জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য আমরা যেকোন ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিলাম
- প্রকাশের সময় : ০৯:০০:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ মে ২০১৬
- / ১৭৮৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: ঐতিহাসিক ৭ মে, ২০০৭। আজ থেকে নয় বছর আগের কথা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনির্বাচিত ‘ ড. ফখরুদ্দীন আর জেনারেল মঈনুদ্দীন’ তথা ১/১১-এর সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। উত্তপ্ত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। গণতন্ত্র বিপন্নের মুখে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন ঢাকায়। আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে। সরকার কর্তৃক নানা দূর্নীতির অভিযোগ দুই শীর্ষ নেত্রীসহ দুই দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। দেশের জন্য ‘বিপদজনক ব্যক্তি’ ঘোষিত শেখ হাসিনা। তাঁর দেশে না ফেরার উপর নানা চাপ আর প্রতিবন্ধকতা। এমন পরিস্থিতিতে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৭ সালের ৭ মে তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন এবং শত বাধা-বিপত্তি, হুমকী উপক্ষো করে ঢাকায় ফিরে যান। সেই সময়ে দলীয় নেত্রীর সাথে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ৮জন নেতা-কর্মী। তাদের ভাষায়- ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সেই দিনের সিদ্ধান্তের ফলে দেশে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দিনটি স্মরণ করে ইউএনএ প্রতিনিধির সাথে স্মৃতিচারণ করে সেই সময়ে তিন নেতা।
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক ৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনার ‘লন্ডন টু ঢাকা’ সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক খালিদ হাসান, সদস্য আব্দুস সামাদ আজাদ, ফারুক আহমেদ, জাহানারা হাসান, নিউইয়র্ক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোহাম্মদ সোলেমান আলী, ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের ওমর ইসলাম, রফিক পারভেজ এবং তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে পদ থেকে অব্যহতি প্রাপ্ত) সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ। খবর ইউএনএ’র।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৎকালীন অন্যতম সফর সঙ্গী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে ইউএনএ প্রতিনিধিকে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সত্যিকারেই জনগণের নেত্রী তার প্রামাণ আমরা সেইদিন নতুন করে পেয়েছি। তিনি বলেন, প্লেনে নেত্রীকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমরা কর্মীরা যানতে চাই যে, ঢাকায় ফিরে আপনি ভিআইপি গেট দিয়ে বেড়িয়ে গেলে আমরা কি করবো, কোথায় যাবো। তখন নেত্রী সাহস দিয়ে বলেন, তোমরা আমাকে ফলো না করে সরাসরি ‘সুধা সদন’ (নেত্রীর বাসভবন) চলে যাবে। আমি চাইনা আমার একজন নেতা-কর্মীও গ্রেফতার হোক। আমরা বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক (মরহুম) আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী নেত্রীকে বরণ করে নেয়ার পর নেত্রীর নির্দেশে আমাদের জন্য রাখা গাড়ীতে চড়ে আমরা সাসাসরি সুধা সদনে চলে যাই। ঢাকায় যাওয়ার পথে জননেত্রী বিমানে আরো বলেন, আমি লন্ডন থেকেই ‘সুধা সদনে’ তোমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার কথা বলেছি’। সামাদ আজাদ বলেন, নানা সমস্যা, ভয়-ভীতির মধ্যেও নেত্রীর কর্মীদের প্রতি অবিচল ভালবাসার আরো প্রমাণ হলো যে, ঐদিন নেত্রী ঢাকায় ফিরে সরাসরি ৩২ নম্বর ধানমন্ডীতে গিয়ে ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়ে পরবর্তীতে সুধা সদনে ফিরে রাতে আমাদের ডিনারের সময় তদারকি করেন। এতে প্রমাণিত হয় তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৎকালীন সফর সঙ্গী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেই সময়ের ক্ষমতাসীন ড. ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত সঠিক ও সাহসী ছিলো। জননেত্রী শেখ হাসিনার সেই সিদ্ধান্তের ফলেই আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র পুন: প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, দেশ অকল্পনীয়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশের প্রবৃদ্ধি সহ শিক্ষা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও নগরায়ণে ব্যাপক উন্নতির ফলে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। ফারুক বলেন, আমারা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ৮ নেতা লন্ডনে জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে মিলিত হয়ে তার সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা গমন করি। তিনি বলেন, ঢাকার উদ্দেশ্যে জননেত্রী রওনা দেয়ার আগে হিথরো এয়ারপোর্টে আল জাজিরা টিভির এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমি বেনজির ভুট্টো বা অং সাং সূচী নই যে পালিয়ে বেড়াবো। আমার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান জেল-জুলুম খেটেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন, দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। প্রয়োজনে আমি দেশের মাটিতেই জীবন দেবো। কারো কাছে নত স্বীকার করবো না। আমার দেশে ফেরা আমার ফান্ডামেন্টাল রাইটস’। ফারুক বলেন, নেত্রীর সেই সাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল দেশে পরিণত হয়েছে।
ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা চেয়েছি জাতির জনকের রক্তের উত্তরসূরী জননেত্রী শেখ হাসিনার যদি কিছু হয়, তার সাথে আমরাও যেকোন ধরনের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিলাম এবং আমাদের পরিবার-পরিজন নিউইয়র্কে রেখে নেত্রীর সাথে ঢাকায় যাই। আমরা নেত্রী ও দলের শুধু সুদিনে নয়, দূর্দিনেও পাশে থাকবো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথের অপর সফর সঙ্গী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান আলী বলেন, নেত্রীর সাথে আমরা ঢাকায় ফিরে দেখলাম লাখো মানুষের সমাবেশ। সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অনেক নেতা যখন নেত্রীর পাশে ছিলেন না, তখন আমরা সাধারণ কর্মী হয়ে জননেত্রীর সাথে ঢাকায় যাই। তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ১/১১-এর সরকার যখন নেত্রীকে ‘বিপদজনক’ ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে, তাকে বিমানে বহন করতেও নিষেধাজ্ঞা ছিলো। তারপরও নেত্রী দেশ-জাতির কথা বিবেচনা করে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরেছেন। আমরাও তার সফর সঙ্গী হয়েছিলাম। আমরা সুখে-দু:খে নেত্রীর পাশে ছিলাম, আছি এবং আজীবন পাশেই থাকবো।
ছবি-১
নিউইয়র্ক: ২০০৭ সালের ৭ মে ঢাকায় দলীয় নেতা-কর্মী বেষ্টিত জননেত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
ছবি-২
নিউইয়র্ক: ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে হিলটন হোটেলের বলরুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্বর্ধনায় ২০০৭ সালে নেত্রীর সফর সঙ্গী ৮জনের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট প্রদানের দৃশ্য। ফাইল ছবি