জাতিসংঘের সামনে আ. লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ
- প্রকাশের সময় : ০৮:০৫:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০১৯
- / ৩৬২ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি: জাতিসংঘের চলতি সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার দিন জাতিসংঘের সামনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করেছ। প্রধানমন্ত্রী ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে মূল অধিবেশনে ভাষণ দেন। এ উপলক্ষ্যে ফাস্ট এভিনিউর ৪৭ স্ট্রীট সংলগ্ন পার্কে খুবই কাছাকাছি স্থানে দল দুটির নেতা-কর্মীরা সমাবেশ করেন। তবে দুই দলে মাঝে ছিলো পুলিশী ব্যারিকেড। শুক্রবার বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সমাবেশ দুটি চলে। তারা সকলেই ঐ স্থান ত্যাগের প্রায় দু’ঘন্টা পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভাষণ দেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনেকই শানিত সমাবেশ থেকে জাতিসংঘ ভবনে গিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনেন। তাঁর ভাষণের সময় গ্যারালিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। তারা করতালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বিষয়টি জাতিসংঘের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারির মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি করেছে। কারণ, সদস্য-রাষ্ট্রের বক্তব্য প্রদানের সময় বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কো দেশের এতো লোক সমাগম খুব একটা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষনের সমর্থনে শান্তি সমাবেশ আর বিএনপির শেখ হাসিনা সরকারের তাদের ভাষায় অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ড ও নিপিড়ন-নির্যাতন, হামলা-মামলা, গুম-খুন এবং ভোটারহিনীর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার প্রতিবাদে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এসময় দুই দলের নেতা-কর্মীরা দলীয় ব্যানার ফেস্টুন হাতে প্লাল্টাপাল্টি শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে ফাস্ট এভিনিউ।
এদিকে জাতিসংঘের সামনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র পল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা ছাড়াও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় দুজন আহত এবং দু’জনকে আটকের পর তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বিএনপি’র বিক্ষোভ চলাকালে একদল তরুণ বিএনপির ব্যানার লাগিয়ে শেখ হাসিনার নাম ধরে অকথ্য ভাষায় শ্লোগান দিতে থাকলে পুলিশ বেষ্টনীতে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষেপে যায়। এতে উভয় দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ফলে পুরো এলাকা কার্য্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় আওয়ামী লীগের দুই সমর্থক আহত হন বলে দলীয় নেতারা দাবী করেন। খবর পেয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা রক্ষীর সাথে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশও ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
আ. লীগের শান্তি সমাবেশ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগতম-শুভেচ্ছা জানিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ সহ এম ফজলুর রহমান, ড. প্রদীপ কর, ড. খন্দকার মনসুর, নিজাম চৌধুরী, আইরীন পারভিন, মহিউদ্দিন দেওয়ান, হাজী এনাম, আব্দুর রহীম বাদশা, মিসবাহ আহমেদ, ফরিদ আলম, এডভোকেট শাহ বখতিয়ার, এম এ করীম জাহাঙ্গীর, কাজী কয়েস, তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান টুকু, হিন্দাল কাদির বাপ্পা, শরিফ কামরুল হিরা, শাহীন আজমল, অধ্যাপক মমতাজ শাহানাজ, জাকারিয়া চৌধুরী, সেবুল মিয়া, রহিমুজ্জামার সুমন, জামাল হোসেন, ইফজাল আহমেদ চৌধুরী, আবুল হোসেন, হাসান জিলানী, খান শওকত, আব্দুল কাদের মিয়া, পেনসিলভেনিয়া স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, নিউইংল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি যোদ্ধাহত মুকিক্তযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ইউসুফ, সমীরুল ইসলাম বাবলু, ওয়াশিংটন ডিসি আওয়ামী লীগের নেতা শিব্বির আহমেদ, শেখ সেলিম, জি আই রাসেল, মাহমুদুন্নবী বাকী, ফ্লোরিডা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা এম ফজলুল রহমান, নাফিজ জুয়েল, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দারা বিল্লাহ, তুহিন, শিকাগো থেকে মনির চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। আরো ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র জাসদ-এর সভাপতি আব্দুল মোসাব্বির ও সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম জিকো।
এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া উপ কমিটির সদস্য মামনুনুল হক চৌধুরী, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিম রেজনুসহ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর অনেকেই এই সমাবেশে যোগ দেন।
বিএনপি’র বিক্ষোভ-প্রতিবাদ: অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বিক্ষোভ-প্রতিবাদে লন্ডন থেকে যোগ দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন, কেন্দ্রীয় নেত্রী নাজমুন নাহার বেবী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবী ও অবিলম্বে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন আব্দুল লতিফ স¤্রাট, জিল্লুর রহমান জিল্লু, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, গিয়াস আহমেদ, শরাফত হোসেন বাবু, মিজানুর রহমান ভূইয়া (মিল্টন ভূইয়া), আলহাজ সোলায়মান ভুইয়া, মনজুর আহমেদ চৌধুরী, জসিম ভূঁইয়া, মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান, এম এ বাতিন, জাকির এইচ চৌধুরী, আবু তাহের, পারভেজ সাজ্জাদ, রফিকুল মওলা, গোলাম ফারুক শাহীন, মাকসুদুল হক চৌধুরী, মাওলানা অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সাইদুর রহমান সাঈদ, জসীমউদ্দিন (ভিপি), কাওসার আহমেদ, হাবিবুর রহমান, সেলিম রেজা, রেজাউল আজাদ ভূইয়া, রুহুল আমিন নাসির, মোহাম্মদ জে হোসেন, মাজহারুল ইসলাম জনি, মোহাম্মদ এ রহমান, আবুল কাসেম, আব্দুস সবুর, মোশারফ হোসেন সবুজ, মাকসুদুল হক চৌধুরী, ওমর ফারুক, আতিকুল ইসলাম আহাদ, নুরুল আলম, তারিক চৌধূরী দিপু, বদিউল আলম, সেলিম রেজা, শেখ হায়দার আলী, রকিব উদ্দিন দুলাল, ওমর ফারুক, মাহফুজুল মাওলা নান্নু, আবু তাহের, কাউসার আহমেদ, মামুন আহসান, আল মামুন সবুজ, ইসমাইল হোসেন, সোহাগ রানা, নাজমুল হোসাইন, আকতার হোসাইন, সাইফুল ইসলাম, আনোয়ার হোসাইন, মোহাম্মদ নাসিম, শাহজান সাজু, বাদল মির্জা, শাওন, দিদার, আবদুল কুদ্দুস, রাকিব, মোস্তাফিজুর, আবুল খায়ের প্রমুখ।
এদিকে দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি না থাকায় দলীয় নেতা-কর্মীরা একাধিক নেতার নেতৃত্বে সমাবেশে যোগ দেন। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান ভুইয়া (মিলন্টন ভূইয়া)-এর নেতৃত্বে দলের বিক্ষোভ-সমাবেশে তার সমর্থক বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী নানা শ্লোগান দেয় এবং দলীয় চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিও দাবী করেন। তারা কালো পতাকাও বহন করেন।
এছাড়াও সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাট ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লুর নেতৃত্বে, আবার সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি শরাফত হোসেন বাবু ও সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসিম ভূইয়ার নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন এবং তারা একই সাথে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেন।
আরো উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও নতুন কমিটির দাবী ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা থাকায় এবার আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে উপস্থিত ছিলো অতীতের চেয়ে কম। অপরদিকে বিএনপি, যুবদল, জাসাস, ছাত্রদল, মহিলা দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষনীয়।