জাহাঙ্গীর আলম আমাকে প্রেরণা দিয়ে তিনিই চলে গেলেন : সাদেক হোসেন খোকা
- প্রকাশের সময় : ১১:০৮:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪
- / ১০৮১ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত মুখ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোনিয়েশন ইউএসএ’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও জাহাঙ্গীর ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম স্মরণে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, মরণব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত জাহাঙ্গীর আলম গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ম্যানহাটানস্থ বিশ্বখ্যাত ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার স্নোন কেটারিং মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ৪ ডিসেম্বর বৃহস্প্রতিবার বাদ জোহর জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে (জেএমসি) মরহুম জাহাঙ্গীর আলমের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। একইদিন অপরাহ্নে তার মরদেহ লং আইল্যান্ডস্থ ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল গোরস্থানে বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্্ক নিউইয়র্ক ক্রয়কৃত কবরে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
মরহুর জাহাঙ্গীর আলমের বিদেহী আতœার শান্তি কামনায় গত ৬ ডিসেম্বর শনিবার বাদ এশা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মরহুমের শুভানুধ্যায়ীদের উদ্যোগে আয়োজিত দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন জেএমসি’র পেশ ইমাম মওলানা আবু জাফর বেগ। মাহফিলে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট রাজনীতিক, সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও মরহুম জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র নাইয়ান সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। মাহফিলে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, ড. দেলোয়ার হোসেন, ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া, ড. মাহফুজ চৌধুরী, আলী ইমাম শিকদার, মোহাম্মদ হোসেন খান বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্ক-এর নবনির্বাচিত সভাপতি আজমল হোসেন কুনু, সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন ইউএসএ’র সভাপতি তাজুল ইমাম, সাবেক সভাপতি মোল্লা মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ ল’ সোসাইটি ইউএসএ’র কর্মকর্তা এডভোকেট মুজিবুর রহমান, এডভোকেট মুজিবুর রহমান, কাজী নয়ন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে সাদেক হোসেন খোকা জাহাঙ্গীর আলমের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমার অসুখের খবর শুনে তিনি আমার বাসায় এসে আমাকে উৎসাহিত করেছেন, প্রেরণা দিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগত কাজে লন্ডন গেলে জানতে পারি সেই জাহাঙ্গীর আলম আর নেই। মরহুম জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, আমি ১৯ বছর ধরে বেঁচে আছি। তার কথায় সাহস পেয়েছি। জাহাঙ্গীর সাহেব তার কাছ থেকে আমাকে সাড়ে ৯শ ডলার মূল্যের ঔষুধ দিয়েছিলেন।
অপরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন ইউএস ইন্্ক’র সভাপতি তাজুল ইসলাম গত রোববার ইউএনএ প্রতিনিধিকে বলেন, মরহুম জাহাঙ্গীর আলমের পরিবার-পরিজনের সহায্য-সহযোগিতায় যাতে কোন অসুবিধা না হয়, বিশেষ করে তার একমাত্র সন্তানের লেখাপড়ার জন্য ঢাবি এলামনাই এসোসিয়েশন কমিউনিটির সকলের সহযোগিতায় দেখ-ভালো করা হবে। এছাড়া আচিরেই মরহুম জাহাঙ্গীর আলম স্মরণে সর্বজনীন শোক সভার আয়োজন করা হবে।
আরো উল্লেখ্য, কমিউনিটির অত্যন্ত পরিচিতজন, অসাধারণ মানবিক গুণসম্পন্ন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ১৯৯৩ সালে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হন। সবার দোয়ায় তিনি দু’বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে তিনি কমিউনিটির নানা সেবা ও সামাজিকতায় সংশ্লিষ্ট হয়েছিলেন। মৃত্যুর দুয়ার থেকে তার ফিরে আশা ছিলো ‘মির্যাকল’। আপাত নিরাময়ের আড়ালে হয়তো তার অজান্তেই কর্কটের বীজ রয়ে গিয়েছিল তাঁর শরীরে। তিনি আবারো অসুস্থ্য হয়ে পড়লে দু সপ্তাহ আগে তাকে স্নোন কেটারিং মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা গত ১ ডিসেম্বর তার আয়ুষ্কাল সম্পর্কে চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন। খবরটি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে কমিউনিটির পরিচিতজনরা তাকে দেখতে তার স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনরা ছুটে যান হাসপাতালে। তিনি স্নোন কেটারিং-এর ৫৩১ নম্বর রুমে অবস্থান করছিলেন। জাহাঙ্গীর আলমের অবস্থা ছিলো আশংকাজনক। তিনি কোন কথা বলতে পারছিলেন না, কাউকে চিনতেও পারছিলেন না। তাকে ঘুমের ওষুধ আর পেইন কিলার দিয়ে অচেতন রাখা হয়েছিলো।
সুদর্শন জাহাঙ্গীর আলম গত ২৪ নভেম্বর বিকেলে এস্টোরিয়াস্থ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সাথে সাথে ম্যানহাটানের ৬৭ ও ৬৮ স্ট্রীটের মাঝে ইয়র্ক এন্ড ফাস্ট এভিনিউস্থ স্লোন মেমোরিয়াল ক্যাটারিং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ ডিসেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।
কুমিল্লার সন্তান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন সময়ে জাসদের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ৯০-এর দশকে তিনি নিউইয়র্ক আসেন। নিউইয়র্কে এসেও তিনি স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। জড়িত ছিলেন ইউএস কমিটি ফর ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ নামক সংগঠনে।