বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী নিউইয়র্কে নানা কর্মসূচজীর মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে। কমিটি বিহীন যুক্ততরাষ্ট্র বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গ ও সংগঠনের ব্যানারে নিউইয়র্কে আয়োজিত কর্মসূচীর মধ্যে ছিলো দোয়া মাহফিল, আলোচনা, তবারক বিতরণ প্রভৃতি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কে ব্যতিক্রমী দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ করেছে অরাজনৈতিক সংগঠন ‘জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসী’। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অঙ্গ সংগঠন আরাফাত রহমান কোনো স্মৃতি পরিষদ পৃথক কর্মসূচী গ্রহণ করে।
শহীদ জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসী প্রতি বছরের মতো এবছরও গত ৩০ মে মঙ্গলবার জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ স্ট্রীট (৭৩ স্ট্রিটে) নবান্ন রেস্টুরেন্টের সামনে দোয়া মাহফিল শেষে তবারক বিতরণ করে। এতে দেশী-বিদেশী সর্বস্তরের বিপুল মানুষ তবারক গ্রহণ করে। শাহাদাতবার্ষিকী পালন কমিটির আহ্বায়ক দেওয়ান মনিরের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমানত হোসেন আমানের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করা হয়। উল্লেখ্য, জ্যাকসন হাইটসের কর্মসূচী সফল করতে দেওয়ান মনিরকে আহবায়ক, সারওয়ার খান বাবুকে প্রধান সমন্বয়কারী, আবুল কাশেমকে সমন্বয়কারী এবং আমানত হোসেন আমানকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসী এ আয়োজনের মাধ্যমে শহীদ প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। প্রবাসে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমনই হওয়া উচিত। তিনি বলেন, এ ধরনের চর্চা না থাকলে বাংলাদেশীদের মধ্যে সম্প্রীতি নষ্ট হবার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ থাকার কারণে আজ জ্যাকসন হাইটস প্রবাসী বাংলাদেশীদের দখলে। বাংলাদেশী কমিউনিটি নিউইয়র্কে আধিপত্য বিস্তার করছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসীর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী নমি বলেন, আমাদের মধ্যে ভিন্নমত থাকতে পারে। ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ থাকতে পারে। কিন্তু আমরা জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসীর যে রাজনৈতিক দর্শন থাকুক না কেন, আমরা চাই সবার মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বজায় থাকুক। রাজনৈতিক কারণে আমাদের মধ্যে কোনো বিভাজন তৈরি না হতে পারে এজন্য বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের আমরা স্বরণ করি। এ কারণে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবাষির্কীতে দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণের আয়োজন করেছি।
এদিকে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে ৩০ মে মঙ্গলবার বিকালে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মূলধারার রাজনীতিক গিয়াস আহমেদ।
সংগঠনের সভাপতি শাহাদাত হোসেন রাজুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, বিএনপি নেতা জামাল আহমেদ জনি, আনোয়ার হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, সৈয়দা মাহমুদা শিরীন, এম এ বাতিন, মাওলানা অলিউল্লাহ আতিকুর রহমান, হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, সাঈদুর রহমান, জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দী, দেওয়ান কাউসার, মিয়া আলিম পাখি, রিয়াজ রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে গিয়াস আহমেদ বলেন, দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনে প্রবাসীদের বিশেষ একটি মর্যাদা তৈরী হয়েছে। হোয়াইট হাউজ, কংগ্রেস, স্টেট গভর্ণর, সিটি কাউন্সিল থেকে মেয়র অফিসে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন অনেক প্রবাসী। এমনি অবস্থায় শেখ হাসিনা ও তার সরকারের দুঃস্কর্মের কারণে আজ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা স্যাংশনের ঘটনায় নতুন প্রজন্মের প্রবাসীরাও বিব্রত এবং আমরা প্রথম প্রজন্মের আমেরিকানরা লজ্জিত হচ্ছি প্রতিনিয়ত। এজন্য আমরা ধিক্কার জানাই এই সরকারের প্রতি। গিয়াস আহমেদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এখন সময়ের প্রয়োজনেই এসেছে। তাই আমরাও দৃঢ়কন্ঠে উচ্চারণ করতে চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে নির্বাচন হতে দেব না। জনগণের ভোট জনগণ যাকে ইচ্ছা তাকে দেবে। আর সে নির্বাচনেই দেশপ্রেমিক-গণতন্ত্রের পূজারি এবং সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
অপরদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ২৯ মে সোমবার বিকালে নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও মূলধারার রাজনীতিক গিয়াস আহমেদ। জ্যাকসন হাইটসে অনুষ্ঠিত এই দোয়া-মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহবায়ক মাওলানা অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব সাঈদুর রহমান সাঈদ।
তবারক বিতরণের প্রাক্কালে জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণ ও বর্তমানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলোকে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা মার্শাল মুরাদ, পারভেজ সাজ্জাদ, হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, আনিসুর রহমান, সোহরাব হোসেন, বদিউল আলম, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, বদরুল হক আজাদ, মোহাম্মদ নাসিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান, কাজী আসাদউল্লাহ, শাহাদৎ হোসেন রাজু, কাউসার আহমেদ, আশরাফ হোসেন, আনোয়ার হোসেন, নীরা রাব্বানী প্রমুখ।