জাতিসংঘে ভাষণ ও নাগরিক সম্বর্ধনা ২১ সেপ্টেম্বর: ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানে মুখর লাগোর্ডিয়া : প্রাণের আবেগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ
- প্রকাশের সময় : ০২:৪৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
- / ৮৪৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: প্রাণের আবেগে হাজারো মানুষ বরণ করলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। জয় বাংলা শ্লোগান আর গানে গানে তারা মাতিয়ে তুলেছিল লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট। রোববার সেখানে এক অভূতপূর্ব পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। বর্ণিল পোষাকে রাঙ্গিয়ে দিয়েছিল তারা পুরো এলাকা। অবাক বিস্ময়ে অবাঙ্গালীরাও সেদিন দেখেছে বাঙ্গালীদের প্রাণের উচ্ছাস। ‘জয় বাংলা/ শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম/ শেখ হাসিনার সরকার/ বার বার দরকার’ এমন শ্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছিল লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে সেখানে জমায়েত হয়েছিল সর্বস্তরের নারী পুরুষ আবাল বৃদ্ধ বনিতা। হাতে লাল সবুজের পতাকা। এরই মধ্যে কালো গাড়ীতে চড়ে প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে তাদের অভিবাদন জানান। এতে উল্লাসিত হয়ে পুরো এলাকা। গগণবিদারী উচ্ছাস আর শ্লোগানে তারা নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো এলাকা।
জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের সফরে ১৮ সেপ্টেম্বর রোববার অপরাহ্ন তিনটার দিকে নিউইয়র্ক এসে পৌঁছেছেন। তিনি ঢাকা থেকে লন্ডন ও কানাডা হয়ে নিউইয়র্ক পৌঁছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দরে পৌঁছলে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন আহমেদ ফুলের তোড়া দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। পাশপাশি দলীয় নেতা-কর্মীরা তাঁকে উষ্ণ অর্ভ্যথনা জানান। যদিও নিরাপত্তা জনিত কারণে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ পথে বিমানবন্দর ত্যাগ করায় দলীয় নেতা-কর্মীরা সরাসরি সাক্ষাৎ পাননি। তারপরও প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর আগমনে নেতা-কর্মীদের ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম আর জয় বাংলা’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে বিমানবন্দরের লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্টের শ্যাটল ডেল্টা টার্মিনালের বাহিরের পার্কিং লট সেভেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, সিটি ও পোর্ট অথরিটি পুলিশের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই দলীয় সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বরণে আওয়ামী পরিবারের সবার অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নেবেন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেল্টা এয়ালাইন্সের বিমানে লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দরে পৌঁছার পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এসময় বিমানবন্দরের বাইরে দলীয় সভানেত্রীকে সারিবদ্ধভাবে অভিনন্দন জানান প্রবাসের নেতা-কর্মীরা। গাড়ি বহরে বসে শত-শত নেতা-কর্মীর উষ্ণ অভ্যর্থনা গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা এবং তাঁকে বহনকারী গাড়ী সোজা চলে যায় ম্যানহাটনের ওয়ালড্রফ এস্টোরিয়া হোটেলের দিকে। নিউইয়র্ক অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী এই হোটেলেই থাকবেন। তিনি রোববার বিশ্রামে থাকলেও সোমবার থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে ব্যস্ত সময় পার করবেন। এরই অংশ হিসেবে নিউইয়র্কে অবস্থানকালে দলীয় সভানেত্রীকে সব ধরণের সহযোগিতায় তৎপর থাকবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। অভিবাদনের এমন উষ্ণতা আমি এর আগে কখনো দেখিনি। আমি নিজেও আবেগে আপ্লুত হয়েছি। নেতা কর্মীদের এই আয়োজনে তাদের উচ্ছাস আনন্দে আমরা সবাই একাকার।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এদিন প্রতিরোধের কর্মসূচী আহ্বান করলেও তাদের কাউকে আশপাশে দেখা যায়নি। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের শ্লোগান ছিল, হৈ হৈ রৈ রৈ বিএনপি গেলো কৈ? ইত্যাদি।
অভ্যর্থনায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের উচ্ছাস ছিল বাধ ভাঙ্গা জোয়ারের ন্যায়। এয়ারপোর্টের ৭ নম্বর পার্কিং লটে ঘুরে ঘুরে তারা উল্লাশ করেছেন। প্রকাশ করেছেন আবেগ আর উচ্ছাস।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ বলেছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাংখা আর স্বপ্নের প্রতীক। তাই তাকে বরণ করতে এসেছে সবাই।
সহ সভাপতি লুৎফুল করীম বলেন, শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলাদেশের নন। তিনি এখন বিশ্বের একজন প্রভাবশালী নেতা। এটা আমাদের জন্য গৌরবের।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এক নতুন মাত্রায় বিশ্বে পরিচিত করেছেন। এর প্রমাণ হচ্ছে সারা বিশ্বে তাঁকে নিয়ে সবার কৌতুহল।
অপর সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা বলেন, সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুন ইমেজে উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য তাকে অভিনন্দন জানাতে এসেছি আমরা।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের দরুদ মিয়া রনেল বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র বিমোচনে শেখ হাসিনা এখন অনুকরনীয় ব্যক্তিত্ব।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরকালীন সময়ে তাকে নাগরিক সম্বর্ধনা জানাতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। সংগঠনের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে নাগরিক সম্বর্ধনা সফল করতে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেল ৬টায় ম্যানহাটানস্থ গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলের বলরুমে এই সম্বর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। ঐদিন তিনি জাতিসংঘের সাধারণে অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের উন্নয়নের সাফল্য বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে সূত্রটি জানায়।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফর কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ছাড়াও যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের শাখা কমিটির নেতা-কর্মীরাও পৃথক পৃথকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন নাগরিক সম্বর্ধনা সফল করতে। অপরদিকে মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর পাশাপাশি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, কৃষক লীগ, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ প্রভৃতি সংগঠন ।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে এসময় দলের উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে সিনিয়র সহ সভাপতি এফ ফজলুর রহমান, সহ-সভাপতি সৈয়দ বসারত আলী, সামসুদ্দীন আজাদ, আবুল কাশেম ও লুৎফুল করীম, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ, মহিউদ্দিন দেওয়ান ও আব্দুর রহিম বাদশা, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. এম এ বাতেন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, জন সংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান মিয়া, সহ সভাপতি শেখ আতিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, যুবলীগ নেতা মিসবাহ আহমেদ, ফরিদ আলম, তারেকুল হায়দার চৌধুরী, বাহার খন্দকার সবুজ, জামাল হোসেন, সেবুল মিয়া, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী, সহ সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাখাওয়াত বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান সর্দার, সহ সভাপতি দরুদ মিয়া রনেল, জাতীয় শ্রমিক লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকন, সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র কৃষক লীগের সভাপতি হাজী নিজাম, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী অধ্যাপিকা মমতাজ বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক নার্গিস আহমেদ বিউটি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এবং মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী মোর্শেদা জামান, কুইন্স কাউন্টির জুডিশিয়াল ডেলিগেট মনজুর চৌধুরী, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বাবু, আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ যুক্তরাষ্ট্র-এর সভাপতি মো: আব্দুল কাদের মিয়া, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা শাহানা রহমান, খোরশেদ খন্দকার, হিন্দাল কাদির বাপ্পা, জিয়াউল হক, এন আমীন, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, দেওয়ান বজলু, শাহাদৎ হোসেন, বজলুর রহমান বজলু, মোহাম্মদ হানিফ, আওয়ামী লীগ নেতা একেএম সফিকুল ইসলাম, সবিতা দাস প্রমুখ সহ কয়েক শত নেতা-কর্মীকে লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দরে উপস্থিত দেখা যায়।
এছাড়াও দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে সিলেট পৌরসভার সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ ফখরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা হিরু মিয়া, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, উপদেষ্টা হাকিকুল ইসলাম খোকন, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম ও গত বছর দল থেকে বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, যুক্তরাষ্ট্র জাসদ-এর সভাপতি আব্দুল মুসাব্বির, সিনিয়র সহ সভাপতি দেওয়ান শাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম জিকু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক আগমণ
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাগরিক সম্বর্ধনা সভা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ইতিপূর্বে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর সর্ম্বধনার চেয়ে চলতি বছরের সম্বর্ধনা হবে আরো ব্যাপক আয়োজনে ও চমকপ্রদ। প্রধানমন্ত্রীর সম্বর্ধনা সভা সফল করতে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সম্বর্ধনা সভা সফল করতে দলীয়ভাবে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।(সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)