ডকে ঘিরে। ঘুষের বিনিময়ে তথ্য সংগ্রহ প্রচেস্টার সংবাদটি নতুন কিছু নয়। ২০১৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশী ওই যুবক গ্রেফতার হয়েছিল। তখন খবরে প্রকাশ হয়েছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের এক নেতার তথ্য সংগ্রহ করতে ঘুষ প্রদানের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের কিছু দিন পর জামিন মঞ্জুর হয়েছিল তাঁর। তদন্ত শেষে সম্প্রতি রায় হয়েছে। বিচার চলাকালীন অবস্থায় ওই যুবক ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের প্রচেস্টার বিষয়টি স্বীকার করে নেয়। দোষ স্বীকার করায় তাঁকে ৪২ মাসের কারাদন্ড দেয় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। আমেরিকান আইনে তাদের বিচার ব্যবস্থা এ দন্ড দিয়েছে।
কিন্তু এই ঘটনাকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাজানো হয়েছে ভিন্ন তথ্য দিয়ে। শিরোনাম করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ প্রচেস্টার অভিযোগে দন্ড বলে। মূল বিষয়কে আড়াল করে বাংলাদেশের খবরের কাগজ গুলো সজীব ওয়াজেদ জয়কে টেনে এনেছে সামনে। ঘটনার সঙ্গে লিঙ্ক করেছে ভিন্নভাবে। সজীব ওয়াজেদ জয়-এর লিঙ্ক ঘটনার সাথে ছিল। তবে সেটা কাগজে কলমে দৃশ্যমান ছিল না। দন্ডিত যুবক সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরনের পরিকল্পনা বা চেস্টা করেছিলেন এরকম কোন ঘটনার সঠিক তথ্য কোথায়ও পাওয়া যায়নি। যেটুকু পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে এফবিআই-এর কাছে কিছু তথ্য রয়েছে। সেই তথ্য গুলো অন্যায় ও অবৈধ উপায়ে পাওয়ার চেস্টা করেছিলেন ওই যুবক।
ভোটার বিহীন নির্বাচনে গঠিত জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে এ নিয়ে। সংসদের সময় এবং রাষ্ট্রের অর্থ খরচ হয়েছে এতে। সংসদে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী দলগুলোর সদস্যরা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে এর জন্য দায়ী করেছেন। মূল কথা আমেরিকায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেস্টা শুধু গণমাধ্যমে নয়, সংসদেও হয়েছে। অসত্য তথ্য দিয়ে সাজানো একটি ঘটনাকে কিভাবে বাজারজাত করা যায় তাঁর জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে এই সংবাদটি।
এফবিআইকে ঘুষ প্রদান করে তথ্য সংগ্রহ প্রচেস্টার অভিযোগের বিষয়টি ২০১৩ সালের। রিজভী নামের বাংলাদেশী বংশদ্ভোত যুবক এবং এফবিআই-এর এক সোর্সকে আটক করা হয়েছিল তখন। আটকের সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহের চেস্টা চালিয়েছিলেন তারা। ওই ব্যক্তি সম্পর্কে এফবিআই বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেই তথ্য গুলো পাওয়ার চেস্টা করেছিলেন। তখন আমেরিকার সংবাদপত্র গুলোতে এরকম খবর-ই প্রকাশ হয়েছিল। বাংলাদেশের সংবাদপত্র গুলোতেও তখন ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছিল সংবাদটি। কিন্তু ওই গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিটি কে তা নিয়ে ছিল নানা জল্পনা কল্পনা। কারন তখন কোন সংবাদপত্রে জয়-এর নাম আসেনি। শুধু বলা হয়েছিল একজন গুরুত্বপূর্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির তথ্য পাওয়ার চেস্টা করেছিলেন।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত যুবকের পিতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি জাসাসের সহ-সভাপতি। এই সূত্র ধরে সবারই তখন ধারনা হয়েছিল সজীব ওয়াজেদ জয়-এর সম্পর্কে এফবিআই-এর কাছে থাকা তথ্য সংগ্রহের চেস্টা করা হয়েছিল। এই ধরনা থেকেই উঠে আসে সজীব ওয়াজেদ জয়-এর নাম। এর বেশি কিছু নয়। ঘটনার সাথে জড়িয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়-এর নামটি শুরু থেকেই ছিল ধারনা প্রসূত। কাগজে কলমে নয়।
এদিকে এফবিআই ঘটনা তদন্ত শেষে আদালতে দাখিল করা রিপোর্ট এবং কারাদন্ডের রায়ে কোথায়ও সজীব ওয়াজেদ জয়-এর নাম নেই। বাংলাদেশের খবরের কাগজ গুলো কিভাবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ প্রচেস্টার কাহিনী জানিয়েছেন সেটা আল্লাই মালুম। আমাদের দেশে গণমাধ্যম গুলো কিভাবে তিলকে তাল করে এর প্রমান আবার পাওয়া গেল এই ঘটনার সংবাদে। ইন্ডিয়া ও আওয়ামী পন্থি গণমাধ্যম গুলোর কাজই হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চরিত্র হনন করা। এটাই আবারো প্রমান করল তারা এই ঘটনার মাধ্যমে। যেই ঘটনার প্রতিবেদনে সজীব ওয়াজেদ জয়-এর নাম-ই নেই, সেই ঘটনার নায়ক বানানো হল তাঁকে। কি চমৎকার বাংলাদেশের গণমাধ্যম। এসব দেখার পর লজ্জা হয় নিজেকে সাংবাদিক হিসাবে পরিচয় দিতে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘বাসস’ এই সংবাদটি প্রথমে প্রচার করে। বাসস-এর সংবাদের সূত্র ধরে অন্যন্য গণমাধ্যম গুলো সেদিন শিরোনাম করেছে সজীব ওয়াজেদ জয়-এর অপহরণ চেস্টার ভূয়া সংবাদটি। এই সংবাদের সূত্র ধরেই ভোটার বিহীন নির্বাচনে গঠিত সংসদে রাষ্ট্রীয় টাকা খরচ করে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করা হয়েছে। বলা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ইন্দনেই সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরনের প্রচেস্টা পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তাই তাদের বিচার চাওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম গুলো একবারও কি খোজ নিয়ে দেখার চেস্টা করেছে আসল ঘটনাটি কি ছিল! এফবিআই কি রিপোর্ট দিয়েছে আদালতে। দোষ স্বীকার করে রিজভী আদালতের কাছে কি বলেছে। রায় হয়ে যাওয়ার পর এগুলো পাবলিক প্রপার্টি। কিসের ভিত্তিতে একজনের দন্ড হয়েছে সেটা দেখার অধিকার সবারই রয়েছে। গণমাধ্যম গুলোর কি একটু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয় উচিত ছিল না এ ব্যাপারে!
মূল কথা হচ্ছে এফবিআই-এর কাছে নিশ্চয়ই কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল। যেই তথ্য গুলো আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে কেন্দ্র করে সংগ্রহ করেছে এফবিআই। এই তথ্য গুলো-ই সংগ্রহ করতে চেয়েছিলেন দন্ডিত হওয়া ওই যুবক। এই তথ্য থাকার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই ইন্ডিয়া ও আওয়ামী পন্থি গণমাধ্যম গুলোর অপচেস্টা। তথ্য থাকার বিষয়টি আড়াল করতেই অপহরণ চেস্টার গল্পা সাজানো হয়েছে।
লেখক: দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত