জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতেই স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে ‘বাকশাল’ গঠনের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় : বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দেশের আবর্জনা,এই আবর্জনা দূর করতে হবে
- প্রকাশের সময় : ১১:২৮:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৫
- / ৮০৬ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ আয়োজিত চতুর্থ বঙ্গবন্ধু সম্মেলন ও বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতায় বিশিষ্ট কলামিস্ট ও বিটিভি’র সাবেক প্রযোজক বেলাল বেগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আবারো ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সড়কে তুলে দিতে ১৯৭২ সালের প্রথম সংবিধানের আলোকে দেশ পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বাঙালীদের জন্য লজ্জার বিষয়। যারা বাঙালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে, চেতনা সম্পর্কে বাংলাদেশী জাতীয়তাবদীদের কোন ধারণা নেই। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দেশের আবর্জনা, এই আবর্জনা দূর করতে হবে। তিনি বলেন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে, ঐক্যবদ্ধ রাখতেই স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে ‘বাকশাল’ গঠনের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কেননা, বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন আমরা সবাই বাঙালী, আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এক-অভিন্ন, আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। তাই তিনি বাকশাল কায়েম করেন। খবর ইউএনএ’র।
সিটি জ্যাকসন হাইটস্থ জুইস সেন্টারে গত ৫ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু সম্মেলন ও বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তব্যের আয়োজন করা হয়। পরিষদের সভাপতি ও নিউজার্সী অঙ্গরাজ্যের প্লেইন্সবরো সিটির কাউন্সিলম্যান ড. নূরন্নবীর সভাপতিত্বে ‘বঙ্গবন্ধু : বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি’ শীর্ষক সম্মেলন পরিচালনা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিতাশু গুহ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিলো বঙ্গবন্ধুর উপর কবিতা পাঠের আসর। এতে জি এইচ আরজু, গোপন সাহা, শাহরিয়ার তৈমুর সাবিনা নিলু প্রমুখ অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বেলাল বেগ তার প্রায় এক ঘন্টার একক স্মারক বক্তব্যে বলেন, ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতিসত্ত্বার পুনর্জীবন দান করে ইতিহাসে এই প্রথম আমাদেরকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। ক্ষুদ্র বাংলাদেশের মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেভ্রুয়ারী আজ বিশ্বের সকল জাতির মাতৃভাষা দিবস হিসাবে গন্য হয়েছে। বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের অবদান বাংলাদেশের গৌরব বাড়িয়ে চলেছে। আজ বাঙালী প্রতিভার বিকাশে অবিশ্বাস্য গতি এসেছে। আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ পুরস্কারে ভূষিত। এককালের অনুন্নত অবজ্ঞাত বাংলাদেশের এই বিস্ময়কর উত্থানের মূলশক্তি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী সন্তান শেখ মুজিবুর রহমানের যাদুকরী নেতৃত্ব যা অনন্তকাল বাঙালী’র পাথেয় হয়ে থাকবে। তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছর পূর্তি লগ্নে আজ আমরা তাঁকেই প্রথম স্মরণ করছি।
তিনি বলেন, নেতৃত্ব একটি প্রাকৃতিক রহস্য; সব মানুষ নেতা হয় না। একজন নেতার অন্তর্দৃষ্টি, দূরদৃষ্টি, সাহস, অনুধাবন শক্তি, তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত দানের শক্তি, স্মৃতিশক্তি, দেশ, জাতি এবং মানুষের জন্য ভালবাসা, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ তাঁর চারপাশের যে কোন মানুষের চেয়ে বেশি হয়। স্কুলজীবন থেকেই প্রানবান ডানপিটে বঙ্গবন্ধুর নেতাসুলভ গুণাবলী সর্বজনবিদিত ছিল। আপদে-বিপদে সব বয়সের মানুষ তাঁর কাছেই ছুটে আসত। তাঁর ন্যায়পরায়নতার জন্যে তাঁকে সবাই যেমন সমীহ করত আবার দুর্দান্ত সাহসের সঙ্গে নিজ হাতে বিচার করতেন বলে, সবাই তাঁকে ভয়ও করতেন। এই দুর্দান্ত কিশোর কেমন করে একদিন লেনিন, ফিডেল ক্যাস্ট্র, জামাল আবদুল নাসের, সোকার্নো, ইন্দিরা গান্ধীর কাতারে চলে এলেন, সে রহস্যের সন্ধান আমরা পাই তাঁরই বক্তব্য আসমাপ্ত আত্মজীবনীর একটি উদ্ধৃতি থেকে আমরাও জেনে নিলাম আমাদের স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তির পেছনে মূল কারণটি- স্বজাতি মানুষদের জন্যে একজন অলৌকিক মানুষের ভালবাসা।
বেলাল বেগ বলেন, শেখ মুজিব আমাদের জন্যে প্রথমতঃ বাঙালী হিন্দু-মুসলমানকে সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ থেকে রক্ষা করেছেন, দ্বিতীয়তঃ বাঙালীকে নাগরিক অধিকার সম্বন্ধে সচেতন করে জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তৃতীয়তঃ বাঙালীর ভাষা সংস্কৃতিতে পুনঃপ্রাণ সঞ্চার করে জাতিকে একতাবদ্ধ ও শক্তিশালী করেছেন, চতুর্থত: জাতীয়তাবাদে উদ্ভুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, পঞ্চমতঃ অনন্তকাল মাথা উঁচু করে চলার জন্য বাঙালীকে পথনির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
সংবিধানের চার মূলনীতি, বাকশাল গঠন, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতা হত্যার পর বাংলাদেশ গোপনে বাংলাদেশ বিরোধীদের হাতে চলে গিয়েছিল বলে উল্লেখ করে বেলাল বেগ বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতার ঘাতক সৈয়দ ফারুক রহমান, খন্দাকার আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, মহিউদ্দীন, বজলুল হুদা, খোন্দকার মুশতাকের সঙ্গে পরামর্শ করে এই হত্যাকান্ড চালায়। তিনি বলেন, জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ, এরশাদের উত্থান আর বিএনপি, জাতীয় পার্টির আবির্ভাবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রে উত্তরণের চেষ্টায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আবার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সড়কে তুলে দিতে হবে। আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৯৭২-এর সংবিধানে। তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতার চেতনা সঠিকভাবে চর্চা হলে দেশে ধনী-গরীবের এতো ব্যবধান হতো না।
স্মারক বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বেলাল বেগ ‘বাঙালী জাতিকে প্রতিভাবান জাতি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই জাতির প্রতিভাকে কাজে লাগাতে হবে। বঙ্গবন্ধু’র বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারকে অনেকদিন ক্ষমতায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যতদিন নিজেদেরকে চন্ডীদাস, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, বঙ্গবন্ধু ভাববো ততদিন আমাদেরকে কেউ রুখতে পারবে না, আমাদের পতন ঘটাতে পারবে না।
সভাপতির বক্তব্যে ড. নূরুন্নবী একাত্তুরে মানবতাবিরোধী জঘন্য কর্মকান্ডের পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার দাবী জানান এবং পাকিস্তান ক্ষমা না চাইলে দেশটির সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবী জানান। অনুষ্ঠানে ড. নবীর প্রস্তাবে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং এমন প্রস্তাব বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাশ করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে দৃষ্টি কামনা করা হয়।